somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমের কামাখ্যা তাবিজ (শেষ পর্ব)

৩০ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শামচুল হক

ক্লাসে টিচার আসায় আর কোন কথা হলো না। সোহেল ভাব দেখাল সে খুব মনোযোগ দিয়ে টিচারের লেকচার শুনছে। মাঝে মাঝে আড়চোখে সাদিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখছে সে তার দিকে তাকায় কিনা। আড়চোখে তাকাতে গিয়ে দুইবার চোখাচোখি হলো। চোখাচোখি হওয়ায় সাদিয়া কিছুটা লজ্জাই পেল। ক্লাস শেষে সাদিয়া ক্লাস থেকে চলে গেল। তাদের মধ্যে আর কোন কথা হলো না।

পরদিনও ক্লাসে সোহেল পরে এলো। সামনের সিট পূর্ণ থাকায় সেদিনও সোহেল পিছনে বসল। সাদিয়া আসে নাই। ক্লাস শুরু হওয়ার পূর্ব মুহুর্তে সাদিয়া ক্লাসে এলো। সোহেল যে বেঞ্চিতে বসেছে সে বেঞ্চিতে না বসে তার পরের বেঞ্চিতে বসল। সোহেল পিছন ফিরে তার দিকে একনজর তাকিয়ে আর তাকালো না। ডান হাতের তাবিজ এমন ভাবে বের করে রাখল যেন সাদিয়া সামনের দিকে তাকালেই চোখে পড়ে।
ক্লাস শেষে সোহেল পিছন ফিরে বলল, কিরে সাদিয়া, তুই পিছনের বেঞ্চিতে বসলি কেন? আমাকে দেখে কি তোর ঘৃণা লাগে?
-- তোকে দেখে আমার ঘৃণা লাগবে কেন?
-- তাহলে তুই একা একা পিছনে বসলি কেন?
-- এমনিই বসেছি।
-- এমনিই কেন?
-- পিছনের সিট খালি আছে এইজন্য বসেছি।
এমন সময় সামনের সিট থেকে বীথি বলল, তোরা কি বলিস রে?
সোহেল বলল, দেখ নারে বীথি, আমি পিছনে বসেছি দেখে সাদিয়া আমাকে ঘৃণা করে আরো পিছনে গিয়ে বসেছে। ও মনে হয় একাই মানুষ আমরা সব ছাগল-ভেড়া।
সাদিয়া কিছুটা চটে গিয়ে জবাব দিল, তুই এ ভাবে পিনচ মেরে কথা বলছিস কেন রে? আমি কি তোদের বলেছি তোরা ছাগল-ভেড়া?
-- বলবি কি, তোর আচরণেই তো বোঝা যায়।
সোহেল কিছুটা গায়ে পড়েই ঝগড়া করছে। তার কারণ হলো কথার মারপ্যাচে সাদিয়াকে দুর্বল করে কাছে বসতে বাধ্য করা।
সাদিয়া বিষয়টি বুঝতে না পেরে বলল, যা-- তোরাই মানুষ, আমিই ছাগল-ভেড়া।
সোহেল হাসতে হাসতে বলল, ভুল বললি রে সাদিয়া, ভেড়া না ভেড়ী।
একথা বলার সাথে সাথে বীথি, লাইলী, সাজু হো হো করে হেসে উঠল। সাদিয়া লজ্জায় মুখ নিচু করে চুপ হয়ে রইল। সোহেল বীথিকে সাক্ষী মেনে বলল, এই বীথি শোন, যত দিন সাদিয়া নরমাল না হবে, আমাদের সাথে না মিশবে, ততদিন আমি পিছনেই বসবো।

সাদিয়া সোহেলের কথায় বিব্রত বোধ করতে লাগল। সে যে কেন তাদের সাথে প্রাণ খুলে মিশে না সেটা সাদিয়া বলতেও পারছে না আবার ওদের মত খোলামেলা হতে চেয়েও হতে পারছে না। অথচ তারা তাকে এই সুযোগে নাজেহাল করে ছাড়ছে।

