somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক্স গার্লফ্রেন্ড (শেষ পর্ব)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-জানো অপু, তোমার চোখ দুটো আমি এখনও খুব মিস করি । কত বছর হয়ে গেছে তবুও ! মনে হয় যেন এইতো কালকের কথা !
জয়ন্তী সেই গভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমার অস্বস্তিটা যেন আরও একটু বেড়ে গেল ।
তবে বলবো না যে আমার খারাপ লাগছে ! একটু অস্বস্তি লাগলেও সেটা ভাল লাগার অস্বস্তি !
চোখ সরিয়ে নিতে খুব ইচ্ছা করলেও আমি চোখ সরিয়ে নিলাম না । হয়তো আগের মত এখন চিৎ‍কার করে উঠবে এখন ! না তা হয়তো উঠবে না ।
একবার কেবল এই চোখ সরিয়ে নেওয়ার জন্যই জয়ন্তী পুরো তিন দিন আমার সাথে কথা বলে নি । সেদিনকার কথাটা আমার এখনও খুব ভাল করেই মনে আছে ।
সে দিন জয়ন্তী স্কুল ফাঁকি দিয়ে আমার সাথে দেখা করতে এল । আমরা এমনটা প্রায়ই করতাম । স্কুল ফাঁকি দিয়ে দুজনে যে দিক চোখ যায় ঘুরে বেড়াতাম, রিক্সায় চড়তাম, কখনও বা নৌকায় চড়তাম সারাটা দিন । ঐ দিন গিয়েছিলাম ইস্টান লেকের ধারে ।
বিকেল বেলাটাতে ভিড় থাকলেও সকালের দিকে খুব একটা লোকজন আসে না এখানে । জয়ন্তী আমার খুব কাছেই বসল আমার হাতটা ধরে । কিছু সময় আমার কাধে মাথা রেখে আপন মনেই কথা বলতে লাগল ।
কত রকমের কথা !
আমাকে নিয়ে দেখা কত রকমের স্বপ্ন !
একটু পরেই কাধ থেকে মাথা তুলে বলল
-এই তোমার কোন জিনিসটা আমার সব থেকে প্রিয় ?
আমি খানিকটা কনফিউজড গলায় বললাম
-কোনটা ?
-তোমার চোখ । কেবল তোমার চোখ !
এই বলে জয়ন্তী আমার চোখের দিকে এক ভাবেই তাকিয়ে রইল ।
আমি পরলাম বিপাকে !
আসলে জয়ন্তী এমন গভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল যে আমার অস্বস্থি লাগা শুরু করলো । আমি চোখ সরিয়ে নিতেই জয়ন্তী বলল
-কি ব্যাপার তুমি চোখ সরালে কেন ?
-আরে এ ভাবে তাকিয়ে থাকা যায় নাকি ?
-কেন আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে তোমার ভাল লাগে না ?
-আহা ব্যাপারটা তা না । বাংলা সিনেমায় মত নায়ক নায়িকার দিকে এক ভাবে তাকিয়ে থাকবে ! এটা আমার দ্বারা হবে না ।
জয়ন্তীর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ গম্ভীর হয়ে গেছে ।
বলল
-ঠিক আছে আমার দিকে তোমার তাকিয়ে থাকতে হবে না !
এই বলে জয়ন্তী উঠে পড়ল ।
-আরে যাও কই !
জয়ন্তী কোন কথা বলল না । হনহন করে হাটতে লাগল । তারপর পুরো তিনদিন আমাল সাথে কোন যোগাযোগ নাই । অনেক অনুনয় বিনয়ের পর সেই রাগ ভাঙ্গাতে হয়েছিল ।
ইস তখনকার দিন গুলো কি চমৎ‍কারই না ছিল !
চাইলেই কি ভোলা যায় !
অথবা বলা আমি ইচ্ছা করেই ভুলতে চাই না ।
খানিকটা অপরাধ বোধ থেকে হয়তো জয়ন্তীর স্মৃতি আমার কাছে সবসময় উজ্জল ।

