somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এরা কত জগন্য...!!!

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৃষ্টি আকর্ষন: Click This Link ফেসবুকের এ ইভেন্টির উদ্দেগে আগামী ১৮-০৭-২০১৪ রোজ শুক্রবার জুমার নামাজের পরে সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করা। ঢাকার বিক্ষোভ মিছিল শুরু হবে বায়তুল মোকারম থেকে বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন পর্যন্ত।

ইসারাইলের এই শিশুদের দেখুন যারা মিসাইলের গায়ে ফিলিস্তিনি শিশুদের মৃত্যু কামনা করে লিখে দিচ্ছে..


ইজরাইলি আগ্রাসনে এভাবেই মৃত্যু হচ্ছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর..




১।ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পর ফিলিস্তিনের কি অবস্থা দেখুন।


আপনাদের নিশ্চই ২০১২ সালের লন্ডল অলেম্পিকের কথা মনে আছে। এর লোগোটা খেয়াল করুন। দেখবেন এখানে স্পষ্ট করেই যায়ন(ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নাম) লেখা আছে:



আমেরিকার এক ডলারের নােটটি দেখুন, দাজ্জালের প্রোমোশন:



লন্ডন অলেম্পিকের মাসকটটি দেখুন। এখানে স্পষ্টই দাজ্জালের এক চোখকে প্রোমোট করা হচ্ছে:



যারা হলিউডের দ্যা ম্যাট্রিক্স ছবিটা দেখেছেন তারা নিশ্চই এটা খেয়াল করেছেন যে, পৃথিবীতে একমাত্র যায়ন ই টিকে থাকবে বলে দেখানো হয়েছে : http://en.wikipedia.org/wiki/Zion_(The_Matrix)

ইসলামের বিরুদ্ধে যু্দ্ধ : http://en.wikipedia.org/wiki/War_against_Islam

২। গত কয়েকদিন ফেসবুক সহ প্রায় অনলাইনের সর্বত্য ইসরাইলের বর্বর হামলার বিরুদ্দে লেখা লেখি হচ্ছে। সবচাইতে হাস্যকর ব্যাপার হচ্ছে কেউ কেউ ইসরাইলী পন্য ব্যাবহারের বিরুদ্ধে পোষ্ট করে তা আবার মুছে দিচ্ছে এই যুক্তিতে যে ইসরাইলী পন্য ছাড়া নাকি আমরা একেবারেই অসহায়। আবার কেউ আছেন যারা প্রমান করেতে মাঠে নেমেছেন যে, সব ইয়াহুদী ইসরাইলে থাকে না। তাই ইয়াহুদী পন্য নয় শুধুমাত্র ইসরাইলী পন্য বর্জন করা উচিত। তারা কি আদৈা যানেন না যে পৃথিবীর সকল ইয়াহুদীই ইসরাইলের নাগরিক। তারা প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষো ভাবে ইসরাইলকে সহায়তা করে। আরে ভাই যদি ইসরাইলী পন্য ছাড়া নই চলতে পারেন তবে যে সকল পন্যের বিকল্প আছে অন্তত সেই সকল পন্য ব্যাবহার করুন। যেমন ধরুন পেপসি, কোকাকোলা, মিরিন্ডা না খেয়ে মোজো খান।
২। আজকের ইজরাইল সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে আরো অনেক কিছুই জানতে হবে। কেননা এই ইজরাইল হঠাৎ করে একদিনে প্রতিষ্ঠা হয় নি। এর পেছনে রয়েছে অত্যান্ত জগন্য কিছু পরি কল্পনা। যারা দাজ্জাল সম্পর্কিত হাদীসটি জানেন তারা অবশ্যই জানেন যে দাজ্জাল হবে একজন ইয়াহুদী। এও জানেন দাজ্জালের এক চোখ অন্ধ থাকবে। সে শুধুমাত্র এক ছোখেই দেখবে।আপনি যদি চোখ কান খোলা রাখেন তবে আপনার চারপাশেই দেথতে পাবেন দাজ্জালের এই এক চোখের প্রোমোশন। সামুতেই এ সম্পর্কে অনেক পোষ্ট আছে:
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

