somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নুহা-৫

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নুহা
নুহা- ২
নুহা -৩
নুহা-৪

রেজার সূত্রেই আলী ভাই আর শবনম ভাবীর সাথে এখানে এসে পরিচয় হলেও রেজার সাথে শুধু আলী ভাইই না , অন্যান্য ওর যেসব পরিচিত মানুষ এখানে আছে , তাদেরকে কোনোভাবেই বলা সম্ভব না উনারা রেজার বন্ধু। যদিও রেজা বলে আমার বন্ধু আলী কিংবা আমার বন্ধু ইমতিয়াজ ভাই ! বন্ধুত্বের সংজ্ঞা কী সেটা আমি জানলেও দেশের বাইরে এসে রেজা সে সংজ্ঞা ভুলে গেছে আধুনিকায়নের ফলে সম্ভবত। একটা মানুষ কী করে এত আলগা আলগা ভাবে সম্পর্ক রেখে কাউকে বন্ধু বলে দাবী করতে পারে আমি সত্যিই অবাক হই। রেজার পরিচিত মানুষগুলোর মন মানসিকতার সাথে রেজার মানসিকতার অনেক অমিল ! আলী ভাই , শবনম ভাবী যেমন ঘোরাঘুরি করতে অনেক পছন্দ করে কিন্তু রেজার হচ্ছে উল্টো স্বভাব , সে দূরে কোথাও যেতে পছন্দ করে না । এর একটা কারণ আগেই টের পেয়েছি - দূরে গেলে যেমন গাড়ির তেল পোড়ে আরেকদিকে রেজা নিজেও পোড়ে টাকা খরচ হবার কারণে ! রেজা সবসময় পছন্দ করে কাছাকাছি কোথাও গিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসতে এবং ঘুমাতে।


একটা নির্দিষ্ট বয়সে এসে স্কুল লাইফের মতো করে প্রাণের বন্ধু হয়তো পাওয়া যায় না। মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার পছন্দ - অপছন্দ পরিবর্তিত হয় , আবেগ - অনুভূতি নিয়ন্ত্রিত হয় ঠিকই কিন্তু পরিণত বয়সে এসে গণহারে বন্ধু-বান্ধব না বাড়লেও কিছু কিছু বন্ধু - বান্ধব তো হতেই পারে। যেমন শবনম ভাবীর সাথে আমার হয়েছে , সে আমার স্বামীর বন্ধুর বৌ হলেও বয়সের দিক থেকে আমরা সমান , মানসিকতাও বেশীরভাগ দিকেই মেলে। তাই আমাদের সম্বোধনের ভাষা দেখে এখানে অনেক বাঙালি ভাবীরা অবাক হলেও ঠিক ভদ্রতার কারণে কেউ জিজ্ঞেস করতে পারে না একে অপরকে তুই করে বলার কারণ কী, হয়ত ধরেই নেয় আমরা পূর্ব পরিচিত কিংবা আত্মীয় হই। কিন্তু রেজার কথা আর কী বলব ! ওর যেন কারো সাথেই ঠিক মতো সম্পর্ক টা জোড়া লাগে না, সবার সাথেই একটা আলগা আলগা ভাব। আমার সাথেও কী আলগা আলগা ভাব কিনা সেটাও যথেষ্ট ভাবনার বিষয় !


কি ব্যাপার আলী ভাই , আজকে কাজে যাননি যে !
- মাঝে মাঝে বৌ কে সময় না দিলে কী চলে বলেন ? বলে উনি মিটিমিটি হাসে। আমিও হাসি আর বলি -
- বাহ ! কত রোমান্স আপনাদের ! সে কী আজ বৃষ্টি হচ্ছে বলেই কাজে না গিয়ে বৌ-কে সময় দিলেন ?
- চিংকু তোরে বলল আর তুইও বিশ্বাস করলি তার কথা নুহা ? ঐ ব্যাটা একটা মিথ্যুক। জিজ্ঞেস কইরা দেখত গত তিন বছরে ইতালিতে আছি সে আমারে কয়দিন সময় দিছে, কাজ ফালাইয়া আইসা আমারে নিয়ে ঘুরতে গেছে ! বলে শবনমও মুচকি মুচকি হাসে। কারণ আলী ভাইয়ের সাথে আমার সামনে ও খোঁচাখুঁচি করে মজা পায়। কামলা দিয়া কূল পায় না আর তোর আলী ভাই কাটাবে ছুটি ! সকালে উঠেই অস্টিয়াতে গিয়ে মালের গাড়ি সাজিয়ে কর্মচারী বসিয়ে তারপর মেট্রোতে করে বাসায় এসেছে সে। বলতে বলতে শবনম একটা গানের সিডি অন করে ফিরোজা বেগমের -

" আকাশে আজ ছড়িয়ে দিলাম প্রিয়
আমার গানের মালা গো ...."