হঠাৎ জয়ন্তীর কি হল বলল
-আমি আজকে যাই !
-এখনই যাবে ?
জয়ন্তী হেসে বলল
-তুমি বললে না যে এখানে আসা আমার উচিৎ‍ হয়নি । আবার এখন আমাকে যেতে মানা করছে !
সত্যিই তো !
জয়ন্তীকে দেখে এতোক্ষন অস্বস্তি লাগছিল আর এখন ও চলে যাবে শুনে মনের ভিতরটা কেমন করে উঠল । মনে মনে বললাম আর একটু বস । কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকো আমার দিকে । তোমার তাকিয়ে থাকাটা আমি খুব মিস করি !
খুব বেশি !
বললাম
-কি জন্য এসেছিলে বললে না তো ?
-কোন কারন নেই । একটা কথা জানতে এসেছিলাম কিন্তু এখানে এসে মনে হচ্ছে কথাটা না বলাই ভাল ।
আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না । কারন টা হয়তো আমি জানি । তবুও বললাম
-আর একটু বস !
-না যাই ! সুমিত চলে আসবে হয়তো !
আগে জয়ন্তী এমন টা কখনও করতো না । আমি যদি না বলতাম তাহলে ও কখনও আমাকে ছেড়ে যেত না ।
আমি বললাম
-শোধ নিচ্ছ ?
-শোধ নিচ্ছি মানে ? কি বলছো তুমি ?
কি বললাম ! ছি !!
আমি বললাম
-না কিছু না । সরি ! আর একটু বসলে হয় না ?
-অপু এমন কথা কেন বল ?
-সরি !
জয়ন্তী যাবে বললেও চলে গেল না । বসেই রইলো ।
-আমি কেন এসেছি জানো ?
-কেন ?
-তোমাকে দেখতে ! কাল যখন তোমাকে দেখলাম .......
কিছুক্ষন চুপ থেকে জয়ন্তী বলল
-যখন তোমাকে দেখলাম বিশ্বাস করবা না নিজের ভিতর কি চলছিল । তুমি তো ঐ দিনের পর আর আমার সাথে দেখাই কর নি । তোমাকে দেখতে কি যে মন চাইতো ! নির্লজ্জের মত তোমাদের বাড়ির আশে পাশে কত যে দাড়িয়ে থেকেছি । তুমি নেই এটা জেনেও দাড়িয়ে থেকেছি । কেবল তোমাকে একটু দেখার জন্য !
এই টুকু বলে জয়ন্তী চুপ করে গেল । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে !
এখন এই মেয়েটা আমার জন্য কাঁদে ?
এখনও আমার জন্য চোখের পানি ঝরে ??
আমি কিভাবে থাকবো এখন ?
ওর সাথে দেখা না হওয়াই বোধহয় ভাল ছিল !
তাহলে অন্তত পুরানো কষ্ট টুকু আর মাথা চাড়া দিয়ে উঠত না !

আমাদের দিন কাটছিল খুব ভাল । দেখা হত কথা হত ! আরো কত কিছু !! সারাক্ষন যেন আমরা একটা রঙিন স্বপ্নের ভিতর ছিলাম । কিন্তু স্বপ্ন ভাঙ্গতে খুব বেশি দেরি হল না ।
খুব শীঘ্রই এলাকার সবাই আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে গেল । আমাদের বাড়ি পৌছাতেও খুব বেশি সময় লাগলো না ।
ঐদিন আব্বা আমাকে কাঠে চলা দিয়ে এমন ভাবে পিটালো যে আমার মনে আর কিছু ছিল না ।
মিথ্যা কথা বলবো না আমি ঐ দিন বুঝলাম লোকে কেন বলে মাইরের কাছে ভুত পালায় !!
আব্বা তবুও আর রিস্ক নিলো না । আমাকে ঐদিনই মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিল । আমি আর আসতেই পারলাম না এলাকাতে !
আর দেখা হল না জয়ন্তীর সাথে !!

-একটা কথা বলবো ?
-বল ?
-এই বার আমাকে ছেড়ে না গেলে হয় না ?
আমি অবাক হয়ে বললাম
-মানে ? কি বলছো তুমি ?
-আমি খুব ভাল করে চিনি তোমাকে । তোমাকে আমি যত দুর চিনি চোখে সামনে আমাকে অন্য কারো সাথে, এটা তোমার সহ্য হবে না ।
মনে আছে তুমি একবা রকি পরিমান রাগ করেছিলে আমি তোমার এক বন্ধুর সাথে একটু হেসে কথা বলেছিলাম বলে !!
আমি এবার সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না । জয়ন্তীর এখনও সব কিছু মনে আছে ! এমন কি আমার মনে কি চলছে এটাও ও ধরে ফেলেছে !
আমিকাল রাতেই ঠিক করেছিলাম যে আমি আর এখানে থাকবো না ।
আমাদের কোম্পানির নতুন ব্রাঞ্চ খুলেছে সাভারে । ওখানে চলে যাবো ভাবছিলাম ।
আসলেই সুমিতের সাথে জয়ন্তীকে দেখলে আমার সহ্যই হবে না । আসলেই সহ্য হবে না !
আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম ।
-প্লিজ !
-জয়ন্তী ! আমার সহ্য হবে না এটা ! কিছুতেই হবে না !

জয়ন্তী আর বেশিক্ষন দাড়াল না ।
জয়ন্তী চলে যাবার পর কেন জানি বুকের ভিতর পুরানো বিষন্নতা ভর করে রইল । আসলেই দেখাটা না হলেই বোধ হয় ভাল হত !!
জীবন বাবু ঠিকই বলেছিলেন কে হায় হৃদয় খুড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে !!

সমাপ্ত

১ম পর্ব । ২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৭
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×