আমার বিবাহ নিয়ে আমাকে লেখতে হচ্ছে। আমার আব্বা মরহুম বিখ্যাত প্রচ্ছদ শিল্পী আবদুর রউফ সরকারের মতো আমার বিয়েতে কবি শামসুর রহমানের মতো তো কেউ যাই নাই যে আব্বা-আম্মার বিয়ের মতো আমার বিয়েতে কেউ লেখবে। যাক সেসব কথা।
আমার নাম সালাম আলী আহসান। ব্লগে আমি ফিদাতো আলী সরকার নামে পরিচিত। ব্লগে বেশ কয়েক বছর ধরে লেখি। নিজের মনে যা আসে তা লেখি। পাঠক সংখ্যা খুবই কম।
অক্টোবরের ৯তারিখে আমার বিয়ে হয়েছে। রূপকথার এক ডানাকাটা পরীর সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। আমি প্রথম যখন ওকে দেখতে যাই, আমি মনে করেছিলাম ও খুব সাধারণ মেয়ে। এখন বুঝছি সে একটা অসাধারণ মেয়ে।
অফিসে তিনদিনের ছুটি চাইলাম। নিয়মের বেড়াজালে মাঝে শুক্রবার পরায় চারদিনের ছুটি নিতে হল। বিয়ের জন্য একটা বোনাস পেলাম। ভালই পেলাম। আমার কলিগরা খুব খুশি। তাদের মধ্যে আমি প্রথম বিয়ে করতে যাচ্ছি। হঠাৎ করে হলুদের একটা অনুষ্ঠান হয়ে গেল। আমার বোন ফারহানা শারমিন তিথি আর আমার প্রতিবেশী ডানা আর দোলা বুধবার রাত জেগে আলপনা করলো সিঁড়িতে। তিথি অনেক কষ্ট করলো। একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে, ওর চেয়ে খুশি আর কে হবে? আমি হলুদের ব্যাপারে প্রথমে মানা করেছিলাম। আমাদের এমডি স্যার বাবু ভাইয়ের একটা কথায় আমি আর কিছুতেই না করি নাই।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হল অতি হলুদ সন্ধ্যা। আমি অনেক হলুদে গেছি। এতো সুন্দর কখনও দেখি নাই। খুব কম মানুষ এসেছে। নিজের বলে জানি না তবে আমার খুব ভাল লেগেছে। আমার প্রিয় তিন ভাগ্নি মৌটুসি, উপম আর রাইদা আমার হলুদকে খুব সুন্দর ভাবে সাজিয়েছে। তিথি তো সব কিছুতে মুখ্য ভুমিকা পালন করেছে। ডানা ওর সহকারী হিসাবে কাজ করেছে। আমার মনে হচ্ছিলো সিনেমা হচ্ছে। নায়ক আমি। জেসমিন আপু বিখ্যাত আঞ্চলিক গান আর নাচ।পাশের বাসার আন্টির মজার গান।উনি খুব অসুস্থ। শুধু আমার বিয়ে জন্য এতো কষ্ট করে তিনি এসেছেন। আমার বন্ধু শুধু টনি এসেছিল। বাকিরা মহা ব্যস্ত। আমাকে সময় দেওয়ার মতো সময় তাদের নেই। সবচেয়ে ভাল লেগেছে আমার কলিগরা হঠাৎ আসা। আমার খুব ভাল লেগেছে। নিক্সন ভাই,শরীফ ভাই, জুবাইর ভাই, সৌরভ ভাই, মুন্না ভাই আর মোস্তফা ভাই। এদের সাথে আমার রোজ দেখা হয়। তাঁরা যে আমাকে কত ভালবাসে তা আবার প্রমান করেছে। খুব সুন্দর ভাবেই অতির হলুদ সন্ধ্যা শেষ হল। পরেরদিন বিয়ে। রাত তিনটা পর্যন্ত টেনশন। সকালে উঠলাম। নিজেকে সাজালাম।
আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে। আমার খুব খুশি লাগছে। বর যাত্রীরা একে একে বাসায় আসতে লাগলো। বুলবুল আপু এল আর সাথে আমাদের বিখ্যাত দুলাভাই কাদের দুলাভাই এল। উনি বাংলাদেশের নামকরা ডাক্তার, লেখক, কবি এবং ঢাকা মেডিকেলের সাবেক প্রিন্সিপল। টনি, তাঁর স্ত্রী আর বাচ্চা নিয়ে এল। ডলি আপু এল। পাশের বাসার আন্টি আর আঙ্কেল এল। সাথে তাদের ছেলে ডানা, মেয়ে দোলা আর দোলার দুষ্ট ছেলে এল। আমার প্রিয় ভাই রবিন এল। ও দিনাজপুরের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করলো। এটা ওটা করতে প্রায় ১টার সময় রওনা দিলাম। গাড়িটা জেসমিন আপু সাজিয়েছেন। আমার দুপাশে টনির বউ আদুরী আর আমার প্রিয় ছোট বোন তিথি বসলো। টনি সামনে বসলো ওর বাচ্চা নিয়ে। পথে অনেক কথা হল। যাওয়ার সময় ঢাকা মেডিকেলে সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কি যেন মনে পড়লো? একটু থমকে গেলাম। গাড়ি তো চলতেই আছে। জীবন তো থেমে যায় না।
এমন জায়গায় বিয়ে করতে যাচ্ছি যেখানে আমি জীবনে কখন যাই নাই। এই বছরটা আমার জীবনে অনেক ঘটনা ঘটেছে যা আমি কখনও কল্পনা করি নাই।
আমরা গিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে পৌঁছলাম। হঠাৎ একটা ঘটনা ঘটলো। ড্রাইভার সাহেব দরজা বন্ধ করে বসে থাকল। আমি এই ব্যাপারে প্রস্তুত ছিলাম না। মেয়ে পক্ষ থেকে টাকা আদায় করবে। এদিকে আমার তর সইছে না। আমি টনি থেকে টাকা নিয়ে পাগলা ড্রাইভার দিতে গেলাম। সে নিল না। এই পাগলা আরও ঝামেলা করেছে। পরে বলবো নে।
তারপর গেট ধরা। সাইমন পাতি হাঁস, টনি,জেসমিন আপু আর আমার প্রিয় ছোটবোন তিথি আমার পক্ষে ভালই লড়াই করলো। ডানাকাটা পরীর পক্ষে আমার ছোট শালি মিশু, ছোট শালা তুষার, আমার বড় সম্বন্ধী এবং আমার প্রিয় বন্ধু রাসেলের বউ ছাড়াও বিশাল বাহিনী গেট আটকিয়ে রাখল। কিন্তু আমার প্রিয় ভাইরা ফরিদ এসে তাদের সব বাঁধা ভেঙ্গে চুরমার করে দিল। আমাকে একা রেখে সবাই বউ এর কাছে চলে গেল। আমি দেনমহর অসুল করে দিসি। বাংলাদেশে বেশিভাগ বিয়েতে করে না। বিয়ের রাতে ভিখারির মতো মাফ চায়। বলদ জাতি।
আমার ডানাকাটা পরী কবুল বলল। আমিও বললাম। এর আগে ওকে একবার দেখেছি। আজ পাশা-পাশি বসলাম। প্রথম ওর হাত ধরলাম। আমার হাত কাঁপছিল। আমি বিভিন্ন ভাবে ছবি তুলতে লাগলাম। আমার জীবনে সেরা দিন আজ। আমি বিয়ে করেছি। আমি আমার জীবনসঙ্গীকে পেয়েছি। সারাজীবন ওর সাথে থাকবো। সবার কাছে আমি আমাদের জন্য দোয়া চাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫১