somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ১৮)

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘রক্তাক্ত প্রান্তর’ নামে মুনীর চৌধুরীর একটা নাটক আছে। নাটকের একটা সংলাপ খুব জনপ্রিয়। সংলাপটা মানুষ কারণে অকারণে ব্যবহার করে। ‘মানুষ মরে গেলে পচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়’। এখন মানুষ যে বদলায় এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানুষ কখন বদলায়? মানুষ বদলায় পরিস্থিতি বদলের সাথে সাথে। জেলে বন্দি থাকা মানুষ এক রকম। সেই একই মানুষ মুক্তি পেলে অন্য মানুষ। দুঃখে থাকা মানুষ এক রকম। আবার সেই একই মানুষ দুঃখ কাটিয়ে উঠলে অন্য মানুষ। পরিস্থিতি বদল। মানুষ বদল। নিজের বদলে যাওয়া সম্পর্কে মানুষ নিজেই অবগত না। কারণ পরিস্থিতির বদলে যাওয়া সম্পর্কেও মানুষ আগে থেকে বলতে পারে না। এমতাবস্থায়, আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই বলতে পারি যে মানবজাতি একটি অননুমেয় জাতি।

চাকরীর আগে রীতার জীবন ছিল অসম্পূর্ণ। সেই অসম্পূর্ণ জীবন পূর্ণ হয়েছিল পুলকের মত একজনকে পেয়ে। যে তাঁর জীবনের সব সমস্যাগুলোর ভার নিয়ে নিয়েছিল। রীতার কষ্ট হলে রীতা সেই কষ্টের ভারটা পুলকের কাঁধে রেখে হাল্কা হতে পারত। তাঁর তথাকথিত বন্দি জীবনে পুলকই ছিল আশ্রয়।

এরপর চাকরী পাওয়ার পর পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটল। রীতার সামনে খুলে গেল নতুন জগৎ। যে জগতে পুলক আর তাঁর মা ছাড়াও বহু লোক আছে। যে দুনিয়াতে সময় কাটালে সব দুশ্চিন্তা ভুলে থাকা যায়। ততদিনে ‘পুলক’ নামক ব্যক্তিও তাঁর দুশ্চিন্তার তালিকার মধ্যে ঢুকে গেছে।

প্রত্যেক মানুষের জীবনেই এমন একজন থাকে যার অনুমোদন ছাড়া সামনে এগোতে ঠিক সাহস হয় না। মনে যেন একটা কামড় লেগে থাকে। হতে পারে সেই মানুষটি আমাদের মা-বাবা, বন্ধু অথবা এর চেয়েও কাছের কোন মানুষ। কিন্তু এই কাছের মানুষের সংখ্যা যদি একের বেশি হয় আর তাঁদের মতামত যদি একই রকম না হয় তখন হয় একটি বিরাট সমস্যা।

রীতার কাছে পুলক আর তাঁর মা এরকমই দুজন মানুষ। যাদের মধ্যে থেকে একজনকে বেছে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব না। তাই সে এসব থেকে যতদূরে থাকা যায় থাকছে। অফিস করে দেরী হলেও মা এখন আর তাঁকে কিছু বলে না। এখন মেয়ে জব করে। মেয়ে বড় হয়েছে। তাও মেয়েকে জিজ্ঞেস করে-
-কীরে!! এত দেরী কেন?
-ওই শেষ দিকে আরিফ ভাই প্ল্যানিং এর ডিটেইলস জানতে চাইল। তারপর সবাই মিলে FFC তে কফি খেলাম। তাই দেরী হয়ে গেল।
নাজমা হক কিছু বলেন না। তবে তাঁর মাঝে কোন অসন্তোষ দেখা দেয় না। অফিস এর কলিগদের সাথে হাল্কা মেলামেশা তাঁর কাছে দোষনীয় মনে হয় না। খালি মৃদু স্বরে একবার বলেন-
-ভালো!!! অন্য কিছু না করলেই হলো।
কথাটা রীতা শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়।
যতক্ষণ মেয়ে পুলক নামক ছেলেটার থেকে দূরে থাকবে ততক্ষণ তাঁর কোনকিছুতেই আপত্তি নেই।

