somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ১২)

১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুলক আর রীতা। আপাতত গল্পের প্রধান দুই চরিত্র। এই পর্বে আমরা এই দুই চরিত্রের আশেপাশে থাকা মানুষদের নিয়ে কথা বলবো। আমাদের জীবনের উপর আমাদের আশেপাশের মানুষের প্রভাব অনস্বীকার্য। ঠিক তেমনি পুলক আর রীতার জীবনেও তাঁদের আশেপাশের মানুষদের প্রভাব অনস্বীকার্য।

পুলকের মা আফরোজা আক্তার একজন মানসিকভাবে শক্ত মানুষ। জীবনে কম ঘাত-প্রতিঘাত তিনি সহ্য করেননি। কিন্তু কোনকিছুই তাঁকে দমাতে পারেনি। নিজের সম্মান, নিজের পায়ের উপর ভিত্তি স্থাপন করার জন্যই তিনি লড়ে গেছেন। অনেক কম বয়সেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন যে এ জগতে অসহায়দের দয়া দেখানো ছাড়া এ সমাজ কিছু করে না। তিনি নারী হয়ে জন্মেছেন বলেই যে সবার দয়া দাক্ষিণ্যে তাঁকে চলতে হবে, তা তিনি মানতে পারেননি। সমাজের এই ভুল তিনি ভেঙ্গেছেন। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। দুর্বল মানুষদের জীবনে চলার জন্যে অন্য কারো সহায় লাগে। আফরোজা সেই দুর্বলদের দলে নন। নিজের পথ তিনি নিজেই চলেছেন। কিন্তু তারপরো জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে গিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার একটা অজুহাত লাগে। একটা কারণ লাগে। একটা উদ্দেশ্য লাগে। তাঁর ছেলে পুলক হলো তাঁর জীবনের সেই উদ্দেশ্য। বেঁচে থাকার কারণ। এই এক জায়গায় আফরোজা দুর্বল। পুলকের বাবার সাথে ছাড়াছাড়ির পর নতুন করে জীবন শুরু করার হাতছানি তাঁর কম ছিল না। কিন্তু কেন জানি তাঁর মনে হয়েছিল বিয়ে বা সংসার হয়তো ঠিক তাঁর জন্য না। তিনি তাঁর মন-প্রাণ দিয়ে ছেলেকে বড় করেছেন। শুধু আদর দেননি। শুধু শাসন করেননি। যখন যা দরকার ছিল তাই করেছেন। তাঁর এই সংঘাতময় জীবনে ছেলে তাঁর একনিষ্ঠ সঙ্গী। পুলককে তিনি নিজের মনের মত করে তৈরি করেছেন। নিজের বিশ্বাস, আদর্শ সবকিছু ছেলেকে শিখিয়েছেন, বুঝিয়েছেন। এখন ছেলে বড় হয়েছে। বিয়ের বয়স হয়েছে। ছেলের জন্য মেয়ে দেখছেন। বিয়ের পর ছেলে যে একটু হলেও ভাগ হয়ে যাবে তা তিনি জানেন। কিন্তু আফরোজা বাস্তববাদী মানুষ। যখন যা করার সময় তাই করা উচিৎ। তিনি আর দশটা মায়ের মত না। জীবন দেখেছেন তিনি। একলা মহিলা কিভাবে সমাজকে সামলে জীবন চালাতে হয়, সন্তান বড় করতে হয়, জানেন তিনি। টিভি সিরিয়ালের শাশুড়ি তিনি হবেন না। ছেলে বড়। তাঁর নিজস্ব বিচার বিবেচনাতে সে জীবন চালাবে। সেখানে তিনি কোন হস্তক্ষেপ করবেন না। সারাজীবন চাকরি করেছেন। বাকি জীবন নিজের টাকায় চলার সামর্থ্য তাঁর আছে। সেরকম কিছু দেখলে ছেলে বউকে রেখে বের হয়ে যাবেন। সবরকম মানসিক প্রস্তুতি তাঁর নেয়া আছে। জীবনে কখনো কারো বোঝা হননি। এই শেষ বয়সে এসেও হবেন না।

