ওয়াজিয়ানদের ধর্মব্যবসায়ী বলা হলে কিছু মানুষ চরমভাবে মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে থাকেন। কিন্তু সত্যতা এখন দিবালোকের মত সত্য হয়ে মানুষের কাছে ধরা পড়েছে।
এক একজন ওয়াজিয়ান দিনে তিন থেকে চারটি স্থানে ওয়াজের শিডিউল রাখেন, আর প্রতি স্থানে ১/২ ঘন্টা ওয়াজ করার রেট হল ৩৫/৬০ হাজার টাকা!!
আমরা ডাক্তারের সমালোচনা করি কারণ তারা ৫০০ টাকা ভিজিট নিয়ে গরিবের পকেট কাটে, এমনকি সরকার তাদেরকে ভিজিটের টাকা বেঁধে দেবার চিন্তা করছেন। সরকার একবার দয়া করে ঘোষণা দিন, যে " কোন বক্তা দিনে এক স্থানের বেশি ওয়াজ করতে পারবেননা এবং বক্তার ওয়াজের জন্য টাকা ৫০০০ হাজারের বেশি নিতে পারবেন না। একজন বক্তা মাসে ১০ টার বেশি ওয়াজের শিডিউল রাখতে পারবেননা। "
দেখুন ধর্মব্যবসায়ীরা কি জবাব দেয়।
তারা যদি দিনে লক্ষটাকা কামাই করে থাকেন তবে তাদের অর্থ কোথায় যায় তার হিসাব কেউ রাখেনি। এসব টাকার বেশিরভাগ অংশ জঙ্গিবাদের পেছনে খরচ হয়।
আমার জানাশুনা কয়েকটি বক্তার রেট বলি:
বজলুর রশিদ - ৪৫০০০/৫০০০০ টাকা, দিনে তিন বা চারটি ওয়াজ করেন, সকাল৯ টা, দুপুর ২ টা, সন্ধ্যা ৭ টায় এবং রাত ১০ টায়, এভাবে।
মওলানা খালেক, সাপের ওয়াজের মত ভুয়া ওয়াজের করে বিখ্যাত। সেই ব্যক্তির ওয়াজের রেট ৫০ হাজার টাকা, মওলানা তোফাজ্জল নাকি ৪৫ হাজার, মওলানা তারেক জামিল ৬০ হাজার টাকা।
মওলানা আমির হামজা ৪০ হাজার টাকা। (এমন করে সকলের রেট আকাশ ছোঁয়া).
এদের শিডিউল নিতে গেলে নাকি দুই বছর আগে সিরিয়াল দিতে হবে আর অগ্রিম দিতে হত ওয়াজের রেটের অর্ধেক টাকা।
এরা যে কোটি কোটি টাকা অগ্রিম জমা রেখেছে দুই বছর পর ওয়াজ করবেন বলে, এদের বাঁচার গ্যারান্টি কে দিল? আর এদের মানুষের প্রতি বিশ্বাস কোথায়? শুনেছি এসব বক্তাদের সিরিয়াল নিতে চাইলে নাকি দালাল ধরতে হয়। স্টেজ করতে হয় আলিশান। সেদিন শুনলাম, মওলানা খালেক আমাদের এক এলাকাতে ওয়াজ করতে এসে ষ্টেজ পছন্দ হয়নি বলে রেগে গিয়ে ওয়াজই করেননি!
এমনই হল এদের মন মানসিকতা। এদের ওয়াজ হল ধর্মব্যবসা তা সবার কাছেই দিবালোকের মত সত্য। তবু চলছে অবাধেই এই ব্যবসা। কেউ ওয়াজ আয়োজন করে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে, যাতে সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রদান করানো সম্ভব হয়। আর কেউ কেউ ঐতিহ্য রক্ষার জন্য আয়োজন করছে।
ওয়াজ করে মুসলিমজাতির কোন কল্যাণ হচ্ছেনা কেন, এমন প্রশ্ন করেছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি আমাকে এটা বুঝাতে চাইলেন দেশে এত ওয়াজ হয় তবু মানুষ ত হেদায়েত হয় না, কেন? আমি বললাম ওয়াজের উদ্দেশ্যই ত খারাপ। ভুল পথে ত ইসলামের প্রসার বা হেদায়েত হবেনা। ওয়াজিয়ান আসে টাকা কামাতে, যারা ওয়াজ আয়োজন করে তারাও টাকা আদায় করিয়ে নেয় এই বক্তাদের মাধ্যমে, যে বক্তা যত বেশি আদায় করতে জানে তার রেট সবচেয়ে বেশি, আর শ্রোতারা যায় ওয়াজ খেতে। আর সামগ্রিকভাবে ওয়াজের আয়োজন হল ঐ এলাকায় আত্মীয়তা ঝালাই করতে। হেদায়াতের পথ এমন নয়, তাই হেদায়েত হচ্ছেনা।
এজন্য সৌদি আরব সহ বিশ্বে বহু দেশেই ওয়াজ মাহফিল নিষিদ্ধ, যেটে বৈধ সেটাও সরকারের অনুমতিক্রমে মসজিদের ভেতরে নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা। এভাবে ঢালাওভাবে যত্রতত্র ওয়াজ হয়না।
আমাদের দেশে যেভাবে ওয়াজে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদীতা, সরকার বিরোধিতা, সাম্প্রদায়িকতা, ব্যক্তি বিরোধী, সাংস্কৃতি ও রাষ্ট্র বা সংবিধান বিরোধী বক্তব্য দেয়া হচ্ছে তার লাগাম টেনে না ধরলে দেশের ভাগ্যে খারাপ আছে, খারাপ ভাগ্য আওয়ামীলীগেরও, কারণ জন্মগত ভাবেই আওয়ামীগের ভাগ্য আর দেশের ভাগ্যই এক।
সরকারের কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্তই বাঁচাতে পারে দেশকে ।
এর আগের স্ট্যাটাসে যা লিখেছিলাম,
"সরকারকে দেশে কিছু উগ্র বক্তার তালিকা করে এদেরকে ওয়াজে নিষিদ্ধ করতে হবে,
ওয়াজে দেশ, ভিন্নধর্মী, রাস্ট্র, কোন দল, সংবিধান বা কোন ব্যক্তি বিরোধী বক্ত দেয়া যাবেনা ,
৫০০০ টাকার অতিরিক্ত ফিস নেয়া যাবেনা, মাসে ১০টির অধিক ওয়াজ করা যাবেনা ,
ওয়াজের আয়োজকদের বক্তব্যের ভিডিও রেকর্ড করে থানায় জমা দিতে হবে ।
এই নীতিমালা লিখে ফর্মান আকারে ওয়াজ কমিটির নিকট শর্তসাপেক্ষে ওয়াজের অনুমতি দিতে হবে ।"
সরকারকে অবশ্যই ওয়াজিয়ান বা বক্তার অর্থের হিসাব , ব্যাংক ব্যালান্সের হিসাব রাখতে হবে, সেই টাকা কোথায় যায়, কি উদ্দেশ্যে খরচ হয় ।
এভাবে একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে না আনা পর্যন্ত এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের কবল থেকে জাতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবেনা ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৮:১৭