somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্ভুত প্রেমের গল্প- (পর্ব ২০)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সম্পর্ক কেন ভাঙ্গে? কত সুখ দুঃখ!! ভালো সময় মন্দ সময় পাড় করে দুইজন মানুষ একসাথে!! তারপর ঠিক কী এমন হয় যে আর একসাথে থাকা হয় না? প্রশ্নগুলো খুব সহজ কিন্তু তীব্র। এবং এর উত্তর কারো জানা নেই।

পুলক আর রীতার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেছে। ঠিক কী হয়েছিল!! এক বছর আগে কিভাবে তারা দূরে চলে গেল।

পুলক রীতাকে বেশ লম্বা একটা মেইল করেছিল। মেইল এ সে রীতার কাছে তাঁর মনের অবস্থাটা তুলে ধরেছিল। রীতার কী হয়েছে? কেন সে এরকম অচেনা হয়ে যাচ্ছে? পুলকের কোথায় ভুল হচ্ছে? পুলক তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করতে চাইছে যে সে কোথায় ভুল করছে? রীতার ভিতরে কী চলছে? রীতা তো কখনো পুলকের থেকে কিছু লুকোত না। তাহলে এখন কেন লুকোচ্ছে? পুলক জানে রীতার মা তাঁদের ব্যাপারটা ভালোভাবে নেয়নি। কিন্তু তাঁরা দুইজন যদি এক থাকে, শক্ত থাকে তাহলে কী রীতার মা এমনিতেই একদিন মেনে নিতে বাধ্য হবেন না? প্রয়োজনে পুলক রীতার মায়ের সাথে কথা বলবে। তারপরও যদি উনি না মানেন তাহলে না হয় নিজেরা খুশি মনেই আলাদা হয়ে যাবে। কারণ পুলকের কাছে বাবা-মায়ের উপরে আর কোন সম্পর্ক নেই। তাঁদেরকে কষ্ট দিয়ে পুলক কিছু করতে চায় না। এইসব কথাবার্তা তো আগে থেকেই রীতা জানে। তাহলে সে কেন এরকম করছে? পুলক তো সবসময় রীতার সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুলকের যদি কখনো রাগ হয়, অভিমান হয় সেটা কে বুঝবে? পুলক কার কাছে যাবে রীতা ছাড়া?

রীতার রিপ্লাই আসল বেশ কিছুদিন পর। সে পুলককে আশ্বস্ত করল যে পুলকের কোথাও ভুল হচ্ছে না। সে নিজেই খুব ডিস্টার্বড হয়ে আছে। তাঁর জীবনে তাঁর মা আর পুলক দুইজনেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোন একজনকে সে কিভাবে বেছে নেবে? সে জানে তাঁর মা কখনো মন থেকে পুলককে মেনে নিতে পারবে না। আর আজকাল তাঁর মনে হচ্ছে যদি মা ঠিক বলে থাকে!!! যদি সে পুলকের সাথে সুখী না হয়!!! রীতা জানে পুলকের মত মানুষ হয় না। তারপরো সে একটা অন্তরদ্বন্দে ভুগছে যা সে আগে কখনো অনুভব করেনি। এই অনুভূতির জন্য সে নিজের কাছেই অনেক ছোট হয়ে আছে। সে পুলককে কী বোঝাবে? রীতা নিজেকেই নিজে বুঝতে পারছে না। কিন্তু এটুকু রীতা জানে যে পুলকের চেয়ে আত্মার বন্ধু তাঁর আর কেউ নেই আর হবেও না। এ নিয়ে তাঁর মনে কোন সন্দেহ নেই।

পুলকের কী খুব দুঃখ হওয়া উচিৎ রীতার মেইলটা পড়ে? পুলক ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। তাঁর কী খুব কষ্ট হওয়া উচিৎ? তাহলে কিছু হচ্ছে না কেন? সে মেইলটা আরো কয়েকবার পড়ল। নাঃ!! কোন কষ্ট হচ্ছে না। তাহলে কি ভেতরে ভেতরে এই ধরনের কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছিল সে? তাঁর অবচেতন মন অনেক আগে থেকেই জানত কি হতে যাচ্ছে? পুলক বেশ কিছুদিন নিজেকে সবকিছু থেকে দূরে রাখল। সে রীতাকে ফোন দিল না। এসএমএস করলো না। রীতার ফোন রিসিভও করলো না। রীতা এসএমএস করলে জবাব দিত না। নিজের সাথে একটু কথা বলে নেয়া উচিৎ পুলকের।