পুলকও আস্তে আস্তে রীতার পরিবর্তনগুলো টের পাচ্ছে। সে রীতাকে বোঝার চেষ্টা করছে। এমন একটা সময় ছিল যখন পুলককে কেউ মেনে নিতে পারত না। পুলকের মনে হত তাঁর জন্য এই পৃথিবীতে এমন কেউ নেই যে তাঁকে বুঝবে। সেই সময় রীতা তাঁর জীবনে এসেছিল। সে যেমন তেমন করেই। এখনকার পুলক আর আগের মত চট করে রেগে যায় না। সে বড় হয়েছে। এই ‘বড়’ সে হয়েছে রীতার সহযোগিতায়। সে এখন ঘটনার পিছনের ঘটনা বোঝার চেষ্টা করে।

রীতার সাথে তাঁর আজকাল ওইভাবে ফোনে কথা হয় না। এমন না যে আগেও খুব হত। কিন্তু এটা নিয়ে কখনোই পুলকের অভিযোগ নেই। বাসায় সমস্যা হচ্ছে। যখন রীতা সুযোগ পাবে তখন ফোন করবে। এটা নিয়ে অশান্তি করার তো কিছু নেই। হ্যাঁ, বাইরে আগে দেখা হত ভালই যখন রীতার ক্লাস থাকত। এরপর তো রীতা আর বাইরে তেমন বের হত না। তাই দেখাও হত না। এটা নিয়েও কেন জানি পুলকের তেমন অস্থিরতা ছিল না। এই পুরো সম্পর্কটাতেই পুলকের মধ্যে একটা নিরাপত্তাবোধ ছিল। ‘নিরাপত্তাবোধ’ শব্দটার বদলে আমরা যদি ইংরেজি শব্দ ‘secure’ ব্যবহার করি তাহলে হয়তো ব্যাপারটা আরো ভালো বোঝা যাবে। এরপর পুলকের কথা রীতা ওঁর মাকে বলল। এতে মাসখানেক রীতার খুব খারাপ সময় গেল। সৌভাগ্যবশত রীতার চাকরিটা হয়ে গেল।

কিন্তু এখন মাঝে মাঝে দেখা হলেও রীতাকে কেমন যেন অচেনা লাগে। এ যেন তাঁর আগের রীতা নয়। আগে রীতা অনেকদিন দেখা না হলে অস্থির হয়ে যেত। দেখা হওয়ার পর খুশিতে কিছুটা আবেগী হয়ে যেত। অনেকক্ষণ হাত ধরে বসে থাকত। কিন্তু এখন কোথাও যেন কিছু একটা গরমিল আছে। কিছু একটা নেই। কি নেই!!! সেটাই পুলক ধরতে পারছে না। পুলক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রীতাকে কত কিছু জিজ্ঞেস করে। এটাও নতুন। আগে রীতাকে তাঁর এত কিছু জিজ্ঞেস করা লাগত না। রীতা নিজে থেকে তাঁকে সব বলত। মাঝে মাঝে পুলক একটু হতাশ হয়ে যায়। হতাশা থেকে আসে রাগ। নিজেই নিজের রাগকে প্রশমিত করে। প্রশমিত রাগ থেকে আসে স্থবিরতা। সে কিছু বুঝে উঠতে পারে না।

আজকাল রীতার বাইরে বেশ পার্টি থাকে। সেরকমই এক পার্টি হচ্ছে পিজা হাট এ। পুলক রীতাকে ফোন দিল।
-হ্যালো!!
-হ্যাঁ, বল।
-কোথায় তুমি?
-আমি একটু পিজা হাট এ। অফিস এর কলিগদের সাথে আছি।
-আমি যে আজকে তোমার সাথে দেখা করতে চাইলাম। তুমি তো বললে আজকে বাসায় তাড়া আছে।
-হ্যাঁ ছিল। বাসায় বলে দিয়েছি ফোন করে যে আসতে দেরী হবে।

