somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্গারিটা মামুন ও কলসিন্দুরের মেয়েরা

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা পার্কে বাচ্চাসহ তিন মহিলা বেড়াতে গেছেন। একজন "দেশি" - মানে ভারতীয় উপমহাদেশের তিন দেশের যেকোন একটির। একজন আরব - মানে এরাবিয়ান পেনিনসুয়েলার যেকোন দেশের একটির। এবং অপরজন অ্যামেরিকান।
বাচ্চাগুলোর বয়স কম, চার পাঁচের মধ্যেই। দৌড়াদৌড়ি করতে শিখেছে কেবল - যেকোন কিছুই তাঁদের কাছে অ্যাডভেঞ্চার।
পার্কে বাচ্চাদের জন্য অনেক রকম খেলার সরঞ্জাম আছে। কিন্তু সবই দশ বারো বছরের বাচ্চাদের জন্য। শিশুদের জন্য যা আছে তাতে এই তিনজনের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছেনা।
প্রথমে আরব বাচ্চাটা বড়দের জন্য বানানো সুইং সেটের সিঁড়ি বেয়ে উঠলো।
তার মা তখন আইসক্রিম খাচ্ছে।
বাচ্চা উপরে উঠে ইচ্ছা করেই এক পা শূন্যে ঝুলিয়ে দিল।
তার মা তখনও আইসক্রিম খাচ্ছে।
এইবার বাচ্চা দশ বারো ফুট উপর থেকেই লাফ দিয়ে মাটিতে পড়লো।
তার মা তখনও আইসক্রিম খাচ্ছে। বাচ্চার দিকে বিন্দুমাত্র পরোয়া নেই।
বাচ্চা নিজে নিজেই উঠে হাত পা ঝাড়াঝাড়ি করে উপলব্ধি করলো নতুন খেলাটা দারুন অ্যাডভেঞ্চারাস। আরও বেশি বেশি করে খেলতে হবে।
এই দেখে অ্যামেরিকান বাচ্চা এগিয়ে এলো। তাঁর মা ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল পড়ছিল। পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে যুক্তি দিয়ে বোঝালেন কেন তাঁর বয়সী শিশুদের বড়দের খেলনা নিয়ে খেলা উচিৎ না। ছেলে যুক্তি মানলো না। এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। মা তাকিয়ে রইলেন। ছেলে উপরে উঠলো। মা তখনও তাকিয়ে রইলেন। অ্যামেরিকান শিশুটি মায়ের দিকে একবার তাকালো এবং তারপর আরব বাচ্চার মতন লাফ দিয়ে নিচে পড়লো।
মা এগিয়ে এলেন। বাচ্চা তখন ব্যথায় কাঁদছে।
মা জিজ্ঞেস করলেন, "Did it hurt?"
শিশু ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, "yes mamma!"
মা কোমরে হাত দিয়ে বললেন, "Do you wanna talk about it?"
এরপরে ঘটনা নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে মাতা পুত্রে পার্ক ত্যাগ করলেন।
এইসব ঘটনা দেখে দেশি বাচ্চারও সাধ জাগলো একটু খেলাধুলা করার।
প্রথম কদম বাড়াতেই মা বললেন, "আরে রে রে.....আমার সোনা বাচ্চা! ওখানে যায়না। ব্যথা পাবা।"
বাচ্চা শুনলো না। মা বললেন, "ওখানে ভূত আছে। তোমার ঘাড় মটকে দিবে।"
বাচ্চা এর আগেই দেখেছে দুইটা বাচ্চা গিয়েছে, এবং কাউকেই ভূতে কামরায় নি। কাজেই সে আরেক কদম বাড়ালো।
মা বললেন, "খবরদার বলছি! কথা না শুনলে একদম ভালো হবেনা বলে দিলাম!"
