ঘুরে বেড়াতে কার না ইচ্ছা করে? কিন্তু ব্যাস্ততার কারনে বা সময়ের অভাবে কোথাও যাওয়া হয়ে উঠে না। তাই দিনে দিনে আমাদের জীবন একঘেয়ে হয়ে উঠতেছে। এই একঘেয়ে জীবনকে একটি দিন ছুটি দিয়ে আসুন না ঘুরে সিলেটের অপার সৌন্দর্য মণ্ডিত স্থান রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট থেকে। অনেকে হয়তো গেছেন বা অনেকে নাম শুনেছেন কিন্তু যান নি । যারা গেছেন তারা জানেন কতই না সুন্দর এই রাতারগুল জলাবন। সিলেট থেকে মাত্র ৩৪ কিঃমিঃ দূরে এটা অবস্থিত। সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল এটাই বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির বন এবং পৃথিবীতে নগণ্য কয়েকটা মিঠা পানির বনের মধ্যে এটা অন্যতম। তাই যাদের এখনও দেখার সৌভাগ্য হয়নি তারা এই বর্ষা মৌসুমে দেখে আসুন বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির বনটাকে। সামুতে এর আগেও কিছু ভ্রমন পিপাসু মানুষ এটা নিয়ে পোষ্ট করেছেন। কিন্তু আমি আজকে জানাব কিভাবে অফিস কামাই না দিয়ে একদিনেই ঘুরে আসবেন রাতারগুল এবং জাফলং থেকে। বেশি কথা বাড়াব না আসুন শুরু করি আমাদের এক্সট্রিম ভ্রমন কাহিনীঃ
ঢাকা- সিলেট- রাতারগুল- জাফলং- ঢাকা সময়ঃ ১ দিন।
ভাইরে কর্পোরেট অফিসে চাকুরী করি তাই কতটা ব্যাস্ত থাকি বুঝতেই পারতেছেন। তার উপর আমাদের অফিসে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন ছুটি। শুক্রবারটা তো ঘুমাতে ঘুমাতেই কেটে যায় তাই কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তাই করতে পারিনা। জীবনটা কেমন যেন একঘেয়ে হয়ে গেছে। কিছু ভাল লাগে না। হটাত একদিন প্রথম আলো পত্রিকার মঙ্গল বারের নকশায় চোখে পড়ল রাতারগুল সম্পর্কে একটা ভ্রমন বিষায়ক লেখা। ব্যাস ঐখান থেকেই শুরু। আসলে ঐটা দেখে প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। তাই যেভাবেই হোক ঐখানে যাওয়া চাই ই চাই। আমারা ৫ কলিগ যাওয়ার জন্য মন স্থির করলাম কিন্তু অফিস থেকে ছুটি পাওয়া যাবে না কারন অতি গুরুত্বপূর্ণ ডিপার্টমেন্টে চাকুরি করি তাই এক সাথে ৫ জন ছুটিতে গেলে কোম্পানির বারোটা না বাজলেও অন্তত ১০ টা বেজে যাবে। তাই আর কি করা যেতে যেহেতু চেয়েছি তাই ঠিক করলাম একদিনেই ফিরে আসব (যাবো শুক্রবারে)। তারপরই লেগে গেলাম প্লান পরিকল্পনা করতে, কিভাবে যাবো এবং একদিনের ভিতরেই ফিরে আসব অফিস কামাই না দিয়ে। অবশ্য তখনও জানিনা কিভাবে ঐখানে যায়। তাই লেগে গেলাম ইন্টারনেট এ খোঁজ করতে। পেয়েও গেলাম কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। কিন্তু যা পেলাম তা বেশিরভাগই খরচ বেশি ও সময়ও বেশি। তাই খুঁজতে লাগলাম কম খরচে কম সময়ে কিভাবে যাওয়া যায়। তাই আবারও সরনাপর্ণ হলাম গুগল মামার ছোট ছেলে গুগল ম্যাপের কাছে। অফিসের অনেকেই আমাকে গুগল ম্যাপ বিশেষ-অজ্ঞ বলে তাই সহজেই পেয়েও গেলাম একটা শর্টকার্ট রাস্তা তবে অনুমান নির্ভর। কারন তখনও গুগল ম্যাপে রাতারগুল বনের কোন নির্দেশনা ছিল না, শুধুমাত্র নির্দেশনা ছিল রাতারগুল বনের কাছেই অবস্থিত বিট পুলিশ ক্যাম্পের। ঐ ক্যাম্পের পাশে গোয়াইন নদীর ধাঁরে একটা গোলাকার কালো অংশ দেখতে পেলাম ম্যাপে গাছগাছালি থাকলে যেমন দেখায় তেমন তাই ঐটাকে রাতারগুল বন হিসাবে মার্ক করে রাস্তা আঁকলাম এবং ঐ অনুযায়ী আমাদের প্লান ঠিক করলাম। আমারা ঠিক করলাম বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করব শুক্রবার দিনে ঘুরবো এবং শুক্রবার রাতে ঢাকার উদ্দেশে সিলেট ত্যাগ করব এবং শনিবার অফিস করব। আমাদের কলিগদের মধ্যে একজনের বাড়ি সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ডের