somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের পথ ধরেই; এমিরেটস এর ফ্লাইটে, দুবাই হয়ে। এবারে ইচ্ছে হলো পূবের পথ ধরে উড়াল দিতে। আমার এ ইচ্ছেটার কথা প্রকাশ করার আগেই ট্রাভেল এজেন্ট জানালো, ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স তাদেরকে হংকং হয়ে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে যাত্রী পাঠাতে উৎসাহিত করছে এবং এর জন্য তারা আকর্ষণীয় টিকেট মূল্য ধার্য্য করেছে। আমার ইচ্ছের সাথে ট্রাভেল এজেন্টের এ প্রস্তাব মিলে যাওয়াতে আমি বেশ আগ্রহী হয়ে তাদের কাছে দুইজন যাত্রীর জন্য ফ্লাইট ডিটেইলসসহ কোটেশন চাইলাম। টিকেটের মূল্যটা বেশ সাশ্রয়ী মনে হলেও হংকং এ মাত্র ৫৫ মিনিটের ট্রাঞ্জিট বিরতির কথা জেনে শঙ্কিত বোধ করলাম এবং বিনা দ্বিধায় আমার শঙ্কার কথাটা তাদেরকে জানালাম। কেননা, দুই ঘণ্টার কম ট্রানজিট বিরতি থাকলে আমি মনে স্বস্তি পাই না। সেখানে এ যাত্রায় এক ঘণ্টারও কম!

আমার শঙ্কার কথাটা জেনে ট্রাভেল এজেন্ট আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করলো এই বলে যে হংকং এর টার্মিনাল বেশি বড় নয়, এবং একই টার্মিনাল থেকে কানেক্টিং ফ্লাইটের যাত্রা শুরু হয় বলে এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ খুবই তৎপর থাকে তাদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সকল যাত্রীকে এই স্বল্প সময়েই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরিয়ে দিতে। তাদের এ কথায় পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে না পেরে আমি জিজ্ঞেস করলাম যে যদি কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করি, তবে পরবর্তী ফ্লাইট কত ঘণ্টা পরে পাওয়া যাবে। তারা জানালো সাড়ে সাত ঘণ্টা পর। আমি চিন্তা করে দেখলাম, আমরা এখন মুক্ত বিহঙ্গ; আমাদের কোন তাড়াহুড়ো নেই। আর সাড়ে সাত ঘণ্টার চেয়ে অনেক বেশি সময়ের ট্রানজিট কাটানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তাই কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করলেও কোন ব্যাপার না; মনে মনে ঠিক করে ফেললাম এই ফ্লাইটেই যাবো। টিকেটও করে ফেললাম, তবে টিকেট কাটা এবং ফ্লাইটের মধ্যবর্তী সময়ের দিনগুলোতে আমি বারে বারে তাদের কাছে অনুরোধ করেছি আমার আগে যাওয়া একই রকম পথপঞ্জীর (itinerary) যাত্রীদের কাছ থেকে তাদের অভিজ্ঞতার আপডেট সংগ্রহ করে আমাকে জানাতে। তারা আমাকে চারজনের আপডেট জানিয়েছে, যাদের মধ্যে তিনজনই ঠিকঠাক মত কানেক্টিং ফ্লাইট ধরতে পেরেছেন, একজন পারেন নাই। যিনি পারেন নাই, তিনি আবার ট্রাভেল এজেন্টেরই বোন (কাজিন)। তার এ কথা শুনে আমার এটাকে অনেস্ট আপডেটই মনে হলো।

আমাদের ফ্লাইটের আগের সাতদিনের ফ্লাইট রেকর্ড ইন্টার্নেটে খুঁজে দেখলাম প্রায় প্রতি রাতেই ঐ ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে গড়ে কমবেশি দেড় ঘণ্টা বিলম্বে যাত্রা শুরু করেছে। অগত্যা মনে মনে কানেক্টিং ফ্লাইট মিস করার সম্ভাবনাকে মেনে নিয়েই রাত দশটা বিশ মিনিটে বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে সস্ত্রীক রওনা হয়ে গেলাম । ফ্লাইট টাইমের ঠিক তিন ঘণ্টা আগে চেক-ইন কাউন্টারের সামনে দাঁড়ালাম, যদিও পূর্ব পরিকল্পনা ছিল চার ঘণ্টা আগে দাঁড়াবার। ফ্লাইট ‘অন টাইম’ আছে কিনা তা চেক-ইন স্টাফকে জিজ্ঞেস করলে তিনি একটা অর্থপূর্ণ হাসি দিয়ে বললেন, “So far, yes!” আমি ইঙ্গিতটা বুঝে নিলাম। রাত বারটার মধ্যে ইমিগ্রেশনসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্লেনে আসীন হবার জন্য আমাদের ঘণ্টা দুয়েকের প্রতীক্ষার পালা শুরু হলো।