৪। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্র্রতিক অস্থিরতা পৃথিবীব্যাপী উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু কেন এই অস্থিরতা, এর সাথে কারো পরিকল্পনা সক্রিয় কি না, এ বিষয়ে গভীর বিশ্লেষণ কমই হচ্ছে। ইরাক-ইরান যুদ্ধ, শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত সৃষ্টি, মিসরে সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা এবং এর পর নজিরবিহীন গণহত্যাÑ এসব ঘটনার পেছনের রহস্য গভীর অনুসন্ধানের দাবি রাখে। প্রকৃতপক্ষে মধ্যপ্রাচ্যে এখন যা কিছু ঘটছে তার অনেক কিছুই ঘটানো হচ্ছে একটি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। ১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল কাজ শুরু করা হয়। এর পর ১৯৬৭ ও ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল দু’টি যুদ্ধের পথ ধরে ১৯৭৯ সালে মিসর-ইসরাইল ক্যাম্পডেভিট শান্তিচুক্তি হয়। এর পর নেয়া হয় ১৯৮২ সালে ইনোন পরিকল্পনা আর ইরাক-ইরান দশকব্যাপী যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক অস্থিরতা তৈরি হয় একই ধারাবাহিকতায়। ইনোন পরিকল্পনায় কী রয়েছে? ইনোন পরিকল্পনা (Yinon Plan) হলো আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার জন্য ১৯৮২ সালে নেয়া ইসরাইলের কৌশলগত পরিকল্পনা। ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ওদেদ ইনোন (Oded Yinon) এই পরিকল্পনা তৈরি করেন। এর পর তেলআবিবের সব সরকার প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এই কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই পরিকল্পনায় বলা হয়, ইসরাইলকে তার কৌশলগত লক্ষ্য অর্জন করতে হলে চার পাশের আরব দেশগুলোকে উত্তপ্ত করে ুদ্র ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ভূরাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় ইরাককে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় কৌশলগত চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিশ্চিহ্ন করা হয়। এর পর ইনোন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইরাক-ইরান প্রায় দশককাল ধরে যুদ্ধ চলে। এই যুদ্ধের পর সাদ্দাম হোসেনের কুয়েত দখল এবং এর পর ইরাকে আমেরিকান আক্রমণে সাদ্দামের পতন হয়। এর পর দেশটিতে সূচনা হয় শিয়াপ্রধান শাসনের। শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্বের পথ ধরে এখন দেশটিতে প্রতিদিন বোমাবাজি ও সহিংসতায় শত শত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এর পাশাপাশি আরব জাগরণকে সমর্থন দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে কয়েকটি দেশে একনায়ক সরকারের পতন ঘটানো হয়। আর এর পথ ধরে সিরিয়ায় রক্তক্ষয়ী ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে এক লক্ষাধিক মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি মিসরে চলছে নানা রক্তক্ষয়ী ঘটনা। এ সব কিছুর পেছনে কলকাঠি নাড়াচ্ছে ইনোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারীরা। তবে তারা দৃশ্যপটের অন্তরালে থেকেই করছে এ কাজ। ২০০৮ সালে দি আটলান্টিক এবং ২০০৬ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর আর্মড ফোর্সেস জার্নালে মধ্যপ্রাচ্যের একটি নতুন মানচিত্র ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। এতে মধ্যপ্রাচ্যের বর্তমান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোকে একাধিক ভাগে বিভক্ত দেখানো হয়। মার্কিন সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল র্যা্লফ পিটার্স (Ralph Peters) ২০০৬ সালে ইনোন পরিকল্পনাকে ভিত্তি করে এই মানচিত্র এবং এ সংক্রান্ত একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন। ইনোন পরিকল্পনাকে সামনে রেখে করা কর্নেল পিটার্সের মানচিত্রে ইরাকের পাশাপাশি লেবানন, মিসর ও সিরিয়াকেও ভাগ করার কথা বলা হয়। এ ছাড়া ইরান, তুরস্ক সোমালিয়া ও পাকিস্তানকেও এই বিভক্তি পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুদানকে ইতোমধ্যে যে দুই ভাগ করা হয়েছে সেটি এ পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়েছে। এর পর লিবিয়াকে ভাগ করার কাজও এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। মূল পরিকল্পনায় উত্তর আফ্রিকার ভাঙনকাজ মিসর দিয়ে শুরু করার কথা বলা হয়। বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার জন্য মিসরসহ এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলোকে বিভক্ত করে দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করার কথা বলা হয় পরিকল্পনায়। বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষিত তৈরির জন্য এটি করা হচ্ছে। মূল ভিত্তি দু’টি দু’টি ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে ইনোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ করা হচ্ছে। এই দু’টির একটি হলো ইসরাইলকে টিকে থাকতে হলে দেশটিকে অবশ্যই আঞ্চলিক সাম্রাজ্যবাদী শক্তিতে পরিণত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, পুরো অঞ্চলকে নৃতাত্ত্বিক ও সম্প্রদায়গত পার্থক্যের ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ুদ্র রাষ্ট্রে পরিণত করতে হবে। আর এসব দেশের মধ্যে এমনভাবে বিরোধ-সঙ্ঘাত লাগিয়ে রাখতে হবে যাতে একপর্যায়ে এসব দেশের সরকার তাদের ক্ষমতা ধরে রাখতে কার্যত ইসরাইলের আশ্রিত রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সেই সাথে তাদের অবস্থা এমন যেন হয় যাতে তারা কোনো সময় ইসরাইলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে না দাঁড়াতে পারে। ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রথম যখন পত্তন হয় তখন এ ধারণাটি ছিল না। এটি ইনোন পরিকল্পনার মাধ্যমে গ্রহণ করে ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্যে এর পরের বিভিন্ন ঘটনা এবং সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক উন্নয়নের বিষয়টি সামনে রাখা হলে এটি স্পষ্ট হবে। বৃহত্তর ইসরাইলের স্বপ্ন ইসরাইলে বর্তমানে ক্ষমতাসীন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকারের লিকুদ পার্টি এবং দেশটির সামরিক ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের বড় অংশ বৃহত্তর ইসরাইলের ধারণায় বিশ্বাসী। ইহুদিবাদের প্রতিষ্ঠাতা তিইডর হার্জল মিসর থেকে ইউফ্রেটিস নদী পর্যন্ত ইসরাইলের সীমানা হবে বলে উল্লেখ করেছিলেন তার বইয়ে। ইহুদি রাব্বি ফিশকম্যান যে ইসরাইলের কথা তার বইয়ে লিখেছেন তার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন সিরিয়া ও লেবাননের একটি অংশকেও। ইরাকের বর্তমান পরিস্থিতি, ২০০৬ সালের লেবানন যুদ্ধ ও সাম্প্রতিক শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাত, ২০১১ সালের লিবীয় যুদ্ধ, সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি, মিসরের শাসন পরিবর্তন, নীল নদের উজানে ইথিওপিয়ায় বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগÑ এসব কিছুতে বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষণ দেখা যাবে। বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার এই প্রকল্পে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণকে বিমেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আরবদের বিরোধিতা এবং পশ্চিমের লোক দেখানো আপত্তির মুখে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের কাজ এখন অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলছে। মিসরে শাসন পরিবর্তনের নেপথ্য শর্ত হিসেবে এ ব্যাপারে উপসাগরীয় দেশগুলোর অনুমোদনের কথা বলা হচ্ছে। এর ফলে এক অর্থহীন শান্তি সংলাপে সম্মত হয়ে ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস ইসরাইলের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কার্যত সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। প্রক্সি রাষ্ট্র ও বিভাজনের এজেন্ডা বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় বেশ ক’টি প্রক্সি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও রয়েছে। তবে কোন কোন দেশকে এই প্রক্সি রাষ্ট্র বানানো হবে সেটি উল্লেখ করা হয়নি। কানাডার মন্ট্রিয়ালের সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড গ্লোবালাইজেশনের সমাজতাত্ত্বিক ও গবেষক মেহদি দারবিশ নাজেমোরায়া গ্লোবাল রিসার্র্চে লেখা এক নিবন্ধে এ ব্যাপারে বিস্তারিত ধারণা দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো তিনি আরব জাগরণের সূচনালগ্নে এর গতিপথ সম্পর্কে সম্ভাব্য যে ধারণার কথা বলেছিলেন তা এখন অনেকাংশে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক অতীতে বিশেষ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এই অঞ্চলের একমাত্র দেশ ইসরাইল আমেরিকার সর্বাত্মক সহায়তায় এর মধ্যেও তার স্থিতি বজায় রাখতে পারছে। অধিকন্তু চার পাশের দেশগুলোর অস্থির অবস্থা দেশটির প্রভাব সম্প্রসারণের কাজকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করছে। এতে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুসালেমে ইহুদি বসতি বিস্তারের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিতে পারছে ইসরাইল। এ ক্ষেত্রে দেশটির যা কিছু প্রয়োজন তা তার মিত্ররা সরবে বা নীরবে দিয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে আরব উপদ্বীপে তৈরি হয়ে আছে এক বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থা। এখানকার বংশপরম্পরায় শাসিত সব ক’টি আরব দেশের ভঙ্গুর শাসন টিকিয়ে রাখা আমেরিকান, ক্ষেত্র বিশেষে ইসরাইলের সাহায্য ছাড়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইসরাইলের সাথে অপ্রকাশ্য সম্পর্ক তৈরি করেছে অনেক আরব দেশ। এসব দেশের সরকারের সামনে টিকে থাকাটাই এখন মূল এজেন্ডায় পরিণত হয়েছে। জনগণের মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব আর তীব্র বণ্টন ও চাকরি বৈষম্য থেকে সৃষ্ট তীব্র অসন্তোষকে এখানকার বেশির ভাগ দেশে অনেকটা ছাইচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। এখানকার শাসক পরিবারগুলোর অভ্যন্তরীণ বিরোধও মাঝে মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিন্তু ক্ষমতা হারানোর অভিন্ন ভীতি তাদের আবার একই কাতারে নিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে মুরব্বির ভূমিকা পালন করছে সৌদি আরব। বাহরাইন ও ইয়েমেনে শিয়া বিদ্রোহ সৌদি সেনা হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দমন করা হয়েছে। এতে দেশ দু’টি এখন আমেরিকা ও সৌদি আরবের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে, যা তাদের সার্বভৌম অস্তিত্বের জন্য মোটেই সহায়ক হওয়ার কথা নয়। এখানে প্রধানত ইরানের শিয়াভীতিকে জাগিয়ে দিয়ে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃরাষ্ট্র ঐক্য ধরে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এর মধ্যেও মাঝে মাঝে বিরোধ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। সম্প্রতি সৌদি প্রিন্স খালিদ বিন সুলতানকে ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করার পর তাকে গৃহে অন্তরীণ রাখার আদেশ দিতে হয় বাদশাহ আব্দুল্লাহকে। দেশটিতে যেকোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভকে নির্মম