গ্লোবালাইজেশনের ফলে পৃথিবী এখন বর্ডারলেস হয়ে গেছে। আগেকার মতো শুধু যুদ্ধই রাষ্ট্র দখলের একমাত্র উপায় না। যুদ্ধ ছাড়াও এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের উপর দখল নিতে পারে! দখলের এই প্রক্রিয়াটি কেউ করছে পণ্য দিয়ে, কেউ করছে সংস্কৃতি দিয়ে।
বিশ্বায়নের ফলে খুব সহজেই এক দেশের পন্য আরেক দেশের অর্থনীতির উপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে, কৌশলে সেই দেশের উপর প্রতিষ্ঠা করছে নিজেদের দখলদারী কর্তৃত্ব। আবার পণ্য ছাড়া শুধু সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমেও দখলদারিত্বের রূপ এই শতক দেখছে। সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কথা বলে একটি দেশের সংস্কৃতির উপর দখলদারী রাষ্ট্র চাপিয়ে দিচ্ছে নিজেদের সংস্কৃতি, আমূল পরিবর্তন করে দিচ্ছে সেই দেশের কৃষ্টি-সভ্যতা।
একবিংশ শতাব্দীর এই দশকে এসে একটি রাষ্ট্র আরেকটি রাষ্ট্রের উপর নিজেদের কৌশলগত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে খেলাধূলাকেও। এখন খেলাধূলা আর সাধারণ জয়-পরাজয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, প্রতিটি জয়-পরাজয়ই সমগ্র দেশের জয়-পরাজয়। আর এই নতুন প্রক্রিয়ায় চলছে বিশ্বব্যাপী ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তি থেকে তৃণমূল পর্যন্ত মনস্তাত্ত্বিক লড়াই এবং খেলোয়াড়দের খেলাশৈলীর মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা।
১৯৭১ সালে আমরা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীর দেশপ্রেমিক অফিসার, সৈন্য, সাধারণ জনতার মধ্য থেকে উঠে আসা সাহসী মুক্তিযোদ্ধাদের মিলিত প্রচেষ্টায় পাকিস্তানী বর্বর হায়েনাদের পরাস্ত করেছিলাম। আজ এই ২০১৫ সালে এসে বাংলার বাঘ ক্রিকেট খেলোয়াড়দের মাধ্যমে পাকিদের বাংলা ওয়াশ করলো বাংলাদেশ।এরপর একে একে ভারতের সাথে দেশের মাটিতে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়,গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২-১ এ হারিয়ে সিরিজ জয়। বিগত বেশ কয়েকবছর যাবৎ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল একটি সম্ভ্যাবনাময় টিম হিসেবে আগমনী বার্তা দিয়ে আসতে থাকলেও সেই বার্তার পরিপূর্ণতা পায় গত বিশ্বকাপ ক্রিকেট থেকে।
এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে, ক্রিকেটে আমাদের এই অনবদ্য সাফল্যের পিছনে জাতি হিসেবে আমাদের ক্রিকেটপ্রেমী মনোভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিক থেকে চিন্তা করতে গেলে আমরা ভাগ্যবান, কারণ আমরা একজন ক্রিকেটপ্রেমীকে আমাদের রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে পেয়েছি, যিনি সমাজের সর্বক্ষেত্রে নিজের পজেটিভ এবং দক্ষ ভূমিকার জন্য স্বীকৃত।
আমাদের সেই মহান রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং ইচ্ছাশক্তির বলেই খেলাধূলায় বাংলাদেশের সুদৃঢ় অবস্থান নিশ্চিতের জন্য পুরো সেক্টরটাকেই আধুনিকায়ন করেছেন, ঢেলে সাজিয়েছেন এই সেক্টরের সমগ্র প্রশাসনকে। বিশেষ করে, ক্রিকেটের ক্ষেত্রে উন্নত মানের প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণ, অবকাঠামো, খেলোয়াড়দের উচ্চ বেতন, সহ নানান ব্যবস্থা যে তার সদিচ্ছার প্রতিচ্ছবি তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোরতর বিরোধীরাও অস্বীকার করতে পারবে না।
ক্রিকেটে আমাদের এই সাফল্য একদিনের প্রচেষ্টায় হয়নি, তিল তিল করে প্রতিটা দিনের কষ্টে, দীর্ঘ পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে আমাদের এই ক্রিকেট দল।
একজন ক্রিকেটপ্রেমী হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এই সাফল্য বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার, এই বিজয় শহীদ মুস্তাকের, এই বিজয় শহীদ জুয়েলের, এই বিজয় বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সকল জনগণের।
লেখক: এইচ এম আল-আমিন আহমেদ ,সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ ছাত্রলীগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৮