রীতার মা নাজমা হক সম্পর্কে বলা হয়েছে যে উনি খুব কড়া। হ্যাঁ, মেয়েদের বেলায় বরাবরই তিনি কড়া। কিন্তু মা হওয়া ছাড়াও একজন মানুষ হিসেবেও তাঁর একটা পরিচয় থাকা উচিৎ। কলেজে পড়ার সময় রীতা মিতার বাবার সাথে তাঁর বিয়ে হয়। সৎ পাত্র পেয়ে বেশ খুশি হয়েই নাজমা হকের বাবা মেয়েকে বিয়ে দেন আরিফুল হকের সাথে। সেই কলেজে পড়ার সময় নাজমা হক একটু ছেলেমানুষ ছিলেন। তিনি ভাবতেন বিয়ে করে সে তাঁর স্বামীর সাথে সেইসব শখ পূরণ করবেন যা তিনি তাঁর বাবা-মায়ের সাথে থেকে করতে পারেননি। তাঁর ইচ্ছা ছিল সিনেমার মত জ্যোৎস্না রাতে আরিফ আর নাজমা একসাথে হাত ধরে ছাদে থাকবে। সারারাত বাইরে রিক্সা দিয়ে ঘুরবে। এরকম আরো কত কী!!! কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল তাঁর স্বামী আরিফুল হকের গুণ ওই একটাই। সততা। তাছাড়া তিনি খুবই বেরসিক মানুষ। অফিস করে এসে ঘুম। এর বাইরে যে কোন কাজ থাকতে পারে বা তাঁর স্ত্রীর কোন কথা থাকতে পারে এটা তাঁর কখনোই মনে হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই ছেলেমানুষ নাজমা হক খুব বেশীদিন ছেলেমানুষ রইলেন না। আমাদের দেশের গৃহিণীদের এমনিতেও খুব বেশীদিন ছেলেমানুষ থাকা হয়ে ওঠে না। শাশুড়ি, ননদ আর স্বামীর মনমত চলতে গিয়েই কবে যে মন একটু একটু করে প্যাঁচালো হয়ে ওঠে তা গৃহিণীরা নিজেরাই বুঝতে পারেন না। একটু একটু করে নিজের চাওয়া পাওয়ার অবদমন দেখতে দেখতে কখন যে তাঁদের মন নিরেট পাথর হয়ে যায় তাও তাঁরা বুঝতে পারেন না। এ পৃথিবীতে সবাই প্রতিবাদ করে না। বাড়ির বউরা তো আরো না। তাঁদেরকে শিখানোই হয় চুপ করে থাকতে। কষ্টে বুক ফেটে গেলেও মুখ যেন না ফাটে। আর দশটা গৃহিণীর মতই নাজমা হক নিজের রাগ হতাশা সব সময় নিজের মধ্যে ধরে রাখতে পারেন না। মাঝে মাঝে আশেপাশের মানুষের উপর উগড়ে দেন। সবচেয়ে বেশি উগড়ান বড় মেয়ে রীতার উপর। বেচারী সারাদিন তাঁর বকা খায়। কিচ্ছু বলে না। নাজমা হক যে ভিতরে ভিতরে কত অসহায় তা কি তাঁর এই মেয়ে বোঝে!!

হ্যাঁ, রীতা বোঝে। আগে না বুঝলেও, এখন বুঝতে চেষ্টা করে সে তাঁর মাকে। খুব বেশি চেষ্টা করা লাগে না। কারণ সে তাঁর মাকে খুব ভালোবাসে। ভালোবাসার মানুষের সাত খুন মাফ রীতার কাছে। ছোটবেলা থেকেই তাঁর সব সিদ্ধান্তই তাঁর মায়ের নেওয়া। কোন ড্রেস পড়বে, কোথায় যাবে, কোথায় যাবে না। কে তাঁর বন্ধু হবে, কে হবে না। সব। মাঝে মাঝে তাঁর অভিমান হলেও পরে তাঁর মনে হত মায়ের কথাই ঠিক। তাঁর চেতন-অবচেতন দুই মনই তাঁর মায়ের কাছে ধরা দেয়া। সেটা রীতা এখনো তেমন করে টের পায়নি। হয়তো অদূর ভবিষ্যতেই পাবে। তাঁর মা যে একজন অসুখী মহিলা তা টের পায় রীতা। বাবার সাথে কোথায় যেন একটা বোঝাপড়ার গণ্ডগোল আছে। সেটা খুব সূক্ষ্ম। ভালমত খেয়াল না করলে বোঝা যায় না।


নাজমা হকের আজকে মেজাজ অনেক খারাপ। ডাক্তার পাত্ররা রীতাকে দেখতে আসতেই রাজি না। তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখেছে রীতা নাকি কোন ছেলের সাথে নিয়মিত ঘুরাফিরা করে। এরকম একটা মিথ্যা কথা তাঁরা কার কাছ থেকে শুনল তিনি বুঝতে পারছেন না। নাহয় তাঁর মেয়ে একটু শ্যামলা। তাই বলে!!! মেজাজ ঠিক করতে টিভি ছাড়লেন। সিরিয়াল চলছে। উফফ!! এখন এইসব ঝগড়া-ঝাটি দেখার সময় আছে। জীবন তো এইসব দেখেই কেটে গেল। বিয়ের প্রথম দিকে আরিফকে একবার বলেছিলেন দুজনে মিলে ছাদে জ্যোৎস্না দেখবেন। আরিফ বলেছিল আগামী মাসে। বিয়ের ত্রিশ বছর চলে গেল। সেই আগামী মাস এখনো আসেনি। আর কখনোই আসবে না। বাস্তবে ফিরে এলেন নাজমা। ছেলেটা এইভাবে হাতছাড়া হয়ে গেল। তাঁর চেয়েও বড় কথা হল মেয়ের নামে কুকথা ছড়িয়ে গেল। সামনেই মেয়ের এম.বি.এ ফাইনাল। ছুটি শেষ গরমের। আবার ক্লাস শুরু হয়েছে। চাকরী করার ইচ্ছা মেয়ের। এই ইচ্ছায় তিনি আপত্তি করেন না। নিজের পায়ে মাটি রাখার দরকার আছে।

পর্ব-১
Click This Link

পর্ব-২
Click This Link

পর্ব-৩
Click This Link

পর্ব-৪
Click This Link

পর্ব-৫
Click This Link
পর্ব-৬
Click This Link

পর্ব-৭
Click This Link

পর্ব-৮
Click This Link

পর্ব-৯
Click This Link

পর্ব-১০
Click This Link

পর্ব-১১
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×