অনন্ত জলিলকে নিয়ে আমি খুবই এলার্জিতে ভূগতাম। এতই ভূগতাম যে সারা শরীর চুলকাতো। অনন্তকে সেলিব্রিটি হতে দেখা আমার কাছে পেইনফুল ছিলো। তার দেয়া মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেখে মনে হতো হোয়াট এ মেস...কত অনুপযুক্ত একটা লোক কত বেশী এট্রাকশন পাচ্ছে। রং পার্সন ইন রং প্লেস। ভয়াবহ জাজ করতাম। যা যা জাজ করতাম তাহলো তার কথা হয় না, অভিনয় হয় না, তার চেহারাই খারাপ, বাইট্টা...আরো স্পেসিফিক করে তার পোশাক খারাপ বলতাম.চুলের সমালোচনা করতাম..দাড়ির সমালোচনা করতাম..এমনকি বাপদাদার দেয়া নামটাকেও ছাড়তাম না...কি খ্যাত নাম! পারলে অনন্তের প্রতি ফোটা রক্তকে আমি প্রমাণ করে দেই যে সেটা আলাদা আলাদ পয়জন ধারণ করে আছে! এত প্রচ্ছ্ন্ন ঘৃনাও সে এলার্জিতে লেগে থাকতো......যে আমি অনন্তকে জগতের সকল অশান্তির কেন্দ্রবিন্দু মনে করতাম!
অথচ আমার এলার্জিতে ভোগার কোনো দরকার ছিলো না। তাকে ইগনর করলে হতো। না দেখলে এলার্জি থেকে দূরে থাকতে পারতাম। কিন্তু সেটা আমি করি নাই। আমি খুঁজে খুঁজে তার ইন্টারভিউ দেখেছি, সিনেমা দেখেছি। তার বলা কথা শুনেছি। তার সব নিউজ চোখে পড়লে মনযোগ দিয়ে পড়েছি এবং প্রতি অক্ষরের নিচে লাল দাগ দিয়ে রেখেছি।
অনন্তকে নিয়ে আমার এই এলার্জিতে ভোগার কারণ ভিন্ন ছিলো, সে নয়। সে বরঞ্চ আমাকে ন্যাংটো করে দেখিয়েছে আরে ব্যাটা তুই কতবড় একটা ফেইলিয়র। আমার ব্যর্থতা ও অযোগ্যতা উৎকট হয়ে ধরা পড়েছে অনন্তের আবির্ভাবে। হীনমন্যতা জন্ম নিছে আমার ভেতর...অনন্তের মত একটা নিকৃষ্ট আর্ট-সমঝদার আর্ট-কালচার করে জনপ্রিয় হয়ে যায় আর আমি নিজে এত বড় একজন লেখক-কবি-সম্পাদক-ব্লগার-অ্যাক্টিভিস্ট (নিজেকে তো নিজের কাছে তাই মনে করি) শো-বিজ তো দূরের কথা, মিডিয়ার বিন্দুমাত্র এট্রাকশনের ধারে কাছে নাই। একটা লোকও এক পয়সা খরচ করে আমার সারাজীবনের কাহিনী কিনতে চাইবে না। নিকৃষ্ট অনন্ত আসলে উৎকৃষ্ট আমার চেয়ে জনপ্রিয় কেনো হলো বা হয় - সেটা যে পৃথিবীর ইতিহাসের একটা বড়ধরণের ভুল, সমাজ সভ্যতার একটা বড় ধরণের ব্যর্থতা - প্রাকৃতিক অন্যায় - ইত্যাদিই মূলত আমার উৎকৃষ্ট আর্গুমেন্টের ক্যাপিটাল ছিলো।
অনন্তকে জাজ করতে করতে আমি আরো বেশী ফেউলিয়র হয়ে গেলাম যে আমার আর কোনো যুক্তিও আর থাকলো না। অনন্তের জন্য সকল শব্দ ব্যবহারও আমার শেষ হয়ে গেলো। এবং তারপর আমি কমপেয়ার করতে বসলাম এবং তখনই আমি আবিস্কার করলাম আমার কাজ আমাকেসহ কমপক্ষে শ বার কিনে ফেলতে পারে সে - এটলিস্ট সে এই জাজটা আমার সম্বন্ধে করতে পারে। যদিও সে সেই জাজটা করার মত সময়ও ব্যয় করে নাই।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৩১