দমনাভিযানের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হলেও মাঝে মধ্যেই প্রকাশ্যে বিক্ষোভের ঘটনা দেখা যায়। মুসলিম ব্রাদারহুডের বিপক্ষে মিসরীয় সেনাবাহিনীর নজিরবিহীন গণহত্যা সমর্থনের ঘটনায় সৌদি আলেমদের সাথেই শুধু রাজপ্রাসাদের বিরোধ দেখা দেয়নি; একই সাথে রাজপরিবারের বিদেশে থাকা অনেক সদস্য এ ব্যাপারে সৌদি রাজ অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন। ইনোন পরিকল্পনা ও পিটার্সের মানচিত্রে সৌদি আরবকে তিন ভাগে বিভক্ত দেখানো হয়েছে। মিসর ও সিরিয়ায় সৌদি আরব যেভাবে জড়িয়ে পড়েছে তাতে এই বিভাজনের ফাটলগুলো ক্রমেই বড় হতে শুরু করেছে। সৌদি রাজতন্ত্র এবং সৌদি আলেম সমাজ দেশটির দুই প্রধান শক্তি। ইসলামি অনুুশাসন, শিক্ষা, বিচার ও সমাজব্যবস্থায় রয়েছে সৌদি আলেমদের প্রভাব। অন্য দিকে সরকার ও প্রশাসন পরিচালনায় রয়েছে সৌদ পরিবারের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব। দুই পক্ষ একে অন্যের ব্যাপারে বড়ভাবে হস্তক্ষেপ সাধারণত করে না। এবার মিসরে সেনা অভ্যুত্থানের পর জেনারেল বেঞ্জামিন আল সিসি আল সৌদের (মিসরে এ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি) সেনা জান্তা যেভাবে অভ্যুত্থানবিরোধী গণ-অবস্থান নিশ্চিহ্ন করার নামে হাজার হাজার মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন এবং শত শত লাশসহ মসজিদ পেট্রল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়ার মতো অকল্পনীয় ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাতেও সৌদি বাদশাহর প্রকাশ্য সমর্থন কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না আলেমরা। সৌদি আরবের শীর্র্ষস্থানীয় ৫৬ জন আলেম এ ব্যাপারে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়ে রাজপ্রাসাদের অবস্থানের সাথে ভিন্নমত জানিয়েছেন এবং মিসরীয় সেনাবাহিনীর কাজকে পাপাচার বলে আখ্যা দিয়ে এর প্রতি ধিক্কার জানিয়েছেন। এই ঘটনায় সৌদি আরবে দুই শক্তিমান পক্ষের মধ্যে যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে এর ক্ষতি দেশটির শাসকেরা এখন কিছুটা উপলব্ধি করতে শুরু করেছেন। রক্তখাদক হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা জেনারেল বেঞ্জামিন আল সিসিকে সরিয়ে সেখানে আর কাউকে বসানোর মাধ্যমে মিসরে ব্রাদারহুডের সাথে সমঝোতার একটি প্রস্তাব নিয়ে এখন আলাপ আলোচনা হচ্ছে। মিসরের ঘটনাকে সমর্থন দেয়া এবং এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার বিষয়টি সৌদি আরবকে বিভক্ত করার ইনোন পরিকল্পনাকে এগিয়ে নেবে বলে অনেকে মনে করেন। অথচ মিসরের শাসন পরিবর্তনের জন্য দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা অভিন্নভাবে কাজ করেছে। ইনোন পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় পিটার্সের নিবন্ধে সৌদি আরবের মক্কা-মদিনা জেদ্দা সমন্বয়ে পবিত্র ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং একটি অংশকে ইয়েমেনের সাথে দিয়ে দেয়া আর বাকি অংশে সৌদি রাজাদের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি স্থান পায়। ইনোন প্লানের আওতায় পিটার্স যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন সে সম্পর্কে সৌদি নীতিনির্ধারকেরা অনবহিত সেটি নয়, তবে সৌদি রাজারা তাদের বাদশাহী শাসনের পথে ব্রাদারহুডের গণতন্ত্রকে বড় হুমকি মনে করে কট্টর এক অবস্থান নিয়েছেন। এতে অর্র্ধশত বছরের বেশি সময় ধরে ব্রাদারহুড ও সৌদি শাসকদের মধ্যে যে বোঝাপড়ার সম্পর্ক ছিল সেটি অবিশ্বাস ও শত্রুতায় পর্যবসিত হলো অল্প সময়ের মধ্যে। শেষ পর্যন্ত এতে চাঙ্গা হবে বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আরব দেশগুলোতে প্রক্সি সরকার প্রতিষ্ঠা করে রাখার বিষয়টি। আন্তঃসম্প্রদায় সঙ্ঘাত ইনোন পরিকল্পনার আওতার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আন্তঃসম্প্রদায় বিরোধ সঙ্ঘাত জিইয়ে রাখা। এর অংশ হিসেবে শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা শিখরে নিয়ে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে বিভক্তি ও সঙ্ঘাতময় এক অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। এ সঙ্ঘাতের দুই পক্ষের এক দিকের নেতৃত্বে রয়েছে সৌদি আরব আর অন্য দিকে রয়েছে ইরান। সৌদি আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর তীব্র আপত্তির মুখে আমেরিকা ইরাকে অভিযান চালিয়ে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটায়। সৌদি আরবের আশঙ্কা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হলে শেষ পর্যন্ত ইরাকের ওপর শিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হবে এবং ইরানের প্রভাব ইরাক, সিরিয়া হয়ে এক দিকে লেবাননে অন্য দিকে সৌদি আরবের উত্তরাংশের দাহরান এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। সেই উদ্বেগকে মার্কিন অভিযানের সময় আমলে নেয়া হয়নি, বরং মনে করা হয়েছে সৌদি নিরাপত্তা যত বেশি হুমকির মধ্যে থাকবে দাহরান অঞ্চলে আমেরিকান সেনা উপস্থিতির প্রয়োজন দেশটি তত বেশি উপলব্ধি করবে। সাদ্দামের পতনের কয়েক বছরের মধ্যে শেষ পর্যন্ত ইরাকে ইরানপন্থী এক শিয়া সরকারই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে সুন্নি ভাইস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দিয়ে তার বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আর ঠিক এর বিপরীতে আলকায়েদা নামিয়ে পুরো দেশেই সন্ত্রাস বোমাবাজিতে অস্থিরতার স্বর্গরাজ্য বানানো হয়েছে। এমনভাবে ইরাকে দুই পক্ষকে মুখোমুখি করা হয়েছে যেন নিজেদের অস্তিত্ব ও প্রাধান্য রক্ষার জন্য এক পক্ষ অন্য পক্ষকে নির্মূল করার লড়াইয়ে নেমেছে। এর অনিবার্য পরিণতি হলো