এই দিনের পর থেকে সোহেল প্রত্যেক দিনই পিছনে বসে। সাদিয়া এক সিট পিছনেই বসে। তবে পিছনে বসলেও সোহেল কখনও আর তাকে উত্যাক্ত করে না, সামনের সিটে তার পাশে বসতেও বলে না। সাদিয়া কারো সাথে না মেশার কারণে মেয়েরা তার পাশে বসলেও ছেলেরা কেউ আর তার কাছে না বসে না। সোহেল ওর সাথে ভ্রদ্র ভাবেই কথা বলে। মাঝে একদিন ক্লাসের সবাইকে একগাদা চকলেট এনে খাইয়েছে। সাথে সাদিয়াকেও পাঁচটি দিয়েছিল। সাদিয়া পাঁচটি না নিয়ে মাত্র একটি চকলেট নিয়েছে। এইভাবে সাতদিন পার হয়েছে। কবিরাজের কথা অনুযায়ী সাত দিনেই তাবিজের গুনাগুণ প্রমাণ হওয়ার কথা। কিন্তু সাদিয়ার ভিতর এরকম কোন লক্ষণ দেখতে পাচ্ছে না। এই সাতদিনের প্রত্যেক দিন সোহেল ক্লাসে এসেই তার হাতের তাবিজ সাদিয়ার নজরে পড়ার মত করে প্রদর্শন করেছে। যাতে সাদিয়া একবার হলেও চোখে দেখে। এ ছাড়া সাত দিনই সাদিয়ার সাথে কিছু না কিছু কথা বলেছে। সোহেলের এহেনো চেষ্টায় কি রেজাল্ট এসেছে তা সে বুঝতে পারছে না। এই কয়দিনে সাদিয়া সোহেলর প্রতি দুর্বল না হলেও সোহেল সাদিয়ার প্রতি ঠিকই দুর্বল হয়েছে।

আরো কয়েকদিন পরে সোহেল নিজের থেকেই সুযোগ পেয়ে সাদিয়াকে বলল, সাদিয়া, তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে। ক্লাস শেষে একা একা বলবো। সোহেলের একথা শুনে সাদিয়া মুখটা নিচের দিকে করল, ভাল মন্দ কিছু বলল না। তার কথার কোন প্রতিউত্তর না করায় সোহেল মনে মনে ধরে নিল সে সাদিয়ার প্রতি দুর্বল হলেও সাদিয়া তার প্রতি মোটেও দুর্বল নয়। কবিরাজ তাবিজের নামে তাকে ধোঁকা দিয়েছে।

ক্লাস শেষে সবাই রুম থেকে বের হলেও সোহেল বসে আছে। সাদিয়া পিছনের বেঞ্চিতে বসে কি যেন লিখছে। সোহেল পিছন ফিরে বলল, সাদিয়া, তুই কি লিখছিস রে?
-- স্যারের লেকচার।
-- লেকচার লেখা শেষ হয় নাই।
-- এই প্রায় হলো।
সোহেল তার লেখা শেষ হওয়া পর্যন্ত বসেই রইল। লেখা শেষ করে সাদিয়া খাতা কলম ভ্যানিটি ব্যাগে রাখতে ছিল এমন সময় সোহেল বলল, সাদিয়া তোকে একটা কথা বলতে চাই?
-- কি কথা?
-- আমি যেন হঠাৎ করে তোর প্রতি দুর্বল হয়ে গেলাম।
-- কেন?
-- তা তো বুঝতে পারছি না।
-- কবে থেকে?
-- যে দিন তোর সাথে ঝগড়া করলাম সেদিন থেকে।
-- কবে আবার ঝগড়া করলি?
-- যেদিন তোকে ভেড়ী বললাম।
-- ও তাই, বলেই সাদিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করল। আর কিছু না বলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে আস্তে করে ক্লাস থেকে বেরিয়ে গেল।
সাদিয়া ভালো মন্দ কোন জবাব না দেয়ায় সোহেল আহম্মকের মত তার বেরিয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে রইল। সাদিয়া দরজা দিয়ে বের হয়ে যাওয়ার পরও সোহেল দরজার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল।

