somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৫

১৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-১ কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-২ কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৩ কয়লাপোড়া দীর্ঘশ্বাসের রঙ-৪




হঠাৎ করে একটি গাই খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিলে কবিরাজ বাড়ি ছুটোছুটি, ওষুধ খাওয়ানো যত্নআত্তি করা নিয়ে ব্যস্ততায় কেটেছে কটা দিন। ডেভিড লুইসের কথাবার্তা পছন্দ হয় না বলে তার কাছে আর পড়তে যায়নি এ কদিন। ইয়াসিনের কাছ থেকে খবর নিয়েছিল যে প্যাট্রিক সায়েব এসেছে কিনা। কিন্তু সে তাৎক্ষণিক কোনো খবর দিতে পারেনি সে। বলছিল, কাইল আয়। আমি লুইস সাবের কাছে খোঁজ কইরাম।

জবাবে সে জানিয়েছিল, আমি গুণবতী যাওনের কথা, কিন্তু অহনতরি পারছি না। ঠিক করছি কালহাই যাম।

-তাইলে একদিন নাইম্যা এহান দিয়া ঘুরান দিয়া যা। খবর থাকলে পাবি।

ইয়াসিনের প্রস্তাবটা পছন্দ হয়েছিল তার। তাই মাকে জানিয়ে দিয়েছিল, আইজ্জা না মা, কালহা। ইয়াসিনের কাছে বিলাতি সাবের কথাডা জাইন্যাই যাই।

-তাইলে ভালাই অইছে। কিছু একটা বানাইয়া দেওন যাইবো। ইষ্টির বাইত খাইল্যা হাতে যাবি, মাইনষ্যে কইবো কী!

মায়ের কথা তার ভালো লাগে না। এত দূর একটি ঝামেলা বয়ে নিয়ে যাওয়াটা যে কেমন কষ্ট এটা কী করে মাকে বোঝাবে সে? কিন্তু মায়ের কথাটাকেও ফেলে দেওয়া সম্ভব না। আবার একা একা অতটা পথ যাওয়া থেকেও মুক্তি পাওয়া সহজ হবে না। তাই সে ভেতরে ভেতরে বেশ কিছুটা রুষ্ট হলেও মুখে কিছু প্রকাশ করলো না। তবে মমতাজ হয়তো বুঝতে পেরেই বলে, কষ্ট না করলে কি আর মিডা খাওন যায়?

মমতাজের গায়ে পড়া ভাবটা যেন তার গায়ে গুঁড়ি পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়ার মতই অস্বস্তিকর মনে হয়। যাতে অন্য কথায় জড়িয়ে পড়তে না হয়, তাই সে বলল, আমি ঘাস তুলতাম যাই!

ঘাস তুলবার কথাটি বলেই সে ঘর থেকে বের হয়ে আসে। চওড়া মাথার একটি নিড়ানি আর বাঁশের জুহুন নিয়ে মাঠের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তার কেন যেন ভালো লাগছে না। মাঠের পাশে একমাত্র কড়ই গাছের নিচে গিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ। গাছটিতে পাতাগুলো কেমন যেন নেতিয়ে আছে। যে কারণে মাটিতে ছায়াটাও তেমন ঘন হয়ে পড়ছে না বলে, ডাল-পাতার ফাঁক গলে রোদ এসে গায়ে লাগছে। ঘামের পরিমাণও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। বেশ কিছুক্ষণ ছায়া ছায়া রোদ্দুরে বসে থেকে গরুর জন্য দূর্বা ঘাস না তুলে খালের পানিতে জমে থাকা কচুরি পানা আর জলজ লতা ভেঙে বাড়ি ফিরে চলে।

কচুরি পানা বা পানিতে জন্মানো লতাপাতায় পানির পরিমাণ বেশি থাকে বলে তা খাওয়ালে গাইয়ের দুধও পাতলা বা পানসে হয়ে যায়। কিন্তু কী আর করা, সূর্যের যা তেজ এমন রোদে বেশিক্ষণ থাকলে পেট খারাপ হয়ে যাবে তার। আর ব্যাপারটা ঘরের সবাই জানে বলেই মাঝে মাঝে নানা টিপ্পনীও সহ্য করতে হয় তাকে।

বাড়ি ফিরে গাই দুটোর সামনে জুহুন রাখতেই মায়ের কণ্ঠ শোনা যায়, কীরে পুত, দূর্বা না আইন্যা কী লইয়া আইলি?