পিটার্স ইরাককে সুন্নি ইরাক, শিয়া ইরাক ও কুর্দিস্তান এই তিন ভাগে ভাগ করার যে পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছিলেন তার বাস্তবায়ন। সিরিয়ায় আরব জাগরণ শুরু হওয়ার পর থেকে একই খেলা শুরু করা হয়েছে। একবার বিদ্রোহীদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র উপায়-উপকরণ দিয়ে বাশার সরকারকে কোণঠাসা করা হয়েছে। আবার হিজবুল্লাহ ও ইরানের মিলিশিয়ার সমর্থনে যখন বাশার সুসংহত হয়ে উঠেছে তখন রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অজুহাতে পশ্চিমা হামলার আয়োজন চলছে। ঠিক এ সময়ে ইসরাইল বলছে এই হামলার মাধ্যমে শুধু বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করলে হবে না। একই সাথে আলকায়েদাকেও নিশ্চিহ্ন করতে হবে। শেষ পর্যন্ত সিরিয়ার পরিণতিও যে সেই পিটার্সের পরিকল্পিত বিভক্তির দিকে যাচ্ছে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। মিসরে আরব জাগরণের সফল নাটকের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষকে জাগিয়ে দেয়া হয়েছে। নানা টানাপড়েন শেষে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ড. মুরসি সরকার গঠন করেন। কিন্তু তার সাথে শুরু থেকে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে রাখা হয় সেনাবাহিনী ও বিচার বিভাগের। শেষ পর্যন্ত সেনা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত ও নজিরবিহীন দমন অভিযান শুরু করা হয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুডের ওপর। এতে সেনাবাহিনীর কর্তৃত্ব কায়রোসহ কয়েকটি শহরে সীমিত হয়ে পড়েছে। আর দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব। এটিকে আরো এগিয়ে নেয়া হলে মিসর কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাবে। কায়রো ও আলেকজান্দ্রিয়াসহ আশপাশের অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন সরকার আর অন্য অঞ্চলে ইসলামিস্টদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা হতে পারে। অন্য দিকে সিনাইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর চরমপন্থীদের হামলার অভিযোগ এনে সেটিকে ইসরাইল আবার দখল করে নিতে পারে। ব্রাদারহুডের ব্যাপক লোকক্ষয়ের পরও তাদের প্রতিরোধ সশস্ত্র রূপ না নেয়ায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অবশ্য ব্যাহত হচ্ছে। ইনোন পরিকল্পনা অনুসারে মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে এক পক্ষকে আরেক পক্ষের সাথে এমনভাবে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে যে, তারা আপাতত নিজেদের জন্য পরস্পরের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতে লিপ্ত হয়েছে মনে হলেও তাতে বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা বাস্তবায়নেই অগ্রগতি হচ্ছে। যদিও সচেতনভাবে কোনো পক্ষই হয়তো এ কাজ করছে না। রহস্যময়তা রহস্যময় আলকায়েদা সংগঠনের তৎপরতাকেও বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এমনভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে, যার সাথে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান তৈরির সাথে যারা সংশ্লিষ্ট তারা সচেতন ছিলেন বলে মনে হয় না। পশ্চিমা বিশ্লেষকদের একটি অংশ মনে করেন, চরম ইসলামিক ভাবধারার কিছু আলেম ও ব্যক্তিত্বের সহায়তায় ওসামা বিন লাদেন এই নেটওয়ার্ক তৈরি করেন, যার সাথে সৌদি গোয়েন্দা সংস্থার পরোক্ষ সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলেও কেউ কেউ ধারণা করেন। তারা এ ক্ষেত্রে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন, আলকায়েদার মূল বক্তব্য হলো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েম করা যাবে না। সশস্ত্র¿ জিহাদের মাধ্যমে এটি করতে হবে। আলকায়েদার বক্তব্য ও লক্ষ্যবস্তু বিশ্লেষণ করে বিশ্বেষকেরা বলছেন, বিশ্বের মুসলিম স্বার্থের প্রধান শত্রু হিসেবে ইসরাইলকে চিহ্নিত করা হলেও আলকায়েদার লক্ষ্যবস্তু ইসরাইলকে করা হয়েছে এ রকম দৃষ্টান্ত তেমন দেখা যায় না। এর অপারেশনের লক্ষ্যবস্তু করতে দেখা যায় পশ্চিমা স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে। এতে পশ্চিমের সাথে ইসলামের শত্রুতা ও বৈরিতা তৈরি হচ্ছে, যা ইসরাইলের ইনোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই শেষ পর্যন্ত সহায়ক হচ্ছে। সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তে দেখা যায়, সিরিয়ায় এক দিকে আলকায়েদা অন্য দিকে হিজবুল্লাহ ও শিয়া মিলিশিয়ারা মুখোমুখি। সিনাইয়ে আলকায়েদা সংশ্লিষ্ট চরম ধারার সালাফিস্টরা নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালাচ্ছেÑ এই অজুহাত মুসলিম ব্রাদারহুডকে নির্মূল করার অভিযানে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরছে সেনা জান্তা। আলকায়েদা সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র গ্রুপ তিউনিসিয়ার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। আর তাদের হাতে দুই বিরোধীদলীয় নেতা নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটির ইসলামিস্ট আন-নাহদার কোয়ালিশন এখন পতনের কাছাকাছি এসে উপনীত হয়েছে। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে অনেকে বলছেন, আলকায়েদার তৎপরতায় যতটা না ইসলামি এজেন্ডার সংশ্লিষ্টতা দেখা যায় তার চেয়ে বেশি দেখা যায় সৌদি সংশ্লিষ্ট সুন্নি এজেন্ডার বাস্তবায়ন। ইরাক, লেবানন, সিরিয়া, পাকিস্তান, ইয়েমেন, বাহরাইনÑ সর্বত্র শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা এতে বাড়ছে। আর দূর থেকে হিসাব মেলাচ্ছেন বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদ্রষ্টারা।