এর মধ্যে একজন স্টাফ জানালেন যে বিমানবন্দরে আমাদের প্লেনের জন্য নির্দিষ্ট বোর্ডিং ব্রীজটিতে জরুরি মেরামত কাজ চলছে বিধায় প্লেন বোর্ডিং ব্রীজের সাথে সংযুক্ত থাকবে না। আমাদেরকে লাউঞ্জের সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে হবে, আবার প্লেনের খাড়া সিঁড়ি বেয়েই ভেতরে প্রবেশ করতে হবে। এমনিতেই গত কয়েকদিন ধরে আমরা উভয়ে স্বাভাবিক হাঁটা চলা করতেই হাঁটুতে একটু অসুবিধে বোধ করছিলাম, তার উপর আবার চলে এলো এই উটকো ঝামেলা। লাউঞ্জে বসে বারংবার ডিপারচার মনিটরে চোখ রাখছিলাম ফ্লাইট বিলম্বিত হয় কিনা সেটা দেখার জন্য। সেখানে ফ্লাইট ‘অন টাইম’ই দেখাচ্ছিল। সেই টাইমফ্রেম অনুযায়ী যথাসময়ে আমাদের বোর্ডিং চেক ও শেষ সিকিউরিটি চেক সম্পন্ন হবার পর আমাদেরকে বোর্ডিং গেইটের সামনে এনে বসানো হলো। তারপর থেকে যেন কেমন একটা স্থবিরতা ও নীরবতা নেমে এলো। স্টাফরা সবাই এদিকে সেদিকে ঘুরাঘুরি করে নিজেদের মধ্যে যেন কি সব আলাপ করছিল আর বার বার একটু দূরে গিয়ে ওয়াকি টকিতে কথা বলছিল। হঠাৎ মাইকে ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স এর পক্ষ থেকে ‘দুঃখের সাথে’ জানানো হলো যে বিমান বন্দরে “এয়ার ট্রাফিক” এর সমস্যার কারণে ফ্লাইট আধা ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। যাত্রীরা সবাই উসখুস শুরু করলেন, একে অপরের মাঝে কানাঘুষা চলতে থাকলো- অবশেষে কি আমরা কানেক্টিং ফ্লাইটটা মিস করতে যাচ্ছি?


বোর্ডিং গেইটের সামনে অপেক্ষা করার সময় একজন হুইলচেয়ার যাত্রীর সাথে আমরা পরিচিত হ’লাম। তিনি বহু বছর আগে অগ্রণী ব্যাংক এর অফিসার তার স্বামীকে হারিয়ে একাই তিন ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। তিনি একাকী ভ্রমণ করছিলেন ভার্জিনিয়ায় অবস্থানরত পিএচডি ছাত্রী তার ছোট মেয়ে নিপার কাছে যাবার জন্য। বসে থাকতে থাকতেই তিনি সেলফোন বের করে তার মেয়েকে কল করলেন। পাশে বসার কারণে তাদের কথোপকথন আমাদের কানে আসছিল। তিনি মেয়েকে আমাদের কথা বললেন। এক পর্যায়ে তিনি ফোনটি আমার হাতে দিয়ে বললেন যে তার মেয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছে। তার উৎকণ্ঠিত মেয়েটি আমাকে সালাম জানিয়ে অনুরোধ করলো আমরা যেন তার মাকে একটু দেখে শুনে রাখি এবং প্রয়োজনে সাহায্য সহযোগিতা করি। সুদূর প্রবাসী পিতৃহারা মেয়েটির তার মায়ের জন্য অকৃ্ত্রিম এই উৎকণ্ঠা আমাকে স্পর্শ করলো। আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম, অবশ্যই। ইন শা আল্লাহ আমরা একসাথেই তার মাকে নিয়ে নিরাপদে নিউ ইয়র্কে পৌঁছাবো।

যাহোক, আধা ঘণ্টা নয়, অবশেষে এক ঘণ্টা বিশ মিনিট পর আমাদের প্লেনটি রাতের আকাশে পাখা মেলে উড্ডীন হলো। আমার আসনটি ছিল পাখার উপরে। পাখার আলো, ঢাকা মহানগরের রাস্তার আলো আর রাতের নক্ষত্রের আলো দেখতে দেখতে আমি কানেক্টিং ফ্লাইটটা মিস হবার সম্ভাবনা ও শঙ্কার মাঝেও একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আসনের সামনের মনিটর অন করলাম।

ক্যাথে প্যাসিফিক এয়ারলাইন্স এর গ্রাউন্ড স্টাফ এবং কেবিন ক্রুদের পেশাগত আচরণ এবং সৌজন্য আমার কাছে উচ্চমানের মনে হয়েছে। কিন্তু ঢাকা বিমানবন্দরের “এয়ার ট্রাফিক” ব্যবস্থাপনাকে আমার কাছে মোটেই আশানুরূপ মনে হয়নি। নইলে কেন প্রতি রাতে ফ্লাইটগুলো যথারীতি সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পরেও “এয়ার ট্রাফিক” সমস্যার কারণে টার্মিনালে বসে থেকে এতটা বিলম্বে ছেড়ে যাচ্ছে! আমি মনিটরে চোখ রাখছিলাম এটা দেখার জন্য যে পাইলট এই বিলম্বটুকু কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন কিনা। দেখলাম, মাঝে মাঝে প্লেনের গ্রাউন্ডস্পীড ৯৭০/৯৮০ কিঃমিঃ পর্যন্ত উঠছিল। অবশেষে প্রায় দেড় ঘণ্টা বিলম্বে আকাশে উড়েও ক্যাপ্টেন মহোদয় মাত্র আধ ঘণ্টা বিলম্বে আমাদেরকে নিয়ে হংকং বিমানবন্দরে অবতরণ করলেন। যাত্রা শুরুর বিলম্বটুকু অনেকটা পুষিয়ে নেয়াতে মনের মাঝে কিছুটা ‘দুরাশা’র সঞ্চার হলো।



অন বোর্ড ফ্লাইট সিএক্স৬৬২
হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
১০ মে ২০২৪
শব্দ সংখ্যাঃ ৯৩২


পরের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ২






সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩২
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

পঁচে যাওয়া বাংলাদেশ আর্মি

লিখেছেন রিয়াজ হান্নান, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:২৫


একটা দেশের আর্মিদের বলা হয় দেশ রক্ষা কবজ,গোটা দেশের অব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বহিরাগত দুশমনদের আতংকের নাম। ছোটবেলা থেকে এই ধারণা নিয়ে কয়েকটা জেনারেশন বড় হয়ে উঠলেও সেই জেনারেশনের কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×