somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কুষ্টিয়া ভ্রমণ- শিলাইদহ পর্ব

০৪ ঠা মার্চ, ২০০৯ সকাল ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্ব প্রকাশের পর..

ভ্যানে করে আমরা এসে পৌঁছি গড়াই সেতুতে। সেখানে সূর্যোদয় দেখে প্রচুর পরিমাণ ছবি তুলে রওয়ানা হলাম শিলাইদহের পথে। তখনও আন্দাজ নেই কতদূর। যেতে কতক্ষণ লাগে!! হাঁটছি তো, হাঁটছিই। থামাথামি নাই!! এক লোককে জিজ্ঞেস করলাম। বললেন, এই তো আর ১০ মিনিট গেলেই আলাউদ্দিন নগর। সেখান থেকে রিকশা/ ভ্যান। আমরা ১০ মিনিটের জায়গায় ৩০ মিনিট হাঁটার পরও আলাউদ্দিন সাহেবের নগরের দেখা পেলাম না। :( এক দোকানে আবার জিজ্ঞাসা করলাম, কতদূর? আবারও উত্তর, "এইতো ১০ মিনিট"!!
আমরা এবার বুঝে গেছি, আরও দূর আছে ভালই। হাঁটতে হাঁটতে একটা ভটভটি( শুদ্ধ ভাষায় নসিমন) পেয়ে গেলাম। দেরি নাই। সাথে সাথে লাফিয়ে উঠে পরলাম।
চলতে লাগল নসিমন। সে এক ভয়াবহ যাত্রা!! একটু যায়, ইন্ঞ্জিন যায় বন্ধ হয়ে।:( আমরা সবাই নেমে পড়ি। চালক ঠিক-ঠাক করে ইন্ঞ্জিন আবার স্টার্ট দেয়। আমরা ছয-ছয়টা হবু ইন্ঞ্জিনিয়ার বসে বসে চালকের এই কাজ দেখতে থাকি। আর জ্ঞানীর মত পরামর্শ দিতে থাকি, এই রডটা আর একটু চিকন হলে, এই শ্যাফটটা এভাবে বসানো হলে.. ইন্ঞ্জিনিয়ার বলে কথা!!! ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও তো ধানই ভানে!! ;)
অবশেষে ৭ বার এভাবে বিকল হওয়ার পর আমরা পোঁছলাম শিলাইদহ। রবী ঠাকুরের কুঠি বাড়ি।
গেটে টিকেট কাউন্টার। আমরা যারা এদেশি, তাদের জন্য প্রবেশমূল্য ১০/-, আর বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০/-
ঢুকতেই যে ব্যাপারটি প্রথমেই চোখে পড়বে তা হল, প্রচুর সংখ্যক আম গাছ। সব গাছে গাছে আমের মুকুল। এরপর একটি বেদি আছে, রবী ঠাকুরের কয়েকটি কবিতার ২ টি করে লাইন এখানে লেখা। একটু এগুলেই ডানে মূল বাড়ি। আর বামে রবীন্দ্র মঞ্চ।
মূল ভবনটি দোতলা। নিচতলার সোজা ঘরটিতে রয়েছে একটি টেবিল, যেটিতে বসে তিনি খাজনা আদায় করতেন। বামদিকের কক্ষটিতে রয়েছে দু'টি পালকি, একটি চেয়ার যেটি আবার অন্যে বহন করে নিয়ে যাওয়া যায়।
দোতলায় তাঁর শোবার ঘর রয়েছে। সেখানে তাঁর ব্যবহৃত একটি খাট আছে। আর বারান্দায় একটা নৌকা মত আছে। এটার ইতিহাস কি সেটা জানতে পারিনি। :(
এই কুঠিবাড়িতে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয়, তা হল, এখানে প্রচুর সংখ্যক ছবি রয়েছে। গান্ধীজি'র সাথে, আইনস্টাইনের সাথে, তার পুত্র-কন্যাদের সাথে, তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবীর সাথে। এখানে কবির নিজের হাতে লিখিত একটি কবিতা, একটি বাংলা চিঠি, একটি ইংরেজী চিঠিও আছে। আর আছে কবির আঁকা কয়েকটি ছবি। এখানে কবির একটি প্রমাণ আকারের ছরিও আছে।
শোবার ঘরের পাশেই একটি বাথরুম আছে। সেখানে একটি ইংলিশ কমোড বসানো। আমরা ঠিক বুঝতে পারিলাম না, এটা কি কবি ব্যবহার করতেন? নাকি ইদানীংকালে বসানো!! B-)
কুঠির পেছনে একটি টেনিস কোর্টও দেখা যায়!! মনে হয় কবি স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত টেনিস খেলতেন!! ;)
কুঠি বাড়ির চারপাশে বাগান। প্রচুর ফুল ফুটে আছে। খুবই শান্ত পরিবেশ।
আমাদের এক বন্ধুর সেখানে গিয়ে বাথরুম পাওয়ায়, সে আমাদের ফেলে টয়লেটের সন্ধানে যায়। আমরা ততক্ষণ কুঠিবাড়ির সামনে বসে কবিগুরু প্রতি সম্মানার্থে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া শুরু করি। অবশ্যই আমাদের ঢং-এ!! :P
সেখানে একটি ভ্রাম্যমান বইয়ের দোকান আছে। আমরা আগ্রহ নিয়ে যাই। কিন্তু সেখানে বইয়ের সংগ্রহ দেখে আশ্চর্য হই!! সবই কেবল প্রশ্নবোধক বই!! প্রেম কেন বেদনা?, তুমি কেমন আছ? এর মাঝে অবশ্য কয়েকটি রবীন্দ্রনাথের বইও আছে। তবে সেগুলো না থাকার মতই!! /:)