-আজগা রইদ কিরম দেখছ মা?

শরবতের নেসা কিছু একটা নিয়ে হয়তো ব্যস্ত ছিলেন। মতিনের কথায় দ্বিরুক্তি না করে একটি মাটির হাঁড়ি নিয়ে ছোট চাচার ঘরের দিকে গেলেন মনে হল। আর তখনই হন্তদন্ত হয়ে রমেসাকে বাড়ির দিকে আসতে দেখতে পেল মতিন। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করতে চায় না সে। কদিন পরপরই বিয়ের ঘটকের সঙ্গে কথা বলবার ছুতায় তাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে নিজেই কথা বলতে থাকে। এ পর্যন্ত যতটা বিয়ের আলাপ এসেছে কোনোটাই আর ফিরে আসেনি। এখন যেন বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সে। ময়নাল মুহুরির কাছে গিয়ে জানানোর আবদার করছে যে, এখন যে কোনো রকম একটা পুরুষ হলেই তার চলবে। তবু যেন বিয়েটা হয়ে যায়।

আগেরবার ময়নাল মুহুরি তার কথা শুনে হেসে উঠেছিল। বলেছিল, বেডির কি রাইতে ঘুম-নিদ্রা অয় না? আর বিয়াবিয়া করলেই কি বিয়া অইবো? জামাই পাওন কষ্ট আছে।

তবু মতিন বলেছিল, নানাগো দেহেন না, বুড়া-সুরা হইলেও একটা দেহেন। একলা মানু কে দেইখ্যা হুইন্যা রাখবো?

-নাতি, বিয়া দিলে দেওন যায়, ব্যাডারা বিয়া কইরা কি তার মুখ দেইখ্যা রাখবো? সংসারের কাম-কাইজ কিছু করনের আছেনি? এই বেডি চায় বইয়া বইয়া খাইবো। কে কারে আজাইরা খাওয়ায়। তর বুজে কি কয় এই বেডির বিয়া অইলেও জামাই তাইরে রাখবো? এমন দরমানি আমি করতাম না।

-তাইলে আমারে খোঁজ-খবর কন। আমি দেহি।

তারপরই কীভাবে যেন কথাটা জেনে যায় রমেসা। আর সেদিন থেকেই দু-চারদিন পরপর তাকে তাড়া দিতে আসে। এর আগে দুদিন পালিয়েছিল সে। কিন্তু আজ পালাতে গিয়েও কী মনে করে থমকে দাঁড়ায়।

রমেসা এগিয়ে এসেই বলল, ভালা আছত্তি ভাই?

-ভালা আছি। তোমার অবস্থা কী, আছ কিরম?

-আমার আর ভালা থাহন। বাইচ্যা আছি। আমার কথা ত মনে আছেনি? তুই ছোড ভাই শরমের কথা কি পরতি দিন জিগান যায়?

-তুমি কী চাও সাফ সাফ কও আমারে। মুহুরি নানার লগে কথা অইছে।

-একটা মানুর ব্যবস্থা কইরা দে। ব্যাডার কিছু না থাকলেও অইব। আমারই ক্ষেতি গিরস্থি আছে। বছরের খাওন পিন্দন ত আমার চলেই!

