ভারতকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য কিংবা ভারত যে প্রতিবেশী হিসেবে ভালো নয় সেটা বলার জন্য অনেক কারণ আছে। ভারত যে আমাদের সাথে প্রতিবেশী সুলভ সঠিক আচরণ করছে না এটা যে কেউ সামান্য কমনসেন্স দিয়ে বিশ্লেষণ করলেই বের করতে পারবে। তবে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে ভারতকে এড়িয়ে আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি সুষ্ঠুভাবে করার অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। মোগল আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দিল্লি এই বাংলায় সব সময় তার ক্ষমতার ব্যবহার ও অপব্যবহার করেছে।
যাক এগুলি ভিন্ন ও বিস্তারিত আলোচনা। যে বিষয়টি বলতে চাচ্ছিলাম, আমাদের দেশের বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। জন্মলগ্ন থেকেই তারা ভারত বিরোধী রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে রাজনীতি করতে চায়। এতে তারা বেশ কয়েকবার সফল হয়েছে। মানুষের ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় তারা আসতে পেরেছে। কিন্তু মানুষের দিন দিন তথ্য পাওয়ার অ্যাক্সেস যত বাড়ছে তত ভারত বিরোধী রাজনৈতিক কৌশল ভিন্নমাত্রা পাচ্ছে। বিএনপি ভারত বিরোধী অবস্থান নিতে গিয়ে সেই পুরনো কৌশলে হাঁটছে, এসব কৌশল এখন কাজে দেখবে না।
কয়েকদিন আগে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বিএনপির অফিস থেকে বের হয়ে নিজের গায়ের কাশ্মীরি শালটি পুড়িয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জন করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে। তিনি নিজে ভারতীয় পণ্য বর্জন করবে বলে কথা দিয়েছে। দেখুন এই গ্লোবালাইজেশনের যুগে কোন পণ্য, সেবা বা প্রযুক্তি বর্জন করে খুব বেশি কার্যকর কোনো রাজনৈতিক কৌশলে সফল হওয়া যায় না। কোনো না কোনো ওয়েতে আপনাকে সেই পণ্য, সেবা বা প্রযুক্তি গ্রহণ করতেই হবে। সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হচ্ছে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের থেকে ভালো ও কম দামে সেসব পণ্য, সেবা বা প্রযুক্তি উৎপাদন করা। এই ভিন্ন এখন পর্যন্ত আর কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
বাংলাদেশের বর্তমান যে অবস্থা তাতে অদূর ভবিষ্যতেও ভারতের পণ্য বর্জন করা সম্ভবপর হবে না। রিজভী সাহেবরা কিংবা বিএনপি ভারত বিরোধিতার যে কার্ড এপ্লাই করতে চাচ্ছে রাজনীতিতে, এটা এখন আর খুব বেশি কাজে দেবে না। তার প্রমাণ হচ্ছে রিজভী সাহেব ভারতীয় পণ্যের বর্জনের ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘন্টা পরে আবার বলতে বাধ্য হয়েছে এটা উনার ব্যক্তিগত আহবান দলীয় অবস্থান নয়। এক নেতা একদিকে ভারত বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছে অন্য নেতা ভারতের সুদৃষ্টি কামনা করছে। দলের মধ্যে যে চেইন অব কমান্ড পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে সেটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব থাকবেই, এটাকে স্বীকার করেই বিএনপি তার রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। বিএনপির প্রয়াত মন্ত্রী সাইফুর রহমান একবার ভারত সফর শেষে এসে প্রেস ব্রিফিং করে বলেছিল বিএনপি'র ভারতের প্রতি যে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি সেটা পরিবর্তন করা উচিত। তার এই কথা স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় ভারতের প্রতি দলীয় অবস্থান সবসময় নেতিবাচক। বিএনপি রাজনৈতিকভাবে ভারতকে এড়িয়ে গিয়ে এদেশের রাজনীতিতে খুব বেশি ভালো করতে পারবে না। বিএনপি ভারতকে যে ভয় লাগিয়েছিল সেটাকে কাটাতে হলে অবশ্যই ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। ভারত বর্জন করে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।
বিএনপি'র প্রতি ভারতের বর্তমান যে অবস্থান এটা চিরন্তন কোন অবস্থান নয়। তারা যদি সঠিক রাজনীতি করে এবং ভারতকে বুঝাতে সক্ষম হয় তাদের জন্য বিএনপি ঝুঁকিপূর্ণ দল নয় তাহলে হয়তো বিএনপি তাদের রাজনীতিতে গতিসঞ্চার করতে পারবে। তবে গত ৪২ বছরেও বিএনপি যে ভারতকে সঠিকভাবে ডিল করতে পারেনি তাদের রাজনীতির প্যাটার্ন দেখলেই সেটা অনুমান করা যায়। আশা করি তাদের নেতৃত্ব ভারতের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলিয়ে রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগ করবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০১