কাছে তাই যথারীতি তাকে বৃহস্পতিবার রাতের ৫ টা টিকেট কেটে রাখতে বললাম। কিন্তু ঝামেলা শুরু হল কোন বাসে যাবো এইটা নিয়ে। কেউ বলে হানিফ আবার কেউ বলে শ্যামলী। জনৈক সায়দাবাদিকে (যার বাড়ি সায়দাবাদ ) বললাম বাস দেখে আমাদের জানাতে কোন টা কেমন। তিনি আবার অতি জ্ঞানী মানুষ তাই উনি ঢাকা-সিলেট গামী সব বাসই দেখেছেন। উনার ভাষ্য মতে কোনটার সিট ভাল না আবার কোনটার বাইরের রঙ সুন্দর না আবার কোনটার সার্ভিস ভাল না ,অতি জ্ঞানী মানুষ বলে সবই চোখে পড়ে । যাইহোক অবশেষে ঠিক হল শ্যামলীতেই যাবো কারন শ্যামলীর সিটের সামনে জায়গা বেশি তাই আরামে পা রাখতে পারব। সেই অনুযায়ী শ্যামলীতে রাত ১০ টার গাড়িতে ৫টা টিকেট কাটলাম। ।অবশেষে আসলো সেই কাংখিত বৃহস্পতিবার। সকালেই বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সব গুছিয়ে ব্যাগ সাথে নিয়ে অফিসে ঢুকলাম। ৬ টা পর্যন্ত অফিস। ৬ টা বাজার পর আমারা অফিসিয়াল ড্রেস গুলো ছেড়ে ভ্রমনের ড্রেস গুলো পড়ে নিলাম এবং অফিসিয়াল ড্রেস গুলো অফিসে রেখে গেলাম কারন শনিবার এসে ঐগুলো আবার পড়তে হবে।তারপর অফিস থেকে যাত্রা শুরু করলাম সায়দাবাদের উদ্দেশে।গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে । সায়দাবাদ পৌছাইতে ৯.৩০ বেজে গেল। জনৈক সায়দাবাদি অবশ্য অফিস থেকে আগেই বের হয়ে গিয়েছিল। তাই সায়দাবাদে উনিই আমাদের ৪ জনকে রিসিফ করলো। আপনারা যারা শ্যামলীতে সিলেট গেছেন তারা জেনে থাকবেন সায়দাবাদে শ্যামলীর কয়েকটা কাউন্টার আছে। আমারা গেলাম ১ নম্বর কাউন্টারে যেখানে আমাদের বাস দাড়িয়ে ছিল। হাতে যেহেতু ৩০ মিনিট সময় আছে তাই ভাবলাম রাতের খাওয়াটা এখান থেকেই সেরে নেয়া ভাল। তাই জনৈক সায়দাবাদি ভাইকে বললাম আমরা রাতের খাওয়াটা এইখানে খেতে চাচ্ছি আপনি দেখেন বাস কখন ছাড়বে ঐ অনুযায়ী খাব। উনি বলল আপনারা নিশ্চিন্তে খান বাস আমাকে না বলে ছাড়তে পারবে না। উনার জন্ম সায়দাবাদে তাই ভাবলাম উনার হয়তো এখানে পাওয়ার আছে। আমারা পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে আস্তে ধীরে খেতে লাগলাম। উনি ১০.২ এর দিকে আমাদের সাথে দেখা করতে আসলেন আমাদের খাওয়া হয়েছে কি না জানতে। তখন আমাদের খাওয়া প্রায় শেষ উনাকে বললাম ভাই দেখেন বাস আছে কি না। উনার সেই আগের জবাব।তারপরও উনাকে পাঠালাম বাস দেখতে। একটু পর উনি হাপাতে হাপাতে এসে যা বললেন তাতে আমারা দারুনভাবে ধাক্কা খেলাম।বাস ১ নম্বর কাউন্টার ছেড়ে চলে গেছে। এখন আমরা কি করব? আমাদের ভ্রমনের স্বপ্ন কি অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে। অনেক কষ্ট করে একটা দিন ম্যানেজ করেছি।মন খারাপ হয়ে গেল। আমরা সবাই জনৈক সায়দাবাদিকে বকা ঝকা দিতে লাগলাম। উনি কিছু মনে না করে বললেন সামনের ২ নম্বর কাউন্টারে বাস থাকতে পারে তাই চলেন দৌড় দেই। কি আর করা দিলাম উসাইন বল্ট গতিতে দৌড়। কিন্তু ২ নম্বর কাউন্টারেও বাস পেলাম না। ২ নং কাউন্টারের লোক বলল ৩ নং কাউন্টারে পেতে পারেন। দিলাম দৌড় কে দেখে আমাদের সেই দৃশ্য কাঁদার ভিতর দিয়ে ৫ জন লোক উসাইন বল্ট গতিতে দৌড়াচ্ছে বাস ধরার জন্য। অবশেষে বিধি সহায় হইল ৩ নং কাউন্টারে বাস পেলাম। আমাদের আনন্দ দেখে কে। মনে হয় উসাইন বল্টও অলেম্পিকে সোনা জেতার পর এত আনন্দ পাই নাই। যাইহোক বাসে উঠলাম শুরু হল আমাদের সিলেট যাত্রা।
লেখাটা বড় হয়ে যাচ্ছে তাই বাকি টা আগামী পর্বে দিব। আগামী পর্বে রাতারগুল যাওয়ার কাহিনী , রাতারগুলের কিছু সুন্দর ছবি, রাতারগুল থেকে জাফলং যাওয়ার কাহিনী দিব। সাথে থাকুন।
২য় পর্বঃ
৩য় পর্ব বা শেষ পর্বঃ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৮