গতানুগতিক জীবনের প্রতি সবার খুব অভিযোগ। মানুষের ক্ষমতা থাকলে মানুষ তাঁর জীবন থেকে গতানুগতিকতা মুছে ফেলত। কিন্তু মানুষকে এত ক্ষমতা দেয়া হয়নি। চাইলেই মানুষ এই গৎ বাঁধা জীবন থেকে মুক্তি পায় না। চাইলেই মানুষ তাঁর জীবনকে ৪-৫ বছর রিওয়াইন্ড বা ফাস্ট ফরোয়ার্ড করে নিতে পারে না যে ধুর এখন ভালো লাগছে না। দেখি!! ৫ বছর পরের কী অবস্থা? কিন্তু একজন লেখক হিসেবে আমি খুব সহজেই এই কাজটা করতে পারি। আমার গল্পের চরিত্রদের আমি কয়েক মাস বা কয়েক বছর এগিয়ে বা পিছিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এভাবে করে আমি আমার এই গল্পকে গতানুগতিকতা থেকে মুক্তি দেব।
বছরখানেক পর।
পুলক বসে আছে বসুন্ধরা সিটি এর ফুড কোর্ট এ। চারপাশে বেশ ভীড়। এ জায়গাটায় সবসময়ই ভীড়। কপলদের জন্য ভালো জায়গা। ফুড কোর্ট টা টপ ফ্লোর এ। ফ্লোরটার সাইড দিয়ে কপলদের মুখোমুখি বসার জন্য সিট এরেঞ্জ করা। তারই একটায় পুলক বসা। পরনে গাঢ় নীল রঙের টি-শার্ট আর জিন্স। এক বছরে বেশ কিছুটা শুকিয়ে গেছে সে। এতে চেহারায় অন্য মাত্রা এসেছে। দেখতে খারাপ লাগছে না তাঁকে।
- কখন এসেছ?
প্রিয়াঙ্কা সামনে দাঁড়ানো। শার্ট আর জিন্স পরা প্রিয়াঙ্কাকে আশেপাশের মানুষেরা ঘুরে ঘুরে দেখছে। দেখার মতই লাগছে তাঁকে। আর এমনিতেও সে খুবই সুন্দরী।
পুলক উত্তর দিল-
- ১০ মিনিট!!! বস।
প্রিয়াঙ্কা বসলো।
- এত ক্রাউড!!! পুরা বাজার বানিয়ে ফেলল দেখি মানুষজন। (চোখ-মুখ কুঁচকে প্রিয়াঙ্কা বলল)
- এটা তো বাজারই। (পুলক হেসে বলল)
- ইয়া!! আই মীন। মাছের বাজার!!!
এখন অনেকক্ষণ ন্যাকা ন্যাকা কথা শুনবে পুলক। তাঁর খারাপ লাগে না। ভালোই লাগে। সে চুপ চাপ শুনে যায়। মেয়েরা সম্ভবত শ্রোতা পছন্দ করে। না শুধু মেয়েরা না। সবাই-ই শ্রোতা পছন্দ করে। আমাদের আশেপাশে বক্তা বেশি। শ্রোতা নেই বললেই চলে।
আধা ঘণ্টা পুলক প্রিয়াঙ্কার কথা শুনল। ও নতুন কোন কোন ডিজাইনার এর ড্রেস কালেক্ট করেছে। ওঁর হাইট ৫’ ৭” । সেই তুলনায় ওঁর ওয়েট অনেক হয়ে যাচ্ছে। she needs to control her diet। ওঁদের ইউনিভার্সিটি তে কতগুলা wanna be আসছে। (wanna be মানে যারা খুব স্মার্ট হতে চায় কিন্তু কিছু একটা গোলমাল করে ফেলে, এর ফলে এদের খুব বেশি আনস্মার্ট লাগে) এরা খুব happening হওয়ার try করছে কিন্তু পারছে না। ওরা এমন সব ড্রেস পড়ে যে প্রিয়াঙ্কা আর ওঁর ফ্রেন্ডরা হাসতে হাসতে মরে যায়। নিজেদের যে এরা কী ভাবে!!! এরকম আরো নানা কথা।
পুলকের ভালই লাগে ওঁর কথা শুনতে। মেয়েটা হাত নেড়ে নেড়ে অনেক রকম মুখভঙ্গি করে কথা বলে যাচ্ছে। পুলক কিছু শুনছে কিছু শুনছে না। প্রিয়াঙ্কা সুন্দরী। এবং সে জানে সে সুন্দরী। এতে তাঁর কথায়, চলেফেরায়, অঙ্গভঙ্গিতে অহংকারের প্রকাশ স্পষ্ট। সুন্দরী কোন মেয়েকে সামনে থেকে দেখার মাঝেও আনন্দ। তবে খুব কাছে না যাওয়াই ভালো। আসলে কারোই খুব কাছে না যাওয়া ভালো। দূর থেকে সবই ভালো সবই সুন্দর। যত কাছে তত সত্য। সত্য খুব কম সময়ই সুন্দর হয়।
- কী ভাবছ? (প্রিয়াঙ্কার প্রশ্ন)
- নাঃ!! কিছু না তো!!