৫। ১৯৪৯ সালের আর্মেস্টিক সীমান্ত চুক্তিতে প্যালেস্টাইনের একটি আপাত সীমানা নির্ধারণ করা হয়। যেটা ভবিষ্যতে প্যালেস্টাইনের সীমানা নির্ধারণকারী হবে। এ আর্মেস্টিক চুক্তিকে গ্রিন লাইন সীমারেখা বলা যেতে পারে। গ্রিনলাইন সীমারেখা প্যালেস্টাইনের সঠিক সীমারেখা চিহ্নিত করে। ইসরাইলের অব্যাহত আরব ভূমি দখলের কারণে ১৯৬৭ সালে ৫ জুন মিসর, জর্ডান ও সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের যুদ্ধ বেঁধে যায়। এ যুদ্ধের আগে ইসরাইল তার নির্ধারিত সীমান্ত অতিক্রম করে এবং পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয়। এরপর জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে নিজ নিজ ভূখণ্ড থেকে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শর্তে উদ্বাস্তুদের বাড়ি-ঘরে ফিরে আসার অনুমতি দেয়া, জেরুজালেম নিরস্ত্রিকরণ, আন্তর্জাতিককরণ ও ধর্মীয় স্থানের নিরাপত্তা এবং সেখানে মানুষের প্রবেশের নিশ্চয়তা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয় এবং ১৯৬৭ সালের যুদ্ধে আরব দেশগুলো থেকে দখলে নেয়া ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৭৯ সালে ইসরাইল ও মিসরের মধ্যে স্বাক্ষরিত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি প্যালেস্টাইনের স্বার্থহানি ঘটায়। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে বহির্বিশ্বের হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও নিজেদের বাড়ি-ঘর এবং সম্পদের অধিকার ফিরে পাওয়ার কথা বলা হয়।


যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত প্যালেস্টাইনিরা সংগঠিত হয়ে ১৯৮০ গঠন করে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও)। পিএলওর মাধ্যমে ইসরাইলি দখলদারিত্ব নির্যাতিত-নিপীড়নের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার হয়। ১৯৮০ সালে গৃহীত প্রস্তাবে পশ্চিম তীর, গাজা ও গোলান মালভূমিসহ দখলকৃত স্থানে নিজ দেশের জনগণের একাংশ ও নতুন অভিবাসীদের পুনর্বাসন করার ইসরাইলি নীতির নিন্দা জানানো হয়। ১৯৮৮ সালে শুরু হয় প্যালেস্টাইনিদের ‘ইন্তিফাদা’ (গণআন্দোলন)। ১৯৯০ সালে গৃহীত প্রস্তাবে পুরনো জেরুজালেমে রক্তাক্ত সহিংসতার পর প্যালেস্টাইনিদের নির্বাসিত করার ইসরাইলি সিদ্ধান্তের নিন্দা জানানো হয়। ১৯৯৩ সালে ইসরাইল ও পিএলওর মধ্যে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তি প্যালেস্টাইনিদের জন্য কিছুটা হলেও শান্তির বার্তা বয়ে এনেছিল। এ চুক্তির ফলে দুইটি দেশের দ্বন্দ্ব কিছুটা কমে এসেছিল। এ চুক্তির মাধ্যমে গাজা ও জেরিকোর অধিকার ফিরে পায় প্যালেস্টাইন। কিন্তু ইসরাইল একগুঁয়েমি ও তার চিরায়ত স্বভাব অনুযায়ী এ চুক্তি বাতিল করে আবার প্যালেস্টাইনের জনগণের ওপর জুলুম-নির্যাতন শুরু করে। ২০০২ গৃহীত প্রস্তাবে ইসরাইল-প্যালেস্টাইন দ্বন্দ্ব-যুদ্ধ অবসান ও দুই রাষ্ট্রের নিরাপদ ও স্বীকৃত সীমান্তের অধীনে পাশাপাশি অবস্থান করবে বলে মত দেয় জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো।


