আমি দূর থেকেই দেখলাম রাত্রী পার্কের ব্রেঞ্চ টাতে বসে বই পড়ছে। অদ্ভুত ব্যাপার এক মাস পর আসল তাও এসে আবার বই নিয়ে বসছে।খুব রাগ লাগলো।
মেডিকেলের ছাত্রী গুলা এমন কেন?
.
একে বিয়ে করলে কি হবে? বাসর রাতে বিছানায় বসে আমাকে বায়োলজি শেখাবে। প্রথমে চোখের দিকে তাকিয়ে বলবে এটা আই,আরেক টু নিচে নোজ, আরেকটু নিচে মাউত,তার নিচে নামলে নিক তার নিচে নামলে থাক, এটা ওই দিনই হবে।এমনিতেই পাঁচ মিনিট লেট, এত দিন পর ডেটিং এর জন্য রাত্রী সময় দিছে, তাতেও লেট করে আসছি রাত্রী কি বলবে ভাববার বিষয়?
.
আমি রাত্রীর কাছে যেতেই রাত্রী ওর বই থেকে মুখ না উঠিয়েই বলল,
-পাঁচ মিনিট লেট।
-সরি,খুব জ্যাম ছিল রাস্তায়।
-ফোনে বলতা পাঁচ মিনিট লেট হবে?
-তাহলে কি হত,?
.
রাত্রী ওর বই থেকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগল,
-আমি হল থেকে অধ্যায় টা শেষ করে বের হতাম।
-কিছু সময় না পড়লে হয় না?
-না,আমি তোমাদের মত ইঞ্জিনিয়ারিং এর স্টুডেন্ট না ডাক্তারি তে বহুত পড়তে হয়,
-তোমার কি মনে হয় ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়তে হয়না,
-ওত কিছু জানিনা
-তাহলে বল কেন?
.
রাত্রী ওর বই বন্ধ করে বিরক্ত হয়ে বলল,
-ঝগড়া করার জন্য এখানে ডাকছ?
-না,,,
-তাহলে ঝগড়া করতেছ কেন?
-চল একটু রিকশা করে ঘুড়ি,
-চল।
.
আমি ভেবেছিলাম রাত্রী হয়ত রাজি হবেনা,ও আমাকে অবাক করে দিয়ে রাজী হয়ে গেল। রিকশায় উঠে পড়লাম,নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই যাওয়ার জন্য। রেস্টুরেন্ট এ রাত্রী বসেনা,ওর কথা বাইরের খাবার কোন ভাবেই খাওয়া যাবেনা নয়ত পেট খারাপ হবে।পেট খারাপ হলে আবার লেখা পড়ায় প্রবলেম হবে। আমি একটু অন্য মনষ্ক হতেই রাত্রি বই নিয়ে পড়া শুরু করল।
আমি অবাক হলাম,কেন যে একে ভালবাসতে গেলাম? এই মেয়ের হ্যাজবেন্ড প্রয়োজন নেই তার বদলে একটা বই ধরিয়ে দাও এ দিব্যি সারাজীবন কাঁটিয়ে দিবে।
.
কেউ যে এত টা পড়তে পারে জানা ছিল না।
রিকশায় উঠেও রাত্রী যে বই পড়বে জানা ছিল।
আমি ওর হাত থেকে বই টা কেড়ে নিলাম।
-কি হল?
-এখনো পড়তে হবে,
-কি করব,,
-হাত ধরে গল্প করো,
-ন্যাকামী করতে পারব না।তুমি জানো আমি কেমন,
-চেঞ্জ হওনা কেন?
-বিয়ে হোক তারপর,
.
আমি আর কিছু বললাম না,বই টা ওর দিকে দিলাম।ও একটা হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।আমি সেটাই আমার দুহাতের মধ্য নিলাম।
কিছুই করার ছিল না ওকে অনুরোধ করা ছাড়া। কারণ ওর কাছে আমি অসহায়।
.
আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়ত এতদিনে ব্রেকাপ করত কিন্তু আমি কখনোই সেটা পারব না।আমি ওকে একটু বেশি ভালবাসি।
.
