somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অফিস কামাই না দিয়েই ১ দিনের মধ্যেই ঘুরে আসুন সিলেটের অপূর্ব সৌন্দর্য মণ্ডিত স্থান রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট এবং জাফলং থেকে।(২য় পর্ব)

০৯ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পর্ব যেখানে শেষ করেছিলাম অর্থাৎ ঢাকা থেকে সিলেটের উদ্দেশে বাসে যাত্রা শুরু করেছিলাম তারপর থেকে এখন শুরু করছি।
প্রায় রাত ৪ টার দিক আমরা সিলেটে পৌঁছাইলাম। পৌঁছিয়ে আমরা যা দেখলাম তাতে আমদের মন আবারও খারাপ হয়ে গেল। বাইরে প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছে সাথে মাঝে মাঝে ঠাটাও পড়তেছে সমান তালে। জানেনই তো বাংলাদেশের ভিতর সিলেটেই সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। কোন রকম বাস থেকে নেমে দিলাম দৌড় পাশের একটা ভবনের সানসেটের নিচে দাঁড়ানোর উদ্দেশে। আমি বাদে বাকি সবাই ২৫% ভিজে গেছে। সৌভাগ্যক্রমে শুধু আমিই ছাতা নিয়ে গিয়েছিলাম।যাইহোক কোনরকম ভিজে ভিজে পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে গেলাম ফ্রেশ হতে এবং সকালের নাস্তাটা সেরে ফেলতে। গিয়ে জানতে পারলাম ঐ রেস্টুরেন্ট ২৪/৭ খোলা থাকে। সর্ব প্রথম জলত্যাগ পর্ব শেষ করলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার টেবিলে বসলাম। পরোটা আর রুটি ছাড়া তখন অবশ্য কিছু পাই নাই তাই ঐ গুলো দিয়েই ভোরের নাস্তা সেরে ফেললাম। দাম ঢাকার মতই। খাওয়া শেষ এখন রাতারগুলের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর পালা। আমাদের প্লান অনুযায়ী প্রথমে আমরা সিলেট থেকে মোটর ঘাট নামক একটা জায়গায় যাবো। আর ঐ মোটর ঘাটের পরই রাতারগুল। আমরা জানতাম সিলেট থেকে মোটর ঘাট যাওয়ার জন্য সিএনজি পাওয়া যায়। যাইহোক যেহেতু রাতারগুল আগে কখনও যাইনি এবং সিলেটও অত ভাল চিনি না ( এর আগে মাত্র একবার আসছিলাম সিলেটে শাহজালালে ভর্তি পরীক্ষার সময় তাও অনেক আগে) তাই কৌতূহলবশত রেস্টুরেন্টের মালিককে জিজ্ঞাস করলাম এখান থেকে রাতারগুল যাবো কিভাবে। আকাশে তখনও বজ্রপাত হচ্ছিল কিন্তু মালিকের উত্তর শুনে মনে হয় বজ্রপাত নয় পুরো আকাশটাই আমাদের মাথার উপর ভেঙ্গে পড়েছিল। উনি নাকি রাতারগুল ফাতারগুল নামের কোন জায়গা চিনেন না। সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার পর চিন্তা করলাম এইটা সিলেট তো। বৃষ্টির ভিতর অন্য কোথাও নেমে পড়িনি তো? রেস্টুরেন্টের নামের নিচে ঠিকানায় তো সিলেটই লেখা যাক বাচা গেল ভুল করিনি সিলেটই আসছি। মনে মনে ভাবলাম মালিক বেটা কিসছু জানে না খালি ব্যবসাই করে গেল আশেপাশের কোন খোঁজ খবরই রাখেনা। পরে জানতে পারলাম ঐ বেটার তেমন দোষ নেই কারন ঐ সময়ে খুব কম মানুষই এইটা সম্পর্কে জানত। যাইহোক আমার দুই কলিগকে পাঠালাম রাস্তার অপর পাশে সিএনজি ঠিক করতে আর আমরা ৩ জন ফ্রেশের ২ লিটারের ৪টা পানির বোতল কিনলাম পাশের দোকান থেকে। কিন্তু সমস্যা হল তখন রাত ৪.৩০ এবং বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই এই সময় সিএনজি পাওয়া দুস্কর। তবে সৌভাগ্য বশত ২-৩ মিনিট পর একটা সিএনজি এল আমার খুশিতে টগবগ করতেছি। ভাড়া যাইহোক আমরা যাবই। কিন্তু সিএনজি ড্রাইভার মোটর ঘাটে যাবে না কারন ঐটা নাকি অনেক দুরের রাস্তা তার উপর বৃষ্টি হচ্ছে। তাকে কোন ভাবেই আমরা রাজি করাতে পারলাম না। মনটা আবারও খারাপ হয়ে গেল। মনে হয় সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত যাওয়া হবে না। কিন্তু আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে এর ২ মিনিটের মাথায় আরেকটা সিএনজি হাজির। এবার অবশ্য অতটা খুশি হই নি কারন যদি না যায়। কিন্তু আবারও আমাদের অবাক করে দিয়ে সিএনজি ড্রাইভার রাজি হয়ে গেল। তবে ভাড়া একটু বেশি দিতে হবে কারণটা বুঝতেই পারতেছেন। স্বাভাবিক ভাড়া ৩০০ টাকা কিন্তু আমাদের দিতে হবে ৪৫০ টাকা। ড্রাইভার ভাড়া বলার সাথে সাথেই আমরা রাজি কত বলছে ভাল মতো শুনিনি পরে ড্রাইভারের কাছ থেকে জানতে পারি উনি ৪৫০ টাকা বলেছিল। যাইহোক রাতারগুলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু হল ভোর ৪.