somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়াটে রূপকথা (শেষ অংশ)

০৬ ই জুন, ২০০৮ রাত ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[আমার শোনা সত্য একটা ছোট্ট কিন্তু মর্মস্পর্শি ঘটনাকে গল্পে রূপ দেয়ার চেষ্টা করলাম। এখানে গল্পের জন্য একাধিক চরিত্র বা পরিস্থিতি বা স্থান যোগ করা হয়েছে, মূল কাহিনীর সাথে তাই মিল পাওয়া যাবে না। শুধু শিকড়টা ওখান থেকে নেয়া, কান্ড বা ডাল-পালা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]

রূপকথার শুরুটা হয়েছিল যেভাবে...

###

রয়্যাল লাউন্জের আলো-আঁধারিতে আস্তে আস্তে উন্মোচিত হচ্ছে এক গহীন কালো জগতের পর্দা। আয়ান ঘোর লাগা গলায় শুরু করে এক অভিশপ্ত জীবন-কাহিনী। একমাত্র শ্রোতা ঐন্দ্রিলার ভেতরটায় এক অদ্ভুত আলোড়ন তোলে ওর ভারী গমগমে স্বর...

"আমাকে জন্ম দিয়েই মা মারা যায়। বাবার কোলে নার্স আমাকে দিয়ে মুগ্ধ গলায় বলেছিল, "মায়ের সৌন্দর্যের পুরোটুকুই পেয়েছে ছেলেটা। একদম দেবশিশুর মতো!" বাবা-ও চোখ ফেরাতে পারে নি আমাকে দেখে, কিন্তু ঘোর কাটতেই বিহ্বল হয়ে ভেবেছেন এই ছেলেকে রাখবেন কার কাছে! বাবা ব্যবসার কাজে দেশের বাইরেই থাকতেন, বছরে এক-দুবার দেশে আসতেন। আমার দায়িত্ব নিলো আমার ছোটখালা। সাত-আট মাস পর্যন্ত বড় হয়েছি খালামনির কাছে, বাবা মাঝেমাঝেই দেখতে আসতো আমাকে নানুর বাসায়। তারপর একসময় খালার বিয়ে হয়ে গেলো। তখন বাবা আমাকে তার গুলশানের ডুপ্লেক্স বাসাটায় নিয়ে আসলেন। বিশাল বাসাটার নিচে ছিলো পার্কিং আর লন, প্রথম ফ্লোরে লবি আর পার্টি হল, উপরে ছিল লিভিং সুইট আর একদম উপরে সুইমিং পুল। যাই হোক, বাবা এবার তার এক কলিগকে বিয়ে করলেন । মম্‌ খুব ব্যস্ত ছিল, তাকে বাসায় দেখাই যেত না। তাই বাবা একজন বেবি-সিটার রাখলেন, আম্বিয়া নামের প্রায় চল্লিশোর্ধ এক মহিলা। জানো ঐন্দ্রিলা ! এই আম্বি'বু-ই আমার এই চব্বিশ বছরের সবচেয়ে আপনজন, যার কাছে আমি শুদ্ধ ভালবাসা পেয়েছিলাম। আম্বি'বুর একমাত্র চিন্তাই তখন ছিল তর্জণির মাথায় মাখিয়ে যে কাজলের ফোঁটাটা উনি আমার মাথায় লাগিয়েছেন তা আবার মুছে না যায়; এতো সুন্দর ছেলে...কখন কার নজর লেগে যায়! তিনি আমাকে খুব যত্নে-সন্তর্পনে বড় করেছেন, কখনো একটু আঁচ লাগতে দেন নি কোন কিছুর। তার ছায়ায় কাটলো আমার প্রায় প্রথম নয়-দশ বছর। মাঝখানে সাত বছর হতেই স্কলাসটিকায় ভর্তি হয়েছিলাম। স্কুলে সবার আকর্ষণের চূড়ায় ছিলাম আমি। স্কুল প্লে -তে প্রিন্স বা কার্নিভল্‌ -এর সবচেয়ে কেন্দ্রিয় চরিত্রটা পেতাম আমি। সবার মুগ্ধ দৃষ্টি দেখেই বড় হয়েছি। বাইরের পৃথিবী আমার ভেতর খুব ছোট সময়েই ঢুকিয়ে দিয়েছিল, "তুমি অন্যরকম"। কেউ আমার খুব প্রশংসা করলে আয়নায় দেখতাম নিজেকে প্রায়-ই; আলোর আভা দেয়া ফর্সা গোলগাল বাদামী কোঁকড়া চুলের একটা ছেলে আয়না থেকে গহীন কালো চোখে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে।"

