somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাড়িয়ালার মেয়েটি সাথে এক প্লেট চটপটি

২৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চটপটি জিনিসটার প্রতি আমার আলাদা একটা আকর্ষন আছে ! প্রতি দিন সন্ধ্যার সময়ে এক প্লেট চটপতি না খেলে মনে হয় যেন কি যেন করি নি ! কি যেন একটা কাজ বাকী রয়ে গেছে !
আজও তাই চটপটি খাওয়ার জন্যই বের হলাম বাইরে !
তিনতলায় এসেছি দেখলাম বাড়িয়ালার মেয়েটি দরজা খুলে বের হল ।
আমি এই জিনিসটা ঠিক বুঝতে পারি না এখনও ! আমি যখন সিড়ি দিয়ে উঠি বা নামি, ঠিক যখন তিন তলার কাছে আসবো মেয়েটি দরজা ঠেলে বের হবে । তার পর আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসবে !
মেয়েটি কি টেলিপ্যাথি জানে নাকি !!
কে জানে !!
একদিন সময় করে জিজ্ঞেস করতে হবে !
আজও মেয়েটা আমাকে দেখে মিষ্টি করে হাসলো !
-কোথায় যচ্ছেন?
-আমি ? কোথাও না । এই একটু নিচে যাবো !
-নাস্তা করতে?
-এই আর কি ! চটপটি খাবো !
-চটপটি!!
মেয়েটার মুখ দেখে মনে হল যেন চটপটি অনেক দিন খাই নি !
আমো বললাম
-চলুন ! আমার সাথে খাবেন একপ্লেট !
-আমি?
মেয়েটা একটু খুশি হল । কিন্তু পরক্ষনেই মুখটা কেমন যেন একটু মলিন হয়ে গেল !
-না থাক !
-আশ্চর্য ! থাকবে কেন? এই তো বাসার পাশেই তো চটপটির দোকান ! চলুন কোন সমস্যা নাই !
-না একটু সমস্যা আছে !
-চলেন না ! কি হবে ?
-প্লিজ কিছু মনে করবেন না ! একটু সমসয়া আছে !
-ও !!
এবার আমার মনটা খারাপ হল কিছুটা ! মেয়েটার সাথে চটপটি খেতে পারলে ভাল লাগতো ! পছন্দের খাবার গুলো পছন্দের মানুষ গুলোর সাথে খেতে পারলে তার সাধ আরো বেরে যায় !
অনেক দিন থেকেই ভাবছিলাম মেয়েটাকে চটপটি খাওয়ার অফার দিবো !!
কিন্তু মেয়েটি এভাবে মানা করে দিল !
কি এমন হত আমার সাথে চটপটি খেলে !
-আপনি রাগ করলেন না তো !
-না রাগ করার কি আছে !
কিন্তু মনে মনে আমি একটু রাগই করলামই মেয়েটার উপর !
-না আপনি রাগ করেছেন ! আপনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে !
-না আমি রাগ করি নি ! আচ্ছা আমি যাই ! কেমন !!
মেয়েটিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নেমে চলে এলাম । একবারও ফিরে তাকালাম না ! আমি জানি না মেয়েটি গেট পর্যন্ত আসবে ! আামর দিকে তাকিয়ে থাকবে !!
একবার কি ফিরে তাকাবো ?
না থাক !
তাকাবো না !!
আচ্ছা মেয়েটি তো আমার পিছন পিছন আসতে পারে ! আমি যখন চটপটির অর্ডার দিবো মেয়েটি এসে বলবে চলে এলাম আপনার সাথে চটপটি খাওয়ার জন্য !
চটপটির দোকানের সামনে গিয়ে খানিক সময় অপেক্ষা করলাম ! যদি মেয়েটা আসে !!
কিন্তু বেশ কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকার পরও মেয়েটি এল না !! আশ্চর্য এলোই না !!
এখান থেকেই প্রতিদিন চটপটি খাই । দোকানদার মামা আমাকে খুব ভাল করে চেনে ! প্রতিদিন এসেই আমমি অর্ডার দেই । আজ দিচ্ছি না দেখে মামা নিজ থেকেই বলল
-মামা আ খাইবেন বা ?
-না মামা । আজ ভাল লাগছে না !
-খান মামা, ভাল কইরা বানাইয়া দেই ?
-থাক মামা । কাল খাবো । আজ যাই ।
সত্যি সত্যিই চটপটি না খেয়েই চলে এলাম !
কেন এলাম ?
জানি না ! মেয়েটার উপর রাগ করে ?
কেন ? সে না খেলে না খাবে ! আমি কেন খাবো না কেন ?
আমি হাটতে হাতটে বাসার দিকে যাচ্ছি । কেমন যেন একটা বিষন্নতা ভর করে আছে মনের ভিতর । মনে হচ্ছে হয়তো আর কোনদিন গলা দিয়ে চটপটি নামবে না আমার !
অদ্ভুদ মানুষের মন !

