somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক্স গার্লফ্রেন্ড

০২ রা অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৪:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আর একটু দেবো ?
জয়ন্তী আবারও ঘুরে ফিরে আমার সামনেই এসে হাজির । হাতে বাটি ভর্তি মাংশ । আমার অস্বস্তিটা আরো একটু বেড়ে গেল । ঠিক মত খেতেও পারছি না এই মেয়েটার জন্য । জয়ন্তী আবার বলল
-দেব আর একটু ?
আমি চাচ্ছিলাম জয়ন্তীর দিকে না তাকাতে কিন্তু এবার ওর দিকে না তাকিয়ে পারলাম না ।
ইস কি গভীর চোখেই না জয়ন্তী আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! কত দিন দেখি না এই চোখ তবুও কত পরিচিত ।
আমি আমার চোখ ফিরিয়ে নিলাম । আগে এমনটা করলে জয়ন্তী খুব রাগ করতো ।
ওর কেন জানি আমার চোখের প্রতি খুব আকর্ষন ছিল । চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ও খুব পছন্দ করতো । কিন্তু আমায় খুব অস্বস্তি লাগতো । চোখ সরিয়ে নিতাম । তখনই ওর অভিমান কে দেখে ?
জয়ন্তী !!
সুমিত এগিয়ে আসল ।
-কি করছো ?
জয়ন্তী বলল
-উনি তো কিছু খাচ্ছেনই না । মনে হয় রান্না পছন্দ হয় নি । আমি বললাম
-না না রান্না ভাল হয়েছে । খুব ভাল হয়েছে ।
আমার কথা শুনে জয়ন্তী বলল
-তাহলে খাচ্ছেন না কেন ? রান্না ভাল হলে কেউ আবার না খায় ?
সুমিত হেসে বলল
-আরে অপু একটু কমই খায় । আর মানুষের বাড়িতে তো খেতেই পারে না । তুমি চেষ্টা করে দেখো আরো খানিকটা খাওয়াতে পারো কি না ।
সুমিত চলে গেল আবার আমাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলে দিয়ে । আমি চাচ্ছিলাম সুমিত যেন না যায় । ও থাকলে আমার অস্বস্তিটা একটু কম হত !

সুমিত আমার কলিগ । চাকরীর সুবাদে ওর সাথে খুব ভাল একটা রিলেশন তৈরি হয়েছে । সেই সুবাদে ওর বাড়িতে আসা । আসলে উপলক্ষ্য আরো একটা আছে । কদিন আগে সুমিত বিয়ে করেছে । বউ নিয়ে স্যাটেল হওয়ার পর পরিচিত মানুষজন দাওয়াত খাওয়াচ্ছে । প্রথমে আমি আসতে চাইনি । কারনটা অবশ্য সুমিত খুব ভাল করেই জানে ।
আসলে মানুষজনের ভীড় আমার একদমই ভাল লাগে না । তবুও সুমিতের অনুরোধ ফেলা গেল না কিছুতেই । আসতেই হল । প্রথমে ভেবেছিলাম কেবল মানুষ জনের ভিড়ই থাকবে কিন্তু এখানে এসে যে এমন একটা পরিস্থিতিতে পরে যাবো ভাবতেও পারি নি ।
এতো দিন পর জয়ন্তীর সাথে দেখা হল তাও কিনা আমার কলিগের বাড়িতে । আর যে জয়ন্তী এক সময় আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল সে কি না এখন আমার কলিগের বউ ?