"বাবা তখন থাকতোই না দেশে, বছরে সময় করতে পারলে একবার-দু'বার আসতো। মম্‌ সারাদিন-ই থাকতো বাইরে কাজে আর রাতে পার্টিতে। একসময় মম্‌ আমাদের বাসায়-ই প্রত্যেক বৃহঃস্পতিবার পার্টি করার একটা রুটিন করে ফেললো। বাসার পার্টি সুইট ভরে যেত মানুষে মানুষে, হাল্কা মিউজিক এর ককটেল পার্টি শেষ হতো তুমুল মাদকতার উদ্দাম মিউজিকের সাথে। রাতের গভীরতার সাথে সাথে উদ্দামতা বাড়তে থাকতো, মানুষগুলো অচেতন না হয়া পর্যন্ত চলতো পার্টি। পার্টির শেষে লিভিং সুইটে দু'জন দু'জন করে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিতো। আমার ঘর ছিল লিভিং সুইটের শেষ মাথায়, আমার পাশে বাবা-মমের ঘর আর তারপর সারি দেয়া বেশ কয়েকটা লিভিং রুম ছিল গেস্টদের জন্য। তাই আমি তাদের কোলাহলটা টের পেতাম খানিকটা। মম্‌-ও পার্টি শেষে কাউকে না কাউকে নিয়ে ঘুমাতে যেতো বাকিদের মতোই। তখন ব্যপারটার ভাল-মন্দ বুঝতাম না। আর আম্বি'বু আমাকে পার্টির দিনগুলোতে বর্মের মতো রক্ষা করার চেষ্টা করতো বাইরের কলুষতা থেকে। এসবদিনে আমাকে তাড়াতাড়ি খাইয়ে উপরে নিয়ে আসতো আম্বি'বু। ওদের সামনে যেতে দিত না, আর ঘুম পাড়িয়ে দিতে চাইতো। কেমন যেন আগলে রাখতো। আমি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর-ও প্রহরীর মতো বসে থাকতো পাশে যতক্ষন না পার্টি শেষ হয়। চিন্তা করো ঐন্দ্রিলা! ঐ মহিলার ভালবাসাটা কতোটা নিঃস্বার্থ ছিল ! সে তার সবটুকু দিয়ে তার দেবশিশুকে রক্ষা করে গিয়েছে। কিন্তু এত করেও শেষরক্ষা করাটা সম্ভব হয়নি আম্বি'বুর পক্ষে।"

"সেবার বাবা আসতেই মম্‌ আম্বি'বুর কথা উঠালো। বাবাকে মম্‌ বুঝালো যে আমি বড় হয়েছি, আম্বি'বুর কোন প্রয়োজন আর আমার নেই। এখন তাকে বিদায় দেয়া হোক। আম্বি'বু চোখ ছলছল করে অনুনয় করে বাবাকে বললো, "সাহেব! আমি আয়ান বাবার সাথেই থাকি। মায়া পইড়া গেসে।" মমের কড়া চোখ দেখে বাবা আম্বি'বুকে বিদায় দিতে বাধ্য হলেন। আম্বি'বু যাবার আগে আমাকে জড়িয়ে বললো, "বাবা, তোমার মমের বন্ধুদের কারো সামনে যাবা না। ওদের পার্টির সময় তোমারে আমি যেমন রাখসি তেমন থাকবা। তাড়াতাড়ি ঘুমাইতে যাবা, আর ভাববা আম্বি'বু বইসা আসে পাশে। এই কথা রাইখো বাবা। ওরা শয়তান, তোমারে মাইরা ফেলবে। আমি ওদের কথা শুনসি। তাই আমি জানি।" আমি কিছুই না বুঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকলাম। তারপর চলে গেলো আম্বি'বু। আমি কেমন যেন ছায়াশূণ্য হয়ে গেলাম!"