পরদিন সোহেল ক্লাসে আসলেও সাদিয়া আসল না। সোহেল মনে মনে ভাবল তার কথাটা হয়তো সাদিয়ার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাই। স্মার্ট হলেও রাজপুত্রের মত চেহারা না হওয়ায় হয়তো তাকে পছন্দ করছে না। সে মনে হয় আরো ভাল কোন ছেলের সাথে সম্পর্ক করেছে। তাই তাকে পাত্তা না দিয়ে সবসময় এড়িয়ে চলছে।

প্রেমের প্রথম প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হওয়ায় তাবিজওয়ালার উপর খুব রাগ হলো। মনে মনে তার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে গাল দিতে লাগল, শালা তাবিজওয়ালা, তোর চৌদ্দগুষ্ঠির পিন্ডি চটকাই, একবার তোকে কাছে পেলে দুই গালে ঠাটিয়ে চড় মেরে দিবো। শালা ভন্ড প্রতারক, শালা খামাখাই ভুয়া একটা তাবিজ দিয়ে গেলি। তাবিজ পরীক্ষা করতে গিয়ে নিজেই দুর্বল হয়ে গেলাম, অথচ যাকে দুর্বল করতে গেলাম সে দুর্বল হওয়া তো দূরের কথা, আরো কঠিন পাথরের মত শক্ত হয়ে গেল। এমনি অনেকক্ষণ পাগলের মত নিজে নিজেই তাবিজওয়ালাকে গালাগালি করে বাসায় চলে গেল।

তার পরদিনও সাদিয়া এলো না। তার পরদিন ক্লাস শেষে সোহেল লাইব্রেরীর পিছনে কাঁঠাল গাছের ছায়া দিয়ে হাঁটতে ছিল। এমন সময় দেখে কাঁঠাল গাছের তলে একা একা সাদিয়া বসে বইয়ের পাতা উল্টাপাল্টা করছে। সাদিয়াকে দেখেই সোহেল দ্রুত তার কাছে গিয়ে বলল, আরে সাদিয়া, তুই এখানে বসে আছিস? ক্লাসে যাসনি কেন?
সোহেলের কথা শুনে সাদিয়া বসা অবস্থায় সোহলের মুখের দিকে একনজর তাকিয়েই আবার চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিল। তবে তার চোখ ছলছল করছে দেখে সোহেল অনুতপ্ত হয়ে বলল, বুঝতে পেরেছি। সেদিন আমার মনের কথাগুলো তোকে বলা উচিৎ হয়নি। হয়তো আমার কথাগুলো তোর মনে খুব কষ্ট লেগেছে। তুই আমাকে ক্ষমা করে দিস। বলতে বলতেই যেন তার গলা ধরে এলো। ধরা গলায় বলল, আমি আর তোকে কোন দিন কিছু বলবো না রে। আমার কথায় রাগ করে তুই ক্লাস করা মিস করিস না। বলেই পকেট থেকে রুমাল বের করে নিজেই নিজের চোখ মুছল।

সোহেলের ধরা গলায় কথা বলতে দেখে, সাদিয়ার চোখও জলে ভিজে গেল। সাদিয়া চোখ তুলে তাকাতেই দুইজনের চোখের পানি দুইজনের চোখেই পড়ল। সাদিয়া ওড়না দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বসা থেকে উঠে অন্য দিকে চলে গেল। কোন কথা বলল না।
সোহেল বুঝতে পারল, এই কঠিন হৃদয়ওয়ালী মেয়েটির কাছে তাবিজ কবচ কিছু না। তাকে এসব দিয়ে কিছুতেই হার মানানো যাবে না। খামাখাই তার পিছনে লেগেছিলাম। তাকে পাওয়ার আশায় প্রেমের প্রস্তাব দিতে গিয়ে এক তরফা প্রেমে নিজেই জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে মরছি।

