somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ১৬)

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ ভোর ৪:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পুরো ঘটনা কিন্তু পুলক বেশ স্বাভাবিকভাবেই নিল। যদিও কিছুটা খটকা থেকে যায়। যেখানে পুলকের সাথে রীতার বিয়ের জন্যই দেখা হয়েছিল এবং দুই পরিবারের সম্মতিতেই হয়েছিল। সেখানে এখন হঠাৎ করে কী সমস্যা দেখা দিতে পারে!! হ্যাঁ, পুলকের মা ডিভোর্সি। এটা তো তাঁরা লুকায়নি কখনো। রীতার মায়ের বান্ধবী তনুজা, উনার সাথেই পুলকের মা আফরোজা আক্তারের বিস্তারিত কথা হয়েছিল। যাই হোক!! এত কিছুর পরেও পুলক খুব একটা হতাশ হয়নি। রীতাকে সে ভালোবাসে। ‘ভালোবাসা’ কথাটা ঠিক পুলকের পছন্দ না। তাঁর কেন জানি মনে হয় রীতার জন্য তাঁর যে অনুভূতি তা শুধুমাত্র একটা শব্দ দিয়ে বোঝানোর মত না। এই ‘ভালোবাসা’ শব্দটা এখন ছেলে মেয়েরা দুই দিনের দেখাতেও ব্যবহার করে। তাঁর আর রীতার সম্পর্ক এত অগভীর না। ইংরেজিতে একটা শব্দ আছে ‘shallow’। মানে হচ্ছে ‘অগভীর’। তাঁর আর রীতার সম্পর্ক এত shallow না। পছন্দের মানুষের মধ্যে বন্ধু খুঁজে পাওয়া যে কোটি টাকার লটারি পাওয়ার চেয়েও বেশী। তা পুলক খুব ভালো করেই জানে। তাই এটা যে এত সহজে পাওয়া যাবে না। এটাও পুলক জানে। এর জন্য সে মানসিকভাবে তৈরি আছে। তাঁর এখন দায়িত্ব হল রীতাকে শান্ত রাখা। মেয়েটা মুষড়ে পড়েছে। মেয়েটা খুব সহজে কাহিল হয়ে পড়ে। পৃথিবীর কয়টা প্রেম বাবা-মা একেবারে হাসিমুখে মেনে নিয়েছে!!! খুব কম। তাঁরা দুইজন যদি শক্ত থাকে। নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখে! তাহলে কতদিন ওঁর মা বেঁকে থাকবে।

কিন্তু রীতা এমনি এমনি মুষড়ে পড়েনি। সে চেনে তাঁর মাকে। যা একবার না। তা না-ই থাকে। তা কখনো হ্যাঁ হয় না। আর তাছাড়া তিনি প্রতিদিন রীতাকে একা পেলেই কেন পুলককে তাঁর বিয়ে করা ঠিক হবে না তা শোনান। এসব শুনে রীতার প্রচণ্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। সে পুলককে ফোন করে কাঁদে। পুলক তাঁকে অনেক বোঝায়। সে মায়ের সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু রীতা মানা করে। আর কিছুদিন যাক। দেখা যাক!! মাকে রাজি করানো যায় কিনা। কিন্তু সে ভেতরে ভেতরে জানে যে নাজমা হক কখনো রাজি হবে না। সেই মানুষ নাজমা হক নন।