নিজের সম্পর্কে কখনোই খুব উচ্চ ধারণা ছিল না পুলকের। বরং কিছুটা হীনমন্যতা ছিল নিজেকে নিয়ে তাঁর। আত্মবিশ্বাস নামের যে বিশাল পাহাড় ছিল তাঁর সামনে তা কখনো চড়া হয়নি পুলকের। ওই বিশাল পাহাড়ে সে উঠেছে রীতার হাত ধরে একটু একটু করে। যত উপরে উঠেছে তত তাঁর ভিতরের হীনমন্যতাবোধ দূর হয়েছে। সাথে সাথে দূর হয়েছে রাগ, অসামাজিকতা। আজকে সে আত্মবিশ্বাস নামের সেই পাহাড়ের চূড়ায়। যে মানুষটা তাঁকে সেই পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গেল। আজকে সেই মানুষটা তাঁকে ধাক্কা দিয়ে সেই পাহাড় থেকে ফেলে দিচ্ছে। রীতার মনে তাঁকে নিয়ে সন্দেহ দেখা দিচ্ছে!!! রীতা তাঁর সাথে সুখী হবে কিনা এ নিয়ে ওঁর মনে প্রশ্ন উঠছে!!! বুকটা কীরকম ব্যাথায় চিন চিন করে উঠল। এরকম ব্যাথার সাথে সাথে শরীর যেন কিছুটা ঝিম ঝিম ও করে উঠে। চোখটা মনে হয় একটু জ্বালা করে। ইংরেজীতে একটা শব্দ ব্যবহার করলেই যেন পুরো পরিস্থিতির বিবরণ দেয়া হয়ে যাবে। “self-pity”। তাহলে কী এত বছেরে তাঁর যা যা প্রাপ্তি সব মিথ্যে? রীতা যা যা বলেছে? না!! পুলক আবেগে যুক্তিহীন হবে না। আবেগ পুলকের প্রকৃত অস্ত্র নয়। বরং যুক্তিই তাঁর প্রিয়।

আসলে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়ে রীতার মন পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই রীতা তাঁর আগের রীতা নয়। এ নতুন কেউ। এখন কারো মন পরিবর্তন হওয়ার জন্য তো কাউকে দোষারোপ করা যায় না। তাই পুলক রীতার উপর রাগ অভিমান কোনটাই করতে পারল না। রীতার জায়গায় পুলকেরও মন পরিবর্তন হতে পারত। খালি একটাই আফসোস হচ্ছে পুলকের। তাঁর মানে ভালোবাসা বা সত্যিকারের অনুভূতি বলে কিছু হয় না। যেখানে আমাদের মনেরই নিশ্চয়তা নেই সেখানে ভালোবাসা আবার কী জিনিস? নিজের মনেই হাসে পুলক। নাহ!!! এখনো যে কষ্ট হচ্ছে না তেমন। পুলক জানে এ ধরনের কষ্ট কত তীব্র হয়। আগের সম্পর্কটা যখন ভেঙ্গে গেল, তখন কী মারাত্মক কষ্ট হয়েছিল পুলকের। বুকের ভিতর যেন খামচি মারা ব্যথা ছিল। বুকের ভেতর এমন এক জায়গায় ব্যথা হয় যেই জায়গাটার অস্তিত্ব সম্পর্কেই অবগত ছিল না আগে পুলক। কই!! সেই জায়গাটাতে তো কিছু হচ্ছে না।

পুলক রীতাকে ফোন দিল।

-হ্যালো!! রীতা!!
-হ্যাঁ
-রীতা আমি তোমাকে মুক্তি দিতে ফোনটা করেছি।
-(রীতা নিশ্চুপ)
-আসলে আমি এই কদিন বুঝতে পারিনি যে তুমি আসলে আমার কাছে মুক্তি চাচ্ছ।
-পুলক!! (হাউমাউ করে কেঁদে) এভাবে বোইলো না প্লিজ।
-কানতেস কেন রীতা? আমার তোমার উপর কোন রাগ নেই। অভিমান আছে কিনা এটা surely বলতে পারি না। হয়তো একটু আছে। কিন্তু বিশ্বাস কর। সত্যি সত্যি আমার তোমার উপর কোন অভিযোগ নেই। তবে আজকের পর তোমার সাথে আমার আর কথা হবে না। আমি তোমাকে ফোন করবো না। তুমিও আমাকে আর ফোন করবে না।
-পুলক!! তুমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।
-আমি জানি। কিন্তু এই বন্ধুত্ব তোমার আমার দুইজনের জন্যই ক্ষতিকর। তোমার কথা বাদ দেই। আমার জন্য ক্ষতিকর। আজ না হোক কাল আমি কাউকে না কাউকে বিয়ে করবো। তোমার জন্য যে জায়গাটা ছিল সেই জায়গাটা আমাকে ফাঁকা করতে হবে রীতা। নইলে সেখানে অন্য কেউ আসতে পারবেনা। জোর করে আনলেও অন্যায় হবে। তোমার বেলায়ও একই কথা সত্যি। তাই না?
-(রীতা নিশ্চুপ)
বিচক্ষণ পুলকের বিচক্ষনতার সাথে তো সে পরিচিত। পুলক যা বলে ঠিক বলে।
-তাহলে রীতা। তুমি ভালো থেকো। বাই।

পুলক ফোন কেটে দিল। নাহ!! তাঁর চোখে পানি নেই। বুকে ব্যথা নেই। তাঁর কষ্ট হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? এটা কি অস্বাভাবিক না

পর্ব-১
Click This Link

পর্ব-২
Click This Link

পর্ব-৩
Click This Link

পর্ব-৪
Click This Link

পর্ব-৫
Click This Link

পর্ব-৬
Click This Link

পর্ব-৭
Click This Link

পর্ব-৮
Click This Link

পর্ব-৯
Click This Link

পর্ব-১০
Click This Link

পর্ব-১১
Click This Link

পর্ব-১২
Click This Link

পর্ব-১৩
Click This Link

পর্ব-১৪
Click This Link

পর্ব-১৫
Click This Link

পর্ব-১৬
Click This Link

পর্ব-১৭
Click This Link

পর্ব-১৮
Click This Link

পর্ব-১৯
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×