পরদিন ক্লাসে সাদিয়া আসলেও সোহেল এলো না। সোহেল সারাদিন বুড়িগঙ্গায় কাটালো। মনের অবস্থা ভাল নয়। খুব অস্বস্থি লাগছে। সাদিয়ার কঠিন হৃদয় তাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। বুড়িগঙ্গার তীরে বসে থাকতেও ভাল লাগছে না, নৌকায় চরে নদীর মাঝখান দিয়ে অনেকক্ষণ ঘুরে বেড়ালো। নদীর খোলা হাওয়াতেও তার ভাল লাগছে না। শুধু মনে হচ্ছে সে কেন খামাখাই তাবিজ নিয়ে পরীক্ষা করতে গেল। এখন তার কিছুই ভালো লাগছে না, আগে যেমন ছিল তেমনই তো ভাল ছিল।

পরদিনও সোহেল ক্লাসে গেল না। রমনা পার্কের গাছের তলে বসে বসে সারাদিন উদভ্রন্তের মত কাটিয়ে দিল। অনেক কপোত কপোতিদের আলিঙ্গনাবদ্ধ দেখলো। আগে এসব দেখলে নিজের কাছে ভাল লাগতো। আজ এসব কিছুই ভাল লাগছে না। সাদিয়ার মত কঠিন হৃদয়ের মেয়েকে ভাল বাসতে গিয়ে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে। মেয়েদের মন যে এত শক্ত হয় আগে জানা ছিল না। বন্ধু বান্ধবরা নাকি দু’চার কথাতেই মেয়েদেরকে পটিয়ে ফেলে, অথচ এই কঠিন হৃদয়ের মেয়েটি সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে মনকে কঠোর করে বসে আছে। কোনভাবেই তার মনকে গলানো যাচ্ছে না।

আরো তিন দিন পরে সোহেল ক্লাসে গেল। তবে আজ আর সে পিছনে নয় সামনে গিয়ে বসল। আগে চেহারায় যে জৌলুস ছিল এখন সেটায় কেমন যেন উসকখুসক ভাব এসেছে। তার সামনের বেঞ্চিতে বসতে দেখে বীথি বলল, কি রে সোহেল, তুই সামনে কেন রে? সাদিয়ার সাথে তোর প্রতিযোগীতা শেষ হয়েছে?
-- না রে, শুধু শুধু একটা মেয়েকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ? ও একা একা থাকতে পছন্দ করে এইজন্য কারো কাছে বসে না। ওকে ডিস্টার্ব করা আমাদের মোটেও উচিৎ হচ্ছে না।
-- তাহলে তুই ফেল মারলি?
-- ফেল মারিনি রে, ওকে ছাড় দিয়ে এলাম।
বীথির সাথে উপস্থিত চারপাঁচ জন হো হো হো করে হাসতে লাগল। লাইলী, বীথি একসাথে হাত তালি দিয়ে বলে উঠল -- সোহেল ফেল মেরেছে, সোহেল ফেল মেরেছে!

তাদের হাত তালি আর হো হো করে হেসে উঠায় সোহেল আর কোন কথা বলল না। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।
বীথি উঠে গিয়ে সাদিয়াকে ধাক্কা মেরে বলল, তুই জিতে গেছিস রে সাদিয়া, তুই জিতে গেছিস। তুই আমাদের খাওয়া।
সাদিয়া নিচের দিকে মাথা দিয়ে যেমনি ছিল তেমনিই বসে রইল। কারো সাথে কোন কথা বলল না। তার এ অবস্থা দেখে মারুফ বলল, এ বীথি, ওই কৃপণের কাছে গিয়েছিস খাওয়া চাইতে। খাওয়া দেবার ভয়ে ও এখন কথাই বলবে না।

আরো দু’একজন পিন্চ মেরে কথা বললেও সাদিয়া কোন কথারই উত্তর দিল না। সোহেল সাদিয়ার পক্ষ হয়ে বলল, এই-- তোরা ওকে আর খোঁচাইস না তো। ও স্বল্প ভাষী মানুষ, ওকে খোঁচালেও কথা বলবে না। তার চয়ে আমি যখন হেরেছি আমিই তোদেরকে খাওয়া দিচ্ছি। বলেই সোহেল বাইরে চলে গেল। একটু পরে অনেকগুলো টকঝাল চকলেট এনে সবাইকে দিল। সোহেল চকলেট আনার আগেই সাদিয়া উঠে ক্লাস থেকে চলে গেল।