৪০ এর দিকে সিলেট থেকে। কিছুক্ষনের মধ্যেই শহর অতিক্রম করে গাড়ি গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু করলো। বাইরে তখনও বৃষ্টি হচ্ছে, ফজরের আযান পড়েনি তখনও , রাস্তায় কোন গাড়ি বা কোন মানুষকে দেখতে পেলাম না। একটু কেমন যেন ভয় ভয় করতেছে। একটা গাড়িও রাস্তায় নাই। আমাদের সিএনজি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে বৃষ্টিকে ভেত করে। আমদের দুই কলিগ ড্রাইভারের দুই পাশে বসেছে এবং বাকি আমরা তিন জন পিছনে বসেছি। যাকে বলে জায়গার প্রপার ইউটিলাইজেসন। আবারও সৌভাগ্যক্রমে আমি বসেছি তিন জনে মাঝখানে তাই বৃষ্টির পানি থেকে শুধু আমিই রক্ষা পেয়েছি বাকিরা ৭৫% ভিজে গেছে। যাইহোক কিছুক্ষন পর ফজরের আযান পড়ল তারপর একজন দুইজন মুসল্লির দেখা মিলল রাস্তায় যারা এই বৃষ্টির ভিতরও সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করতে অলসতা করে নি। পিচ ঢালা রাস্তা শেষ হবার পর শুরু হল ইটের রাস্তা , ইট শেষ হবার পর শুরু হল কাচা রাস্তা। এইবার তো সিএনজি বাবাজির প্রান যায় যায় অবস্থা। বৃষ্টির ভিতর কাচা রাস্তার অবস্থা কেমন হয় যারা দেখেছেন শুধু তারাই বলতে পারবেন। একটু পরেই কাঁদার ভিতর গাড়ি আটকে গেল। সিএনজি ড্রাইভার সুসংবাদ দিল আর যেতে পারবে না। কারন সামনে রাস্তার উপর হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে গেছে। কিন্তু সিএনজি তো কাঁদার ভিতর আটকে গেছে এখন ঐটাকে কাদা থেকে তুলতে হবে। সবাই নেমে পড়লাম সিএনজি তুলতে। ৫ জনে পুরো সিএনজিটাকে উঁচু করে তুলে ফেললাম কিন্তু অনেক কষ্ট হয়েছে তুলতে। সিএনজি ড্রাইভার হাত দিয়ে সামনে কিছু একটা দেখিয়ে বলল ঐ যে কয়েকটা ঘর দেখা যায় ঐটাই হল মোটর ঘাট। যা ঐখান থেকে প্রায় ১ কিঃমিঃ দূরে। যাইহোক ভাড়া মিটিয়ে উনাকে বিদায় করে দিলাম। অবশ্য উনার ফোন নাম্বেরটা রেখে দিয়েছিলাম যদি প্রয়োজন হয়। কিছুক্ষন পানির ভিতর দিয়ে এবং বৃষ্টির মধ্য দিয়ে হাটার পর পৌঁছে গেলাম মোটর ঘাটে। ছোট একটা ঘাট ১ টা মসজিদ, ১ টা প্রাইমারী টাইপের স্কুল আর ১ টা বা ২টা ঘর আছে হয়তো। ঘাটে গিয়ে দেখি ২-৩ জন মানুষ আর ১টা ছোট নৌকা বাধা আছে। তখন সকাল প্রায় ৭ টা বাজে। এত সকালে আর বৃষ্টির মধ্যে আমাদের আগে যে কোন টুরিস্ট আসেনি সেটা ততক্ষণে নিশ্চিত হয়ে গেছি। ঘাটে ১টা নৌকা দেখে সস্থির নিঃশ্বাস ফেললাম, ভাবলাম এইখান থেকে মনে হয় রাতারগুল যাওয়া যাবে। নৌকার মাঝি তো আমাদের দেখে খুশি এই ভেবে যে এই বৃষ্টির মধ্যে সকাল সকালে একটা খ্যাপ পেয়ে গেল। মাঝিকে বলা মাত্রই সামনে কিছু গাছ গাছালী দেখিয়ে বলল ঐ তো রাতারগুল। আমরা খুশিতে নাচানাচি শুরু করে দিলাম। অবশেষে আমাদের স্বপ্ন সত্যি হতে চলেছে। যেহেতু বৃষ্টি পরতেছিল তাই মোটর ঘাটের কোন ছবি দিতে পারলাম না বলে দুঃখিত। যাই হোক যেহেতু ঘাটে নৌকা মাত্র একটা তাই দামাদামি না করেই উঠে পড়লাম। নৌকাটা আমাদের ৫ জনের জন্য যথেষ্টই ছিল। একটু পরেই সামনের জলরাশি পার হয়েই ঢুকে পড়লাম বাংলাদেশের একমাত্র মিঠা পানির বন রাতারগুলে।
ঢুকার শুরুতেই কিছু ছবিঃ