জয়ন্তীর সাথে পরিচয়টা আমার এলাকাতেই । আমি সবসময় সাইকেল চালাতে খুবই পছন্দ করতাম । যখন এলাকায় ছিলাম সারাদিন কেবল সাইকেলই চালিয়ে বেড়াতাম । একদিন সাইকেল চালিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছি । বাড়ির কাছাকাছি চলে এসেছি ঠিক এমন সময় আমাকে ক্রস করে একটা ভ্যান এগিয়ে গেল ।
ভ্যানটা এগিয়ে যেতেই আমি দেখতে পেলাম ভ্যানের পিছনে একটা মেয়ে বসে আছে । একটা ব্যাপার সব মেয়েদের ভিতরেই দেখা যায় যে যখনই কোন মেয়ে দেখে যে কোন ছেলে তার দিকে তাকিয়ে আছে তখনই মেযেটার চেহারার এক্সপ্রেশন কেমন বদলে যায় । আর মেয়েটার চেহারা যদি একটু ভাল হয় তাহলে তো কোন কথাই নাই ।
ভ্যানের পেছনে মেয়েটাও ঠিক এমনই ভাব নেওয়া শুরু করলো । আর সত্যি বলতে কি মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরীও বটে । কিন্তু আমার এরকম ভাব নেওয়া মোটেও পছন্দ না । আমি এক গাদা থুতু মেয়েটার সামনে ফেললাম । এমন একটা ভাব যেন তোমার মেয়েকে আমি পুছি না । এটা আমি প্রায়ই করি !
এবার দেখলাম মেয়েটার মুখটা একটু যেন কালো হয়ে উঠল । ভ্যান সামনে চলে গেল আমি পেছন পেছন আসতে লাগলাম । একটু পর ভ্যানটা ঠিক আমাদের বাড়ির সামনেই থামল ।
এটা খানিকটা আশ্চর্যের বিষয় ।
আমাদের গ্রামের মোটামুটি সব মেয়েকেই আমি চিনি । তাহলে এই মেয়েটা এল কোথা থেকে ? তাও আবার নামল ঠিক আমাদের বাড়ির সামনেই ।
কে তুমি সুন্দরী ?
বাড়ির সামনে যেতে দেখলাম মেয়েটা আমাদের বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে চলে যাচ্ছে । আচ্ছা মেয়েটা তাহলে হিন্দু পাড়ার দিকে যাচ্ছে । কিন্তু কে মেয়েটা ?
হিন্দু পাড়ায় এতো সুন্দর মেয়ে কোথা থেকে এল ?
দুদিনের ভিতরেই মেয়েটার নামপরিচয় জেনে ফেললাম । মেয়েটার নাম জয়ন্তী । শ্যামল বাবুর শালী । এখানে এসেছে পড়ালেখা করার জন্য ।
গ্রামে জয়ন্তীকে নিয়ে ভালই চর্চা শুরু হল ।
আসলে মিষ্টি যেখানেই থাকুক না কেন পিপড়া তো আসবেই ।
আমি দেখতাম শুনতাম আর মনে মনে হাসতাম । কিন্তু জয়ন্তীর সাথে আমার দেখা হত প্রায় প্রতিদিনই । কারন ওদের আসা যাওয়ার পথটা ছিল একদম আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে ।
প্রথম প্রথম দেখতাম জয়ন্তী আমাকে দেখে মাথা নিচ করে চলে যেন কিন্তু কয়েকদিন যাবার পর জয়ন্তী আর চোখ নামাতো না । কেমন অদ্ভুদ চোখে তাকাতো আর হাসতো ।
একদিন মেয়েটা খুব অদ্ভুদ একটা কাজ করে বসল । আমি বাড়ির সামনে বসে ছিলাম জয়ন্তী আমার সামনে এসে বলল এই টা নেন । আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-এটা কি ?
-নিন । নিলেই বুঝবেন ।
আমি আশ্চর্য হয়েই নিলাম । কিন্তু তার থেকেও বেশি আশ্চর্য হলাম খামটা খুলে । খালি একটা কাগজ । উল্টেপাল্টে দেখলাম কিছুই নাই ।
আশ্চর্য খালী কাগজ দেওয়ার মানে কি ?

