somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হিমু ও এক টুকরো মেঘ

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একটা গাছের জীবন আছে। তারমানে তার মৃত্যু যন্ত্রণাও আছে।তাহলে তা কতটুকু।গাছ বিষয়ে এই মহান চিন্তার পেছনে মাজেদা খালার ভুমিকা ৭৭%। কারণ তার বাসার ছাদে নার্সারী করার সখের যেই ভুত চেপেছে তাকে বাগ মানানোর বিশিষ্ট দায়িত্বটি আমাকেই পালন করতে হচ্ছে।অলরেডি ৬ টা নার্সারী ঘোরা হয়ে গেছে।এটা ৭ নাম্বার।
নার্সারীর গেটে লেখা 'মতলব নার্সারী'। যদিও নার্সারী দেখে মালিকের মতলব বোঝা গেল না। মালিক বয়স্ক লোক। মাড়ী তার একমাত্র ভালোবাসা দাতগুলো অনেককাল আগেই হারিয়েছে। তার সাথে আমার কথোপকথন ঃ
আমিঃ চাচা ভালো আছেন?
চাচাঃ তুমি খালি পায় কেন?।
আমিঃআমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করিনি আপনি জুতা পায়ে কেন।
চাচাঃ তোমার কি লাগবে?
হিমু: চাচা বটগাছ লাগবে। মিনিপ্যাক না বড়টা। টাকা কোনো সমস্যা না। খালি পায়ে মানুষ মাত্রই অভাবী এটা ভাবাও ঠিক না। আপনি লুঙ্গি আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে বেনসন টানছেন এইটা কিন্তু আমার কাছে অবাক লাগছে না।
চাচা:বটগাছ নাই।
জাম গাছ আছে। নিবা?
আমিঃ জীনা চাচা। বটবৃক্ষ লাগিয়ে তার নিচে একটা মাজার করব ভাবতেছি। আপনি যদি একটা বটগাছ জোগাড় করে দেন তবে বলা যায় না আপনাকে মাজারের খাদেমও করে নিতে পারি।
চাচাঃকথাবার্তায় মনে হয় তুমি মানুষ টা ধান্দাবাজ।তোমার কাছে কোনো গাছ ই বেঁচব না।
আমিঃ আচ্ছা চাচা। আসি। স্লামালাইকুম।
আমি বের হলাম। প্রায় প্রতিটি নার্সারীতে গিয়েই আমি বটগাছ চাচ্ছি এটা একটু অবাকেরই ব্যাপার। গতকাল রাতে একটা বিশাল বটগাছ স্বপ্নে দেখেছি। তারপর থেকেই এটা মাথায় ঘুরছে।
খালা আনতে বলেছেন গোলাপের চারা। তাও যে সে গোলাপ না ইরানী গোলাপ।
আচ্ছা খালার বাসায় না গেলেও তো পারি।
পকেটে চার হাজার টাকা আছে।
আজকে পূর্ণিমা।কক্সবাজার এর বাসের একটা টিকেট কেটে ফেলা যায়।
ইরানী গোলাপের বদলে ইনানী বিচ মন্দ নয়।
আকাশে মেঘ করছে।
রিকশাওয়ালারা ঘন ঘন আকাশের দিকে তাকাচ্ছে।
ইদানীং রিকশাওয়ালারা বৃষ্টিতে ভিজতে কেন জানি পছন্দ করে না।
কয়েকটা টোকাই ওভারব্রিজে দাঁড়িয়ে হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিও কিছুক্ষণ তাদের সাথে দাঁড়িয়ে হা করে রইলাম।
বৃষ্টি হল না কিন্তু অনেকদিন পর অনেকক্ষণ মেঘলা আকাশ দেখলাম।
নিচে নেমে রাস্তার সাইডের এক ফার্মেসী থেকে রূপাকে ফোন করলাম।
'হ্যালো রূপা?
,বল।
,আর কোনদিন যদি বৃষ্টি না পড়ে তবে আজকে কি তুমি ভিজবে?
,তোমার এসব কথাবার্তা আমাকে এখন ক্লান্ত করে। এক বছর পর ফোন দিয়েছ আর শুরুতেই এমন একটা কথা বলেছ যাতে আমি খেই হারিয়ে ফেলি। তা হবে না। এতদিন কোথায় ছিলে?