ন্যাকা স্বরে প্রিয়াঙ্কা বলল, “পুল!!! আমার খুব খিদে পেয়েছে”
- কী খাবা?
- জুস খাবো আগে।
- আরে জুস খেলে খিদা যাবে নাকি?
- আরে তোমাকে বললাম না আমার ওয়েট বেড়ে গেছে। তুমি দেখি আমার কোন কথা শুনো না!!
- ওকে ওকে!!! আনছি। স্ট্রবেরি উইথ আইস!!! রাইট?
- ইয়াপ!!! (খুশি হয়ে বলল প্রিয়াঙ্কা)
পুলক উঠে গেল প্রিয়াঙ্কার জুস আনতে। প্রিয়াঙ্কা পুলকের দিকে তাকিয়ে আছে।
ফেসবুক এ পুলকের সাথে পরিচয়। খুবই হাস্যকরভাবে পরিচয়। প্রিয়াঙ্কার খুবই happening সব প্রোফাইল পিক ফেসবুক এ। বেশীরভাগ ই pout পোজ। pout হচ্ছে সেই পোজ যেখানে মেয়েরা চুমু খাওয়ার মত ভঙ্গি করে ছবি তোলে। বেশীরভাগ ছবিই প্রিয়াঙ্কার নিজের তোলা। প্রিয়াঙ্কা যতবার ওয়াশরুমে যায় ততবার বিভিন্ন পোজে ছবি তোলে সে। কতরকমই না ভঙ্গিতে সে আয়নাতে নিজের পিক তোলে সে। কোন wanna be এর ক্ষমতা নেই প্রিয়াঙ্কার মত পারফেক্ট প্রোফাইল পিক দেওয়ার। এই জন্যই প্রতিদিন গড়ে ৫০টার মত ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পায় সে। পুলকও তাঁকে সেইভাবে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়েছিল। সাথে ছিল টিপিকাল ছেলেদের ইনবক্স মেসেজ “Hi”। এরকম অসংখ্য ইনবক্স মেসেজ জমে আছে প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু এরপর পুলক তাঁকে ইনবক্স করল-
- I would like to talk with you.
- Do I know you?
- How would I know?
- Do you know me?
- Nope!!
- Then why did you send me request and bothering me in the inbox?
এরপর পুলক ইংলিশ ছেড়ে বাংলায় গেল।
- তোমার প্রোফাইল দেখে তোমাকে অনেক হট লাগসে। আমি এখন ফেসবুক এ হট মেয়ে দেখলেই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেই। ওকে? ভালো লাগলে কথা বল না লাগলে নাই। ফুটো।
খুবই রাগ উঠেছিল প্রিয়াঙ্কার। কিন্তু এক সপ্তাহ পর ঠিকই নক করেছিল পুলককে। he is a nice guy। সস্তা প্রেম করার উদ্দেশ্য নিয়ে সে কথা বলতে আসেনি। প্রিয়াঙ্কার ফিলসফি এর সাথে মিলে। No commitment. Only pure friendship. That’s all. কিন্তু কথা খুব কম বলে। এটা অবশ্য প্রিয়াঙ্কার জন্য ভালো। প্রিয়াঙ্কা বলতে ভালোবাসে। শুনতে না।
পুলক নিজের জন্য চকলেট ড্রিঙ্ক নিল আর প্রিয়াঙ্কার জন্য স্ট্রবেরী জুস। নিয়ে এসে আরো কিছুক্ষণ গল্প করলো এরা। তারপর বের হয়ে যাওয়ার জন্য উঠল এরা। হঠাৎ পুলকের ফোনে একটা এসএমএস আসল।
“কেমন আছ পুলক?”
পুলক অনেকক্ষণ স্থবির হয়ে মোবাইল ফোনের স্ক্রীনটার দিকে তাকিয়ে আছে। প্রিয়াঙ্কা ওঁর সাথেই হাঁটছিল। প্রিয়াঙ্কা হঠাৎ দেখল পুলক পিছনে দাঁড়িয়ে গেছে আর এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।
-কি হয়েছে পুল? কোন প্রবলেম? কার এসএমএস?
পুলক তখনো তাকিয়েছিল। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেল।
-না কিছু না। চল।
-চল। আমরা এখন কোথায় যাব পুল?
পুলক অন্যমনস্ক হয়ে আছে। এক বছর পর এই এসএমএস এর কী মানে?
পর্ব-১
Click This Link
পর্ব-২
Click This Link
পর্ব-৩
Click This Link
পর্ব-৪
Click This Link
পর্ব-৫
Click This Link
পর্ব-৬
Click This Link
পর্ব-৭
Click This Link
পর্ব-৮
Click This Link
পর্ব-৯
Click This Link
পর্ব-১০
Click This Link
পর্ব-১১
Click This Link
পর্ব-১২
Click This Link
পর্ব-১৩
Click This Link
পর্ব-১৪
Click This Link
পর্ব-১৫
Click This Link
পর্ব-১৬
Click This Link
পর্ব-১৭
Click This Link
পর্ব-১৮
Click This Link