কাছেই পদ্মা নদী। নদীতে চর জেগেছে। নৌকা করে সেখানে যাওয়া যায়। আমরা সদলবলে নৌকায় উঠে বসলাম। ১৫-২০ হওয়ার পর ভাবলাম, এবার নৌকা ছেড়ে দেবে। কিন্তু হায়!! আরও ১০-১৫ উঠল। সাইকেল উঠল, মোটর-সাইকেল উঠল, এমনকি একজন কোলে করে ছাগল সহ উঠে বসল!! X(
চরে আমাদের নামিয়ে চলে যাবে নৌকা। আবার আমরা ফোন করলে এসে নিয়ে যাবে। আমরা নামতে গেলাম। নদীর গভীরতা অসমান। হঠাৎ করে আমাদের একজন পানিতে পড়ে গেল!! পুরোপুরি স্নান!! স্বচ্ছ পানি পদ্মায়। কাজেই খুব একটা খারাপ হয়নি তার জন্য। এমনিতেও অবশ্য আমরা সবাই পরে পদ্মায় স্নান করেছি। খুব মজার জায়গা। :)
প্রায় দেড়-দুই ঘন্টা থেকে আমরা আবার নৌকা করে পাড়ে ফিরে এলাম। সেখান থেকে আবার নতুন একটা নসিমন ভাড়া করে রওয়ানা দিলাম। গন্তব্য কুষ্টিয়া শহর, লালন সাঁই'র মাজার।

কিছু ছবি দিলাম। যথারীতি সাকিবের তোলা আর অল্প কয়েকটি (১,৩,৬,৭,১২,১৩,১৪,১৬,১৭) আমার তোলা!

আমাদের নষ্ট নসিমন


কুঠিবাড়ি






আমের মুকুল


টেনিস কোর্ট!!


প্রমাণ আকারের ছবি


সস্ত্রীক(মৃণালিনী দেবীর বয়স তখন মাত্র ১২!!) রবি ঠাকুর




কবির হাতে লেখা কবিতা


মহাত্মাজী'কে লেখা চিঠি


কবির ব্যবহৃত খাট


পালকি








ভ্রাম্যমান লাইব্ররি!!


আমাদের রবীন্দ্রসংগীত চর্চা:



চলবে..
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ সকাল ১০:১৯
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×