এই দিনের পর থেকে কয়দিন ক্লাস বন্ধছিল। একসপ্তাহ পর ক্লাস খুললেও প্রথম ক্লাস হওয়ার পরেই রাজনীতির দুই ছাত্র গ্রুপের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হওয়ায় ক্লাস বন্ধ হয়ে গেল। ক্লাস থেকে সবাই চলে গেলেও সাদিয়া একা একা ক্লাসে বসেছিল। সোহেলও ক্লাস রুমের বাইরে গিয়েছিল কিন্তু কি যেন মনে করে আবার ক্লাসে ফিরে আসে। রুমে ঢুকে দেখে পিছনের বেঞ্চে বসে সাদিয়া কি যেন লিখছে। আস্তে আস্তে কাছে গিয়ে সোহেল বলল, সাদিয়া, তুই এখনও বসে আছিস? বাসায় যাবি না?
সাদিয়া কিছুই বলল না। নিচের দিকে মাথা দিয়ে বসে রইল।

সোহেল বলল, সাদিয়া, সেদিন আমি তোকে কথাগুলো বলে খুব ভুল করেছি রে। আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস। আমি আর তোকে কোনদিনই এধরনের কথা বলব না।
সোহেলের কথা শুনে সাদিয়া ভেজা ভেজা চোখ দু’টি তুলে বলল, এ কয়দিন কোথায় ছিলে?
সাদিয়া এরকম প্রশ্ন করায় সোহেল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল, বুড়ি গঙ্গার তীরে।
সোহেলের কথা শুনে সাদিয়া কিছুটা আশ্চার্য হয়েই বলল, বুড়ি গঙ্গার তীরে কেন?
-- কাঁদতে।
-- আমাকে নিয়ে গেল না কেন?
-- তুই তো আমার মত নরম দিলের লোক না, তুই কি করতে যাবি?
-- তুমি কি করে বুঝলে আমি কঠিন দিলের মেয়ে?
-- আমি তোকে কত কথা বললাম, কই, তুই তো একবারও সে সব কথার জবাব দিলি না?
-- কাঁঠাল তলায় আমার ভেজা চোখ দেখেও কি বুঝতে পারো নাই।
সাদিয়ার মুখে এমন কথা শুনে সোহেল যেন আকাশ থেকে পড়ল। তাবিজের এ্যাকশন তাহলে অনেক আগেই শুরু হয়েছে। অথচ সে বুঝতেই পারে নাই। সাদিয়ার মানসিক অবস্থা বুঝতে না পারার অজ্ঞতার জন্য আনাড়িভাবেই জবাব দিল, আমি কখনও প্রেম ট্রেম করিনি তো, এইজন্য বুঝতে পারি নি।
-- আমি বুঝি অনেক প্রেম করেছি?
-- তোমার চোখের ভাষা যখন বুঝতে পারিনি তখন তোমার উচিৎ ছিল মুখে বলা।
-- কি কথা বলবো তাই তো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
-- এখন কি তুমি কথা খুঁজে পেয়েছো।
-- তুমি আমার ঘুম হারাম করে দিয়েছো।
-- কবে থেকে?
-- যেদিন থেকে ঝগড়া করেছো।
-- এতদিন বলো নি কেন?
-- বলতে গিয়েও লজ্জায় বলতে পারছিলাম না।
-- এখন বললে কি করে?
-- তোমার ক্ষমা চাওয়া দেখে।
-- আমি যদি ক্ষমা না চাইতাম?
-- তাহলে হয়তো আরো অনেক সময় লাগতো।
-- তুমি কি সত্যিই আমার প্রতি দুর্বল হয়েছো?
-- আমার চোখের জল দেখেও বুঝতে পারছো না?