রীতার স্বর ঠাণ্ডা। কোন অপ্রস্তুতকর ভাব নেই গলায়। যেন এটাই স্বাভাবিক। পুলকের খুব রাগ হওয়ার কথা ছিল। খুব চেঁচানোর কথা ছিল। রাগে পাগল হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রীতার ঠাণ্ডা নিঃস্পৃহ গলায় পুলক যেন অনুভূতিহীন হয়ে গেল। কার কাছে রাগের দাবি জানাবে!! এ তো তাঁর চেনা কাউকে মনে হচ্ছে না। এ অন্য কেউ। ‘ও আচ্ছা’ বলে ফোন রেখে দিল। শুরু হল পুলকের অভিমান জমা।


প্রিয় মানুষকে খুব বেশী অভিমান করতে দেওয়া উচিৎ না। কারণ একটু একটু করে অভিমান জমে পাহারসম অভিমান জমা হয়। সেই পাহাড় সরানোর ক্ষমতা আমাদের আর থাকে না।

রীতা জানে এসব। সে জানে সে পুলকের সাথে ঠিক করছে না। কিন্তু তাঁর জীবনের এত জটিলতা আর ভালো লাগছে না। সে সব ঝামেলা থেকে মুক্তি চায়। যেখানে তাঁকে পুলক আর তাঁর মায়ের মধ্যে থেকে কাউকে বেছে নিতে হবে না। যেখানে তাঁর কোন মানসিক অশান্তি থাকবে না। একমাত্র কাজের মধ্যে, কাজের মানুষদের সাথে থাকলে সে এসবকিছু ভুলে থাকতে পারে। তাই সে যতক্ষণ পারে বাইরে কাটায়। এতে করে যে তাঁর আর পুলকের মধ্যেকার সুন্দর সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এটাও সে বুঝতে পারছে। কিন্তু তাঁর কিচ্ছু করতে ইচ্ছা করছে না। পুলক অভিমান করে আছে। একটা ফোন করলেই পুলকের সব রাগ অভিমান পানির মত গলে যাবে। সব জানে সে। কিন্তু রীতার কিচ্ছু করতে ইচ্ছা করছে না। কেন করছে না। তাও সে জানে না।

এক সপ্তাহ হয়ে গেছে পুলক রীতাকে কোন ফোন দেয় না। রীতা মাঝে মাঝে পুলককে ফোন এসএমএস করে। পুলক খুব ফরমালি রিপ্লাই করে। যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু পুলক বেশিক্ষন এই মাইন্ড গেম খেলতে পারলো না। পুলক সেই মানুষদের দলে যারা মনের ভিতর রাগ অভিমান জমিয়ে রাখতে পারে না। যখন রাগ হল চিল্লাচিল্লি করে ঠাণ্ডা। রীতার সাথেও তাই করত। কিন্তু এখন তো তাঁর রাগ অভিমানকে রীতা বুঝতেই পারছে না। নাকি বুঝতে চাইছে না।

পুলক রীতাকে একটা মেইল করল।

পর্ব-১
Click This Link

পর্ব-২
Click This Link

পর্ব-৩
Click This Link

পর্ব-৪
Click This Link

পর্ব-৫
Click This Link

পর্ব-৬
Click This Link

পর্ব-৭
Click This Link

পর্ব-৮
Click This Link

পর্ব-৯
Click This Link

পর্ব-১০
Click This Link

পর্ব-১১
Click This Link

পর্ব-১২
Click This Link

পর্ব-১৩
Click This Link

পর্ব-১৪
Click This Link

পর্ব-১৫
Click This Link

পর্ব-১৬
Click This Link

পর্ব-১৭
Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×