-স্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছে ! নিয়ে আসবো ?
রিসেপ্টশনের ফোন পেয়ে খানিকটা অবাক হলাম । কেবিনে বসে ছিলাম । খুব বেশি সময় হয় নি । এরই মধ্যে আবার কে এল ? আমি জিজ্ঞেস করলাম
-কে এসেছে ?
রিসেপ্টশনিষ্ট বলল
-একজন মেয়ে ! জয়ন্তী নাম বলল । সুমিত স্যারের ওয়াইফ মনে হয় । ওনার কাছেই এসেছিলেন । উনি নেই তাই আপনার সাথে একটু দেখা করতে চাচ্ছে ।
-আচ্ছা নিয়ে এস ।
মনের ভিতর অস্বস্তিতা আবার ফিরে এল ।
জয়ন্তী এখানে কি চায় ? একটু পরেই জয়ন্তী কেবিনে ঢুকলো ।
জয়ন্তীর আসার কথা শুনে আমি খুব একটা অবাক হয়নি । আমি জানতাম ও একদিন না একদিন আসবেই আমার সাথে দেখা করতে । তবে আজকেই চলে আসবে ভাবতে পারি নি ।
কিন্তু জয়ন্তী যখন কেবিনে ঢুকলো আমি সত্যিই অবাক হলাম । বিশেষ করে ওর পরনের পোষাক । জয়ন্তী আজ আকাশী রংয়ের একটা কামিজ পলেছে সাথে সাদা ল্যাগিংস । প্রথম যে দিন ও আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল আজকেও ঠিক এই রকম একটা পোষাক পরে এসেছে । আর আমার খুব পছন্দ হয়েছিল পোষাকটা ।
মাই গড ওর এখনও মনে আছে ।

আমাকে সাদা খামটা দেওয়ার পরদিন আমি ও যখন আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিল আমি ওর পথ রোধ করে দাড়ালাম ।
-কি ব্যাপার তুমি আমাকে সাদা খাম কেন দিয়েছ ?
জয়ন্তী একটু হাসল । হেসে বলল
-সাদা খাম তো দেই নি । না সাদা খাম তো দেই নি ।
-না । সাদাই ছিল । আমি ভাল করে দেখেছি । ইভেন আমি আগুনের উপরেও দিয়ে দেখেছি ।
জয়ন্তী খানিকটা কৌতুহল নিয়ে বলল
-আগুনের উপরে কেন দিয়েছেন ?
-না মানে, এক ধরনের কালি আছে না লিখলে কিছু দেখা যায় না । আগুনের উপরে দিলে কালি ফুটে উঠে ।
জয়ন্তী এবার হেসে উঠল । বলল
-বাববাহ ! কি লেখা আছে জানার জন্য এতো আগ্রহ ?
-না , মানে .........!
সত্যি কথা বলতে কি আমার মনে ব্যাপারটা নিয়ে আসলেই প্রচন্ড কৌতুহল ছিল । বারবার কেবল এই মনে হচ্ছিল যে মেয়েটা আসলে কি লিখেছিল বা কি লিখতে চেয়েছিল । জয়ন্তী বলল
-আজ বিকেলে পুলিশ পার্কে যদি আসেন তাহলে জানতে পারবেন নীল খামে কি লেখা ছিল ।
আমি খানিকটা কনফিউজ হয়ে গেলাম । মেয়েটা কি আমাকে নিয়ে কোন খেলা করছে ?
গ্রামে আমার একটা সুনাম আছে । অন্তত মেয়ে ঘটিত কোন কোন বদনাম আমার ছিল না । আচ্ছা মেয়েটা ঐ দিনের বদলা নিচ্ছে না তো ! আমি বললাম
-আমি পুলিশ পার্কে যাবো না ।
-সেটা আপনি জানেন ? যদি জানতে চান তাহলে আসবেন । না চাইলে না ।
আমি সত্যি সত্যিই গেলাম না ।

চেয়ারে বসতে বসতে জয়ন্তী আর একবার হাসল । হাসিটা দেখে বুকের ভিতর কেমন যেন একটা কষ্ট অনুভব করলাম । একটা সময় ছিল এই হাসি ছাড়া দিন কাটতো না কিছুতেই আর আজ কত দিন পর এই হাসি দেখলাম ।
৭ বছর !
হুম মুটামুটি সাত বছর তো হবেই ।
জয়ন্তী আমার দিকে তাকিয়েই আছে । আমি ইতস্তর করতে করতে বললাম
-সুমিত তো গাজীপুর গেছে ।
জয়ন্তী হেসে বলল
-অপু তুমি খুব ভাল করেই জানো আমি সুমিতের সাথে দেখা করতে আসি নি !!

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৭
৩৬টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×