উফ আমার ভীষণ প্রিয় একটা গান ! প্রিয় একটা গান ছাড়ার জন্য শবনমের হাতটা একটু ছুঁয়ে দেয় আমি। তাহলে তোকে নিতে আবার আলী ভাই বাসায় আসলো কেন এত দূর থেকে বলে আমি শবনমকে প্রশ্ন করি।

- আপনার বান্ধবীকে বুঝান না একটু ! সকালে কাজে যাওয়ার পর ও ঘুম থেকে উঠে কান্নাকাটি শুরু করছে তার নাকি বাসায় একলা একলা দম বন্ধ হইয়া আসতাছে , ভাল্লাগে না ! খালি ঢং করে বলতে বলতে একটা বারের সামনে আলী ভাই গাড়ি পার্ক করে। কাপুচিনো কিনে আনার জন্য।
আলী ভাই গাড়ি থেকে নামলে পরে শবনমকে বলি , আচ্ছা তুই শু শুধু কাঁদিস কেন বলতো আমায় ! আমিও তো এখানে একাই থাকি , নাকি বাবা- মা আর পুরো বাংলাদেশটাকে এখানে আনতে পেরেছি ! আমি প্রাণপণে এড়িয়ে যেতে চাই শবনমের বেদনার জায়গাটুকু। আমি খুব ভালোভাবেই জানি আট বছরের দাম্পত্য জীবনের আলী ভাই আর শবনমের বেদনার জায়গাটা কতখানি শূন্যতায় ভরা একটা শিশুর জন্য। ও একটু হাসে , হাসিটা দেখতেও কান্নার মতো ! কত কত দিন দেখেছি শবনমের কেঁদে কেঁদে ফোলানো চোখ। যেখানে আলী ভাইয়ের বাচ্চা হওয়া না হওয়া নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই সেখানে কেন ও কাঁদে আমি আগেও জিজ্ঞেস করেছিলাম ওকে। ওর উত্তর ছিল সেই গতানুগতিক শ্বশুর- শাশুড়ির সাথে থাকস নাই তো কোনোদিন তাই যেইটা তোর চোখে স্বাভাবিক লাগে সেইটা চিংকুর বাপ- মায়ের কাছে স্বাভাবিক লাগে না ! তাদের গঞ্জনা শুনলে তুই তোর জান দিয়া দিবি । আমিও খুব রেগে বলেছিলাম - এখন তো আর তোকে বাংলাদেশে শ্বশু- শাশুড়ির সাথে থাকতে হচ্ছে না আর তোকে ফেলে আলী ভাই অন্য কাউকে বিয়েও করতে যাচ্ছে না বাচ্চার আশায় ! যতসব ছিঁচকাঁদুনে স্বভাবের মেয়ে হইছিস তুই। কাঁদবি না তো , বিরক্ত লাগে ফিচ ফিচ করে কান্না !

চিংকু অনেক ভালো মনের লোক , আমাকে অনেক ভালোওবাসে । আর পুরুষ মানুষ তাদের দুঃখ - কষ্ট কাউকে দেখাতে যায় না সেটা তো জানিসই। কিন্তু শপিং মলে গেলে ছোট বাচ্চাদের জুতা , জামা- কাপড় যখন ও আড় চোখে দেখে আমি তো ঠিকই টের পাই। তখন চিংকুর জন্য আমার কষ্টে কলিজা ফেটে যায় রে নুহা ! ওর মনেও যে বাচ্চার জন্য একটা আক্ষেপ আছে সেটা তো ও আমার কান্নাকাটির তোড়ে দেখাইতে পারে না ! হরমোনের প্রব্লেম তো আমারই , চিংকুর তো আর না! এই যে আমার মা না হইতে পারার অপারগতা এইটা অনেক বেশী কষ্টের। ও যদি ওর বাবা- মায়ের মতো আমাকেও গাল মন্দ করতো তাইলেও তো সান্ত্বনা দিতে পারতাম যে সারা দুনিয়ার মানুষ একই কিছিমের। কিন্তু চিংকু তো অমন না, নিজের কষ্ট হইলেও চাইপা রাখে ! বলে ও আবার সেই ফিচ ফিচ করে কান্না শুরু করে।

