somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত পথিক

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অন্য একটি গল্প (বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)

এটা কোন গল্পো নয়। বাস্তব জীবনের ঘটনা।

এইতো কিছু দিন অাগের কথা। ঘটনাটি ছিলো ২০০৪ সালের।কুষ্টিয়া জেলার রাধানগর-চরপাড়া গ্রামের ঘটনা। গ্রামের বর্ণনা দিলে চিত্রটা পরিস্কার হবে।দক্ষিণে বিশাল বাওড়, পূর্বে কুমার নদ, পশ্চিমে বাওড়ের অাংশিক+ মনহরদিয়া গ্রাম,উত্তরে পান বরজের মাঠ। যাতায়াতের রাস্তা প্রাচীন যুগের মতো।মেঠো পথ।এই গ্রামটি ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলা সিমান্তে।

ত্রিশ বছর অাগের ঘটনা। সেলিম উদ্দীন ছিলেন সাদা সিধে প্রকৃতির মানুষ। বাড়ি ছিল মনহরদিয়া গ্রামে।সেলিম উদ্দিন বিবাহ করে বৌ ঘরে অানে১৯৬৯ সালে। নতুন ভাবে জীবন শুরু করে।সকলের মতো সেও ভবিষ্যতের নানান স্বপ্নে বিভোর ছিলো।বছর ঘুরতেই ঘর অালো করে অাসলো সুন্দর ফুট ফুটে কন্যা সন্তান।কন্যা সন্তান হওয়ায় সাভাবিক ভাবেই একটু কষ্ট লাগে বংসের বাতি জালাবে কে। যেটা সাধারনত গ্রামিন সমাজে হয়ে থাকে।

একপ্রকার ভলোই চলছিলো সেলিমের জীবন।দুই বছর পর অাবার সন্তান এলো ঘরে। তবে সেটিও ছিলো কন্যা সন্তান। যাহোক এবার একটু কষ্ট পেলেন।তবে অখুশি নন।মনের মধ্যে একটাই ব্যকুলতা বংশের বাতি জালাবে কে। এই শূনতা থেকেই অাবারও একটি পুত্র সন্তানের অাশায় তৃতীয় কন্যা সন্তান হলো।ভালোই চলছিলো সেলিমের সংসার। তবে পুত্র সন্তানের ব্যকুলতা থেকেই গেলো।

অবশেষে একদিন ঘর অালো করে স্বাধের পুত্র সন্তান এলো। নাম রাখলেন বাপ্পি। অনেক অদরের সন্তান বাপ্পি। বাবা চেষ্টা করেছেন সাধের অালোকে ভালো খাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা করতে।কোন বিষয়ের অপূর্ণতা থাকতে দেয়নি। বুঝতে দেয়নি নিজের সমস্যা। এক কথায় অতি অদুরে সন্তান। এভাবে দিন যেতে থাকলো। সময় বসে থাকেনা।সবাই বড় হলো। একে একে তিন কন্যা ও একপুত্রের বিয়ে হয়ে গেলো।
এদিকে সেলিম উদ্দিন বয়সের ভারে অাগের মতো কাজ করতে পারেনা।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস পুত্রবধু হয়েছে জল্লাদ প্রকৃতির। শশুর শ্বাশুড়িকে ভালোমতো খোজ খবর নেয়না। তিন বেলা ভালো মতো খাবার পানি দেয়না।সেলিম উদ্দিন যদিও কষ্টে থাকে তবুও সন্তানকে অার কি বলবে। বুকের কষ্ট বুকেই থাকে। মেয়ে তিন জন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বাবাকে তাদের বড়িতে রাখার প্রস্তাব দেয়।সে মেয়েদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে তিন মেয়ে বাড়ি থাকা শুরু করলো।মাঝে একদিন সেলিমের স্ত্রী চির বিদায় গ্রহন করলে একা হয়ে যায়। তাই মেয়ে জামায় বাড়ি দিন কাটানোর সিদ্ধান্ত নেয়। অার মেয়ে জামায় বাড়ি না থেকে কি করবে, বেটার বৌ তো তার কোন খোজ নেয়না।ঘুরে ঘুরে প্রত্যেক মেয়ের বড়ি দুই মাস ভাগ করে একেক মেয়ের বড়িতে থাকা শুরু করলো।

