somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক্স গার্লফ্রেন্ড (পর্ব ২)

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
-আপনি এলেন না কেন ? জয়ন্তী খানিকটা অভিমানের শুরেই বলল কথাটা ।
সকালবেলা মুখে ব্রাশ নিয়ে কেবল বাইরে বের হয়েছি এমন সময় এমন দেখি জয়ন্তী সামনে দাড়িয়ে ।
আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেকি ওর চোখে পানি টলমল করছে । জয়ন্তী চেষ্টা করছে পানি আটকে রাখার জন্য কিন্তু কতক্ষন আটকে রাখতে পারবে কে জানে ।
জয়ন্তী আবার বলল
-আপনি এলেন না কেন ?
আমি বললাম
-আমি বলেই ছিলাম আমি আসবো না ।
-আমি অপেক্ষা করছিলাম আপনার জন্য ।
-সেটা তোমার সমস্যা । আমি তো তোমাকে অপেক্ষা করতে বলি নি ।
জয়ন্তী কিছুক্ষন নিরব চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল ।
জলভরা চোখে কি অদ্ভুদ সুন্দর লাগছিল মেয়েটাকে । এই সকাল বেলা মেয়েটার চোখে জল দেখে আমার নিজের মনও খানিকটা সিক্ত হয়ে গেল ।
জয়ন্তী বলল
-আপনি খুব খারাপ । একজন মানুষ আপনার সাথে দেখা করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকলো আর আপনি এলেন না। আচ্ছা আর আসতে হবে না ।
এই বলেই জয়ন্তী চুপ করে গেল । দেখলাম জয়ন্তীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে । মেয়েটার চোখের পানি দেখে আসলে কেমন যে লাগল নিজের কাছে ।
যদিও আমি কিছুই করি নি । আমি কাল ওকে ভাল ভাবেই বলে দিয়েছিলাম যে আমি আসবো না । তার পরেও যদি সে আমার জন্য অপেক্ষা করে সেটা নিশ্চই আমার দোষের ভিতর পড়ে না ।
কিন্তু তবুও আমার কাছে কেমন যেন খারাপ লাগছে ।
কেন লাগছে ?
আশ্চর্য!
জয়ন্তী আর দাড়াল না । জল ভরা চোখ নিয়ে পেছনে হাটা দিল । আমি দাড়িয়ে রইলাম ।
একটু দুরে গিয়ে জয়ন্তী পিছন ফিরে তাকাল । ওর চোখ দিয়ে পানি পরছে তখনও । আমি কেবল ওবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে ।
মেয়েটার অশ্রু মাখা চোখের দিকে ।
আমার ভাবতেই অবাক লাগছে যে এই অশ্রু আমার জন্য । মেয়েটা কাঁদছে কেবল আমার জন্য ।
আশ্চর্য ।
আশ্চর্যের উপর আশ্চর্য !!

জয়ন্তী আমার দিকে তাকিয়েই আছে । আমার অস্বস্তি আস্তে আস্তে বাড়ছেই । আমি বললাম
-এটা ঠিক হচ্ছে না । এখানে এভাবে আশাটা তোমার উচিৎ‍ হয় নি ।
জয়ন্তী হাসল একটু । বলল
-চলে যাবো ?
চলে যাবে ! মনটা কেন জানি চাইলো না জয়ন্তী চলে যাক ! থাকুক না আর একটু ।
কি ?
কি ভাবছি এটা ?
কলিগের বউ সে এখন !!
এসব ভাবা উচিৎ না কিছুতেই !
-দেখো তোমার এখানে ...
আমি আমার কথা শেষ করতে পারলাম না । মেয়েটা চলে যাক এটা আমি বলতে পারলাম না ।
জয়ন্তী আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি যদি আমাকে চলে যেতে বলতে পারো তাহলে আমি এখনই চলে যাবো । পারবে বলবে ?
জয়ন্তীর আচরন দেখে আমি কেমন ধাঁধায় পড়ে গেলাম । ওর চেহারা দেখে মনে হচ্ছে ও খুব ভাল করেই জানে আমি তা পারবো না । এতো বছর পরেও ও এতোটা নিশ্চিত কেমন করে ?
আশ্চর্য !
জয়ন্তী সব সময় নিশ্চিত ছিল আমার ব্যাপারে । আমি কি করবো সেই ব্যাপারে যেন আগে থেকেই ও জানে, এমন একটা ভাব ।