- আচ্ছা এই ব্যাপার ! ওকে, আলী ভাইকে তাহলে বলব নে তোকে মাইর আর গালাগালির উপরে রাখতে। তখন কিন্তু আবার আমার কাছে নালিশ করিস না। বলে আমি ওকে একটু কাতুকাতু দিয়ে হাসাতে চেষ্টা করি । এসব আরও আগের কথা অবশ্য। পারতোপক্ষে ওর সাথে আমি বাচ্চা-কাচ্চা বিষয়ক এসব কথাই তুলতে চাই না।

- আচ্ছা রেজা ভাইকে জানিয়েছিস তোকে নিয়ে যে আমরা অস্টিয়া যাচ্ছি ? শবনমের কথা শেষ হতে না হতেই আলী ভাই কাপুচিনো নিয়ে গাড়িতে আসে।

--- হুম তখন তোর ফোন রেখেই ওকে জানিয়েছি। বলেছে রাত্রে ও ওর কাজ শেষে তোদের এখান থেকে আমাকে নিয়ে যাবে। ভালো কথা , তোরা বাসায় ফিরবি কয়টায় ?

আমার প্রশ্নে শবনম উত্তর না দিলেও আলী ভাই জানায় রাত নয়টা থেকে সাড়ে নয়টা তো বাজবেই!

আমার অবশ্য রেজার সাথে ফোনের বিস্তারিত কথোপকথন নিয়ে আর জানাতে ইচ্ছে করে না শবনম কিংবা আলী ভাইকে। রেজাকে যখন বললাম শবনমদের সাথে একটু বাইরে যাচ্ছি তুমি বাড়ি ফেরার পথে নিয়ে যেও আমাকে ওদের বাসা থেকে।

- কোথায় যাবে ?
- এখনো জানি না , বললো আলী ভাইকে নিয়ে পাঁচ মিনিটের মাঝেই আসবে। আমি পরে জানাবো তোমাকে ওদের কাছ থেকে জেনে নিয়ে।

- পরে জানানোর দরকার নাই , আমি এখন খেয়ে একটু ঘুমাবো । সন্ধ্যায় কাজে ঢোকার আগে ফোন দিবো তখন বলো। আর আলী ভাইকে বলো তারাই যেন তোমাকে বাসায় দিয়ে যায়, আমার আবার ঘুরা পথ হয়ে যাবে তাদের বাসা থেকে তোমাকে আনতে গেলে।

- আজব তো ! এমন তো না যে তুমি বাসে আসবে ! আমি আলী ভাইকে পারব না বলতে, তুমিই এসে নিয়ে যাবে ! আমি জানি রেজা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে তবুও বললাম তাকে এসে নিয়ে যেতে। ফেরার পথে ওকে নিয়ে আইসক্রিমের দোকানে যাবো বলেই না ওকে আসতে বললাম !

- আমাকে আবার তাদের বাসায় যাবার জন্য পিড়াপীড়ি করবা না কিন্তু। ফোন দিলে নিচে নেমে আসবা। বলেই সে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইনটা কেটে দিয়েছিলো।

এরপর থেকে আমার মেজাজ একটু খারাপ হয়েই ছিলো। কিন্তু সংসার করতে গেলে টুকটাক অনেক ব্যাপারেই মতের পার্থক্য হতে পারে, ছোট অনেক বিষয় থেকে যেমন বড় ঝগড়া আসতে পারে আবার অনেক কিছু হজম করে নিলে টুকটাক ব্যাপারও মন থেকে ঝেড়ে ফেলা যায় বলেই রেজার এসব তুচ্ছ তুচ্ছ মেজাজ খারাপ করা , জেদ দেখানো অনেক কিছুই আমি বেশীক্ষণ মনে জায়গা দিতে চাই না যেহেতু জানি জীবনের অনেক কিছুই এখন আমার একক সিদ্ধান্তের উপর আর নির্ভর করছে না।

কি রে এমন থম ধরে বসে আছিস ক্যান বলে শবনম ওর কনুই দিয়ে আমার পেটে একটা ধাক্কা দেয় ।
- কই থম ধরে আছি।এমনেই কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে।
- কাপুচিনো খাইয়াও তোর ঘুম আসে ! বলতে বলতে শবনমও একটা হাই তুলে ফেললে আমরা সবাই হেসে ফেলি।