বাচ্চা মায়ের হুমকি অমান্য করে আরেক পা বাড়াতেই মা বেঞ্চি ছেড়ে উঠে এসে ছেলের কানে ধরে গালাগালি শুরু করে দিলেন। "বদমাইশের বাচ্চা! একদম বাপের স্বভাব পেয়েছিস! কথা বললে কানে যায় না?" ঠাস ঠাস ঠাস! চড়ের শব্দ।
মোরাল অফ দ্য স্টোরি - এই কারণেই উপমহাদেশের বেশির ভাগ পোলাপান ডক্টর ইঞ্জিনিয়ার বা অ্যাকাউন্টেন্ট হয় - অ্যাডভেঞ্চারাস কোন কিছু তাঁদের দিয়ে হয়না। শিশুকাল থেকেই তাঁদের ওপথে যাওয়া নিষেধ।
আরবরা আবার একটু বেশিই অ্যাডভেঞ্চারাস। ওদের বাচ্চাদের সাথে মিশলে বুঝবেন।
অ্যামেরিকানরা ব্যালেন্সড। সায়েন্টিফিক স্টাডিজের রেজাল্টে যে বয়সের জন্য যেটা দরকার বলেছে - তার বাইরে কিছু করবে না।
কিছুদিন আগে অলিম্পিকে এক আধা বাঙালি মেয়ে রাশিয়ার হয়ে সোনা জিতেছে। পুরো বাংলাদেশকে দেখলাম উৎসব করতে। আমাদের মেয়ে গোল্ড জিতেছে! এই মেয়ের বাবা বাঙালি - এবং বাংলাদেশের সাথে তাঁর সম্পর্ক বলতে ব্যস এটুকুই। বেড়ে উঠা, ট্রেনিং ইত্যাদি সব রাশিয়ায়। তারপরেও ক্রেডিট নেবার কালে আমরা পারলে বাবা আদম (আঃ) থেকে আত্মীয়তা খোঁজা শুরু করি।
সমস্যা নেই। বাঙালি রক্ত শরীরে নিয়ে ভিনভাষাভাষী এক মেয়ে অলিম্পিকে সোনা জিতেছে, আমাদের গর্বতো হবেই।
সমস্যা বাঁধে যখন আমাদেরই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে ওঠা একদল সুবিধা বঞ্চিত মেয়ে হয়েও কেবল মাত্র ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা এবং দাঁত কামড়ে ধরা জেদের জোরে দেশকে সত্যিকার অর্থেই গর্বে ভাসায় - বয়স ভিত্তিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ধারাবাহিকভাবে দুর্দান্ত পারফর্ম করে, এবং চোখে তলোয়ার ঢুকিয়ে বুঝিয়ে দেয় সামান্য যত্ন পেলেই এরা বিশ্বশাসন করার ক্ষমতা রাখে - সেই সমস্ত হিরোদেরই কিনা আমরা লোকাল বাসে করে নিতান্তই অবহেলায় বাড়ি ফেরত পাঠাই। এবং একদল জানোয়ার ইভটিজার নানানভাবে টিজও করি। আজকে আবার শুনি এইসব মেয়েদের এলাকার স্কুল থেকে টিসি দেবারও হুমকি দেয়া হয়েছে। স্কুলের শরীর চর্চা শিক্ষক বলেছেন ওদের জুতাপেটা করবেন।
বাহারে বাহ বাঙালি! খুউব মজা! দে তালি!
এই সমস্ত মেয়েরা আমাদেরই মেয়ে। আমাদেরই ভাষায় কথা বলে। আমাদেরই মতন ডাল ভাত খায়। এদের সাথেই কিনা আমাদের এই আচরণ। ভাগ্য ভাল মার্গারিটা মামুন বঙ্গদেশে বেড়ে উঠেনি। নাহলে সেই শৈশবেই মায়ের চড় খেয়ে খেলাধুলার সাধ সিন্দুকে তুলে রেখে অন্যের বাড়ির আদর্শ বৌ হবার জন্য তোড়জোড় করতো।
কলসিন্দুরের আসল হিরোদের সালাম!
আমাদের আগাছার জঙ্গলে কিছু গোলাপ ফুটেছে - যথাযথ কর্তৃপক্ষ যেন ওদের যত্ন নেন - আপাতত এইটাই দাবি।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০২
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×