আগের চিঠিটা
আজ বিকেলে শশীর গুরু নৈঃসর্গ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন...পেছন পেছন শশী চললো...গুরু আজ গাঢ়ো ধুসর রঙের পাঞ্জাবিটা পরেছেন...গন্তব্য ছিল ঐ লম্বা পথের শেষে যে নদীটা সেই নদী তীর...মেঘলা আকাশ, রোদগুলো প্রাণপ্রণ চেষ্ঠা করছে উকিঁ দেয়ার জন্য...মাথার উপর বেষ্টিত খোলা আকাশ...এই পথের যেন শেষ নেই...কোনো জায়গায় দৃষ্টি আটকায় না...গুরু হাটঁছেন...শশী একটু পেছনে আসছে...তার হাতে একটা ডায়রী আর অন্য হাতে একটা ব্ল্যাক কফির ফ্লাস্ক...শশী ঠিক করেছে গুরুর মুখ থেকে বের হওয়া শব্দগুলো হাওয়ায় হারিয়ে না যেতে দিয়ে, সে ওই ডায়রীতে বন্দি করে ফেলবে...ডায়রীর প্রথম পাতাটা খালি আর একদম শেষে শুধু দুটি নীল ফুল আঁকা...এটা ফাঁকা রেখেছে গুরুর জন্য...যখন লেখা শেষ হয়ে যাবে তখন সে দিবে গুরুকে কিছু লিখে দেয়ার জন্য...গুরু যায় দেখছেন তারি তারিফ করে যাচ্ছেন আর শশী সেগুলো কাগজে তুলে নিচ্ছে...এক মোড়ে কিছু কিশোর কিশোরীদের দল দেখে গুরু থেমে গেলেন...ওদের খেলাধুলা দেখে শশী গুরুর চোখে একটা হাসি দেখতে পেল...যেন গুরু তার শৈশব মনে করছেন...এই হাসিটা শশী কিভাবে কাগজে তুলবে?
কিছু পথ চলতেই গুরু কি মনে করে ওই বিহন বনের কিনাড় থেকে কিছু খুচরো পাথর তুলে নিয়ে পকেটে গুজেঁ নিলেন...গুরু আনমনে কথা বলে যাচ্ছেন...কখনো প্রকৃতির বর্ণনা দিচ্ছেন আর কখনো নীলিমার সাথে কথা বলছেন...নীলিমাকে বলা কথাগুলো শশী ডায়রীর শেষের দিকের পাতায় লিখলো...শুরুর পাতাগুলোতে শুধু গুরুর শব্দ থাকবে...যখন তারা হাটছিল বনের ভেতর থেকে, গাছের আড়ালে থাকা একটি মেয়ে তাদের সাথে সাথে হাটছিল...শশী কিন্তু ঠিকি দেখেছে...কিন্তু গুরু তখন নীলিমার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত...মেয়েটি তার মুখে ঢেকে রেখেছে কেন?...মেয়ে তার ভূতুড়ে চোখে একবার তাকালো শশীর দিকে...কি আশ্চর্য্য কি ভয়ঙ্কর কষ্ট ঐ চোখে সাথে হাজার প্রশ্ন...শশী ভাবলো গুরুকে বলে কিন্তু ওই মেয়েটি আতঁকে উঠে চোখের ইশারায় শশীকে বারণ করলো...নিষ্পলক চোখে সে তাকিয়ে আছে গুরুর পকেটে গুজেঁ রাখা ঐ খুচড়ো পাথর গুলোর দিকে...ওহ্ আচ্ছা পাথর গুলোতো তার বনের-ই...হঠাৎ মেয়েটি দৌড়ে পালালো...
...
...গুরু জানেন ঐ পথটা না কোনোদিনও শেষ হবে না...ওই নদীর ঠিকানাটা হাওয়ায় হারিয়ে গেছে...আর ডায়রীর পাতাগুলো কখনো ফুরুবে না...কলমের কালি হয়তো ফুরিয়ে যাবে কিন্তু আপনার শব্দের ভান্ডার শেষ হবে না...ঐ পথেতো আপনি ছিলেন কিন্তু আজ বিকেলে যদি আপনি থাকতেন সাথে আমার কফি...উফ্ তাহলেই না হতো আজ বাজি মাত...উড়িয়ে মন ঘুড়িতে একটা নীল পদ্ম দিতাম তুলে...
ইতি,
শশী...