আলী ভাইয়ের জামা কাপড়ের বিজনেস করে। কাভার ভ্যানের মাঝে একটা বিশাল ছাতার আকৃতির কাপড় টাঙিয়ে সেখানে জামা কাপড় রাখা থাকে। এই ধরণের ছাতাওয়ালা গাড়িকে এ দেশে 'বাংকার' বলে। উনি মেয়েদের পোশাকই বিক্রি করেন সাধারনত। স্কার্ট, প্যান্ট , প্যান্টালুন , স্কার্ফ ইত্যাদি ধরণের পোশাক। অবশ্য চাইলেই যে কেউ এইসব বিজনেস শুরু করতে পারে না। এর জন্য লাইসেন্স কিনতে হয় সরকারের কাছ থেকে এবং সবাই লাইসেন্স পেলেও যে সব সময় একই জায়গায় বসে ব্যবসা করতে পারে তাও না । লাইসেন্সে শিডিউল ভাগ করা আছে কার কোথায় কোন দিন যেতে হবে। অস্টিয়ায় যেদিন আলী ভাইয়ের ব্যবসা থাকে সেদিন অবশ্য তিনি খুব খুশী থাকেন। সেখানে ব্যবসা ভালো হয়। সমুদ্রের কাছাকাছি জায়গায় স্থানীয়রা ছাড়াও বিদেশীরাও আসে ঘুরে বেড়াতে। ভালোই হলো এরকম হুট করে অস্টিয়া যাওয়াটা। ঐ এলাকাটা আমার খুব পছন্দের। আলী ভাই কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকবে বলেই শবনম বোর ফিল করতে পারে ভেবে আমাকেও সাথে নিয়েছে বুঝতে পারলাম। আমাদের এলাকাতে মেঘের আনাগোনা থাকলেও অস্টিয়ার আকাশ বেশ ঝকঝকেই মনে হচ্ছে । প্রায় কাছাকাছিই চলে এসেছি। অবশ্য শবনমকে এর আগেও এভাবে সঙ্গ দিয়েছি। আমাদের দুজনের তখন এ দোকান সে দোকানে ঘোরাঘুরি করাটাই একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায় আর একটু পর পর এটা সেটা খাওয়া। যতবারই শবনম কিছু খায় ততবারই একটা কথা বলে --

- ইশশ কি ধুমসী হইতাছি দিন দিন ,দেখছিস ?
- হুম, তাইলে আর খাইস না কিছু ।
- হ , এইটাই লাস্ট ,আর চকলেট বা আইসক্রিম জাতীয় কিছু খামু না ।

শুনে আমি হাসি । ওর আর এই জীবনে লাস্ট বলতে কোনও দিন আসবে না ভেবে। খেয়ে যদি ওর মন ভালো থাকে , তবে তাই থাক। ঘড়িতে প্রায় চারটা বাজে। বাইরে চোখে লাগার মতো একটা রোদ। যদিও শবননের সাথে হাঁটতে হাঁটতে ভাবছিলাম একটু ঠাণ্ডা বাতাস কিংবা মেঘ রোদের লুকোচুরি, ছায়া ছায়াপূর্ণ একটা আবহাওয়া হলে ভালো হতো। কিন্তু আমার কাছে যা ভালো লাগার ব্যাপার সেটা অন্যদের কাছে ব্যবসা নষ্ট হবার মতো পরিবেশ।

- কি রে নুহা , তোর কি হইছে বলতো ?
- কি হবে আবার !
- জানলে আবার তোরে জিগাই ? কেমন জানি তোরে চুপচাপ লাগতাছে !
- আমি তো এমনই !

আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা ছোট ব্রীজের মতো জায়গায় এসে দাঁড়াই। ব্রীজ বলতে সমুদ্রের পাড় থেকে শুরু করে সামনে এগিয়ে যেখানে সমুদ্রে মানুষের ঠাই হবে দাঁড়াবার মতো ,সেখানে পানির উপরেই করা হয়েছে ব্রীজটা। আমরা বাঙালিরা রোদ পছন্দ না করলে কি হবে এদেশের মানুষদের দেখলাম রোদ প্রীতি। রোদে পুড়ে শখে এরা গায়ের রঙ বাদামী করে ! সি বীচে গেলে দেখা যায় এক অদ্ভুত দৃশ্য। এখনো এই ব্রীজে এত মানুষ এসে দাঁড়িয়ে আছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এই রোদের মাঝেও।একটা ফাঁকা জায়গা দেখে আমি আর শবনমও দাঁড়াই। এতক্ষণ হেঁটে হেঁটে আসতে গিয়ে আমার পা ব্যথা করছিল বলে আমি ব্রীজের সাথের লাগোয়া বাউন্ডারি দেয়ালে উঠে বসি অবশ্য।

