somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুষ্টিয়া ভ্রমণ- লালন সাইজি'র মাজার পর্ব (আবারও অনেকগুলো ছবি!!)

০৭ ই মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব প্রকাশের পর..

আমাদের এই নসিমন আর নষ্ট হয়না। আমরা একবারেই কুষ্টিয়া পৌঁছে যাই। আসার পথে আমরা বিষাদসিন্ধুখ্যাত মীর মোশাররফ হোসেনের বসতভিটা দেখতে পাই। কিন্তু, ততক্ষণে আমাদের পেটের ভেতর ছুঁচো বুকডন করা শুরু করেছে!!X( তাকে আর জ্বালাতে সাহস হলনা। তাই মীর সাহেবের বাড়িতে আর যাওয়া হয়নি।:(( সোজা এসে নসিমন থামাই লালন সাঁইজির মাজারের সামনের গেটে। নেমেই পাশের একটি হোটেল না ঠিক খাওয়ার দোকান থেকে ভাত খাই। একটি কথা এখানে বলে রাখি.. কুষ্টিয়ায় যত জায়গায় ভাত খেয়েছি, সবখানেই ডালের বাটি পুরোটা নিয়ে আসে!! মাছের ডেকচি নিয়ে আসে!! আপনার পছন্দমত মাছ বেছে নিন!!B-) আর একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়, এই দোকানগুলোর বেশিরভাগই ঘরোয়াভাবে পরিচালিত। বাসা থেকে রান্না করে সোজা দোকানে নিয়ে আসা হয়!!
ভাত খেয়ে কিছুটা স্বস্তি!! এরপর আমরা মাজারে না ঢুকে বাইরে দোকানে ঘুরতে থাকি। একতারা, দোতারা, বাঁশি, ঢোল, খঞ্জণীর সম্ভার!! আমরা তো এগুলো বাজাতে পারি না। তাই আর কী কিনি?? হাতে পরা যায় এমন কিছু সামগ্রী কিনলাম, যেগুলো ঢাকায় চারুকলার সামনে কিনতে পাওয়া যায় ১০-১৫ /- য়। কিন্তু কুষ্টিয়া বলে কথা। সবগুলোর দামই ২৫-৩০/-র উপরে। তাও শখ!! কিনেই ফেললাম!!;)
এবার মাজারে ঢুকলাম। আমাদের পরিকল্পনা ছিল, সারাদিন ঘোরা-ঘুরি করে বিকেলে মাজারে বাউলদের গান শুনে রাতে মাজারেই থেকে যাব। সকালে উঠে বাস/ ট্রেন। কিন্তু সে পরিকল্পনা আর পূরণ হয়নি। সে কথা যথাস্থানে!!
মাজারের ভেতর অসাধারণ সুন্দর। ঢুকতেই মূল মাজার যেটি, সেটি একটি মসজিদের মত কক্ষে। গম্বুজাকৃতি। এটি ঘিরে ছোট একটি বাগান। বাগানের উপর দিয়ে একটু পায়েচলা পথ। এটি দিয়ে হেঁটে ঢুকতে হয় মাজারে। মাজারের বাইরে আরও সাতজন বাউলের কবর। মাজারের সামনেই যথারীতি এক বাউলমত লোক, সামনে একটি দানবাক্স!!:| আমরা দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। দেখলাম মিনিট দশেকের মধ্যেই প্রায় ১৫-২০ জন দানবাক্সে দান করল, যাদের কোনটির পরিমাণই ২০/- নিচে নয়। আল্লাহ জানে, এই বাক্সের চাবি কার কাছে থাকে!!:P
যাই হোক, আমরা সেখান থেকে এগিয়ে গেলাম আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে। বাউলরা যেখানে গান করেন, সেই স্থানের দিকে। বাউলরা আসলে সর্বত্রই গান করেন। তাও, একটি চারদিক খোলা হলঘরের মত জায়গা আছে। তারা সবাই সেখানেই গান করেন। এরপাশেই একটি চারতলা ভবন। এটিই মূল ভবন। এটিই লালন একাডেমি!! এখানে নিচতলায় অফিস। আর লালন জাদুঘর। তবে এটি বন্ধ থাকায় ভেতরে দেখতে পারিনি।/:) দোতলা-তিনতলা-চারতলায় রাতে থাকার রুম ভাড়া পাওয়া যায়। ১১ই মার্চ লালন উৎসব। আগ্রহীগণ এখনই যোগাযোগ করতে পারেন!!:D
আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম, অনেক বাউল একসাথে গান করবেন, আমরা কিছুক্ষণ এ'নার, কিছুক্ষণ ও'নার গান শুনব। কিন্তু ব্যাপার এমন না। একটি কাপড় পাতা আছে। কয়েকজন লোক আসলে বাউলদের সাথে কথা হয়। টাকা পাবেন, এমন প্রতিশ্রুতি পেলেই কেবল মাত্র তারা গান শুরু করেন!! তাদের সাথে তবলাবাদক, হারমোনিয়াম বাদক, জুরি বাদক সবার যোগাযোগ করা থাকে। বাউল বসলেই সাথে সাথে সবাই চলে আসেন!!B-) কিন্তু পুরো চিত্র এমন না। অনেকে আছেন শখের বসে গান করেন, হারমোনিয়াম/ তবলা বাজান।
আমরা ঢোকার পর কোন গান হচ্ছিল না। একটু পর, কিছু মানুষ এসে গান শুনতে চাওয়ায়, গান শুরু হয়। আমরাও সুযোগ পেয়ে তাদের পাশে বসে পড়ি!!:P
দু'টি গান হওয়ার পর মানুষগুলো কিছু টাকা দিয়ে চলে যান। আমরা তখন আমাদের অনুরোধের ঝাঁপি খুলে বসি!! এটা শোনান, ওটা শোনান। তারা তাদের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান করতে থাকেন। আমাদের একজন গিটার বাজায় তাদের সাথে। আর আমরা যারা কিছুই পারিনা, তারা কেবল মাথা ঝোঁকাতে থাকি!! এভাবে চলতে থাকে অনেকক্ষণ। আমরা ভাগ্যবান। যিনি তখন গান করছিলেন, তিনি খুবই ভাল একজন মানুষ। আমাদের সব অনুরোধই তিনি রেখেছিলেন। প্রায় ৫টা পর্যন্ত গান শুনিয়ে তিনি দুপুরের ভাত খাওয়ার বিরতি নিয়ে গান থামান। সাথে সাথে আমাদের তার বাসায় আমন্ত্রণ জানাতে ভোলেননি। :)
আমদেরও তখন খাওয়ার কথা মনে পড়ে। আমরা উঠে পরি। আমাদের দেখে অনেকেই এগিয়ে আসেন। তাদের সাথে এই লালনকে নিয়ে, তার গান নিয়ে কথা হয়। বাউলদের মাঝে বিভেদ দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই। এক বাউল আরেক বাউলের গান অশুদ্ধ বলে দাবি করে!! আমরা চুপ করে শুনে যাই। তাদের কথা-বার্তা নিয়ে আরেকদিন লিখব।
কিছু পরে হঠাৎ মনে হয়, সকালে আসার পথে দেখা একটি মন্দিরের কথা। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হয়, গান তো শোনা হল, এখন মন্দির দেখা হবে। রওয়ানা হলাম মন্দির দর্শনে।
মন্দিরের নাম রঘুনাথ জিউ'র মন্দির। ইতিমধ্যে আমি জিলা স্কুলের এক পিচ্চিকে ফোন করে আসতে বলেছি। মন্দিরটি খুবই সুন্দর। একই সাথে শিব ঠাকুর, দূর্গা পূজো, কালী মা, রাধা-কৃষ্ণ সবই একই সাথে পাশাপাশি।
সেখানে এসেই আমাদের চিন্তা হয়, সবই তো মোটামুটি দেখা হয়ে গেছে শুধু-শুধু আর একটি দিন থেকে লাভ কি?? অনেক তর্ক-বিতর্কের পর পরদিন থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। আরও সিদ্ধান্ত হয়, পরদিন আমরা মুজিবনগর বৈদ্যনাথতলা'য় যাব।
আর রাতে মাজারে থাকা যাবে না। রাত ১০ টার পর মাজারের মূল গেইট বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন আমাদের মনে পড়ল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই শিক্ষকের কথা। তিনি একটি হোটেলের কথা বলেছিলেন, সেখানে গিয়ে তার কথা বললে থাকার কোন অসুবিধা হবেনা। সাথে সাথে ঐ হোটেলে ফোন করে রাতে থাকার জায়গা কনফার্ম!!
তবে আপাতত.. খাওয়া!!:P

আবারও কয়েকটি ছবি। যথারীতি সাকিবের!!

মূল প্রবেশপথ:


মাজার:




৭ বাউলের কবর:


বামে একাডেমিক ভবন ও ডানে গানের স্থান:


চলছে গান গাওয়া:


বাউল:


জুড়ি, হারমোনিয়াম:


একতারা, ঝুনঝুনি:


খঞ্জণী:




গেল বারের লালন উৎসবের পোস্টার:


মাজারের বাইরে বিক্রিত বিভিন্ন সামগ্রী:








চলবে..
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২০
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×