somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো টুকরো ভালবাসা - ১

১৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটির খুব মন খারাপ হয়। প্রাণপণ চেষ্টায় চোখের পানি গাল বেয়ে পড়া ঠেকায় সে। এতো কষ্ট করে বানিয়ে এনেছে। এমনিতে সে বানাতে পারতো না। ছেলেটি পছন্দ করে বলে বান্ধবীদের কাছ থেকে শিখেছে। নিজে পলাশীর মোড়ে গিয়ে পেঁয়াজ, মরিচ, ডিম কিনেছে। ছেলেটিকে জানায়নি। একবারে নুডুলস তৈরী করে এনে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে ওকে।
কিন্তু আনার পর কি হলো? ছেলেটি রিডিংরুমে পড়তে আসা ব্যাচের আরো দুই বন্ধুকে ডেকে এনে খাইয়ে দিলো পুরোটা। দেয়ার সময় আবার আদিখ্যেতা, 'নে খা খা, ও নিজ হাতে বানিয়েছে, খেয়ে বল কেমন স্বাদ।' ওরাও খেয়ে খুব মজা হয়েছে বলে প্রশংসা করে। কিন্তু তাতে কি! মেয়েটি তো আর ওদের জন্য আনেনি নুডুলস। সে এনেছে ছেলেটির জন্য। ছেলেটি তো একটু নুডুলস মুখেও দিলো না।
'কেন?' দুই বন্ধুর সামনে হাসিমুখে নুডুলসের 'অপচয়' সয়ে গেলেও ওরা চলে যাবার পর অভিমান-ভরা চোখে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো সে।
'কি কেন?' ছেলেটি যেন প্রশ্নের মর্ম বুঝতে পারে না।
'আমি ওদের জন্য এতো কষ্ট করে এটা বানাইছি? তুই খেলি না কেন?'
'বাহ। ওরা তো খেয়ে তোমার প্রশংসাই করলো। তোমার তো ভালোই লাগার কথা।'
'কিন্তু তুই তো এক চামচও মুখে দিলি না।'
এবার একটু মুচকি হাসি দেখা যায় ছেলেটির মুখে - 'দেখ্ এখন কেমন লাগে। যার জন্য এনেছিস, সে না খেলে কতটা কষ্ট লাগে বোঝ। তুই-ও আমাকে একদিন এভাবে কষ্ট দিয়েছিস'।
'আমি ? কবে?'- মেয়েটি মনে করতে পারে না।
ছেলেটি-ই মনে করিয়ে দেয়। মাসদুয়েক আগে কলেজের এক অনুষ্ঠানে নিজের লাঞ্চের প্যাকেটটা না খেয়ে রেখে সে দিয়েছিল মেয়েটির জন্য। মেয়েটি ঐ অনুষ্ঠানে আসেনি। অনুষ্ঠান শেষে মেয়েটিকে ডেকে প্যাকেটটি দেয়। বলেনি যে, সে না খেয়ে ওটা তার জন্য রেখেছে। মেয়েটি 'থ্যাংক ইউ' বলে সেটা নেয়। কিন্তু পরক্ষণেই 'আমি দুপুরের খাবার খেয়েছি' - বলে ছেলেটির সামনেই সে এক বান্ধবীকে প্যাকেটটা দিয়ে দেয়।
হ্যাঁ- মনে পড়ে মেয়েটির। সেদিন সে দুপুরের খাবার খেয়েছিল আগেই, আর প্যাকেটের গুরুপাক খাবারটাও তার খেতে ইচ্ছে করছিল না। তা-ই সে প্যাকেটটা বান্ধবীকে দিয়ে দেয়। আর এই ছোট্ট একটা ঘটনা যে ছেলেটিকে কোনভাবে কষ্ট দিতে পারে - তা তার মাথায়ই আসে নি। কারণ, তখন তারা ছিল কেবলই বন্ধু- অন্তত মেয়েটির কাছে। সম্পর্কটা অন্যদিকে মোড় নেয় আরও পরে। তখন সে কিভাবে বুঝবে যে, ছেলেটি এজন্য কষ্ট পেতে পারে।
মেয়েটির ব্যাখ্যা চুপচাপ শোনে ছেলেটি। তারপর বলে, 'সে যাই হোক, এখন কাটাকাটি। একবার তুই আমার আনা খাবার আরেকজনকে দিয়েছিস, এবার আমি দিলাম। কিন্তু এর পর আর এমন হওয়া চলবে না। আয় চুক্তি কর।'
'চুক্তি?' - মেয়েটি অবাক হয়।
ছেলেটি একটা কাগজের টুকরো বের করে। তাতে লেখে- '....... ও ........, আমরা দুই জন প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, ভবিষ্যতে একজনের আনা খাবার অপরজন খাইতে বাধ্য থাকিবে- অন্য কাহাকেও দিতে পারিবে না। একান্তই না পারিলে খাবার ফেলিয়া দেয়া হইবে, তথাপি অন্য কাহারো সাথে ভাগ করা যাইবে না।' - লেখে নিচে ছেলেটি স্বাক্ষর করে। মেয়েটিকেও স্বাক্ষর করতে বলে।
মেয়েটি স্বাক্ষর করার সময় মুচকি হেসে প্রশ্ন করে - 'আর চুক্তি ভঙ্গ করলে শাস্তি কি?'
ছেলেটি তার জবাব দেয় না - ' কাল দুপুরে আমি নুডুলস বানানোর জিনিসপত্র কিনে দেব তোকে, তুই বানিয়ে আনবি। '
'বয়েই গেছে আমার' - ভেংচি কাটে মেয়েটি।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০০৮ সকাল ১০:৫২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×