somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গবন্ধুর সাধারন ক্ষমা : কিছু প্রশ্ন

১৮ ই জুলাই, ২০১০ রাত ৮:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা আলোচিত বিষয় হল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ত বটে ওয়েবে ও ব্যাপক আলোচনা এই বিষয়কে ঘিরে। আর যখনই এটা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সূত্রপাত হয় তখন অবধারিত ভাবেই কিছু বিষয় নিয়ে চরম মতানৈক্যের সৃষ্টি হয় :

১। ১৯৫ জন চিন্হিত ও ১১,০০০ প্রাথমিক দোষী পাকিস্তানী সামরিক-বেসামরিক নাগরিকের বিনা বিচারে পাকিস্তানের নিকট হস্তান্তর।
২। বঙ্গবন্ধু কর্তিক ঘোষিত সাধারন ক্ষমা।
৩। প্রেসিডেন্ট জিয়া কর্তিক দালাল আইন বাতিক ও তথ্য প্রমানের অভাবে বিচার ঝুলে যাওয়া ১০,০০০ জন দেশী কোলাবরেটরের মূক্তি।

১ম ব্যাপারটি নিয়ে ইতি মধ্যেই আমি লেখা-লেখি করেছি এবং এটা নিয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে লিখেছেন।আজ ২য় ব্যাপারটি নিয়েই লিখছি কারন আজকেই এ ব্যাপারে কিছু তথ্য পেয়েছি আমার ব্লগের সৌজন্যে-


বঙ্গবন্ধু আমলে দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদের মোট সংখ্যা: ৩৭,৪৭১
নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা: ২,৮৪৮

নিষ্পত্তিকৃত মামলাগুলর মধ্যে অভিযুক্ত ব্যাক্তির সংখ্যা : ৭৫২ জন, বাকি ২,০৯৬ জন খালাস পেয়েছিল।

অর্থাৎ এই সাধারন ক্ষমা ঘোষনার আওতায় প্রায় ২০ হাজার লোক মুক্তি পায় বাকি প্রায় ১০ হাজার বিচারের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন।

এই সাধারন ক্ষামা যাদের জন্য প্রযোজ্য নয় তারা হলেন [ ১৯৭২ সালের দালাল (বিশেষ ট্রাইবুনাল) আদেশ (পি.ও নং-৮, ১৯৭২ সালের)]

১. দুনম্বর অনুচ্ছেদে বর্ণিত ব্যক্তিদের ও অপরাধ সমূহের ক্ষেত্র ছাড়া :
(ক) ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী দন্ডবিধি ৪০১ নং ধারা অনুযায়ী উল্লিখিত আদেশবলে আটক ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের রেহাই দেওয়া হচ্ছে এবং উল্লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনো আইনবলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকলে তাদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার অনতিবিলম্বে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।
(খ) কোনো বিশেষ ট্রাইবুনালের সম্মুখে অথবা কোনো বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে উক্ত আদেশবলে বিচারাধীন সকল মামলা সংশ্লিষ্ঠ ট্রাইবুনাল ও ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে প্রত্যাহার করা হবে এবং উল্লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনো আইনে তাদের বিরুদ্ধে বিচারাধীন কোনো মামলা বা অভিযোগ না থাকলে তাদের হাজত থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।
(গ) কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে উল্লিখিত আদেশবলে আনীত সকল মামলা ও তদন্ত তুলে নেওয়া হবে এবং উল্লিখিত আদেশ ছাড়া অন্য কোনো আইনে বিচার বা দন্ডযোগ্য আইনে সে অভিযুক্ত না হলে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে। উল্লিখিত আদেশবলে ইস্যু করা সকল গ্রেফতারী পরোয়ানা, হাজির হওয়ার নির্দেশ অথবা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুলিয়া কিংবা সম্পত্তি ক্রোকের নোটিশ দেয়া থাকলে তা প্রত্যাহার বলে বিবেচিত হবে এবং গ্রেফতারী পরোয়ানা অথবা হুলিয়ার বলে কোনো ব্যক্তি ইতিপূর্বে গ্রেফতার হয়ে হাজতে আটক থাকলে তাকে অনতিবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে। অবশ্য সে ব্যক্তি উল্লিখিত দালাল আদেশ ছাড়া কোনো বিচার বা দন্ডযোগ্য অপর কোনো আইনে তার বিরুদ্ধে যদি কোনো মামলা না থাকে তবেই।
যাদের অনুপস্থিতিতেই সাজা দেওয়া হয়েছে অথবা যাদের নামে হুলিয়া বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ঝুলছে তারা যখন উপযুক্ত আদালতে হাজির হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা ও বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করবে কেবল তখনই তাদের বেলা ক্ষমা প্রযোজ্য হবে।

২. দন্ডবিধির ৩০২ নং ধারা (হত্যা), ৩০৪ নং ধারা, ৩৭৬ ধারা (ধর্ষণ), ৪৩৫ ধারা (গুলি অথবা বিস্ফোরক ব্যবহার করে ক্ষতিসাধন), ৪৩৬ ধারা (ঘর জ্বালানো) ও ৪৪৮ ধারায় (নৌযানে আগুন বা বিস্ফোরণ) অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্তগণ এক নম্বর অনুচ্ছেদে উল্লিখিত ক্ষমার আওতায় পড়বে না।

এই সাধারন ক্ষমার আওতায় যেমন অনেক পাতি রাজাকার মুক্তি পেয়েছেন ঠিক তেমনি অনেক রাঘব বোয়াল ও মুক্ত হন -