"তার কয়েকদিন পর-ই ছিল আমার বারো বছর-এর জন্মদিন। বাবা খুব ধুমধাম লাগিয়ে পালন করলেন দিনটা। আমাদের লনে ম্যারি-গো-রাউন্ড, ওয়াটার ড্যান্স, ম্যাজিক শো ...আরো কতকিছু যে ছিল! বিশাল পার্টি হলো সন্ধ্যায়। পার্টিতে আমার বন্ধুবান্ধব- টিচার, বাবার বন্ধু-বান্ধব এসেছিল কিন্তু মা'র ঐ বন্ধুদের কোথাও দেখলাম না। মম্‌কে তার বন্ধুদের কথা জিজ্ঞেস করতেই মম আমাকে ইশারায় চুপ করে খেলতে যেতে বললো। এর দু'দিন পর বাবাকে তিন বছরের জন্য সিঙ্গাপুর যেতে হবে কোম্পানি জানালো। বাবা আমাদের সহ যেতে চাইলে মম্‌ বললো সে এখানেই থাকবে আমাকে নিয়ে আর ম্যানেজ করতে পারবে সবকিছু। বাবা আস্বস্ত হয়ে চলে গেলেন।"

"আমার অন্ধকার জীবনের জন্মটা সেদিন রাতেই হলো। রাতে বাসার কাজের মানুষ সব সার্ভেন্টস্‌ কোয়ার্টার এ চলে গেলে মম্‌ লক করে দেয় দোতলার এন্ট্রান্স। আমি ঐ সময় আমার ঘরে ঘুমানোর জন্য তৈরি হচ্ছিলাম। তখন মম্‌ আসলো আমার ঘর-এ। এসে বললো, "সুইটহার্ট! তোমার একা থাকতে ভয় লাগে না?" আমি বললাম, "নাহ মম্‌! আমি পারবো।" মম্‌ বললো, "তোমার মাম্মা থাকলে তোমাকে খুব আদর করতো। আমি আম্বিয়ার জন্য তোমাকে এতদিন আদর করতে পারি নি। আজকে তাই তোমার সাথে থাকবো আমি আর অনেক আদর করবো।" আমি একটু লজ্জাই পেয়ে গিয়েছিলাম। তারপর মম্‌ লাইট নিভিয়ে আমার পাশে শুয়ে পড়লো। মমের ভীষণ অস্থির হাতটা আদর করতে লাগলো আমাকে, যে আদর আমাকে কখনো কেউ করে নি। আমি অন্ধকারের মধ্য কেমন একটা দমবন্ধ আতঙ্কে শিউড়ে ছটফট করতে থাকলাম। সকালের আগেই আমি অচেতন হয়ে যাই। ঠিক হলে দেখি আমি আমার ঘরের বিছানায় পড়ে আছি। ডাক্তার এসে কিছু অসুধ দিয়ে গেলো। কিছুদিন লাগলো আমার ঠিক হতে। তারপর প্রায় একমাস কেটে গেছে... একদিন আমি ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আছি তখন দেখি গাড়ি ভরে ভরে মমের সেই সব বন্ধু-বান্ধব হৈ-চৈ করতে করতে আসছে। তাদের মধ্য একজন আমাকে দেখে বাকিদের কি যেন বললো। সবাই আমার দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ের শব্দ করলো তারপর নিজেদের মধ্য কি নিয়ে হেসে উঠলো। একেকজন ধাক্কা-ধাক্কি করে ভিতরে আসতে থাকলো। আমার মনে হলো শিকারের গন্ধ পেয়ে ছুটে আসছে একদল হায়েনা। কেন যেন আম্বি'বুর সতর্কবানীগুলো টিকটিক করতে থাকলো আমার ভেতর। সেদিন রাতে পার্টির পর আমাকে মম্‌ সহ মমের ছয়-সাত জন বন্ধু-বান্ধব পর পর আমাকে "আদর" করলো। আমি উঠার চেষ্টা করতেই কয়েকজন আমাকে শক্ত করে ধরে থাকলো। প্রচন্ড অন্ধকারে শুধু থরথর কেঁপেছি আমি। হিংস্র পশুগুলোর থেকে নিস্তার পেয়ে সকালে টলতে টলতে ঘরে ফিরেছি আমি। সকালে ওরা চলে যাওয়ার সময় একজনকে মম্‌কে বলতে শুনলাম, "ইউ হ্যাভ গট আ গোল্ডমাইন! থিঙ্ক অ্যাবাউট আওয়ার অফার" ...মম্‌ শুধু অর্থবোধক হাসি দিলো উত্তরে। এর পরের মাসগুলোতে আমি অভ্যস্ত হয়ে গেলাম সেই ভয়ংকর জীবনে। মমের বন্ধুরা ছাড়াও আমার শুভাকাঙ্ক্ষী নতুন নতুন মুখ দেখলাম অনেক। ...আশ্চর্য ঐন্দ্রিলা! তুমি কাঁদছো কেন ?

