আমার ছোট্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটির একপাশে পর্দা দিয়ে আমার বাবার ৩৫ বছরের পুরোন ঔষধালয়। সকাল বেলা আমি চুপি চুপি এসে আমার প্রতিষ্ঠানে বসে নিজের পড়ালেখা বা কাজকর্ম করি। সকালে মিষ্টি রোদ সাথে নতুন খবরের কাগজ আর এক কাপ চা, বেশ লাগে।
আমার বাবা র প্রতিষ্ঠানটি যিনি এখন চালান তিনি চুপ চাপ সরল একজন মানুষ। কেউ পত্রিকা পড়তে তার পাশে এসে বসে, সামনের দোকান থেকে চা র কাপ নিয়ে। অনেক ধরনের কথা শুনতে পাই ওপাশ থেকে।
কদিন থেকে শুনছি ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধের দামামা। কেউ এসে বলে পাকিস্তানের এই আছে সেই আছে ভারত তার কাছে কি?
আবার কেউ এসে বলে ভারত ঠেলা দিলে পাকিস্তান পইরা যাইতে হুস পাইব না।
আরও অনেক খবর, নানান ধরনের কথা। আমার দোকানের কাকা টি সবার কথাই মনযোগ দিয়ে শোনেন। কিন্তু কে আক্রমণ করলে কি হবে? বা কার অবস্থা শেষ হবে তা নিয়ে বক্তারা যত উত্তেজিত থাকে তিনি ঠিক ততটাই স্বাভাবিক থাকেন।
একদিন হল কথা বলতে বলতে এখন এসে তারা এত অধৈর্য্য হয়েছেন যে সুযোগ থাকলে চায়ের কাপ হাতেই যুদ্ধের ময়দানে দৌড় দিত।
মাঝে মাঝে কিছু কথায় চড়ম মেজাজ খারাপ হয়, আবার কোন কথায় হাসি থামানো মুশকিল হয়ে যায়।
আমি একবার ভাবলাম পর দিন থেকে এসব আলাপ বন্ধ করে দেব!। কিন্তু তাদের নিষেধ করতে গিয়েও করতে পারলাম না। খেয়াল করে দেখলাম সেই মানুষ গুলো এমন কেউ নন যাদের কথায় কোন কিছু এলোমেলো হয়ে যাবে, এমন কি তাদের অনেকে রাজনীতি করেন, কিন্তু তাদের কথা তার দলের লোকই কানে নেয় না। এ মানুষ গুলো এমন এক বয়সী যারা অনেক প্রযুক্তিতে আগ্রহী নন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের আনাগোনা নেই। ৮০ বা ৯০ এর দশকের সেই সময় টা তারা বয়ে নিয়ে বেরাচ্ছেন। বয়স ৫০ বা তার উপরের দিকেই হবে সবার। প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনে কিই বা বিনোদন আছে তাদের? আমাদের মত অনলাইনে তাদের বন্ধু নেই। নিজের বন্ধু বান্ধব অনেকেই হয়ত ওপারে।
এই নিহসঙ্গ মানুষ গুলো পার্শবর্তী দুই দেশের এমন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকলে, একটু চিন্তা টা অন্যদিকে নিয়ে গেলে কিই বা ক্ষতি?!!
কার কতটি কত বিভৎস মারণাস্ত্র আছে তাই দিয়ে শক্তির নির্ধারন হবে, কার কত কম সৈন্য মরল তাই দিয়ে জয় পরাজয় হিসাব করবে, এসব আজগুবি জিনিস আমরা সিরিয়াস মুখে মেনে নিতে পারলে সাধারন মানুষের অমন কথায় কিই বা আসবে যাবে?
প্রেম দিয়ে বা সাধারণ মানুষের হাসি নিয়ে কোন রাজারই মাথা ব্যাথা নেই। সবাই তা কেড়ে নিতে পারলেই ইতিহাসে অমর হয়। আমরা ত আম জনতা। আমাদের কাজই যুগে যুগে মরা, অমর হওয়া নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৭