কলেজে যখন ওকে প্রপোস করলাম,তখন ও বলেছিল ও প্রেম করার মত মেয়ে নয়।তবে আমি হাল ছাড়িনি। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ উঠে হ্যাঁ বলেছিল।তবে শর্ত দিয়েছিল অনেক, সেগুলো না মানলেই সব শেষ।
কয়েক টা শর্ত যেমন,
১. যখন তখন ফোন করা যাবেনা,
২.ওর পড়ালেখায় আমার ইন্টারফেয়ার করা চলবেনা।
৩.সাজগোজ করে আসতে পারবেনা,
৪.আমিও সাজগোজ করতে পারবনা।
৫.হুট হাট করে দেখা করাও নয়।
.
আমি সব শর্ত মেনে নিয়েছিলাম ভেবেছিলাম পরে সব ঠিক হবে কিন্তু কিছুই হয়নি,বিয়ের পরেও সব ঠিক হবে কিনা কে জানে?
.
ইদানিং তো সন্দেহও হচ্ছে রাত্রী কি সত্যি আমাকে ভালবাসে?
কাল যখন ফোন করে বললাম,চলো দেখা করি।
ও বলল,
-না দেখা করব না,
-কেন?
-এমনি।
-ভালবাসো না?
-বাসি তো,
-তো দেখা করা উচিত।
-কোথায় লেখা আছে?
-লেখা নাই তবে সবাই...
-সবার আর আমাদের মধ্য পার্থক্য আছে,
-কি?
-আমি ন্যাকামী পছন্দ করিনা,
-প্লিজ,
-আচ্ছা, কাল বিকালে।
.
এত রিকুয়েস্ট এর পর রাজি হয়েছে।
নতুন কাওকে পাওয়ার ও সম্ভাবনা দেখিনা। তাহলে প্রবলেম টা কোথায় বুঝিনা।
.
চট করে মাথায় বুদ্ধি এল ওকে একটু পরীক্ষা করে দেখা যাক ও সত্যিই আমাকে ভালবাসে কিনা?
আমি বলে ফেললাম,
-দেখ,রাত্রী, এভাবে আমি আর পারছি না
-মানে?
-এই যে একতরফা,আমি সব সময় তোমাকে ভালবেসে যাচ্ছি।
-আমিও বাসি,
-বাসলে এরকম হত না,
-আমি এরকমই, এরকমই থাকব।থাকলে থাক না থাকলে নাই,
-ওকে,আই ডোন্ট,
রাত্রী অবাক হয়ে আমার দিকে তাকাল, ও এমন কিছু শোনার আশা কখনো করেনি।ও বিষ্ময় নিয়েই বলল,
-তুমি পারবে না
-না,এতদিন অনেক কষ্টে মানিয়ে নিয়েছি।আর পারছিনা
-আর ইউ শিউর?
-হুম,,তোমার মত কয়েক টা মেয়ে পাওয়া আমার কাছে ব্যাপার হবেনা।
.
আমি কথাটা বলে রাত্রীর দিকে তাকালাম,ওর চোখ মুখ লাল।আমি রিকশা থামাতে বললাম।রিকশা থামতেই নেমে গেলাম, রাত্রীর দিকে তাকালাম না।
আমি ভেবেছিলাম ও আমাকে ডাকবে কিন্তু তেমন কিছু হলনা।রিকশা ঘুরিয়ে নিয়ে রাত্রী চলে গেল।
.
বাসায় এসে মোবাইল বন্ধ রাখলাম,রাত্রে তৃপ্তি নিয়ে ঘুমালাম।ভাবলাম সকালে হয়ত রাত্রীর একগাদা ম্যাসেজ পাবো।ও আমার কাছে মাফ চাইবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
.
কিন্তু এমন কিছুই হলনা,মোবাইল অন করে একটু আশাহত হলাম। রাত্রীর কোন ম্যাসেজ নেই।
ও কি তাহলে সত্যি আমাকে ভালবাসে না।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব।অদ্ভুত রকমের খারাপ লাগছিল বাট করার ও কিছু ছিলনা।নিজের উপর খুব রাগ উঠল কেন যে কাল এমন করতে গেলাম?
