somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

না বলা কথা

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কালকেও একমাস ছিলো আর আজ ২৯ দিন বাকি! সাহেদের দিন কি দ্রুতই কেটে যাচ্ছে? অথচ গত দেড় বছর ধরে এক একটা দিন কে মনে হতো এক একটা বছর। আর এখন দিন গুলোকে মনে হয় ঘন্টা ঘন্টায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। সকালে ফজরের নামাজ পড়ে অনেকক্ষন কোরআন শরীফ তেলোয়াত করলো। এই একটা গুন জন্মসুত্রেই পেয়েগেছে মনে হয় সাহেদ। বাবার মতোই খুব দরদি গলা আর তেলোয়াত ও করে একেবারে ভিতর থেকে। পাশের রুমে থাকা কালিপদ প্রতিদিন সকালে সাহেদের তেলোয়াত গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনে। যদিও এর অর্থ কিছু বুঝেনা তবে ভিতর থেকে একটা ভালোলাগা এসেই যায়।
ভোরেই সাহেদ গোসল সেরে ফেলেছে, একরকম প্রস্তুত হয়েই আছে, আজ তার ভিষন আনন্দের দিন। আজ প্রায় দুই মাসপর দেখা হবে রাদিফ এর সাথে। ছেলেটা দেখতে দেখতে কেমন বড় হয়ে যাচ্ছে। আর কয়দিন পরেই সাহেদকেও ছাড়িয়ে যাবে লম্বায়। বয়স কত হলো? ১৬! অথচ মনে হয় মাত্র সেদিন ডাক্তার এসে বললেন নিন আপনার রাজপুত্রকে কোলে নিন। সেদিনের কথা মনে হতেই চোখের কোনটা বরাবরের মতই ভিজে উঠলো। সেই ছোট্ট ছেলেটাই নাকি এখন কলেজ যাচ্ছে? দিন কি করে চলে যায়?
২৯ দিনে আর কতবারই বা দেখা হবে? কত কথা বলার ছিলো রাদিফ কে। সব কি বলা যাবে? লিখে যেতে চেষ্টা করছে সব না বলা কথাগুলো। সেই তিন বছর বয়সে একবার রাদিফের মার খুব জ্বর, তখন হরতাল আর অবরোধে দেশ প্রায় অচল। সাহেদ অফিসের কাজে ঢাকার বাহিরে গিয়ে আটকে গিয়েছিলো। ফরিদা পাশের বাসা থেকে ফোন করে জানানোর পরেও আসা হয়নি সাহেদের। তিন দিনপর এসে দেখে ফরিদা কেমন হয়ে গেছে। চেনা যাচ্ছেনা, মনে হচ্ছে শরীরে রক্ত নেই, ফ্যাকাসে। ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবার পরেও সাহেদ পারেনি তার ফরিদাকে বাঁচাতে! প্রচন্ড নিউমোনিয়া সাথে ওর আগে থেকেই রক্তশুন্যতা ছিলো। পারেনি অসিম সাহসী মেয়েটা রোগের সাথে পাল্লা দিয়ে বাঁচতে।
সেই থেকে রাদিফকে নিয়েই বেচে থাকা সাহেদের। প্রতিটাদিন প্রতিটা রাত কেটেছে আনন্দে আর যন্ত্রনায়। কত স্বপ্ন আর কত স্বপ্নভঙ্গ এর সাক্ষী সেইসব দিন কেমন ফিকে হয়ে গেলো? কিন্তু সব বদলে গেলো এক মুহূর্তে। দুই বছর আগের কথা। রাদিফের বন্ধু জনি সবসময় বাজে কথা বলতো, ওর বাবা নাকি ওর মাকে মেরে ফেলেছে। মা এর কথা মনেই পরেনা রাদিফের, তারপরেও কেমন কান্না পেতো, রাগ হতো খুব। কেন মা ওকে ফেলে চলে গেছে? রাদিফ ছোট বেলা থেকেই বাবা ছাড়া কিছুই বুঝতে চাইতোনা। আর কেউ তার বাবাকে নিয়ে কিছু বললেই ভিতরে কেমন ক্রোধ জেগে উঠে সবসময়। জনি কে এর মধ্যে সে অনেকদিন পিটিয়েছে বাজে কথা বলায়, তারপরেও জনি ওকে রাগাতে বাজে কথা বলেই যেত। সেদিন সন্ধ্যায় জনি ওদের বাসার ছাদে খুব বাজে ভাবে ওর বাবকে গালি দেয়ায় আর রাগ সামলে রাখতে পারলোনা রাদিফ। অনেক জোড়ে ধাক্কা দিলো, জনি ভারসাম্য না রাখতে পেরে ছাদ থেকে পিছলিয়ে নীচে পরে গেলো। রাদিফ ছুটতে ছুটতে বাবার কাছে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কানতে লাগলো, কিছুই বলতে পারছিলোনা। সাহেদ নিজের বুকে চেপে ধরে রাদিফ কে একটাই কথা বললো, আমি থাকতে আমার ছেলের কিছুই হবে না। সব শুনে সাহেদ ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে রাদিফ কে বোঝালো ও কিছুই জানেনা। সাহেদ এর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ধাক্কা লেগে জনি পরে গেছে।
দুই বছরে অনেক কিছুই ঘটে গেলো। পুলিশ কোর্ট জেল, গত মাসেই রায় হলো মৃত্যুদন্ডের। সাহেদ সব মাথা পেতে নিলো, রাদিফ কে বাঁচাতে সব করতে পারে সাহেদ। রাদিফ অনেক চেষ্টা করেও পারেনি সত্যকে প্রমান করতে।
আজ রাদিফ তার খালার সাথে আসছে বাবাকে দেখতে। ওর খালা সব জানে আর তাই নিজেই দায়িত্ব নিয়েছে রাদিফের। সাহেদ এখন নিশ্চিন্ত। একটাই কাজ বাকী এখনো, অনেক না বলা কথা লিখে যেতে হবে রাদিফের জন্য।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×