somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুষ্টিয়া ভ্রমণ- পর্ব 8

০৯ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ৯:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব প্রকাশের পর..

কথামত আমরা সবাই থেকে গেলাম সেদিন কুষ্টিয়াই। বিকেলের টিফিন খেয়ে আমি, এক বন্ধু আর জিলা স্কুলের পিচ্চিটা মিলে ঘুরতে বের হলাম কুষ্টিয়া শহর। গেলাম পৌরসভা। খুবই সুন্দর একটি পরিবেশ। ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে বিজয়উল্লাস নামে একটি স্মৃতিস্মারক। সেখানে একটি জাদুঘর আছে। যদিও দেরি হয়ে যাওয়ায় আর সেখানে ঢুকতে পারিনি। বাইরেই খুব সুন্দর কিছু টেরাকোটা'র কাজ রয়েছে। এরপাশেই রয়েছে একটি সোডিয়াম ল্যাম্প। জনশ্রুতি রয়েছে, এটি বাংলাদেশের প্রথম সোডিয়াম বাতি। একটু এগুলেই পৌরসভা অডিটোরিয়াম; এখনও নির্মাণাধীন। এর বাম পাশ দিয়ে এগুলেই একটি পুকুর। এটিই হল কুষ্টিয়ার মূল আড্ডাস্থল। পাড়েই একটি বটগাছ। চারপাশ বাঁধানো বেদী। এখানেই পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাগুনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো হয়। পৌরসভা থেকে বেড়িয়েই গেলাম কুষ্টিয়া শহররক্ষা বাঁধ দেখতে। ইংল্যাণ্ড শাসনামলের সাবেক এক মেয়র রেন উইক সাহেবের কীর্তি এটি।:)

পৌরসভার পাশেই হচ্ছিল কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত প্রথম বইমেলা। বাইরে থেকে গান ভেসে আসছিল। বিপুল আগ্রহের সাথে দেখতে গেলাম। ভেতরে ঢুকে আমরা পুরো হতাশ।/:)সর্বসাকুল্যে ১১ টি দোকান। এর মধ্যে ১টি চটপটির, ১টিতে এক ছেলে-মেয়ে বসে মুড়ি-চানাচুর খাচ্ছিল(স্টলটি তারা ভাড়া নিয়েছিল কিনা সেটা অবশ্য জানি না!!B-)), ১টি দোকানে শুধু ১টি বই-ই পাওয়া যাচ্ছিল, আর ১টি দোকান ছিল কন্যাশিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি এনজিও'র। পুরো বইমেলায় আমার প্রাপ্তি, আমাদের বয়সী এক তরুণী লেখকের বই প্রকাশ।;) বইটি কেনার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু পকেট তখন গড়ের মাঠ!! কিন্তু, একটা বিষয় আমার মন ভাল করে দেয়, কুষ্টিয়ার মানুষদের বইমেলা নিয়ে উৎসাহ। প্রচুর মানুষের ভীড়। সবাই একটি কথাই বলছেন, "প্রথমবারের মত এখানে বইমেলা, তাতেই আমরা খুশি।":)

এবার একটু অন্যদিকে যাই। আমরা দু'জন হোটেলে এসে সোজা ঘুম। ইতিমধ্যে আমাদের বাকি গ্রুপ ৫জন তখন আখড়ায়। সেখানে ব্যাপক গান-বাজনা। এখানে বলে রাখি কুষ্টিয়া গেলে যে বিষয়টি অবশ্যম্ভাবি, সেটি সিদ্ধি!! (সোজা বাংলায় গাঁজা।)B-) আর, এখানের গাঁজা ভয়াবহ অপরিশোধিত!! ঢাকায় যেগুলো পাওয়া যায়, ১-২টা খেলে তেমন কিছু হয়না। কিন্তু এখানকার জিনিস.. ২ টান দিলেই.. !!!!:-* আর এখানে সিদ্ধি একদম সহজলভ্য। হাত বাড়াতে হয়না। আপনার সামনে থালায় করে সাজানো আছে, আপনি শুধু নিয়ে নিয়ে খাবেন!!:P