একদিন জানতে পপারলো বেটারবৌর একটা পুত্র সন্তান হয়। নাতিকে নিয়ে তার এক অন্যরকম ভালোবাসা সৃষ্টি হলো।নাতি অাস্তে অস্তে বড় হতে লাগলো। দাদা নাতির বিরাট সক্ষতা বাড়িতে থাকলো। দুজনের ভালোই পটে। মেয়ে বাড়িতে গেলে মাঝে মাঝে নাতিকে সাথে করে নিয়ে যায়। গল্পে গল্পে ভালোই কাটতে থাকে দুই দাদুভাইর।

একদিন, রাধানগর চর-পাড়ায় ছোট মেয়ের বাড়ি যাওয়া পালা হলো। সে ছোটমেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলো। সাথে নিলো নাতিকে। সেদিন যেতে একটু নয় ভালোই দেরি হয়ে গেছিলো। সমস্যা এখানে নয়। সমস্যা হচ্ছে ঐদিন বৃষ্টি হয়েছে। গ্রামের রাস্তা গাড়ি বা ভানগাড়ি তেমন একটা নেই। অনেক কষ্টে একটা ভ্যান পেলেও সে যেখানে নামিয়ে দিলো, সেখান থেকেও তিন কিলোমিটারের পায়ে চলা পথ। পথের দুইধারে বিশাল বাগান, মাঠ ও পানের বরজ। গ্রামের রাস্তায় সাধারনত সন্ধার পর লোক জন বাইরে খুব একটা বেরহয়না। সেদিন বৃষ্টির কারনে তাই তেমন কেও পথে ছিলোনা। সেলিম উদ্দিন তার নাতিকে কোলে করে অনেক কষ্টে কাদাপিচ্ছিল পথে মেয়ে বাড়ির অতিনিকটে চলে এসেছে। নাতির বয়স তিন বছর মতো। রাতের বেলাই চলা এটাই তার প্রথম।চারপার্শ্বে শিয়াল ডাকছে। নাতি তার দাদার কোলে কেঁদে কেঁদে ঘুমায়ে পড়েছে।বাচ্চা শিশুটি তার দাদুকে দুই হতে অাঁকড়ে ধরে অাছে। নাতিকে কলে করে হাটতে সে ক্লান্ত। তবুও সে অনেক কষ্টে প্রায় পৌছেগেছে, কিন্তু যাওয়া হলোনা তাকে তার মেয়ে বাড়ি।চলে গেলো সে পৃথিবির মায়া ছেড়ে। তখন রাত অাটটার মতো বাজে। মেয়ে বাড়ি থেকে দুইশ গজমতো দুরে পা পিছলে পড়ে গেছে। সেই নাতি তার দাদুর হাতের উপর সুন্দর ভাবে ঘুমিয়ে অাছে।যেন সে অারামে ঘুমাচ্ছে।

যখন ভোর হলো ,ফজর অাজান হলো।সকলে তার পানক্ষেতে চলেছে পান গোছানোর উদ্দেশ্যে। দুর থেকে কিছু একটা চোখে পড়লো। ওরা ঘুম থেকে উঠেই রওনা দিয়েছে, তাই ভাবছে ভুল দেখছে। কাছে যেতেই দেখে,না ভুল দেখছে না। যা দেখছে সে একটা বৃদ্ধ।সে হচ্ছে প্রতিবেশি সাবদার অালির শ্বশুর।কিন্তু এখানে কেন।এক দৌড়ে সাবদারকে সংবাদ দিলো। সবাই এসে দেখে সে চিরবিদায় নিয়েছে।

এটাই কি অাদরের পুত্রসন্তানের কাছে পিতার প্রাপ্য ছিলো।তার কি নিজ বাড়িতে একটুও জায়গা হওয়ার মতো ছিলোনা। ঐ ছেলে বেটার বৌ কি সারা জীবন এমন যুবক থাকবে! কবে এই সমাজের ঘুম ভাংবে। সকল মানুষের জীবনে কবে সুখ ফিরে অাসবে।

(সত্যঘটনা অবলম্বনে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:১৯
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×