somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধী/মানবতা বিরোধী বিচার: আমরা কি পুরো সত্য প্রতিষ্ঠা করব না কি আংশিক?

০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ৮:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অবশেষে সরকার গঠনের প্রায় ১৪ মাস পর আওয়ামিলীগ শুরু করল বহুল কাঙ্খীত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। সরকার গঠনের পর পরই বিভিন্ন আওয়ামি এমপি-মন্ত্রীদের নিকট কমন প্রশ্ন ছিল 'কবে শুরু হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার?'। সরকার বেশ ভাল ভাবেই অবগত ছিল যে, সর্বশেষ নির্বাচনী জয়ের অন্যতম প্রধান কারন এই বিচার সম্পর্কিত প্রতিশ্রুতি। তাই এই ব্যাপারে সরকারের 'ধীরে চল নীতি' কে আমি ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সাবধানতা হিসেবেই নিয়েছিলাম। আর শেখ মুজীব হত্যা বিচারের রায় কার্যকর ও বিডিয়ার বিদ্রোহ ও এই শ্লথ গতীর পার্শ কারন। আর বিভিন্ন সময় সরকারও আনুসাঙ্গিক প্রস্তুতি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জনমত গঠন ইত্যাদি কারন দেখিয়ে সময় চেয়েছে।

জনগন ও তাদেরকে সময় দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত ও জাতিসংঘকে এর সাথে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে বিভিন্ন সমেয়ে। অবশেষে জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছিল যে তারা শুধু প্রশিক্ষন, তথ্য আদান-প্রদান ইত্যাদি লজিস্টিক সাপোর্ট দেবে। ( ১৪ মাস পড় আমরা পেলাম নাম সর্বোস্য এক আইনজীবি পেনেল। ব্যাক্তিগত ভাবে যাদের নাম আমি আগে কখনও শুনিনি। আর প্রতিশ্রুত ট্রেইনিং এর ই বা কি খবর?)

শুরুতে সরকারের এই অনড় অবস্থান দেখে পাকিস্তানও কাউন্টার কুটনৈতিক তৎপড়তা শুরু করে, যা বিভিন্ন মন্ত্রী ও পত্রিকা মারফত আমরা জানতে পারি। অবস্থা এতটাই খারাপ হলে যে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এ ব্যাপারে করনিয় নির্দেশনা চেয়েছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ে। আবারও দৈনিক পত্রিকাগুল হতাশার খবর দিল- বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় না কি এ ব্যাপারে কোন নির্দেশনাই প্রদান করেনি।

সম্ভবত পাকিস্তানি কূটনীতির কাছে বাংলাদেশ হার মেনেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট ও আইন মন্ত্রী বলেছেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাংলাদেশের আভন্তরীন ব্যাপার। এর সাথে অন্য দেশের ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই।

খালি চোখে উপরের মন্তব্য সত্য মনে হলেও এর মাধ্যমে তারা দায় এড়িয়েছেন এবং পরোক্ষ ভাবে হার স্বীকার করেছেন পাকিস্তানি কূটনীতির কাছে । পাকিস্তানীদের বিচারের বাইরে রেখে শুধু দেশীয় চেলাগুলর বিচার করে বাংলাদেশ একটি আন্তর্জাতিক ব্যপারকে আভ্যন্তরিন ব্যপারে পরিনত করল। এর মধ্যে আইন মন্ত্রী আমেরিকা ঘুরে এসে 'যুদ্ধাপরাধের বিচার' কে 'মানবতা বিরোধী বিচার' নামে পুনঃ নামকরন করেছেন। সরকার ঘোষিত প্রধান অভিযুক্তদের তালিকায় ও কোন পাকিস্তানি অভিযুক্তের নাম স্থান পায়নি।

মুজাহিদ- নিজামিরা যেমন চিন্হিত অপরাধী ঠিক তেমনি ভাবে চিন্হিত জে টিক্কা, রাও ফরমান আলী, জে ইয়াহিয়া ও নিয়াজী গং। অথচ সচেতন ভাবেই সরকার ও তাদের মন্ত্রী এমপিরা এবং এই ব্লগের রাজাকার বিরোধী সচেতন ব্লগারগন এই ব্যাপারটা এড়িয়ে যাছেন। এ যেন দেখেও না দেখার ভান করা।

৭১ এর গনহত্যা পৃথীবির ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যা কান্ড হলেও গত ৩৮ বছরে আমরা এর আন্তর্জাতীক স্বিকৃতি আদায় করতে পারিনি /:) । ৭১ এ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এখনও ইন্দো-পাক যুদ্ধ হিসেবেই আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় পরিচিত। এখন আমরা যদি ২০১০ -এ এই পাকি অফিসারগুলকে ছেড়ে দেই তবে আবারও আমরা ব্যার্থ হব পাকিস্তান কর্তিক সংঘঠিত ৭১ এর গনহত্যাকে আন্তর্জাতিক সমাজ ও মিডিয়ার কাছে তুলে ধরতে।

