somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধোঁয়াটে রূপকথা

০৪ ঠা জুন, ২০০৮ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[আমার শোনা সত্য একটা ছোট্ট কিন্তু মর্মস্পর্শি ঘটনাকে গল্পে রূপ দেয়ার চেষ্টা করলাম। এখানে গল্পের জন্য একাধিক চরিত্র বা পরিস্থিতি বা স্থান যোগ করা হয়েছে, মূল কাহিনীর সাথে তাই মিল পাওয়া যাবে না। শুধু শিকড়টা ওখান থেকে নেয়া, কান্ড বা ডাল-পালা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]


###

রয়্যাল লাউন্জের প্রদীপের আলোগুলো দেয়ালের ফাঁক-ফোকড় দিয়ে ঠিকড়ে পড়ে সুন্দর নকশা তৈরী করছে ঘরটায়। মধ্যযুগীয় রাজা-বাদশাহদের রংমহলের মতোই ইন্টেরিয়র এখানকার। অন্ধকার ঘরগুলোকে আলাদা করা দেয়াল দিয়ে, প্রতিটা দেয়ালে ফুলঝুড়ি নকশা আর ফাঁকে ফাঁকে প্রদীপ রাখা আর উপরে বড় বড় ঝাড়বাতি। অপূর্ব কালো-সোনালী আলো-ছায়ার খেলা। ঘরগুলোতে হুঁকোর ধোঁয়া কেমন একটা কুয়াশার জন্ম দিয়েছে আর এখানকার বাতাস মেতে উঠেছে মিন্ট ফ্লেভারের ঝাঁঝালো গন্ধে। আলোর কাঁপুনিতে নিচু মখমল-ডিভানে বসা আয়ানকে অসাধারণ রূপবান কোন রাজপুত্রের মত-ই লাগছে। কাটাকাটা চেহারায় প্রকট হয়ে ফুঁটে উঠেছে অস্থিরতা। ওর ক্ষিপ্র আঙুলগুলো মুঠোফোনে এগারোটা হিংস্র আঘাত করে থামলো একটু। কয়েক মুহুর্ত পর ওপাশ থেকে ঐন্দ্রিলার আদুরে ফিসফিসে গলা শোনা যায়, "একটু বসো প্লিজ! ক্লাসটা শেষ করেই আসছি। প্লিজ হানি বি! ওয়েইট সাম মোর মিনজ্!" কোন উত্তর না দিয়ে লাইন কাটে আয়ান। ওয়েইটারকে ডাকে হাতের ইশারায়..."একটা আ্যপল্ মিন্ট তাড়াতাড়ি!" ওয়েইটার সম্ভ্রমের সাথে মাথা ঝাকিয়ে চলে যায়।...এবার আনমনে ভাবতে বসে আয়ান... ঐন্দ্রিলার সাথে প্রায় তিনমাস হলো হুক্ড ও। চিন্তাই করে নি মেয়েটা এতটা সিরিয়াস ব্যপারটায়। এর মধ্য তিনটা সিগরেট পুড়িয়ে চতুর্থটায় আগুন দিল আয়ান... ভাবা দরকার মেয়েটাকে কিভাবে বলবে ব্যপারটা। সহজ-সাপ্টা প্রতিমার মতো মেয়েটা আগুনে গলে যাওয়া মোমের মতো ভেঙে পড়বে। ওর চিন্তার পরিধিতেও নেই আয়ানের বাস্তব অবস্থানটা, নিতেই পারবে না ঘটনাটা। ধুর! মেয়েটাকে এতদূর আসতে দেয়াই উচিৎ হয় নি!