আমরা যখন দুপুরে প্রথমবারের মত আখড়ায় উপস্থিত হই, তখন কিছুক্ষণ গান শোনার পর আমি উঠে একটু পাশে গিয়ে বসি। হঠাৎ একজন এসে সরাসরি প্রস্তাব দেয়, "ভাই, আপনাদের কি কিছু লাগবে?" :-/
এই অভিজ্ঞতা আগেও হয়েছে, তাই মানা করে দিলাম।
"ভাই মনে হয় বুঝতে পারেন নাই। আমি সিদ্ধির কথা বলছি।"
এবার আমি ঘটনা বুঝতে পারি। তাকে পাশে বসিয়ে গল্প জুড়ে দিই। সেও খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল। নানা কথা শেষে সে আবারও জিজ্ঞেস করল, "আমরা সিদ্ধি খাব কিনা??" তাহলে সে ব্যবস্থা করে দেবে।
আমি মানা করে দিলাম। সে'ও আমার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল।
কিন্তু, রাতে আমি ছিলাম না। যারা আখড়ায় গিয়েছিল, তারা কিভাবে যেন ব্যবস্থা করে ফেলল। আসলে তাদের কিছু করতে হয়নি। একই প্রস্তাব তাদেরকেও দেয়া হয়েছিল, তাদের কাজ ছিল শুধু প্রস্তাবে রাজি হওয়া!!:|

পরদিন সকাল। আমাদের পরিকল্পনা মেহেরপুর যাওয়ার। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সবাইকে ডাকতে গেলাম। দরজা খুলল..
বিছানায় দু'জন। নিচে একজন।
-ওঠ। যাবি না।
একজন লাল লাল চোখ নিয়ে তাকাল!! আর একজন মুখে আঙুল দিয়ে "শশশশশ" জাতীয শব্দ করে আমাকে কথা বলতে মানা করল!! আর তৃতীয় জন তো তার ফুসফুসে ভাত ঢুকে মৃত্যুচিন্তায় কাতর!!:((
আমি দৃশ্য দেখে হতভম্ব!! আবার ডাকলাম, "ঐ!!"
উত্তর..
- তুই তো জানস না। কাল অনেক কিছু ঘটছে। আমি যাব না।:|
: শশশশশশশশশ/:)
= আমার ফুসফুসে ভাত ঢুকে গেছে। এইটা পঁচে তো ব্যাকটেরিয়া হয়ে যাবে। আমি তো মরে যাব রে..:(( (বিছানা থেকে আমার দিকে উঠে আসতে থাকে।)
আমি তাড়াতাড়ি দরজা আটকে বাইরে থেকে লক করে দিই!!

ভয়ে ভয়ে পাশের রুমে যাই। দু-তিন বার নক করার পরও দরজা খোলে না!! আমি মনে মনে তাদের সবকয়টার গুষ্ঠি উদ্ধার করতে থাকি।X( একটু পর ঢুলুঢুলু চোখে|-) একজন উঠে দরজা খোলে। ভালমত তাকিয়ে বুঝি, এ সুস্থ!! কথা বলে বুঝতে পারলাম, রাতে তিনজন সিদ্ধির সন্ধান নিয়েছেন!! কিন্তু, সামলাতে পারছেন না। আর, "শশশশশশ" ব্যক্তি বাদে বাকি দু'জন রাতেই একদফা বমিও করেছেন। আর বমি করতে গিয়েই একজনের বিপত্তি!! গলায় ভাত আটকে যায়। আমরা যখন ঘুমে কাতর, তখন এই তিনজনকে সামলাতে বাকি দু'জন গলদঘর্ম!!:-&

যাই হোক। তিনজনকে এক রুমে রেখে তালা আটকে আমরা একজনের জিম্মায় রেখে বাকি তিনজন রওয়ানা হই মেহেরপুরের উদ্দেশ্যে।
যখন আমাদের বাস ছাড়ে তখন সকাল সাড়ে ন'টা। তারিখ ২৫ শে ফেব্রুয়ারি!!

চলবে..

(দু:খিত। আজ কোন ছবি নেই।)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:২১
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×