একটা বিষয় অাজ ক'দিন মনের ভিতর উঠা নামা করছে। ব্যস্ততার কারণে লেখা হয়ে উঠছে না।
যাহোক, মূল কথায় অাসি। অামি তখন সেভ দ্যা চিল্ডেন এ চাকুরি করি। সে সময়ের কথা।
অনেক ঘটনা অাছে। তবে অাজ একটি শেয়ার করার চেষ্টা করছি।
কিছু কিছু কথা এখনও মনে হলে কষ্টে বুকটা ফেটে যায়। অামি অাবার কষ্ট কম সহ্য করতে পারি। তাই নিজেকে বোঝাতে পারিনা। নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হয়। অামাদের কাজ ছিলো পতিতালয়ের বাচ্চাদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। লালন পালন করা, এর ম্যাক্সিমাম টাকাটা অাসতো বিদেশি ডোনারদের থেকে।
অামাদের তত্ত্বাবধানে ছিলো ৪১ জন ছেলে মেয়ে। এদের বয়সের গড় ৩ থেকে ১৮বছর। এরা যে কত দুষ্টু হয় না দেখলে বোঝা যায়না। এদের কন্টল করতে গিয়েই ক্লান্ত হয়ে যেতে হয়। সিস্টেম হচ্ছে এরা যতো বড় অন্যায় করুক শারিরিক টর্চার করা যাবে না। তবে, ওরা অামাকে ভয় ও সম্মান করতো। অামার কথা শুনতো।
এখানে অামি সবাইকে কোরঅান পড়া শেখাতাম। অার নামাজ পড়াতাম। এক কথায় মোরালিটি এবং সামাজিকিকতা সেখানো হতো। একজন মানুষ হিসেবে বাঁচতে শেখানো হতো। অর্থাৎ একজন মানুষ হিসেবে তার অধিকার ও সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে সচেতন করা হতো। অর্থ নৈতিক ভাবে সাবলম্বি করার জন্য বিভিন্ন কাজ শেখানো এবং একটি অায়ের উৎস তৈরী করে দেওয়া হতো।
যেটা বলছিলাম। ছোট্ট মেয়ে তৃষা। ও ছোট্ট তবে ওর বুদ্ধি কিন্তু মনে দাগ কাটার মতো। ওখুব শান্ত সভাবের মেয়ে। ও অামার কথা খুব শুনতো। মেয়েটা দেখতে পরীর মতো। ওর চেহারাটায় কেমন জানি মায়া জড়িয়ে থাকে। যা সহজেই একজনকে অাপন করে নিতে পারে।
ও ছোট্ট তবে সব কিছু বুঝতো। ওর মা কি করে কেনো করে? ও সব বুঝতো।
মাঝে মাঝে অামাকে বলতো স্যার অাপনি চলেগেলে মা অামাকে ওখানে নিয়ে যাবে।
স্যার অামি ওখানে যাবো না। তৃষাকে নামায পড়নো শিখিয়েছিলাম। হিজাব পরতে বলতাম, বুঝাতাম হিজাব না পরলে গোনাহ হয়। হিজাব পরতো। যা বলতাম তাই শুনতো।
কর্তৃপক্ষে বলেছিলাম। স্যার ওকে দিয়েদেন। অামি লালন পালন করে ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দিবো।
অফিস: বললো না হবে না।
সেভ দ্যা চিল্ডেন এর নিয়োম ছিলো সন্তানের মা সপ্তাহে একবার করে অাসতে পারবে। কাছে নিয়ে যেতে পারবে তবে দ্রুতোই রেখে যেতে হবে।
তৃষার মা মাঝে মাঝেই অাসতো। তবে একা নয় প্রতিবার সাথে করে তৃষার নতুন নতুন বাবাকে নিয়ে অাসতো। এসে বলতো তৃষা এটা তোমার বাবা। বাবা বলো। বাবা বলো।
অামি বলতাম প্রতিবার এভাবে একটা করে নতুন বাবা এনে পরিচয় করালে কয়জন বাবাকে মনে রাখবে ও।
তখন তৃষার মা হাসতো।
তৃষার বয়স যখন ৭বছর তখন ওর মা অাসলো ওকে নিয়ে যেতে। অামি ওদের কে পরিস্কার জানিয়ে দিলাম। অামি যতদিন অাছি এই মেয়েকে খবরদার নিতে অাসবেন না। অাসলে পুলিশে ধরায়ে দিবো। বকা দেওয়ার পর অামার সামনে অার নেওয়ার কথা বলতোনা।
অামাদের প্রজেক্টে কিছু বেয়াদব ছিলো যারা টাকার বিনিময়ে বাচ্চাদেরকে ওদের হাতে তুলেদিতো। অামি বললাম, অামি থাকতে খবরদার এটা করতে পারবেন না।
এর মাঝে অামার জ্বর হলো। অামি চাকুরি ছেড়ে চলে অাসলাম। তবে খোজ খবর রাখতাম। একদিন শুনি ওই তৃষাকে ওর মা নিয়েগেছে।
ওখানে গেলে যা হবার তাই হচ্ছে।
তবে ঐ কথাগুলো অামার কানে অাজও ভাসে। স্যার অামি অামার মায়ের কাছে যাবো না।
নিজে বড় অপরাধী লাগে।
এ কেমন সভ্যতা। এ কেমন অাধুনিকতা। ১৮ বছরের অাগে মেয়ে বিয়ে দেওয়া যাবেনা । এই কথা যারাই বলে তারাই অাবার ওখানে গিয়ে বাচ্চা মেয়ে খোজে।টাকার বাজেটটাও অাবার বেশি দেয়। হায়রে সমাজ।
তৃষাদের মতো মানুষকে বাঁচাও ... । বাঁচতে দাও...
হায়রে তৃষা তোমার জন্য কিছুই করতে পারলামনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৭