ওদের দেখা হয়েছিল একটা সাইকোলজি কোর্স করতে গিয়ে। ঐন্দ্রিলা ওকে দেখে কথায় কথায় প্রথম দিন-ই মুগ্ধ হয়ে বলেছিল, "জানো ? তুমি দেখতে একদম গ্রিক গডদের মতো! কিংবা কোন রূপকথার পারফেক্ট প্রিন্স এর মতো!" আয়ান ওর নিস্পাপ মুগ্ধ মুখটা দেখে হাসতে হাসতে বলেছে, "গডরা অনেক পবিত্র হয়, আমার মধ্য ঐ পবিত্রতা ব্যপারটা একেবারেই নেই। আর হুমম... প্রিন্সদের মতোই এলোমেলো ক্যরাকটার আমার! মমম...তুমি কিন্তু একদম প্রতিমার মতো, সবদিক থেকে!" ঐন্দ্রিলা লাল হয়েছিল একটু। তারপর তিনমাস কেটে গেছে। ঘনিষ্টতাটা ভালই বলতে হয়। আয়ান ব্যপারটা ততটা গভীরভাবে কখনোই নেয় নি। কিন্তু সেদিন ওর কথার আয়ান বুঝলো যে ব্যপারটা থামানো উচিত। শক্ত দুটা অজুহাত আয়ানের হাতে থাকলেও ওগুলোতে কাজ হয় নি। সত্যিটা এবার বলতেই হবে আয়ানকে। আয়ান সম্পূর্ণ অন্যরকম, এটা বুঝতে হবে ওকে।

সেদিন হঠাৎ-ই ঐন্দ্রিলা বললো, "শোনো, আর এক সেমেস্টার পর-ই আমার গ্রাজুয়েশন শেষ। আমাদের ব্যপারটা বাসায় জানাবো ভাবছি। মাম্মা খুব জ্বালাচ্ছে ছেলে দেখা নিয়ে।" আয়ান ভয়ানক চমকে উঠলো। মরিয়া আয়ান তার অজুহাত দুটা দিল, "একটু ভাবো ডল। আমি তোমার প্রায় এক বছরের জুনিয়র। তাছাড়া আমাদের রেলিজিয়ন-ও তো এক না। মানবে তোমার বাসায় ?" ঐন্দ্রিলা মাথা ঝাকিয়ে বললো, "শোনো, আমার কোন কথা মাম্মা-পাপা শোনে নি এমন কখনোই হয় নি। এটা কোন ব্যপার না। আজকে হোক আর পরে হোক বাসায় তো জানাতাম-ই তোমার কথা। কারন বিয়ে তো তোমাকেই করবো আমি। কিন্তু তোমার বাসায় কি কোন সমস্যা আছে ? আয়ান ডানে-বামে মাথা নাড়ে। ওর ভিষণ সুন্দর ভ্রুজোড়া এলোমেলো ভাবে কুঁচকে যায়। ঐন্দ্রিলা ওর হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, "তুমি কেনো এত চিন্তা করছো বুঝলাম না। দেখো স-ও-ও-ও-ব ঠিক হয়ে যাবে।" আয়ান ওর দিকে তাকিয়ে বললো, "শোনো, এখনি বাসায় কিছু বলো না। চলো পরশু আমরা রয়্যালে বসি, তারপর দু'জন মিলে ঠিক করবো। ওকে মাই সু্ইট লিট্ল ডল ?" ঐন্দ্রিলা হাল্কা হেসে বললো, "অফকোর্স ওকে প্রিন্সি!" তখন-তখনি সিদ্ধান্ত নিলো আয়ান, সত্য বলবে সবকিছু। গ্রীক রূপকথা থেকে মেয়েটাকে বের করে আনার সময় হয়েছে।