- খুব রোদ আজকে ! বলে আমি শবনমের দিকে তাকাই। ও পাশেই দুইটা বাচ্চা খেলা করছে সেদিকে তাকিয়ে আছে। অন্যসময় হলে বোধ হয় আমি ওকে এখান থেকে সরিয়ে নিতাম। কিন্তু ওর এমন উদাস হওয়া দেখে আজকে ভাবছিলাম প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজস্ব কিছু সময় দরকার , হোক সেটা দুঃখ প্রকাশের বা কান্নার।শবনম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো সশব্দে। আমি আজ একটা কানের দুল কিনলাম হোয়াইট গোল্ডের - আমার দিকে শবনমের মনোযোগ ফেরাই এটা বলে ।

- কই দেখি , দেখি বলে ও আমার হাতের দিকে তাকায় দুলটা দেখতে। ইশশ কি সুন্দর !
- তোর পছন্দ হইছে খুব ?
- হুম , দাঁড়া আমিও কিনুম। তোরে নিয়া যামু কিনতে গেলে।আচ্ছা নুহা তোরে একটা কথা জিজ্ঞেস করি ?
- হুম
- না থাক , কিছু না ।

আমিও আর জোর করি না শোনার জন্য শবনম কি বলতে চেয়েছিলো। চাইলে সম্ভাব্য আমি অনেক কিছুই ভাবতে পারি কী কী জিজ্ঞেস করতে পারতো ও। কিন্তু এখন পাশে ও আছে বলে আমার সময় কাটানো নিয়ে ভাবতে হয় না। এই সম্ভাব্য প্রশ্ন আর সম্ভাব্য উত্তর দেয়ার খেলা যখন আমার সময় কাটে না ঘরে বসে আবার ঘর থেকেও বের হতে ইচ্ছে করে না , সে সময় এসব সম্ভাব্যতা নিয়ে আমি ভাবি। আচ্ছা আমি কী একটু বেশীই ভাবি ! বেশী ভাবলে জটিলতা বাড়ে। তাই আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে এসব অতিরিক্ত ভাবনার বলয় থেকে বের হতে। এক্ষেত্রে আমার ফুপাতো ভাই দীপ্ত আমার আইডল হতে পারতো। বেশ অদ্ভুত এক মানুষ ! দীপ্ত ভাই জীবনকে সবসময় খুব সাধারন চোখে দেখতো আর মানুষের কাছে তার প্রত্যাশা নেই বলেই তাকে দেখতাম খুব হাসিখুশি থাকতে।

সূর্যের তেজ অনেকখানিই কমে এসেছে। সাগরের নীল স্বচ্ছ পানি দেখতে বেশ লাগছিলো। কেমন মৃদু ঢেউয়ের শব্দ আসছিল পাথরে পানির আছড়ে পড়া থেকে। বাংলাদেশের সমুদ্র থেকে এখানকার সমুদ্রের গর্জনে একটা অমিল খুঁজে পেলাম। আমি আগে ভাবতাম সমুদ্র মানেই দূর থেকে শোনা ঢেউয়ের গর্জন, একটা শো শো বাতাস আর অন্যরকম এক গন্ধ যা বুঝিয়ে দেবে আমি সমুদ্রের কাছাকাছি। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত ছাড়া অন্য কোনও দেশের সমুদ্র দেখার অভিজ্ঞতা যেহেতু আগে ছিল না তাই একটা তুলনা চলেই আসে এখানকার সমুদ্র আর আমাদের বাংলাদেশের সমুদ্রের সাথে। অস্টিয়ার সমুদ্রের ঢেউয়ের গর্জন নেই তেমন একটা , নাকি আমিই পাচ্ছিলাম না কে জানে। হয়তো বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আমার মাথার একটা অংশে ফিক্সড হয়ে গেছিলো।

(চলবে )
২৬টি মন্তব্য ২৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অপরূপের সাথে হলো দেখা

লিখেছেন রোকসানা লেইস, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৫



আট এপ্রিলের পর দশ মে আরো একটা প্রাকৃতিক আইকন বিষয় ঘটে গেলো আমার জীবনে এবছর। এমন দারুণ একটা বিষয়ের সাক্ষী হয়ে যাবো ঘরে বসে থেকে ভেবেছি অনেকবার। কিন্তু স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×