'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে, আটককৃত বা সাজাপ্রাপ্ত অনেক প্রাক্তন নেতা এই সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আওতায় মুক্তি লাভ করিবেন। তিনি বলেন যে যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্ণর ডাঃ এ এম মালেক ও তাহার মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ শীঘ্রই মুক্তিলাভ করিবেন। অন্যদের মধ্যে যাহারা মুক্তি পাইবেন তাহাদের মধ্যে ডঃ কাজী দীন মোহাম্মদ, ডঃ হাসান জামান, ডঃ সাজ্জাদ হোসেন, ডঃ মোহর আলী (প্রত্যেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দালাল শিক্ষক) ও খান আবদুর সবুরও রহিয়াছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন যে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাহাদের সম্পত্তি ফেরত পাইবেন এবং দেশের নাগরিকদিগকে প্রদত্ত সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করিবেন। ' - তথ্যসূত্র ১

তা এই পূর্ব পাকিস্তানের প্রাক্তন গভর্ণর ডাঃ এ এম মালেক ও তাহার মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ হলেন - (কৃতজ্ঞতা: ব্লগার এহহামিদা [আমু ব্লগ])

১)ড: এ.এম. মালিক
২)আবুল কাশেম
৩)আব্বাস আলী খান (জামাতের প্রাক্তন সেক্রেটারী জেনারেল, মুজাহিদ যার স্থলাবিষিক্ত হয়)
৪)আখতারুদ্দিন আহমেদ
৫)এ.এস.এম. সোলায়মান
৬)ওবায়দুল্লাহ মজুমদার
৭)প্রফেসর শামসুল হক
৮)মাওলানা মোহাম্মদ ইশহাক
৯)নওয়াজিশ আহমেদ
১০)মাওলানা এ.কে.এম ইউসুফ (তত্ব আমলে নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পরে এই লোক ছিল ভারপ্রাপ্ত আমির)
১১) মং সু প্রু চৌধুরী!!

অথচ এই নরপশুগুলর নারকিয় কর্মকান্ডের বিষদ বর্ননা পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রচারিত তুমুল জনপ্রিয় 'চরমপত্র' এর রচয়িতা এম আর আখতার মুকুল রচয়িত 'চরমপত্র' গ্রন্থে। এই লোকগুলর অধিনেই পাক আর্মি সারা বাংলায় নারকিয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে ৯ মাস !

দ্ধিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার অথবা সাম্প্রতিক সময়ের বুশ হয়ত এক জন ব্যাক্তিকে ও নিজ হাতে হত্যা করেনি ইরাকে। কিন্তু তাই বলে এর দায় বা বিচার এড়াতে পারেনি হিটলার; যদি বিচার হয় তবে বুশ ও দন্ডিত হবেন নিশ্চিত। তবে কেন আমরা ৭১ এর ঐ সব মাস্টারমাইন্ড গুলর বিচার করব না ? পাকিগুলর ক্ষেত্রে না হয় কিছুই করার নাই কিন্তু এগুল ত বাংলাদেশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবে এগুলকে কেন ধরা হবে না ?


আপডেট : অনেক হাম্বা আবার এই বলে পার পেতে চায় যে এরা সবাই মৃত। এই মিথ্যাচারের মূল কারন হল তাদের পা চাপা স্বভাব, তারা স্বীকার করতে লজ্জা পায় যে 'শেখ মুজিব ঐ নরপশু গুলকে মুক্তি দিয়ে অন্যায় করেছেন।'

এরা যে সবগুল মরে যায় নি এটা কি তারা জানেন? না কি না জেনেই কথা বলেন ?



সেক্টর কমান্ডার ফোরাম প্রকাশিত ৫০ যুদ্ধাপরাধীর তালিকা হতে

১)ড: এ.এম. মালিক -২৩ নং (মৃত)
২)আবুল কাশেম
৩)আব্বাস আলী খান (জামাতের প্রাক্তন সেক্রেটারী জেনারেল, মুজাহিদ যার স্থলাবিষিক্ত হয়)- ৭ নং (মৃত)
৪)আখতারুদ্দিন আহমেদ
৫)এ.এস.এম. সোলায়মান-১৪ নং
৬)ওবায়দুল্লাহ মজুমদার -৩৯
৭)প্রফেসর শামসুল হক
৮)মাওলানা মোহাম্মদ ইশহাক -৩৩
৯)নওয়াজিশ আহমেদ-৪৯ নং (মৃত)
১০)মাওলানা এ.কে.এম ইউসুফ (তত্ব আমলে নিজামী গ্রেফতার হওয়ার পরে এই লোক ছিল ভারপ্রাপ্ত আমির)-২
১১) মং সু প্রু চৌধুরী!!

তা হিটলারের নাম ত নিশ্চই তারা জানেন :) ৫০ এর দশকের শেষ দিকে ধারনা কারা হল যে সে আত্নহত্যা করেছে সেই ১৯৪৫। তাই বলে কি তার বিচার বন্ধ ছিল ৬০ এর শেষ ভাগে? আর আগামী কাল যদি গু-আগম পটল তোলে তবে কি সে তাদের আত্নীয় হয়ে যাবে, যে তার আর বিচারের প্রয়োজন হবে না ?




তথ্যসূত্র:

১। অমি রহমান পিয়াল [আমার ব্লগ] http://omipial.amarblog.com/posts/111505

২। এম আর আখতার মুকুল Click This Link

৩। সাঈদ আহমেদ [সচলায়তন ব্লগ] http://www.sachalayatan.com/syeed_ahamed/32412

আমার আগের পোস্ট সমূহ:
১। Click This Link
২। Click This Link
৩। Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:৪৬
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×