somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রিকেল
প্রতিটি কবিতাই কবির শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত এবং প্রত্যেক শ্রেষ্ঠ মূহুর্ত এক করলেই সৃষ্টি হয় কবির জীবন। আপনি প্রেমে পড়ুন সেই শ্রেষ্ঠ মূহুর্তের। সত্যি কোরে একবার প্রেমে পড়ে দেখুন, কবিতার কাছে মাথা নত হয়ে আসবে আপনার; আপনি দায়গ্রস্ত হয়ে পড়বেন শব্দের কাছে।

নীলচিতা

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমার এক দুঃখী প্রেমিকা
আছে
আমি রোজ তাকে স্বপ্ন দেখি
মধ্যরাতে কথা বলি
প্রেমিকের মত
আমি যখন প্রেমে পড়ি
বিষণ্ণতার
আমি যখন স্বপ্ন দেখি মরে
যাবার
আমাকে শোনায় সে
রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ

তার কণ্ঠে লেখাছিল
পৃথিবীর দুঃখময় পংক্তি!

একদিন সমুদ্রের জলে গভীর অন্ধকারে আমি
তাকে চুমু খেয়েছিলাম
আমি তাকে উপহার
দিয়েছিলাম এক সমুদ্র-চুম্বন

সে ঘুমোতে চেয়েছিল
আমার কঠিন বুকে
আমি তাকে শুইয়ে
দিয়েছিলাম সমুদ্রতীরে

সমস্ত সন্ধ্যা ঝাউবনে
হেঁটেছিল একা একা!

জীবনে একবার সে বাতাস
কুড়িয়েছিল
জীবনে একবার সে মরে
গিয়েছিল

আমি তার দুঃখে একটা
সিগারেট জ্বালিয়ে ছিলাম
যার নাম রেখেছিলাম—
বিরহী আগুন!

আমি তাকে মায়ের শ্মশানের
পাশে ঘুমোতে বলেছিলাম
দিদির শ্মশানের পাশে আমি
তাকে ঘুমোতে
বলেছিলাম

আমি তার বুকের ভেতর একটা
শ্মশান রচনা করতে
চেয়েছিলাম
যেখানে পোড়ানো হবে
আত্মহত্যাকারী প্রেমিক-
প্রেমিকাদের

আমি তার বুকের ভেতর একটা
বাগান রচনা করতে
চেয়েছিলাম
যেখানে রোপণ করা হবে
পাঁচশো রঙের গোলাপ চারা

আমি তার বুকের ভেতর একটা
প্রাসাদ বানাতে
চেয়েছিলাম
যার মধ্যে বাস করবে পৃথিবীর
শ্রেষ্ট দুজন প্রেমিক-প্রেমিকা;
যাদের আমি দেখেছিলাম
আমার কবিতায়

বিষণ্ণ টাওয়ার আত্মহত্যার
এক অপূর্ব স্থান
কিন্তু আমার হাত টেনে ধরেন
মহামান্য ঈশ্বর

আমি সমুদ্রকে নালিশ করেছি
ঈশ্বরের নামে

আমি পাহাড়কে নালিশ
করেছি ঈশ্বরের নামে—
ঈশ্বর এক দ্রুত ধাবমান প্রাণী

তিনি মানুষকে দাঁড় করালেন
কাঠগড়ায়

কে তিনি?

বিজন দ্বীপে কবির সসম্মানে
মৃত্যু হোক

এপিটাফ গড়া হোক
প্রেমিকার চোখে
তাতে লেখা হোক
আত্মহত্যার কবিতা

রিকেলের কবিতা আবৃত্তি
কোরতে কোরতে যে
মেয়েটির মৃত্যু হবে ট্রেনের
নীচে
( এমন মহৎ বীভৎস মৃত্যু যদিও
কবি চান না )
আমি তার নামে উৎসর্গ
কোরে যাব আমার স্বর্গীয়
জীবন
আমি তার নামে উৎসর্গ
কোরে যাব আমার নারকীয়
মৃত্যু

মৃত্যুর পরে আর কোনো জীবন
থাকে কিনা আমি জানি না

মৃত্যুর পরবর্তী সাত মিনিট
আমি শুধু আমার প্রেমিকার মুখ
দ্যাখতে চাই

একজীবনে বহু রমণী আমার
প্রেমে পড়েছে
যাদের অনেকে আমার
কবিতা পড়েনি
যাদের অনেকে আমার নাম
শুনেনি
যাদের অনেককে আমিও
চিনি না
যাদের প্রত্যেককে আমার চুমু
খাওয়া হয়নি

একজীবনে এত নারী— এত
দুঃখ!
এত প্রেম— এত প্রেমিকা!
তাদের কি প্রেমিকা বলা
যায়?

আমি শুধু তোমাকেই ভালোবাসি প্রিয়তমা

তোমাকে মনে পড়লেই আমাকে ভুলে যাই
ভুলে যাই— আমারও জীবন আছে
প্রেম আছে, সঙ্গমের অধিকার আছে

বিশ্বাস করো আমি সব ভুলে থাকতে চাই
ভুলে থাকতে চাই জীবন আমারও আছে
আমি কেবল তোমাকেই মনে করতে চাই নীলচিতা

তোমাকে নিষ্ঠুর বোলতে চেয়ে আমি মরে যাই
তোমাকে ভালোবাসতে গিয়ে আমি মরে যাই

আমার প্রেমিকার চোখে
একটি মাউন্ট এভারেস্ট
সেখানে লেখা হয়
সহস্র পর্বত আরোহীর বরফছোঁয়া দুরন্ত
মৃত্যু

আমার প্রেমিকার চোখে এক
লক্ষ আইফেল টাওয়ার
শরতকালে পৃথিবীর শ্রেষ্ট
দম্পতি ভ্রমণে যান ওখানে

আমার প্রেমিকার চোখে
একটি নরোম কর্ণফুলি
আমি তার পাড়ে বসে
দ্যাখবো— জীবনের শেষ
সূর্যাস্ত

রোজ সন্ধ্যায় নিয়ম করে
নকশা আঁকি আত্মহত্যার
নকশায় জড়ো হয় আমার প্রেম
নকশায় লেখা হয় আমার কবিতা

আমি কবিতার কাছে
প্রার্থনা করি— আরও একটি
রাত আমি বেঁচে থাকতে
চাই
আরও একটি রাত

আমি একটি আত্মহত্যার কবিতা লিখতে চাই
বেঁচে থাকার একটি কবিতা লিখতে চাই প্রভু

ঝুলন্ত সেতুর মত আমার একটা
জীবন আছে
আমার মৃত্যুর পর যদি তোমার শখ
হয় ঝুলন্তযাত্রার
বাঁশখালী ইকোপার্কে তোমার
বিনয়ী নিমন্ত্রণ

একবার ভ্রমণ করে যেও
আমার ঝুলন্ত সেতু
একবার ভ্রমণ করে যেও
আমার বিষণ্ণ পাহাড়
একবার ভ্রমণ করে যেও
আমার নির্জন টাওয়ার

আমি উড়ে যাচ্ছিলাম
নির্বাসন জীবনে
আমি রেখে যাচ্ছিলাম
প্রিয়তমার সুন্দর মুখ

পেছনে বহু শোকার্ত রাত— এত
চোখ, এত অশ্রু!
আমি কি ভুলে যাব?

ব্রলিতে নিজেকে বেঁধে
চলন্ত বিমান থেকে নেমে
পড়েছি মহেশখালী
সেখানে আমার মায়ের কবর
সেখানে আমার মায়ের প্রেম

আমার কাছে আমার মায়ের
কোনো মুখ নেই!

আপনারা চেনেন আমার মাকে?
কোঁড়ানো চুল ফর্সা মুখ বিমর্ষ চোখ
যেনো একটি ইউরোপিয়ান বালিকা
সবুজ নারী

শুনেছি অদ্ভুত হৃদয় তাঁর
চেনেন আমার মাকে?
এক ঝড়ের ভোরে যিনি মারা
গিয়েছিলেন দুটি মুখ রেখে;
আপনারা চেনেন আমার
মাকে?
যিনি ছিলেন শামসুর
রাহমানের কবিতার লাইন
আপনারা চেনেন আমার মৃত
মাকে?

হে ধ্রুব এষ,
আমাকে একটা মুখ এঁকে দিতে
পারবেন আমার মায়ের?