-আইচ্ছা। তুমি কয়ডা দিন সবুর কর। মুরুব্বীগ লগে কতা কই। কাইল আবার মামুরা বাইত যাওইন্যা আছি। মামুগ লগেও তোমার কথাডা আলাপ দেওনের চিন্তা আছে!

-ভাই, তর লাইগ্যা দোয়া করি। অনেক বড় হ। আমার একটা কূল কইরা দিতে পারলে হারা জনম তর কথা মনে থাকবো আমার।

মতিন এমনিতেই ব্যাপারটা নিয়ে লজ্জায় মরে যাচ্ছিল। একজন বয়স্কা মহিলা তারই কন্যার প্রায় সমবয়সী একটি ছেলের কাছে নিজের বিয়ের তত্ত্ব-তালাশ করছে। অথচ এ বয়সের মহিলারা উলটো অন্যের বিয়ের জন্য নানা রকম তদবির করে বেড়ায়।

অবশ্য মানুষের প্রয়োজন বলে কথা। যার যা প্রয়োজন তার ভাবনা-চিন্তাও সে প্রয়োজনটাকে অবলম্বন করেই বেড়ে ওঠে। রমেসার কী আর এমন দোষ হতে পারে। স্বামীহীনা নারীদের অনেক ধরনের দুর্নাম থাকে। অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে তাদের নানা প্রয়োজনে যোগাযোগ গড়ে উঠতে পারে। আর সেই যোগাযোগের সেতু বেয়ে নানা দিকে তার নানা ধরনের দুর্নাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। যদিও আজ বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল রমেসা বিধবা হয়ে কাল কাটাচ্ছে, তবু লোকমুখে তার তেমন কোনো দুর্নাম বা চলা-চলতি নিয়ে মন্দ কথা শোনা যায় না। কিন্তু সিদ্ধেশ্বরী গ্রামটা এমন নয় যে, এখানে দুশ্চরিত্র নারী-পুরুষ একটিও নেই। তবু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে রমেসা সবার কাছ থেকে সহানুভূতি আর ভালোবাসা আদায় করে নেবার সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা শ্রদ্ধাবোধও অর্জন করে নিতে পেরেছে।

রমেসা চলে যাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মা শরবতের নেসার কণ্ঠ ভেসে আসে, মতিনে হুনিচ্চাই!
মতিন মায়ের এমন ডাকের সঙ্গে বেশ পরিচিত। তিনি এমন করে ডাকলেই বোঝা যায় নতুন কোনো খাবারের আয়োজন করেছেন। তাই সে চট করে ঘুরেই ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে বলে, কী মা, নয়া জিনিস?

শরবতের নেসা বিছানায় বসে অনেক কাল আগের একটি চন্দন কাঠের বাক্স খুলে সামনে নিয়ে বসে আছেন। ছোটবেলা থেকেই মতিন আজগর দেখে আসছে মায়ের এ বাক্সটা। মায়ের মুখ থেকেই শোনা যে, বিয়ের সময় গায়ে সোনার গহনা থাকলেও এ বাক্স ভর্তি করে আরো রূপার অলঙ্কার সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন। সেই অলঙ্কারের সঙ্গে ছিল পাঁচটি গিনি। যা থেকে দুটো দিয়ে কালি ফুপুর বিয়ের সময় গয়না গড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। আজগরের বিয়ের সময় মমতাজের বাবা মা গিনির গয়না নিতে রাজি হয়নি। নিজেরাই মেয়েকে নিজেদের পরিচিত স্যাকরা কাছ থেকে বানিয়ে সব অলঙ্কার দিয়ে দিয়েছিল। এখন তার ইচ্ছে মতিনের বউয়ের জন্য বাকি তিনটি গিনি দিয়েই গয়না গড়িয়ে দেবেন। এ নিয়ে অবশ্য মতিনের কোনো ভাবনা নেই। মেয়েদের অনেক ব্যাপার-স্যাপারই তার কাছে যেমন দুর্বোধ্য মনে হয় তেমনই অর্থহীনও লাগে। তাই এ ব্যাপারে সে কখনোই কিছু বলে না।