পরদিনও গেলাম না চটপটি খেটে ! বাইরেও বের হলাম না ! মনটা খারাপ হয়ে রইলো ! বারি যাবার সময় আমি মেয়েটিকে বলে যাই নি বলে মেয়েটি আমার উপর রাগ করেছিল । আর আমি এতো করে আামর সাথে চটপটি খেতে বললাম । শুনলো না ।
আমার কি রাগ হটে পারে না ?
অবশ্যই পারে.....

পরের দিন সন্ধ্যার সমসয় কি করবো ভাবছিলাম ! বাইয়ে কি বের হব কি না মনস্থির করতে পারছিলাম না । ঠিক এই সময় কলিংবেল বেজে উঠল ! দরজা খুলে দেখি বাড়ির দারোযান !
-কি ব্যাপার?
-আপামনি আপনেরে ছাদে যাইতে কইছে !
-কেন?
-আমি কইতে পারি না ! আপনে গিয়া দেখেন !
-আচ্ছা ঠিক আছে । গিয়ে বল আসছি !

ছাদে গিয়ে দেখি মেয়েটি এক কোনে দাড়িয়ে আছে ! আমি সামনে গিয়ে দাড়ালাম ! মেয়েটার মুখটাও কেমন যেন একটু মলিন !
আমার দিকে তাকিয়ে একটু হাসল । বলল
-ভাল আছেন?
-এই তো আছি !
-মন খারাপ আপনার ?
-নাহ ! মন খারাপ কে হবে !
মেয়েটা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল
-আমি জানি আপনার মন খারাপ । আপনি আমার উপর রাগ করেছেন !
-আমি কেন আপনার উপর রাগ করবো ?
-ঐ যে আমি আপনার সাথে যেতে রাজি হই নি !
যাক তাহলে তুমি বুঝতে পেরেছ ! ভাল ! আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকি ! দেখি মেয়েটা কি বলে !
মেয়েটা কি বলে !
-এভাবে রাগ করলে কি হয় বলুন ? আপনাকে বলেছিলাম না বাবা বাইরের জিনিস খাওয়া একদম পছন্দ করে না ! যদি আপনার সাথে যেতাম বাবার কানে ঠিকই পৌছে যেত যে আমি বাইরের চটপটি খেয়েছি !
মেয়েটি চুপ করে থালো কিছুক্ষন ! আমি বললাম
-আপনি বলতেন । আমরা আর একটু দুরে গিয়ে খেতাম ! তাহলেই আপনার বাবা জানতে পারতো না !
-ওখানেও সমস্যা ছিল ! বাইয়ের খারার খেলেই আমার পেটে ট্রাবল দেখা দেয় ! দেবেই ! এই জন্য !
আমি চুপ করেই থাকলাম ! মেয়েটি আবার বলল
-আপনি ঐ দিন চটপটি খান নি তাই না?
মেয়েটা কিভাবে বুঝলো যে আমি চটপটি খাই নি !
-কালকেও খান নি ? কি সত্যি?
-হুম !!
-আসুন ? আমার সাথে ।
-কোথায় ?
-আসুন তো !
মেয়েটি আমাকে সিড়ি ঘরে ওপাশে নিয়ে গেল । এখানে একটা টেবিল পাতা । দুপাশে দুটো চেয়ার । টেবিলের উপর ঢাকনা দিয়ে দুটো প্লেট ! মেয়েটি আমাকে বসতে বসলো !
আমি বসলাম ! মেয়েটিও বসলো ।
ঢাকনা উঠাতেই দেখলাম ধোয়া ওঠা চটপটি !
মেয়েটি বলল
-বাসায় রান্না করা ! আমি রেধেছি ! খেয়ে বলেন কেমন হয়েছে ! ভাল হবে না জানি । প্রথম রেঁধেছিতো
আমার মনটাই ভাল হয়ে গেল !
এক চামুছ মুখে নিলাম । মেয়েটি আগ্রহ নিয়ে আামর দিকে তাকিয়ে আছে !
-কেমন হয়েছে ?
আমার কাছে মনে হল এর থেকে সাধের চটপটি আমি আর কোনদিন খাই ই নি !!



এই সিরিজের আরো কিছু গল্প
০১. বাড়িয়ালীর মেয়েটি !!
০২. বাড়িয়ালার মেয়েটি আবার !!
০৩. একরিক্সায় বাড়িয়ালার মেয়েটি আর আমি
০৪. বৃষ্টিতে বাড়িয়ালা মেয়েটি

ফেবু লিংক
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১২ বিকাল ৩:২২
৩০টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×