***
উত্তরেঃ
দূরে বহমান নদীকে সামনে রেখে -
দুজন সামনে পেছনে হাটছিলাম ঠিকি
কিন্তু না...আমি সেই ক্ষণে অন্য কিছু ভাবছিলাম না।
আমার মনের আকাশ জুড়ে তখন শুধু ছিল
বিহন বনের সেই ছায়া-ঘেড়া পথ..
যেখানে আমার মনের বান্ধবকে আমি রেখে এসেছি।
সেই..মুখ লুকোনো মায়াবী চোখের সেই
সেইতো আমার বিহন মনের সখী...
পাথর গুলো কুড়িয়েছিলাম-
তোমার চরণ-চিহ্ন হিসেবে
আমার মনের মন্ধিরের একপাশে স্বযতনে
রাখবো সেসব..আমার সকল ভালোলাগা দিয়ে ঢেকে।
নদীর ঠিকানা হয়তোবা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে
কিন্তু আমাদের এই পথচলা ফুরোবে না
ফুরোবে না কখনোই
নীল ফুল একটা আমিই দিব ভাবছিলাম
তোমার ডায়রীর সেই শূণ্য পাতায়।
দুটি নীল ফুল যেখানে স্বযতনে
আগে থেকেই জায়গা করে নিয়েছে।
মন ঘুড়িতে তোমার লাগিয়ে দিব
নতুন এক পালক
নতুন দিনের কেতন উড়িয়ে বাতাসের সাথে,
যুগলবন্ধিতে মাতিয়ে রাখবে সে সব দিক
***
: এই গুরু একটা জিনিস চাইবো
: "কিছু পলাশের নেশা..কিছু বা চাঁপায় মেশা..তাই দিয়ে সুরে সুরে রঙ্গে রসে জাল বুনি"...কি জিনিস...বলো
: আমার চিঠি পাওয়ার পর যে কবিতাটা আপনি লিখেছিলেন সেটা গেয়ে শোনাবেন?
: গেয়ে!..আমি কবিতায় যে আবেগটা ঠিক দিতে পারিনা
: কি আশ্চর্য্য! আপনি লিখেছেন আর বলতে পারবেননা..যেভাবে লিখেছেন সেভাবে বলবেন..তাতে অসুবিধা কি...আমি তো আপনাকে গীটার নিয়ে গাইতে বলছিনা...জাষ্ট কথাগুলো আপনি বলে রেকর্ড করে দিবেন
: তারপর মনমতো না হলে আমি যে স্বান্তনা পাবোনা
: আপনার মনের কথা কে চিন্তা করে...আমার মন মতো হলেই হলো
: ওটাতো শেষ-ই করিনি মনে হয়
: আমি জানি না..উহুহুহুহুহুউউউ...জানিনা দিতে হবে বাস...আবৃত্তি করতে হবে না
: অচিরা দেবী চাইছে আর আমি না করতে পারি...রাতে দেখি এক ফাঁকে করে ফেলবো...খুশী?
: জাষ্ট রেগুলার কথা বলার মতো বলে দিলেই হবে...মহা খুশী...ওইয়ে হয়ে...উউ লা লা লা
...
প্রতিউত্তরেঃ
এখন তো মনে হয় রাত ৩:৩০ আপনার ওখানে...আপনি গভীর নিদ্রায়...আমি বাড়ি ছিলাম না...এসে দেখি একটা মেসেজ বিহন বনের সখী...আমি শুনলাম...সাথে সাথে টার্ন অফ করে দিছি...তারপর একঘন্টা পর এখন আবার শুনলাম...এখনো শুনছি...আমার ঘরের বাতি নেভানো...অন্ধকার...বেলকনীর গেট খোলা...
এতো সুন্দর করে কিভাবে যে কানের মধ্যে আপনার কন্ঠটা বাজছে..কি যে আবেগ...অদ্ভুত একটা মায়া লেগে আছে ঐ ভাঙ্গা গলায়...গুরু আমি আপনার কন্ঠে মুগ্ধ...না বলে পারছিনা...আপনার কন্ঠের প্রেমে পড়ে গেছি...এতদিন বৃষ্টির সাথে প্রেম করতাম...এখন যখনি বৃষ্টিতে ভিজব আপনার ভাঙ্গা কন্ঠটা মনে হবে - শশী
**এই শততম পোষ্টটি আমার মনের বান্ধব, আমার কবিতা এবং আমার শব্দের ঈশ্বর রবি ঠাকুরের চরণে নিবেদন করলাম।
পরের চিঠিটা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১১ সকাল ৭:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