মতিনের জিজ্ঞাসার জের ধরেই যেন তিনি বললেন, সুবীর স্যাকরারে একদিন খবর দেওনের কাম। নতুন জিনিস বানানির আছে অনেক। বলে, বাক্সটা আবার তুলে নিয়ে তার বাক্স খাটের ভেতর কাঠের সিন্দুকে রেখে দিলেন। তারপরই যেন মনে পড়ে গেছে হঠাৎ এমনভাবে বললেন, রমেসার লগে তর কী?

-কিছু না। তার লাইগ্যা জামাই দেখতাম কয়! বলেই হেসে ওঠে মতিন।

-জামাই দেহনের কথা কয় না ঘুরাইয়া তরেই জামাই মনে করে?

মতিনের মনে হল মা মুখ থমথমে করে রাখলেও যেন ভেতরে ভেতরে হাসি চেপে রাখতে পারছেন না। তাই সে রমেসার প্রসঙ্গ থেকে সরতেই ফের জিজ্ঞেস করে, জিনিস গড়াইবা কার লাইগ্যা?

তিনি সে প্রসঙ্গে না গিয়ে বললেন, হাশেমরে কইস দেরি জানি না করে।

-আইচ্ছা।

মতিন হঠাৎ উসখুস করে বলে উঠলো, তাইলে আমি স্যাকরা বাইত্যে ঘুরান দিয়া আই।

বলার সঙ্গে সঙ্গে সে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে। তার ভয় হচ্ছিল মায়ের আলাপ কোনো অস্বস্তিকর বিষয়ে গিয়ে আটকে পড়ে কিনা। বাড়ির বাইরে বের হতেই তার ইচ্ছে হয় রেল রাস্তার দিকে যেতে। লোক মুখে শোনা যাচ্ছে, লাকসাম, হাসানপুর, গুণবতী আর লালমাই রেলস্টেশন হবে। চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত আসা যাওয়া করার পথে রেলগাড়ি প্রতিটা স্টেশনে লোক নামাবে আর তুলবে। খবরটা পাবার পর ভেতরে ভেতরে সে বেশ উত্তেজিত হয়ে আছে। তার মনে হচ্ছিল যে, এখন রেলগাড়ি চালু থাকলে সে তাতে চড়ে চলে যেতো চাঁদপুর নয়তো কুমিল্লা শহরে। শহর দেখতে কেমন হয় তার জানা নেই। তবে প্যাট্রিক জনসনের ছবির বইয়ে কলিকাতা, রেঙ্গুন শহর দেখেছে। সাহেব চোখে দেখা চাঁদপুর আর কুমিল্লা শহর এখনো পুরোপুরি শহর হয়ে উঠতে আরো দেরি আছে।

অন্যান্য মামা মামিদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করে মতিন হাশেম মামার সঙ্গে দেখা করবার জন্য বাজারের দিকে যাবে মনে মনে ভাবছিল। ঠিক করে রেখেছে মায়ের সঙ্গে তার কী কী কথা হয়েছে, রমেসার বিষয়টা নিয়েও কথা বলবে। এসব কথাবার্তা বাড়ি-ঘরে বসে আলাপ করাটা নিরাপদ নয়। কথার গোপনীয়তা বাড়ির মেয়েদের মাধ্যমে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ি হতে হতে এক গ্রাম ছাড়িয়ে অন্য গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ে।

কাচারি ঘরের পাশে চালার নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবতে দেখে এগিয়ে এলো কুট্টি। বলল, মতিন্যায় কোনবালা আইলি? ভালা আছস?

