somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যেভাবে আমাদের দেশ ও জাতিকে ধ্বংস করা হয়েছিলো। আমরা কি ঘুরে দাঁড়াবো না?

২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কিছুদিন আগে ফেইসবুকে একটা কমেন্ট পড়ে হতবাক হয়ে গেলাম, সেখানে একজন বাংলাদেশী, বৃটিশ কর্তৃক বাংলা দখল, বাংলায় বৃটিশ শাসন ও উপনিবেশিক আমলে বাংলা্য বৃটিশদের কার্যক্রমের জন্য তাদের ধন্যবাদ দিচ্ছে। এরকম মনোভাবসম্পন্ন ব্যাক্তি আমি ইতিপূর্বেও অনেকবার দেখেছি। স্বভাবতঃই মনে প্রশ্ন জাগে, - এইরূপ মনোভাব সৃষ্টি হওয়ার কারণ কি?

মানুষের সাথে মানুষের যোগাযোগের মূল মাধ্যম ভাষা । এই ভাষার উপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে কোন একটি জাতির সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, আদর্শ-আধ্যাত্মিকতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, ইত্যাদি। এবং সেই কারণে একটি দেশে উপনিবেশ স্থাপন প্রচেষ্টার সাফল্যে ভাষার একটি বড় প্রভাব আছে। একটি জাতি বা দেশের উপর অপর একটি জাতি বা দেশের নিয়ন্ত্রণ লাভ করার এটি একটি মজবুত হাতিয়ার। উদাহরণ হিসাবে আমাদের দেশকেই দেখানো যেতে পারে ব্রিটিশ, ফরাসি, এবং পর্তুগীজ সকলেই ভারত উপমহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করার চেষ্টা করেছিলো। তবে সফল হয়েছিলো বৃটিশরা। এ প্রসঙ্গে ইংরেজ লর্ড ম্যাকলে ১৮৩৫ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ পার্লামেন্টে যে বক্তৃতা দিয়েছিলো তা লক্ষ্যণীয়।

"আমি ভারত উপমহাদেশের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ বরাবর এক মাথা থেকে অপর মাথা পর্যন্ত ভ্রমণ করেছি এবং আমি সেখানে একটি চোর অথবা একটি ভিখারীও দেখিনি। কিযে সম্পদশালী সেই দেশ! সেখানকার মানুষ এত উচ্চ নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন, কিযে তাদের ধীশক্তি! আমি মনে করি যে এই সকল কারণে ঐ দেশ আমরা কোনদিনও জয় করতে পারব না। এটা সম্ভব হবে কেবল তখনই, যদি আমরা তাদের মেরুদন্ড ভেঙে দিতে পারি। তাদের মেরুদন্ড হলো তাদের সমৃদ্ধ আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এইজন্য আমি এই প্রস্তাব রাখছি যে, আমাদের করণীয় হবে, তাদের প্রাচীন ও ঐতিহ্যময় শিক্ষাপদ্ধতি ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে ফেলা। এটা এমনভাবে করতে হবে যেন ভারত উপমহাদেশবাসীরা মনে করে যে, যা কিছু পরদেশী ও ইংরেজী তা সবই ভালো এবং তাদেরগুলোর চাইতে উন্নততর। এভাবে তারা তাদের আত্মসম্মান হারিয়ে ফেলবে, আরও হারিয়ে ফেলবে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি। আর এভাবে তারা গড়ে উঠবে ঠিক তেমনটি করেই, যেমনটি আমরা চাই - একটি সত্যিকারের বশীভুত পরাধীন জাতি."

("I have traveled across the length and breadth of India and I have not seen one person who is a beggar, who is a thief. Such wealth I have seen in this country, such high moral values, people of such calibre, that I do not think we would ever conquer this country, unless we break the very backbone of this nation, which is her spiritual and cultural heritage, and, therefore, I propose that we replace her old and ancient education system, her culture, for if the Indians think that all that is foreign and English is good and greater than their own, they will lose their self-esteem, their native self-culture and they will become what we want them, a truly dominated nation." - Lord Macaulay)

লর্ড ম্যাকলে ভারত উপমহাদেশের আধ্যাত্মিকতা ও সংস্কৃতির ক্ষমতা শনাক্ত করতে পেরেছিলো। বৃটিশ সরকার ম্যাকলের প্রস্তাবকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছিলো। এবং সেই অনুসারে পলিসিও তৈরী করে। ১৮৩৫ থেকে ১৯৪৭ এই সুদীর্ঘ ১১২ বছর ছিলো মূলতঃ ঐ পলিসিরই বাস্তবায়নের যুগ। যার ফলে আমাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া ইংরেজী ভাষার ব্যাপক প্রভাবে আমরা আমাদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, আদর্শ-আধ্যাত্মিকতা, এক কথায় স্বকীয়তা হারিয়েছি। পাশাপাশি হারিয়েছি নৈতিক মূল্যবোধ ও ধীশক্তি! পরাধীনতার শৃংখলটাকেই আমাদের ভাগ্য বলে মনে নিয়েছি। নৈতিক মূল্যবোধ ও মনোবলের অভাবে আমরা মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াবার শক্তি অর্জন করতে পারিনি বহুকাল। সেই সুযোগে চলেছে আমাদের দেশে প্রচলিত পুরাতন শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, আদর্শ-আধ্যাত্মিকতা, ইত্যাদির ধ্বংসযজ্ঞ। যাতে আমরা সচেতন হয়ে উঠলেও খুব সহজে তাকে আর ফিরে পেতে না পারি।


আমাদের নিজেদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য, আদর্শ-আধ্যাত্মিকতা সব কিছুই বিলুপ্ত হয়ে তার স্থান দখল করে নিয়েছে ভীনদেশী সবকিছু। ফলে আমাদের কাছে পরের দেশ হয়েছে স্পষ্ট, আর নিজের দেশ হয়েছে অস্পষ্ট। আমাদের পূর্বপুরুষদের ঘাম আর রক্তের বিনিময়ে ঔপনিবেশিক অভিশাপ থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি সত্য, কিন্তু পরিপূর্ণ মুক্তি আমাদের আসেনি। লর্ড ম্যকলে-এর ধারাবাহিকতা এখনো বজায় রয়েছে।

এই সবকিছু নীরব অবলোকন করে যাওয়াই কি আমাদের ভাগ্য? আমরা কি ঘুরে দাঁড়াবো না?
৪টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×