হয়ত টেকনিকাল অনেক জানা-অজানা কারনেই পাকি নরপশুগুলকে আদালতের সামনে উপস্থিত করে বিচার করা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে অনেকে শিললা চুক্তির (http://en.wikipedia.org/wiki/Simla_Agreement) প্রতিবন্ধকতা খুজলেও আমি এর কোন ভিত্তি খুজে পাইনি। আর সেই পাকি ১৯৬ জন চিন্হিত অপরাধী আত্নসমর্পন করে ভারতের কাছে এবং ভুট্ট-ইন্দিরা স্বাক্ষরিত শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মদ্ধে। সুতরাং ঐ চুক্তি মানতে বাংলাদেশ বাধ্য নয়।

যদি কোন কারনে তাদেরকে আদালতে আনা নাই যায় তবে তাদেরকে অনুপস্থিত রেখেই বিচার করা হোক। পৃথিবীর অন্যান যুদ্ধাপরাধ বিচারেও এই পথ অনুসরন করা হয়েছে। সুতরাং পাকিস্তানী নরপশুদের ছাড় দেয়ার কোন মানে নেই। আমরা চাই সম্পূর্ন ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটুক এই মানবাতা বিরোধী/যুদ্ধাপরাধ বিচার কার্যে। গো আজম, নিজামি গং দের পাশাপাশি দন্ডিতের খাতায় নাম উঠুক ইয়াহিয়া, নিয়াজীর

যদি আমরা তা নিশচিত করতে ব্যার্থ হই তবে ভবিষ্যত প্রজন্ম কখনই আমাদের ক্ষমা করবে না। আসুন সম্পূর্ন সত্য উন্মচনে সচেষ্ট হই। দাবী জোড়দার করি গো আজম, নিজামি, ইয়াহিয়া, নিয়াজীর গংদের বিচারের।

যারা ভাবছেন আজ নিজামি-মুজাহিদের বিচার করে কাল ইয়াহিয়া, নিয়াজীর বিচার করবেন; তাদের কাছে গুটিকয় প্রশ্ন-

ঘোড়ার আগে গাড়ি ছোটানোর উদ্দেশ্য কি ?
মূল্য কালপিটদের ছেড়ে দিয়ে তাদের চেলাগুলর বিচার করে আমরা কোন মুখে সভ্য সমাজের সামনে দাড়াব?
এটাই কি আমাদের শৌর্য-বির্যের পরিচয়?
২০১০ এ এসে কি আমরা পাকিস্তানের কূটনীতির কাছে হেরে যাব ? আমরা কি আংশিক সত্য বিচারের মাধ্যমে প্রতিস্ঠা করব না কি সম্পূর্ন সত্য প্রতিস্ঠা করব ?

- আমি হতাশ নেট ওলট-পালট করেও সেই ১৯৫ জনের সবার নাম-ধাম পেলাম না। নাম সহ যে ছবিটা পেলাম তার প্রায় সবগুলই মরে ভূত। কিন্তু যদি ১৯৫ এর ১ টাও জীবিত থাকে আমি ঐ পশুটার বিচার চাই। তাই প্রতিকী অর্থে নিয়াজি-টিক্কাকে বেছে নিলাম।


সম্প্রতি করা এক মন্তব্যে পাকিস্তানী হাই কমিশনার বলেছেন যে, 'মনবতাবিরোধী বিচারে তার দেশের কোন আপত্তি নাই'। এই কথা শুনে আমাদের সরকারের কিছু মাথামোটা ক্লাউন আত্নপ্রস্বাদে নিজেরাই নিজেদের পিঠ চাপড়াচ্ছে। উল্লুকগুল যদি বুঝত যে এই মন্তব্যের মাধ্যমে পাকিস্তানী হাই কমিশনার বাংলাদেশের জমিনে দাড়িয়েই তাদের কূটনৈতিক বিজয়ের ঘোষনা দিল। পাকিস্তান আবার ও তার সেনাবাহীনির কলঙ্ককে মাটি চাপা দিতে হমর্থ হল এই ২০১০ এ এসেও। যেভাবে তারা ১৬৫-৯৫ জন কুলাঙ্গারকে বাচিয়েছিল ৭২-৭৪ এ।

অট: শিলমা চুক্তি দেখে আমার চোখ চরখ গাছ। সারা জীবন শুনে আসা কথার সাথে আসলের অমিল অকল্পনিয়। এতে কোথাও বলা হয়নি যে পাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যাবে না।

আপডেট : অবশেষে সেই ১৯৫ এর ক্ষমা ঘোষনাকরী চুক্তীর হদিস পেলাম Click This Link । এখন বুঝছি, সরকার অতীতের ব্যার্থতা ঢাকতেই পাকি ১৯৫ জনের নাম মুখে আনে না।
তথ্যসূত্র:

১। http://en.wikipedia.org/wiki/Simla_Agreement
২। Click This Link
৩। Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:১৬
২০টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×