('৯০ দশকের কুষ্টিয়া সরকারী কলেজের সবুজ ঘাস আর নিঃসঙ্গ বাতাসে ভেসে থাকা কিছু স্বপ্ন-দির্ঘশ্বাস আর উচ্ছলতা যত-----এই হ'ল শিশুতলার কাব্য)
আফ্রিকার কালো মেয়ের মত নিটল মুখচ্ছবি,
ফরমায়েসি সাজের কোন আড়ম্বর ছাড়াই
রৌদ্রস্নাত পুকুরের মত টলটলে দুটি চোখ
জালাময়ী বুভুক্ষ এ'হৃদয়ে এনে দেয় একরাশ
সুখময় স্বর্গানুভূতি, যার নরম দুটি হাত
লতার মত জড়িয়ে থাকে আমার শরীর
তার ভালবাসা স্পর্শহীন এই আমি, আমার জীবন
না-পাওয়ার শিল্পরাজ্যের এক নীল ভাস্কর্য্য।
ও আমার কালো পাখি, শ্যামাসখি, চিতলরানী, ঘুটে কুড়ানী। ঢাকায় থেকে ইদানিং রাজধানীর হাওয়া খেয়ে খুব বুঝি ভাল আছো! এদিকে তোমার রাখাল রাজা ঘুুরে বেড়ায় সারাটি দিন রোদের মেলায় উদাষিন।
আসলেও তাই। সারাদিন কাজ শেষে ইচ্ছে হয়না বাড়ি ফিরতে। কেননা বাড়ি কিংবা ঘর বলতে আমি তোমাকেই বুঝি। তুমি যেখানে নেয় সেখানে আর সব অস্তিত্বহীন। ঘরে ফিরে তোমাকে দেখার মাঝে কি যে আনন্দ আমি পেয়ে থাকি। তুমি যদিও তা কোনদিনও বুঝতে চাওনি। তুমি হলে আমার অনন্ত চমকের অপরিবর্তনীয় উৎস। সারাদিনের ব্যাস্ততার অবশেষে ঘরে ফিরে কাটাতে হয় রানীহীন নিঃসঙ্গ রাত। অথচ সন্ধ্যাবেলা মৌচাকে ফিরে আসা মধুভরা মৌমাছির মত পূর্ন আমার হৃদয়। প্রেমে। ভালবাসায়।
আজ সারাদিন বের হইনি বাসা হতে। সন্ধ্যায় বের হয়েছিলাম। হাটতে। ফিরে এসেছি আবার একাকিত্বের তাড়া খেয়ে। সন্ধ্যার পর হতেই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। থেমেছে বেশ অনেক পরে। খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষে প্রায় মধ্যরাতে সবাই চলে গেল যে যার ঘরে। আমিও রাত্রীর কোলে আত্বঃসমর্পনের বৃথা চেষ্টা----- অতঃপর ছাদে উঠে বিশাল আকাশ আয়নায় তোমাকে দেখা। যে আয়নার ভিতর দিয়ে আমি পৃথিবীকে প্রথম দেখেছি ভালবাসা নামে। তুমিই তো আমার পৃথিবী। আকাশি আয়নায় আমি এভাবেই তোমাকে কাছে পাই। আর চোখ বুজে মনে মনে একা একাই বলি-- স্বল্পকালীন স্বার্থ কিংবা মুনাফা আশ্রয়ী এই পৃথিবীতে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কোন কিছু চাওয়ার নেই। চাই শুধু তোমাকে নিয়ে সুখি হতে। এক সময় মনে হয়--- আমরা আকাশের পাড়ায় ঘর বাধবো। রুপোলী চাঁদ হবে আমাদের পড়শী। আমাদের উঠোনে খেলতে আসবে জোসনার জোনাকী মেয়েরা। এইসব ভাবতে ভাবতে কখন এ'মন চলে যায় রহস্যের ছায়াপথে। তোমার হাত ধরে ভেসে বেড়াই মেঘের দেশের দস্যি ছেলেমেয়েদের মত। তারপর যখন চেতনায় ফিরি ----তখন, তখন দেখি স্যাটেলাইটের এই আধুনিক যুগে হয়ত কিছুই নয়, কিন্তু আমার কাছে তখন মনে হয় তুমি আছ সীমাহীন দুরত্বেরও ওপারে। কেননা আদিম ও অকৃত্রিম ভালবাসার সংঙ্গায় হলো স্পর্শহীন দুরত্ব মানেই সীমাহীন অসীময়তা।
আমার উপর বৃষ্টি ধোয়া পবিত্র আকাশ। হাজার আলোক বর্ষ দুরে প্রদীপ্ত আলো ছড়াচ্ছে অসংখ্য নক্ষত্র। নক্ষত্র সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে হঠাৎ করেই মনে হ'ল-- আসলে আলোয় বলি আর ভালবাসায় বলি, মন ভরিয়ে দেয়া উৎসগুলো সব সময় এমন দুরেই থাকে। আর আলোয়, ভালবাসায় ভরে যায় যার মন, সে তার টই টম্বুর মন নিয়ে স্বপ্ন দেখে সেই দুরত্বময় ভালবাসার নিবিড় সানিধ্যের। এই নিবিড় সানিধ্যের উষ্মতা আর আলোর তরঙ্গ; শান্ত এবং উজ্জল স্বপ্ন, আকাংক্ষা এবং যৌবনের পরিপুর্ন এই পৃথিবী, এই পৃথিবীর প্রকৃতি অপেক্ষামান তোমার আমার উচ্ছল উদ্দামতা আর বিমুগ্ধতার ছোঁয়া পেতে। তুমি চলে এসো ও আমার গবাসখি রাধা রায়!
এক সময় দেখি ভোর হয়ে যাচছে। খুব ভাল লাগছে। বহুদিন সকালের সূর্য দেখিনি। ঘাসের পাতায় ঘুমোতে এসেছিল যেসব শিশির ছেলেরা তারা সব জেগে উঠে তাকিয়ে আছে উজ্জল দৃষ্টিতে। আমিও নেমে আসলাম। এসে বসেছি লিখতে। খুবই ভাল লাগছে। মনে হচ্ছে তোমার ঘুম ঘুম শরীরের গন্ধ পাচ্ছি ভোরের বাতাসে। তুমি নিঃশ্চয় এখন ঘুমোচ্ছ। ঘুমোও। উঠেই দেখবে খরগোসের বাচ্চার মত তোমার দুই স্তনের মাঝে লুকিয়ে আাছে আমার চিঠি---- আমার আলতো স্পর্শ।
ভাল থেকো আমার শালুক সখি।
আদর জেনো। অনেক-অনেক।
('৯৬ আগষ্টের এক রাত্রী শেষে।)