ঐ দুপুর বেলা জয়ন্তী একটা পিচ্চি ছেলের হাতে আর একটা চিরকুত দিয়ে পাঠাল । একটা মাত্র লাইন তাও আবার অসমাপ্ত ।
আজ কে যদি না আসেন ...........
কোথায় আসবো কখন আসবো কিছুই লেখা নাই । তবে অনুমান করে নিতে খুব বেশি কষ্টা হল না ।
বিকেল বেলা পুলিশ পার্কে গিয়ে হাজির হলাম ।
মনে মনে বললাম কি দরকার ছিল এমনটা করার ?
কি দরকার ছিল এতো ভাব নেওয়ার !
কালকে আসলেই হত !
কালকে আসলে অন্তত মেয়েটার চোখের জল দেখতে হত না ।
জয়ন্তী এল কিছুক্ষনের মধ্যেই । আকাশী রংয়ের একটা কামিজ সাথে সাদা ল্যাগিংস । হালকা সেজেছে কিন্তু ঠোটে লিপষ্টিক নাই । চুল গুলো পিছনে ক্লিপ দিয়ে আটকানো । তবে কিছু চুল বেড়িয়ে এসেছে । বাতাসে বারবার মুখের উপর চলে আসছে । জয়ন্তী বারবার হাত দিয়ে অবাধ্য চুল গুলো পিছনে সরিয়ে দিচ্ছে ।
আমি জয়ন্তীকে দেখে কিছুক্ষন থ হয়ে গেলাম । যতবার জয়ন্তীকে দেখেছি স্কুল ড্রেসেই দেখেছি । ও দেখতে যে সুন্দর এটা জানা ছিল কিন্তু আজকের সাথে কোন কিছুরই তুলনা করা যায় না । আমি এই মেয়েটাকে কাঁদিয়েছি এ কথা ভাবতেই নিজের কাছে খারাপ লাগছে ।
জয়ন্তীর মুখটা একটু যেন গম্ভীর । সকালের কান্নার রেশ বোধ হয় এখনও কাটে নি । জানি না বাসায় গিয়ে আবারও কেঁদেছে কিনা । জয়ন্তী চুপচাপ এসে আমার পাশে বসলো ।
দুজনেই চুপচাপ বসে থাকলাম কিছুক্ষন । আমি আসলে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিলাম কিন্তু খানিকটা অস্বস্তি লাগছিল বিধায় কোন কথা বলে চুপচাপ বসে ছিলাম । কিছুক্ষন চুপ থাকার পর জয়ন্তী বলল
-কি ? কোন কথা বলবেন না ? চুপ করেই থাকবেন ?
-না মানে তুমি কি বলবে বলেছিলে ?
-ও তারমানে আপনার কোন আগ্রহ নাই আমার সাথে কথা বলার ?
-আমি সেটা মিন করি নি !
-তাহলে ?
-আসলে...............
আমি কি বলব ঠিক খুজে পেলাম না । জয়ন্তীর পাশে এভাবে বসে থাকতে একটু অস্বস্তিই লাগছিল । নিজেকে খুব বেশি মানিয়ে নিতে পারছিলাম না । জয়ন্তী বলল
-একটা কথা বলব আপনাকে ?
-বল ।
-আপনি কিন্তু আমাকে দুদুবার কষ্ট দিয়েছেন । একদম বিনা কারনে ।
আমার অস্বস্তিটা আরো একটু বেড়ে গেল । মেয়েটাকি এই কথাই বলবে ।
-কিন্তু তবুও আমি আপনার উপর রাগ করতে পারিনি । জানেন আমি সারা জীবন যেই রকম ছেলে কল্পনা করে এসেছি আপনি তেমন একটা কথা ছেলে ।
এই কথাটা বলেই জয়ন্তী দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকলো । আমি এই রকমই কিছু আশা করেছিলাম কিন্তু তবুও সহজ হতে কিছুটা সময় লাগল ।
জয়ন্তী হাত দিয়ে মুখ ঢেকেই আছে । আমি পড়লাম ঝামেলায় ।
কি করবো এখন ?
একটু সাহস নিয়ে জয়ন্তীর হাত দুটো সরিয়ে দিলাম ।
দেখি ও কাঁদছে ।
আরে এই মেয়ের সমস্যা কি ? এই মেয়ে কাঁদছে কেন ?
-কি হয়েছে তোমার ? কাঁদছো কেন ?
জয়ন্তী কোন কথা না বলল না । কেবল তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । ওর চোখের দিকে তাকাতেই আমার নিজের ভিতরেই কেমন একটা কাঁপন অনুভব করলাম ।
আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না । জয়ন্তীর ঐ চোখেই যেন সব প্রশ্লের উত্তর ।

(চলবে)

আমি খুব দুঃখিত আরো একটা পর্ব বাড়ানোর জন্য ! ইচ্ছা করলে একসাথে শেষটা দিয়ে দেওয়া যেত কিন্তু লম্বা সময় ধরে কেন জানি লিখতে পারছি না । মাথার ভিতর কেমন জানি করছে । আশা করি সবাই বুঝবেন ব্যপারটা !
ধন্যবাদ !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:০৭
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×