রীতা শুয়ে ছিল। এমবিএর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। আজকাল আর বের হওয়াই যায় না। চাকরীর জন্য চেষ্টা করছে রীতা। অনলাইনে খুব অ্যাপ্লাই করছে। দেখা যাক কী হয়!! ঘরে থাকতে থাকতে তাঁর মন বিষিয়ে উঠছে। দরজা খুলে কেউ ঢুকছে। রীতা ভাবল মা ঢুকছে। সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। জেগে থাকলেই মা আবার তাঁকে পুলককে নিয়ে খারাপ কথা শোনাবে। পুলকের সাথে বিয়ে হলে সে কখনো সুখী হবে না। পুলককে তিনি কখনো মেনে নেবেন না। মায়ের এক ছেলেরা কখনো মায়ের কথা ছাড়া চলে না। পুলকের মা নিজে সংসার করতে পারেনি। তিনি কখনোই ছেলের বউকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না। নিজের সংসার না করার ঝাল ঠিকই তিনি ছেলের বউয়ের উপর উঠাবেন। রীতা জীবন দেখেনি। তিনি তো দেখেছেন। রীতার ভাল-মন্দ তাঁর চেয়ে ভালো কে বুঝবে!! এরকম আরো নানা কথা!! রীতার এসব শুনতে শুধু যে ভালো লাগে না তা না। তাঁর প্রচণ্ড কষ্ট হয়। পুলককে সে কতটা পছন্দ করে, পুলক তাঁর জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা যদি মা একটিবার বুঝত!!
নাজমা হক না। ঘরে ঢুকল মিতা। সে আজ স্কুল যায়নি। তাঁর শরীর ভালো না। হাল্কা জ্বর জ্বর আছে। সে এতক্ষণ মায়ের ঘরে শুয়ে ছিল।
রীতা বোনকে জিজ্ঞেস করল-
-কিরে!! তোর শরীর কেমন? জ্বর আছে এখনো?
মিতার কপালে হাত দিল রীতা। না তেমন জ্বর নেই। ঘামছে এখন মিতা। বড় বোনের পাশে শুয়ে পড়ল। হঠাৎ রীতার দিকে ঘুরে মিতা বলল,
-আপু!! তুমি কি একটা কথা জানো?
-কি কথা?
বোনটার দিকে তাকাল রীতা। এই বোনটা এই পুরো পরিবারের সবচেয়ে আদরের। ওঁর চুলে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো রীতা।
-কই? বল কি কথা?
-মা যে তোমাকে তাবিজ কবজ করছে এটা কি তুমি জানো?
-মানে???
বিস্ময়ে রীতা আর কিছু বলতে পারল না।
-হুম!! তুমি যখন ছাদে গেসিলা তখন তোমার বালিশ ছিঁড়ে তাবিজ ঢুকায়ে আবার বালিশ শিলাই করে রাখসে।
-দেখ মিতা!!! বানায়ে বানায়ে কথা বলা আমি একদম পছন্দ করি না। আর মা অকারণ কেন আমাকে তাবিজ করবে!! তুই দিনকে দিন এরকম......।
রীতা কথা শেষ করতে পারল না। মিতা রীতার মাথার বালিশটা টান দিয়ে কি যেন হাতড়ে খুঁজতে শুরু করল। কি যেন পেয়েও গেল। পেয়ে রীতার হাতটা টেনে নিজের দিকে নিয়ে বালিশে পাওয়া জিনিশটা ধরাল। রীতা ধরে দেখল। হ্যাঁ, তাবিজের মতই কিছু একটা।
মিতা বলল,
- তোমরা তো ভাব আমি বাচ্চা। আমি মোটেও বাচ্চা না। আমি সব বুঝি। আমি সব জানি।
রীতা তাঁর বোনের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। মিতা আবার মাথা ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল।
...................................................................................................