,আজকে বৃষ্টিতে ভেঁজো।
আজকের বৃষ্টিতে স্নান করে একজন কুমারী যা চাইবে তাই পাবে।
,তুমি এখন কোথায়?
,তোমার বাসার নিচের এক দোকান থেকে ফোন করেছি।বৃষ্টি নামলে বাসা থেকে বের হবে।
আমি ফোন রেখে দিলাম।
হঠাৎ মনে হল বৃষ্টির নিজস্ব একটা ধর্ম আছে।
সে কাউকে একা ভেজাতে চায় না।
সংগীবিহীন বৃষ্টিবিলাশ মানুষের জন্য নহে।
আকাশে প্রচুর মেঘ।
রাস্তায় জ্যাম।
হর্ণের আওয়াজ।
নিজেকে মনে হচ্ছে এসব থেকে অনেক দুরের কেউ যেন।
সেদিনই রাত বারোটার সময় চারা কেনা বাদ দিয়ে রূপ দেখতে হিমু বের হল। রূপের কথা বললেই রূপার কথা মনে আসে। কোনো কিছু বারবার মনে আসা ক্ষতিকর। ভীষণ ক্ষতিকর। ঠিক মাঝরাত বলেই হয়তো কৃষ্ণপক্ষের চাঁদটাকেও অনেক উজ্জল দেখাচ্ছে। শহুরে জীবন কখনো একেবারে ঝিমিয়ে না পড়লেও আকাশে মেঘ থাকায় পিচঢালা রাস্তাটা গাড়ি-ঘোড়ার অভাবে নিঃসংগ বোধ করছে। শহর বলেই ঝিঝি পোকার ডাক শুনতে পেয়ে হিমুর কিছুটা অবাক লাগছে। এতদিন তো ঝিঝি পোকা ডাকেনি তবে আজকে ডাকছে কেন? নাকি প্রতিদিনই ডাকে কিন্তু শহুরে আওয়াজে অভ্যস্ত হিমুর কানে এ শব্দটির কোনো আলাদা আবেদন সৃষ্টি হয় না? মেঘে ঢাকা চাঁদের রূপালী আলোয় হিমুর হলুদ পাঞ্জাবীকে ধূসর দেখাচ্ছে। হিমু ভাবছে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদের ক্ষমতা সম্পর্কে আর অভিভূত হচ্ছে। শহরের সাথে সাথে সেই আলো তার পাঞ্জাবীর রঙকেও ম্লান করে দিচ্ছে দেখে সে সামান্য চিন্তিত। যদিও হিমুদের অবাক বা চিন্তিত হতে নেই। চিন্তার কারণ এতগুলো জোৎস্না রাত বাইরে থেকেও রঙের এই সামান্য পরিবর্তন এতটা অসামান্যভাবে কখনো তার চোখে আগে ধরা পরে নি। আসলে কত কিছুই না আমরা দূর থেকে দেখে মুগ্ধ হই আর কাছ থেকে দেখে হতবাক। প্রকৃতি সবসময়ই কিছু বিশেষ সময়ে তার অকৃত্তিম রূপগুলো সাধারণ কিছু উপায়ে মানুষের সামনে প্রকাশ করে। আর তা দেখেই মানুষ ভাবে 'বাহ! বেচে থাকাটাতো খুব খারাপ নয়। এই রূপের প্রকাশেই একজন ৭০ বছরের বৃদ্ধরও কুমারী কোনো মেয়েকে বিয়ে করার সাধ জাগে। এই রূপের অনূসন্ধানের জন্যই হয়তো গৌতম বুদ্ধের মত মহাপুরুষরা সংসারের মায়া ত্যাগ করে। আচ্ছা হিমু আজকে এসব ভাবছে কেন? একাকীত্ব যেন বড় বেশি অনুভূত হচ্ছে। কোন কিছুই যেন আজকে ঠিক অর্থবহ নয়। সবকিছু যেন কিছু ঘটার অপেক্ষায় রত। আর অপেক্ষার জন্য অপেক্ষায় থাকাই তো হিমুদের কাজ তাই না? এ ব্যাপারে সংস্কৃত একটা শ্লোক আছে। কি যেন? চাঁদের নীচে কোঁচকানো ভ্রুওয়ালা হিমুকে কখনো দেখেছ? সে একাই যেন সমগ্র পৃথিবী।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মে, ২০১৬ ভোর ৫:৫১
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×