আরও ছবিঃ




আরও ছবিঃ দেখুন গাছ গুলো কেমন সাপের মতো আকবাকা হয়ে আছে। মনে হয় না গহিন বন?


আরেকটা বিষয় আমরা যখন বনে যাই তখন আমরা ছাড়া আর কোন মানুষ বনে ছিল না তাই মজাটা বেশি হয়েছিল। বিভিন্ন রকমের গাছ দেখেছি তবে বৃষ্টির কারনে বক ছাড়া আর অন্য কোন পাখি নজরে আসে নি। অনেকের কাছে শুনেছি এই বনে নাকি অনেক সাপ আছে কিন্তু আমাদের চোখে একটাকেও দেখি নি। বৃষ্টির কারনে ক্যামেরা বের করে ছবি তুলতে সমস্যা হচ্ছিল। ছাতার ভিতর থেকে ছবি গুলো তোলা তাই একটু খারাপ হতে পারে।
আরও কিছু ছবিঃ







গহিন অরণ্যে একটু ফাকা জায়গাঃ



রাতারগুলের মধ্য দিয়ে যে খাল টি গোয়াইন নদীতে পড়েছেঃ


আসলে এখানকার সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বোঝানো যাবে না এটা কত সুন্দর। সময় হলে অবশ্যই ঘুরে আসবেন। আমরা প্রায় ২ ঘণ্টা ঐখানে ঘুরেছি। এরপর যাবো জাফলং।
জাফলঙ্গে যাওয়ার কাহিনী আজ লিখতে গেলে পোষ্ট অনেক বড় হয়ে যাবে তাই আগামী পর্বে লিখব রাতারগুল থেকে ফেরার কাহিনী, জাফলঙ্গে যাওয়ার কাহিনী এবং জাফলঙ্গের কিছু সুন্দর ছবি। সাথে থাকুন।
১ম পর্বঃ
৩য় পর্বঃ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×