ঐন্দ্রিলা ওকে জড়িয়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললো, "আমি খুব খুব দুঃখিত আয়ান। আমার ঐ ছোট্ট ছেলেটার কথা মনে হচ্ছে! ওত্তোটুকু ছেলে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্যটা কত নোংরা ভাবে দেখেছে! কেউ ওকে বাঁচাতে পারে নি! কি কষ্ট আয়ান! কি ভয়ংকর কষ্ট !!" আয়ান ওর মুখ দু'হাতে উঁচু করে বললো, "ছেলেটা আমি ছিলাম ঐন্দ্রিলা।" ও বললো, "হয়তো তুমি ছিলে দেখেই এতো কষ্ট হচ্ছে!" আয়ান প্রচন্ড অবাক হয়ে মেয়েটাকে দেখে... এত ভাল কেন ও! আর একটু খারাপ হতো মেয়েটা! ঐন্দ্রিলা ওর পাশে একটা হাত জড়িয়ে বসে বলে, "তারপর কি হলো ?"

"তারপর মম্‌ তার ইচ্ছা মতোই আমার জীবন চালাতে লাগলো। আমার জীবনটা কালো দাগে ভরে গিয়েছিল ঐন্দ্রিলা। হঠাৎ-ই বাবার ফোন আসলো, বাবা ঢাকা আসবেন, আর যাবেন না দেশের বাইরে। ঢাকায়-ই ব্যবসা গুটিয়ে এনেছেন। মম্‌ আমাকে বোঝায় যে এতোদিন যা করেছে তা যেন ভুলেও বাবাকে না বলি। বাসার বাকি লোক-জনকেও সতর্ক করে দেয়া হলো। বাবা আসার পর প্রথম ডিনার এ মম্‌ বাবাকে বললো, "শোনো, আয়ানের সাথে আমি একটা জয়েন্ট একাউন্ট খুলেছি। ওটাতে আট লাখ আছে।" বাবা অবাক হয়ে বললেন,"ক্যাশ কোথা থেকে তুললে?" মম্‌ বললো, "নতুন একটা এডিশনাল বিজনেস করছি, ওটার প্রোফিট পার্ট দিয়েই করলাম একাউন্টটা।" মম্‌ মিথ্যা বলছে! মম্‌ এসব টাকা ঐ আন্টিদের থেকে নেয় যারা আমাকে আদর করতে আসে। আমি নিজে এনভেলপ দিতে দেখেছি! তাও আমি কিছু বললাম না।"