সোহেল সাদিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখে তখনও তার দু’চোখ ভিজে জল গড়িয়ে গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে। হাতের রুমাল দিয়ে সাদিয়ার চোখের জল মুছে দিতে দিতে বলল, তুমি যে আমার জন্য কাঁদবে এটা আমার কল্পনায় ছিল না।
-- তোমার কল্পনায় কি ছিল?
-- মুখের কথায় হয়তো কিছু একটা বলবে।
-- মেয়েরা যে অনেক কথা মুখে বলে না এটা জানো না?
-- জানি না দেখেই তো বুঝতে সময় লাগলো।
-- তুমি কি এখন আমাকে বুঝতে পেরেছো?
-- হু পেরেছি।
-- কিভাবে?
-- চোখের জল দেখে।
-- আমার চোখের জলে কি বুঝলে।
-- বরফ অনেক আগেই গলেছে।
-- এখন কি করবে?
-- ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করবো।
-- তারপর।
-- তারপর এবার চল ক্লাসের বাইরে যাই, অনেকক্ষণ হয় ক্লাস বন্ধ হয়েছে আর এখানে থাকা ঠিক হবে না।
সাদিয়া বলল, না এখন যাওয়া যাবে না।
-- কেন?
-- এ কান্না ভেঁজা চোখ দেখলে অনেকেই অনেক কিছু বলবে। একটু স্বাভাবিক হয়ে নিই তারপর যাবো।

দুইজন সামনাসামনি বসে পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আছে। দুইজন দুইজনকে অনেক দেখেছে কিন্তু আজকের দেখায় যেন স্বর্গীয় আমেজ আছে। একপলকে তাকিয়ে থাকলেও পলক ফেলতে পারছে না। শুধু একজন আরেকজনেক দেখতেই ইচ্ছে করছে। কেউ কোন কথা বলছে না শুধু পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়েই আছে। অনেকক্ষণ পর সোহেল বলল, আরো বসে থাকবে?
সাদিয়া উঠতে উঠতে বলল, চল।
সোহেল সাদিয়াকে সাথে নিয়ে ক্লাসের বাইরে এসে সোজা রমনা পার্কে চলে গেল। পার্কের বাগানে অনেক ক্ষণ বসে থাকল। এতদিন সাদিয়া ক্লাস থেকে যখন তখন চলে গেলেও খারাপ লাগত না। আজ তাকে ছেড়ে দিতে মন চাইছে না। তাকে যুগ যুগ ধরে কাছে নিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে।

অনেক দেরি হয়েছে। আরো দেরি করে বাসায় ফিরলে সাদিয়ার বাবা হয়তো খুঁজবে, তাই ছেড়ে দিতে হলো। রাস্তায় এসে সোহেল সাদিয়াকে রিক্সায় উঠিয়ে দিল। তবে রিক্সা আড়াল হওয়ার পরও তার চলে যাওয়া রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইল।

রাতে শুয়ে শুয়ে তাবিজটি চোখের সামনে এনে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থেকে মনে মনে বলল, তাবিজ রে-- তুই আসলেই কামাখ্যার তাবিজ। আজ তার সত্য সত্যই প্রমাণ হয়ে গেল। বলেই ডান হাতের তিন আঙুলে ধরে তাবিজটি কপালে ছোঁয়ালো। সকালেও তাবিজের প্রতি তার আস্তা ছিল কিন্তু দুপুরের পর থেকে তাবিজের প্রতি শুধু আস্তাই নয় পুরোপুরি ভক্তিও এসে গেছে।

কবিরাজ বলেছে কাজ হওয়ার পর হাতে তাবিজ না রাখলেও চলবে, তাবিজ খুলে পানিতে ফেলে দিবে অথবা ভাল কোন জায়গায় রেখে দিবে। সোহেল তাবিজটি পানিতে না ফেলে হাতের তালুতে নিয়ে মুঠি করে ধরে একটা চুমু খেয়ে ট্রাঙ্কের ভিতর যত্ন করে রেখে দিল।
০০০ সমাপ্ত ০০০

ছবিঃ গোগুল
আগের পর্ব পড়ার জন্য নিচে ক্লিক করুন---
প্রেমের কামাখ্যা তাবিজ
প্রেমের কামাখ্যা তাবিজ (২)
প্রেমের কামাখ্যা তাবিজ (৩)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৮ রাত ৯:৫২
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×