কতকাল আমার মাকে দেখি
না!

দুঃখটা আমার নয় আমার প্রেমিকার
তিনি আমাকে ভালোবাসতেন মায়ের মতোন
শোকটা আমার নয় আমার প্রেমিকার
আমাকে সে দুঃখ দেয় প্রেমিকার মতো;
বিচ্ছেদ তাঁর নয় একান্ত কবির
কবি তাঁকে ভালোবাসেন কবিতার মতোন

তার দু'টি চোখ ছিল লিলিফুলের পাপড়ি
চোখে তার আশ্চর্য কোমল বিষাদের পাহাড়
তার চুলে হেমন্তের রোদ পড়লে আমি উন্মাদ হয়ে যাই
আমি মরে যেতে চাই প্রভু!

হে ধ্রুব এষ,
আমাকে একটা মুখ এঁকে দিতে পারবেন
আমার প্রেমিকার?

কতকাল আমি তাকে দেখি না!

হে জীবন
হে মৃত্যু,
তোমরা আমাকে উপহার দিতে পারো পথ
পথের দুঃখ
দিতে পারো সমুদ্রের মত গভীর অন্ধকার
মানুষের চলে যাওয়া আর ফিরে না আসার দুঃখ দ্যাখতে দ্যাখতে
আমি গতিহীন হয়ে পড়েছি
কবিতার শব্দে বোলতে চেয়েছি—
আমার প্রেমিকারও আছে দুঃখ
আমি তার গোপন অন্ধকার ছুঁয়ে মরে যেতে চাই

আকাশ হ'তে ঝরে পড়ে মেঘ

আমি ফুরিয়ে যাচ্ছি
ফুরিয়ে যাচ্ছি আমি
আমি ফুরিয়ে যাচ্ছি পাহাড়ের চূঁড়ায়
আমি মরে যাচ্ছি
মরে যাচ্ছি আমি
আমি মরে যাচ্ছি যুদাসের আড্ডায়

দিন আর রাতের মাঝে যেটুকু বিচ্ছেদ
যেটুকু দূরত্ব থাকে
সেটুকু অভিমান আর অহংকারের ঝুলি হাতে
নিঃশব্দে দুয়ার খুলে চলে যাবো

ঘুম ভাঙা বিশালের করুণ চোখে আমি আর ফিরবো না

মানুষতো দুঃখ বুকেই হারিয়ে যায়
দুঃখ রেখেই চলে যায় মানুষ

আকাশে এত অলৌকিক ফানুস
শাদা পায়রা আর প্রবারণার চাঁদ
আমাকে উন্মাদ কোরে দেয়
মাতাল কোরে দেয় আমাকে

চাঁদেরও যে রয়েছে অলৌকিক নিকোটিন
উজ্জ্বল আগুন বিমর্ষ আলো
চলো না নীলচিতা— আজ আমরা বিনামূল্যে নেশাগ্রস্ত হই?
জ্যোৎস্নায় মাতাল হওয়ার একটাই সুবিধে:
পয়সা লাগে না কবিতা লিখা যায়

প্রত্যেক কবির বুকে অসংখ্য ক্ষত এবং মৃত্যু থাকা প্রশংসনীয়;
আপনি যখন দাঁড়াবেন আত্মহত্যার মুখোমুখি
আপনার কবিতা পড়ার ইচ্ছে হওয়া উচিৎ—
আপনি বেঁচে যাবেন কিন্তু হারিয়ে ফেলবেন একটি চমৎকার শিল্প

এর অপরাধে কবিকে দুঃখ এবং সম্মান দেয়া উচিৎ

যদিও কবির কোনো প্রবঞ্চনা নেই
চলে যাবার কোনো দুঃখ নেই কবির
কবি এক বিষাদপ্রিয় মানুষ
আপনার উপহার যত দুঃখ হবে আঘাত হবে
কবির কবিতা হবে তত স্নিগ্ধ প্রেমময় শিল্প;
কবিকে একপাত্র দুঃখ দিন
কবি বেঁচে থাকুক দুঃখে আরও কিছু দিন
কবি বেঁচে থাকুক কবিতায় আরও কিছু কাল
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×