somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেমের কামাখ্যা তাবিজ

২৬ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শামচুল হক

সোহেল ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র। বিকাল বেলা রমনা পার্কের একটি গাছের নিচে অন্যমনস্কভাবে বসে আছে। এমন সময় আধবয়সী একজন লোক পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে ছন্দাকারে বলতে লাগল, “এই মোনামুনি মনঝুর, হরিপাগল ছটফটি, ভালবাসা প্রেমপ্রীতি, লাগবে তাবিজ কবচ”। লোকটির বাম কাঁধে কালো কাপড়ের চওড়া ফিতাওয়ালা ব্যাগ ঝুলানো। একহাতে কিছু গাছের শিকড়-বাকর অন্য হাতে কালো সুতায় বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা কতগুলি তাবিজের খালি খোল।
কথাগুলো সোহেলের কানে এলে তার অন্যমনস্কভাব কেটেগেল। তাবিজ কবচ বুঝতে পারলেও মোনামুনি মনঝুর, হরিপাগল ছটফটির অর্থ বুঝতে পারল না। কথাগুলোর অর্থ জানার জন্য লোকটিকে ডাক দিল।
লোকটি পিছন ফিরে সোহেলের কাছে এসে বলল, কি রে ভাই, কিছু লাগবে?
সোহেল অজ্ঞতাবশতঃ বলল, আপনি কি কি সব বললেন এটার তো কোন অর্থ বুঝলাম না? বুঝলে না হয় চিন্তা করতাম কিছু লাগবে কিনা?
লোকটি একগাল হাসি দিয়ে বলল, ও-- এই কথা, আমি ঊনত্রিশ বছর হলো এই কাজ করি। সারা বাংলাদেশের বড় বড় শহরে আমার যাতায়াত। ঢাকা শহরে বছরের বেশির ভাগ সময় থাকি। রমনা পার্কে প্রতি মাসেই আসি। আমাকে আর কখনও দেখেন নাই?
দেখেন নাই প্রশ্নে সোহেল না সূচক বাক্যে জবাব দিল, না ভাই, আগে তো আপনাকে কখনও দেখি নাই, যে কারণে আপনার কথাগুলো বুঝতে পারছি না।
সোহেলের কথা শুনে লোকটি হাসি হাসি ভাব নিয়ে বলল, আমি ভাই পাগল মানুষ, এই গাছ-গাছড়া, তাবিজ-কবচ বিক্রি করি?
সোহেল বলল, কিসের কিসের তাবিজ বিক্রি করেন?
সোহেল প্রশ্ন করায় লোকটি যেন কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেল। অতি আগ্রহ নিয়ে বলল, এই ধরেন ভালবাসার তাবিজ, মনে করেন ভালবাসা করেছেন কিন্তু মেয়ে আপনাকে বেশি পাত্তা দিতে চায় না, আমি তাবিজ দিব আমার কথা মতো তাবিজ ব্যবহার করবেন, সাত দিনের মধ্যে মেয়ে আপনার কাছে চলে আসবে। আবার ধরেন, কোন মেয়েকে আপনার পছন্দ কিন্তু মেয়েকে পটাতে পারছেন না, আমি একটা তাবিজ দিব দেখবেন-- সে মেয়েও আপনার পিছনে পিছনে ঘুরবে। আবার মনে করেন বিয়ে ঠিক হয়েছে সেই বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে, আমি তাবিজ দিব ভাঙ্গা বিয়ে জোড়া লেগে যাবে। বড়লোকের মেয়ের সাথে প্রেম করবেন একটু বেশি পয়সা খরচ করবেন দেখবেন সে মেয়েও আপনার পিছনে লেগে থাকবে।
সোহেল হাসি মুখে বলল, ভাই, আপনি তো দেখি অনেক গুণীন মানুষ।
সোহেলের প্রশাংসামূলক কথা শুনে লোকটি আরো খুশি হয়ে বলল, ভাই আমি তো কিছু না, আমার বাহাদুরী হলো গাছ-গাছড়া দিয়ে, আমি উছিলা মাত্র। আপনার লক্ষণ অনুযায়ী গাছ-গাছড়া দিব, গাছ-গাছড়ায় কথা বলবে। আর গুণীর কথা বললেন, গুণী ছিল আমার দাদা। সে আসামের কামাখ্যা থেকে অনেক গুণমন্ত্র শিখে এসেছিল। আমার দাদী আরো জানলেওয়ালা মহিলা ছিল। আমার দাদী ছিল আমার দাদারও ওস্তাদ। আমি তো আমার দাদীর কাছেই গুণমন্ত্র শিখেছি।