কুট্টি বেশ বড়সড় হয়ে গেছে। আগের মতো উদলা গায়ে নেই। একটি তাঁতের কাপড় পরে আছে। শরীরে পেঁচিয়ে কোমরের কাছে গুছি দেয়া থাকলেও পায়ের কাছ থেকে ছেলেদের লুঙ্গীর মতো এক প্রান্ত ধরে উঁচিয়ে রেখেছে। হয়তো এভাবে থাকলে তার ছুটোছুটি আর দ্রুত চলাফেরায় সুবিধা হয়। মাথার চুলগুলোর অবস্থা দেখে তার মনে হলো আরো কিছুদিন এভাবে থাকলে জট পাকিয়ে যেতে দেরি হবে না।

মেয়েটার আচার আচরণ দেখে উলটো তার নিজেরই লজ্জা করছিল। মেয়েদের যাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে ছোটবেলা থকেই কোনো রকম জ্ঞান হয় না, তারা তাদের চারপাশের লোকজনকে প্রায়ই নানা রকম বিব্রত পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দেয় নিজেরই অজ্ঞাতে। ছোটবেলা থেকেই বাড়ির অন্যান্য ছেলেদের সঙ্গে বেড়ে উঠেছে বলে কুট্টির মাঝে মেয়েসূলভ জড়তা বলতে গেলে নেই।

অনেক দিন পর মতিনকে দেখতে পেয়েই ছুটে এসেছিল সে। স্বভাবসুলভ দুরন্তপনায় স্বাগত জানাতেই হয়তো মতিনের জবাব পেতে দেরি হতেই পেটে চিমটি কেটে দৌড় দিতে গেলে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় সে। কিন্তু পুরো দোষটা গিয়ে পড়লো মতিনের ওপরই। আর রাগের মাথায় মাটি থেকে উঠেই ঝাঁপিয়ে পড়ল হিংস্র বাঘিনীর মতো।

কৈশোর ছাড়িয়ে যৌবন আসি আসি করছে এমন অবস্থায় তার দেহের নানা বাঁকে যথেষ্ট পরিবর্তন এলেও যেন কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই কুট্টির। কিন্তু মতিনের মন কিছুতেই কুট্টির দুরন্তপনাকে সায় দেয় না। আগে যেমন একে অন্যকে মাটিতে পেড়ে ফেলে বুকের ওপর চড়াও হয়ে চেপে ধরতো দু হাত। মাটিতে পিঠ ঠেকিয়ে পড়ে থাকা পরাজিতের নাকে মুখে থুতু ছিটিয়ে দেওয়াটাই ছিল বিজয় ঘোষণা আর উল্লাসের একমাত্র মাধ্যম। কিন্তু আজ কিছুতেই কুট্টিকে মাটিতে পেড়ে ফেলে বুকের ওপর চেপে বসতে পারে না সে। এমন কি নিজেকেও মাটিতে পড়তে না দিয়ে চেষ্টা করে কুট্টিকে সরিয়ে দিতে।

ব্যাপারটা যদি বয়স্ক কারো চোখে পড়ে তাহলে লজ্জা আর অপমানের পুরো দায় চেপে বসবে তার মাথার ওপর। লজ্জিত হতে হবে তার মামাদেরও। কিন্তু কী করে সে বোঝাবে কুট্টিকে যে, এখনকার ব্যাপারটা আর আগের মতো নেই। এখানে হার-জিতের চেয়ে বা নিজেদের মান-অপমানের চেয়ে পরিবারের মান রক্ষাটাই বড়। অথচ ক্ষুধার্ত বাঘ শিকার না পাওয়া পর্যন্ত নিবৃত্ত হবে না। কুট্টিও তেমন তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলতে যথেষ্ট কসরৎ করছিল। আর তখনই অকস্মাৎ তার বুকে ধাক্কা দিতেই কেমন আরেক বিস্ময়ে হা হয়ে যায় তার মুখ। কুট্টিও যেন নতুন কোনো অস্বস্তিতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে স্তব্ধ হয়ে।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:১৩
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×