.
পরে ভাবলাম,মাত্র একদিন হলো আরো কয়েক দিন যাক তখন ঠিকই রাত্রী আমার প্রয়োজন টা বুঝবে।
এভাবে টানা তিন দিন চলে গেল তবুও রাত্রীর কাছ থেকে কোন ধরণের রিস্পোন্স পেলাম না।ওর এক বান্ধবীর কাছে শুনলাম ও ঠিকঠাক আছে আর নিয়মিত কলেজ যাওয়া আসাও করছে।
.
চতুর্থ দিন আর ঠিক থাকতে পারলাম না, বুঝতে পারলাম রাত্রীকে ছাড়া আমি বেকার। নিজের সব কষ্ট ভুলে কল দিলাম।একবার রিং হতেই রাত্রী ধরল।মনে হচ্ছিল আমার ফোন ধরার জন্যই ও অপেক্ষা করছিল।
ওপাশ থেকে রাত্রী বলল,
-হ্যালো,
-একবার দেখা করবে,
-আচ্ছা।
-আজ?
-ঠিকাছে।
.
আমি একটু অবাক হলাম, ও রাজী হয়ে গেল একবারেই। ভেবেছি ঠিকমত কথাই বলবেনা।যাক একদিক দিয়ে ভাল হলো।অল্পতে সব মিটানো গেলেই লাভ।তবে খারাপ লাগছিলো এই ভেবে যে প্রতিবার আমি কেন?
ওর কি আমাকে একটুও প্রয়োজন নেই।
.
একটু জলদি পার্কে চলে আসলাম।রাত্রীর এত তাড়াতাড়ি আসার কথা না,তবুও আসলাম।কিন্তু এসে দেখি রাত্রী আগে থেকেই বসে আছে।হাতে বই নেই।
আমি ওর কাছে যেতেই দেখি, এ অন্য রকম রাত্রী।
সেজে গুজে এসেছে সাদা কালারের ল্যাগিংস পরে।
এ পোশাকে ওকে সবচেয়ে বেশি মানায়।বিশেষ দিন ছাড়া ওকে এ পোষাকে দেখার ভাগ্য আমার হইনি।
চোখে কাজল ও দিয়ে এসেছে,চশমা ভেদ করেও সেটা দেখা যাচ্ছে। পুরোপুরি ডানাকাঁটা পরীর মত লাগছিল।
.
আমি ওর কাছে যেতেই ও আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,
-কেমন আছ,?
-ভাল, তুমি?
-ভাল
-খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে?
.
রাত্রী একটু হাসল আমার কথা শুনে, মনে হল একটু লজ্জাও পেল।
.
আমি আবার বললাম,
-সরি,
-তুমি পরীক্ষা করতে চেয়েছিলে তাই না?
-হুম
-কি পেলে?
-আমি খুব আসহায় তোমাকে ছাড়া,
-আমিও,
.
কথাটা বলেই রাত্রী টুপ করে আমার গালে একটা চুমু খেল।অতিদ্রুত ব্যাপার টা ঘটে গেল।
মনে হল আমি অন্য জগতে আছি।হুশ ফিরল রাত্রির ডাকে।রাত্রী বলল,
-আমি কিছু ডিশিসন নিয়েছি,
.
আমি ঘোর কাঁটিয়ে বললাম,
-কি?
-আমরা প্রতি সপ্তাহে রোজ একবার দেখা করব।আর এখন থেকে দেখা করার সময় বই আনবনা,,,,,,
আমি মাঝপথে ওকে আঁটকে দিয়ে আস্তে করে বললাম,
-কিছুই করতে হবে না,শুধু মাসে একবার একটা করে চুমু দিলেই হবে
.
রাত্রী আমার পিঠে কিল মেরে লজ্জা মাখা গলায় বলল,
-তুমি তো বড়ই অসভ্য,,,
.
আমি কিছু বললাম না, শুনে শুধু হাসলাম।
.
.
.
-নাহিদ পারভেজ নয়ন
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