-- আপনার দাদী শিখল কিভাবে?
-- আমার দাদী তো আসামের সেই কমাখ্যার মানুষ। তার বাপ দাদা চৌদ্দগুষ্ঠির বসবাস কামাখ্যায়। তারা জন্ম থেকেই গুণমন্ত্র নিয়ে খেলাধুলা করে। দাদীর বাপ-দাদারা নাকি দাঁড়ানো অবস্থায় বান মেরে তাজা মানুষ মেরে ফেলতো। আবার অনেক সময় সাত দিনের সাপে কাটা মরা মানুষও তাজা করতে পারতো।
-- আপনার দাদী কি মরা মানুষ তাজা করতে পারতো?
-- দাদী সেই বিদ্যা শেখার বয়স হওয়ার আগেই দাদার হাত ধরে রাতের অন্ধকারে পালিয়ে এসেছে।
-- কেন, পালিয়ে এলো কেন?
-- সে কথা বললে তো দাদীর পালানোর কাহিনী বলতে হয়।
-- তাহলে আপনি আমার পাশে বসে আপনার দাদীর কাহিনী বলেন, আমি মন ভরে শুনি।
-- জী ভাই, দাদীর পালানোর কাহিনী অনেক লম্বা, বসেই বলতে হবে। বলেই হাতে ঝুলিয়ে রাখা তাবিজ কবচ গাছ-গাছড়াগুলো কোলের উপর রেখে ঘাসের উপর বসে পড়ল। আরাম করে বসে দাদীর পালানোর গল্প শুরু করে দিল--
দাদা গিয়েছিল আসামে কাঠের ব্যাবসা করতে। আসাম থেকে নৌকা ভরে শাল কাঠ এনে ময়মনসিংহ শহরে বিক্রি করতো। নদীতে নৌকা বেঁধে রেখে তিনজন বনের মধ্যে ঢুকেছে কাঠ কাটার জন্য। গভীর জঙ্গলে ঢোকার পরে আর বের হতে পারে নাই। দাদা পথ ভুলে ঘুরতে ঘুরতে জঙ্গলের ভিতরেই এক বাড়িতে গিয়ে উঠে। বাড়ির সামনে একজন বুড়ো মানুষ বসে ছিল। তার কাছে পানি খেতে চাইলে বুড়ো বাড়ির ভিতর থেকে এক গ্লাস পানি এনে দেয়। বুড়োর দেয়া পানি খাওয়ার পরেই দাদা অজ্ঞান হয়ে পড়ে। জ্ঞান ফিরলে দেখে একটা ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে আছে। শোয়া থেকে উঠার পর আর বাড়ির কথা মনে ছিল না। তিন বেলা বুড়োর বাড়ি খায় আর সেই বাড়ির কাজ করে। এভাবেই তার অনেক দিন কেটে যায়।
আমাদের দাদী ছিল সেই বুড়ার নতনী। দাদীর মা ছোটবেলায় মারা গেছে। দাদীর মা মারা যাওয়ার পর তার বাবা আরো তিনটা বিয়ে করেছে। সৎমায়েরা দাদীকে খুব অত্যাচার করতো। দাদীর বয়স চৌদ্দ পনেরো বছর হলেও বিয়ে দেয় নাই। বিয়ে না দেয়ার কারণও ছিল, একে তো সৎমায়েদের অত্যাচার, তারোপর সেই দেশে নাকি পুরুষ মানুষও কম। সেই সময় আসামের জঙ্গলে যত মেয়ে মানুষ ছিল সেই তুলনায় তত পুরুষ ছিল না। বছরের কোন এক নির্দিষ্ট সময় ঐ জঙ্গলে সিংহ ডাক দিত। সিংহের ডাক কোন পুরুষ মানুষের কানে গেলে সাথে সাথে অন্ডোকোষ খসে পড়তো। সিংহের ডাকে অন্ডোকোষ খসে পড়লে সে পুরুষ আর বাঁচত না। এইসব কারণে আসামের জঙ্গলে পুরুষ মানুষের চেয়ে মেয়ে মানুষ বেশি। একজন পুরুষের চারটা পাঁচটা বউ। পুরুষরা চার পাঁচটা বিয়ে করার পরও অনেক মহিলার ভাগ্যে পুরুষই জুটতো না। তখন মহিলারা কোন পুরুষকে জঙ্গলে দেখলেই নজর বন্দী করে রেখে দিত। ঐসব পুরুষ আর জঙ্গল থেকে সারা জীবনেও বের হতে পারতো না।

চলবে--
ছবিঃ গোগুল

পরের পর্ব পড়ার জন্য নিচে ক্লিক করুন---
প্রেমের কামাখ্যা তাবিজ (২)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×