প্রেমের সম্পর্কে প্রেমিক-প্রেমিকার পালিয়ে বিয়ে করা নতুন নয়। কিন্তু এখানে আমাদের গল্পের পাত্র-পাত্রী পালিয়ে বিয়ে করতে একেবারেই নারাজ। পুলকের যুক্তি এখানে প্রবল। সে কখনো তাঁর মায়ের অমতে রীতাকে বিয়ে করত না। যে মা তাঁকে এত বছর কষ্ট করে পেলে বড় করেছে। তাঁকে কষ্ট দিয়ে সে বিয়ে করবে না। কয়েক বছরের সম্পর্কের জন্য এত বছরের সম্পর্ক ভাঙ্গার কোন মানে সে খুঁজে পায় না। যে যুক্তি সে নিজে মানে সেই যুক্তির বিপরীতে সে রীতাকে কিছু করতে বলে না। রীতাও পুলকের সাথে একমত। পুলকের ইচ্ছা রীতার বাবা-মায়ের সাথে সে কথা বলবে। তাঁদেরকে সে অবশ্যই বোঝাবে। পুলক গুছিয়ে কথা বলতে পারে। সে অবশ্যই রীতার বাবা-মাকে রাজি করাতে পারবে। শুধু রীতাই কেন জানি পুলককে না করে যাচ্ছে সেই কবে থেকে।

এদিকে রীতার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মাঝে একদিন রীতা অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল। এত মানসিক চাপ বোধহয় সে আর সহ্য করতে পারছিল না। নাজমা হকও মেয়ের পরিস্থিতিতে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। এখন তাঁর সুর নরম। কিন্তু মোটেও তা পুলক আর রীতার পক্ষে না। সে এখন নরম সুরে মেয়েকে বোঝায় যে, রীতা এখন তাঁকে বুঝতে পারছে না। কিন্তু একদিন ঠিকই বুঝবে যে মা যা বলেছিল তাই ঠিক।

রীতা কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। ছোটবেলা থেকেই মায়ের কথাই তাঁর কাছে ধ্রুব সত্যি। মায়ের সব নিষেধ সে মন থেকে মেনে নিত। শুরুতে কষ্ট লাগলেও পরে মনে হত এটাই ঠিক ছিল। তখন তাঁর জীবনে পুলক ছিল না। এখন পুলক আছে। পুলককে শুধু সে তাঁর প্রেমিক হিসেবে দেখে না। তাঁর বন্ধু, মেন্টর। আর দশটা পাঁচটা সম্পর্কের মত তাঁদের সম্পর্ক না। এটা সে মাকে কিভাবে বুঝায়!! রীতার বুকটা ভারী হয়ে উঠল বেদনায়। আজকাল মাঝে মাঝে সে মায়ের বলা কথাগুলো ভাবে। ছোটবেলার মতই কখনো কখনো তাঁর মনে হয় যে যদি মায়ের কথাগুলো সত্যি হয়। যদি সে আসলেই পুলকের সাথে সুখী না হয়? পুলক যদি তাঁকে অত্যাচার করে? এসব ভেবে তাঁর মনটা অপরাধবোধে ভরে যায়। কিন্তু মাঝে মাঝেই ভাবনাগুলো আসে। পুলককে সে তাঁর সব কথা বলে। এই ভাবনাগুলোর কথা সে কখনো ওঁকে বলে না, বলতে পারবেও না।

পর্ব-১
Click This Link

পর্ব-২
Click This Link

পর্ব-৩
Click This Link

পর্ব-৪
Click This Link

পর্ব-৫
Click This Link

পর্ব-৬
Click This Link

পর্ব-৭
Click This Link

পর্ব-৮
Click This Link

পর্ব-৯
Click This Link

পর্ব-১০
Click This Link

পর্ব-১১
Click This Link

পর্ব-১২
Click This Link

পর্ব-১৩
Click This Link

পর্ব-১৪
Click This Link

পর্ব-১৫
Click This Link
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যমদূতের চিঠি তোমার চিঠি!!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:০৮

যমদূতের চিঠি আসে ধাপে ধাপে
চোখের আলো ঝাপসাতে
দাঁতের মাড়ি আলগাতে
মানুষের কী তা বুঝে আসে?
চিরকাল থাকার জায়গা
পৃথিবী নয়,
মৃত্যুর আলামত আসতে থাকে
বয়স বাড়ার সাথে সাথে
স্বাভাবিক মৃত্যু যদি নসিব... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×