"এরপর হলো আরেকটা কাহিনী। আমার বয়স ততদিনে পনেরো হবে। ক্লাসের মেয়েরা আমাকে নিয়ে খুব ফিসফাস করে বুঝি, এজন্য বাকি ছেলেরাও বেশ হিংসা নিয়ে তাকায়। আমি কাউকে পাত্তা দিতাম না তেমন। কারণ আমি ব্যপারগুলো ভাল বুঝতাম-ই না। একদিন আমার এক ক্লাসমেট, রাফিন, আমাকে ফিসফিসিয়ে বললো, "তুমি ব্লু টেপ দেখেছো কখনো?" আমি বললাম, "এটা কি?" রাফিন আমাকে একটা সিডি দিয়ে বললো, "এটা হলো সিকরেট অফ লাইফ। আমাকে আমাদের টেনথ গ্রেইডের একটা ভাইয়া দিয়েছে।" আমি বাসায় গিয়ে রাতে ছাড়লাম সিডি। যা দেখলাম তাতে খুব একটা নাড়া পেলাম না। কিন্তু ভাবলাম...এসব তো টিভিতে দেখায় না, তাহলে সিডিতে কেন আসলো ? আবার ভাবলাম, রাফিন এতো ফিসফিস কেনো করলো ? ওর মম্‌ কি ওকে আদর করে না তাহলে ?!" পরদিন স্কুলে গিয়ে রাফিন কে বললাম, "এটা আর এমন কি! তুমি কালকে ওমন করলে কেনো?" ও অবাক হয়ে বললো, "তুমি দেখেছো আগে ?!" আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, "হুমম! আমার মম্‌তো এভাবেই আমাকে আদর করে। কেন তোমার মম্‌ করে না ?" রাফিন তোতলাতে তোতলাতে বললো, "কি করে তোমার মম্‌?" আমি রাফিনকে সবকিছু খুলেই বললাম। রাফিন কোন মতে ফার্স্ট হাফ শেষ করলো তারপর টিফিন ব্রেইক এ ছুটে সিনিয়র ক্লাসে গেল, গিয়ে ঐ ভাইয়াদের সব বললো। শুকনো বাঁশঝাড়ে লাগা আগুনের মতো ছড়িয়ে গেলো খবরটা সারা স্কুল-এ। দিনের শেষে টিচার-ম্যাম রাও জেনে গেলো। সিনিয়র ক্লাসের আর আমার ক্লাসমেটরাও আমাকে আড়চোখে দেখছিল আর তাদের চাপা গলায় বলা "gigolo", "male whore" শব্দগুলা কানে আসছিলো। আমি কিছুই না বুঝতে পেরে বাসায় চলে আসলাম। পরদিন বাবাকে ডেকে পাঠালো স্কুল থেকে। হেডমিস্ট্রেস ম্যাম-এর ঘরটায় আমি-ও ছিলাম। বাবা উনার কথা শুনে কেন যেন একটু পর পর চমকে চমকে আমার দিকে তাকাচ্ছিল। বাসায় নিয়ে আসলেন বাবা আমাকে। রাস্তায় পাথরের মতোই বসে ছিলেন বাবা। বাসায় এসে চিৎকার দিয়ে মম্‌কে ডাকলেন বাবা। মম্‌ সব শুনে চুপ করে থাকলো। বাবা মম্‌'কে প্রচন্ড চড় বসিয়ে দিলেন আমার সামনেই। বাসাটা অসহ্যকর হয়ে গেল। সারাক্ষন বাবা-মম্‌ চাপা গলায় ঝগড়া করতো। একসময় আমাকে বাবা একটা বাড়ি করে দিলেন ধানমন্ডি, আমি ওই বাসাটায় উঠে গেলাম। শুধুই আমি আর কয়েকটা কাজের মানুষ। পড়া-লেখা চালিয়ে যেতাম আর বাকিসময় মেতে থাকতাম ইন্টারনেট অথবা মু্ভিতে। ততদিনে আমার কাছে সবকিছুই পরিষ্কার। আমি বড় হয়ে গিয়েছি। সবকিছু বুঝি। কিন্তু জানো ঐন্দ্রিলা! সব জেনেশুনেও আমি ঐ পৃথিবী থেকে বের হয়ে আসতে পারি নি! এখনো আমি একজন gigolo, আর আমি চেষ্টা করলেও এ থেকে বের হতে পারবো না। বুঝানোর চেষ্টা করলাম তোমাকে সবকিছু। হয়তো বুঝবে। আর আজকে চিন্তা করে দেখো একটু, কেন তোমাকে চাই না আমি। আমার পক্ষে সম্ভব-ই না ভালবাসা কাউকে। এখন উঠবো আমি, বেশ দেরি হয়ে গেছে। তোমারো উঠা দরকার। মাথাটা ঠান্ডা করে চিন্তা করো আজকে। ঠিক আছে?"

ঐন্দ্রিলা মাথা নাড়লো কিন্তু আয়ানের হাত ছাড়লো না। আয়ান ভাবলো, মেয়েটা ঠিক আছে তো! ঐন্দ্রিলা বললো, "আয়ান আমার কোন সমস্যা নেই তারপর-ও বিয়েতে। এখন তো আমি সব জানি। আমি সত্যি-ই তোমাকে বাঁচাতে চাই। আমার বাসায় না মানলে তোমার ওখানে চলে আসবো আমি। সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরু করবো আমরা আয়ান।" আয়ান খুব চমকে মেয়েটার দিকে তাকায়! ঠিক-ই ভেবেছে, মেয়েটার মাথা কাজ করছে না। আয়ান বললো, "ভাবো ঐন্দ্রিলা! হয়তো তোমার মা-ও আমার..." কথাটা শেষ না হতেই আয়ানের গালে প্রচন্ড চড় বসিয়ে দেয় ঐন্দ্রিলা। আয়ান বললো, "এজন্যই বলেছিলাম ভাবো। আমাকে একা থাকতে দাও। তাতে তোমার বা আমার দুজনের-ই ভাল হবে। আমি যাবো এখন। আর দেখা হবে না। ভাল আর পবিত্র থেকো ঐন্দ্রিলা, যেমনটা তুমি সবসময়।"

আয়ান বের হয়ে যাবার পর হুরমুর করে ডিভানের ওপর ভেঙে পড়ে ঐন্দ্রিলা। কাঁপতে কাঁপতে হুঁকোর পাইপটা নিয়ে পাফ করে... ধোঁয়ার কুন্ডলির সাথে ঐন্দ্রিলার কষ্টমাখা দীর্ঘশ্বাস মিশে ঘরের বাতাস ভারি করে তোলে। ধোঁয়ার মধ্য বিসর্জিত হয় প্রতীমার কষ্ট-দুঃখের রূপকথাটা...

সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১২ বিকাল ৫:০৮
৩৭টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×