###

ওয়েইটার এর পায়ের শব্দে এতক্ষণের ঘোর কাটে আয়ানের। ওয়েটার রাজকীয় হুঁকোটা নামিয়ে রাখে ওর সামনে। বেশ আয়োজন করে পাফ করে ও...মিন্ট-এর ঝাঁঝ মাথাটা বেশ পরিষ্কার করে দেয়। একবার ধোঁয়া ছাড়তে না ছাড়তেই ধোঁয়ার কুন্ডলি থেকে অপ্সরীকে বের হয়ে আসতে দেখলো আয়ান। হন্ত-দন্ত করে ঢুকে ঐন্দ্রিলা ওর পাশে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে, "ইস! দেরী করিয়ে দিলাম অনেক! কি করবো বলো ? স্যার থামেই না।" আয়ান হেসে বললো, "আরে নাহ্! ঠিক আছে। তোমার জন্য স্ট্রবেরি শেক অর্ডার করি ?" ঐন্দ্রিলা হাল্কা "হুমম" দেয়। আয়ান বলে, "শোনো, কোন ভণিতায় না গিয়ে কিছু কথা তোমাকে বলা দরকার।" ঐন্দ্রিলা বলে, "এটাইতো করলে একটা ভণিতা!" আয়ান অসহিষ্ণু গলায় বলে, "তোমার কাছে কিছু ভয়ানক সত্য গোপন করেছি আমি। হয়তো বলতে হতো না কখনো যদি তুমি আমাদের সম্পর্কটা হাল্কা ভাবে নিতে। কিন্তু তুমিও অন্য সব মেয়ের মতো-ই বিয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করলে!" ঐন্দ্রিলা তীব্রভাবে বলে, "তুমি কি বলতে চাচ্ছো? আমি অন্য সবার মতো হুকআপ-ব্রেকআপ এ বিশ্বাস করি না, এটাই আমার দোষ? আর তুমি কি প্লেবয় ভাবো নিজেকে?" আয়ান ঠান্ডা গলায় বললো, "আমি তোমাকে ভেঙে দিতে চাই নি তাই তোমাকে অজুহাত-ও দেখিয়েছি। আমি চেয়েছিলাম ব্রেকআপটা যাতে তোমার তরফ থেকে হয়। কিন্তু তুমি বুঝলেই না। ঐন্দ্রিলা, আমি যতটুকু জড়িয়েছি তোমার সাথে ওটা আমার ভুল ছিল। আমি এমন একজন মানুষ যার পক্ষে সম্ভব-ই না ফ্যামিলি লাইফ এ যাওয়া। আর তুমি আমার ব্যপারে কি-ই বা জানো ? কিভাবে অন্ধের মতো বিয়ের কথা ভাবলে ??" ওর ঠান্ডা গলায় ঐন্দ্রিলার ভেতরে থরথরে একটা আতঙ্ক হলো, ছেলেটাকে এমন লাগছে কেন! আয়ান শান্ত অথচ শক্ত-দৃঢ় গলায় বললো, "ঐন্দ্রিলা, আজকে একটা গল্প শোনাবো তোমাকে যা কাউকে কখনো বলি নি আমি। তোমাকে বলবো কারণ তুমি খুব সরল একটা মেয়ে, "বাস্তবতা"-র সাথে একটু হলেও পরিচয় হওয়া দরকার তোমার। আর হ্যা! আমার খুব ভাল একটা বন্ধু ছিলে তুমি, তাই বলবো কাহিনীটা। তুমি গল্পটা শুনবে আর তারপর দেখবে আমার ব্যপারে নিজেই ভাবছো নতুন করে। সবচেয়ে ভাল হবে মুছে ফেলতে পারলে আমাকে। সত্যি বলতে কি, আমার তোমার জন্য কখনোই খুব একটা ফিলিংস ছিল না। আমার মতো মানুষের কারো জন্য ঐ ব্যপারগুলো আসে না।"

ঐন্দ্রিলা অবাক হয়ে দেখছে আয়ানকে, এতদিনের দেখা দেবতাটা কেমন আস্তে আস্তে দানবে রূপ নিচ্ছে ! আয়ান স্থির ভাবে কিছুক্ষণ নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে ঐন্দ্রিলাকে এক ভয়ংকর অন্ধকারের জগৎ-এর গল্প শোনানোর প্রস্তুতি নেয়।



[চলবে]

রুপকথার শেষটুকু ...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মার্চ, ২০১২ রাত ১২:৫৮
৩৫টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×