প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ১৯ নভেম্বর ২০১২ মিসরের রাজধানী কায়রোতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্যালেস্টাইন জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জনের লড়াই অব্যাহত রাখবে। এরপর ইসরাইল প্যালেস্টাইনে হামলা জোরদার করে। হত্যা করা হয় নারী, শিশুসহ বহু নিরপরাধ মানুষকে। এ বর্বর হামলা থেকে অসহায় নারী-শিশু এমনকি ১৫ মাস বয়সী শিশুরাও রক্ষা পায়নি। ইসরাইল চালিত এ হামলার নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন পিলার অফ ডিফেন্স’। প্যালেস্টাইনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের আত্মবিশ্বাসী ঘোষণার মাত্র ১০ দিন পর সদস্য দেশগুলোর ভোটের রায়ের মাধ্যমে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা পায় প্যালেস্টাইন। এর আগে ২০১১ সালের ৫ অক্টোবর জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন ইউনাইটেড নেশন এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স কো-অপারেশন (ইউনেসকো) জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য পদ পেতে প্যালেস্টাইনের দাবির প্রতি সমর্থন জানায়। এটাও প্যালেস্টাইনের আরেকটি কূটনৈতিক বিজয়।


এখানে একটি কথা বলতে হয় যে, অনেক বছর ধরে চলমান প্যালেস্টাইন সমস্যার জন্য যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট ইসরাইলের আগ্রাসী নীতি দায়ী ঠিক তেমনিভাবে আরব দেশগুলোর গাছাড়া ভাব ও অনৈক্য কম দায়ী নয়। অন্যদিকে হামাস ও ফাতাহ’র অনৈক্য ও হানাহানি প্যালেস্টাইন সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করেছে। বর্তমানে প্যালেস্টাইনের জনগণ হামাস ও ফাতাহ দু’ভাগে বিভক্ত। প্যালেস্টাইনের কেন্দ্রীয় পরিষদ (পিএনএ)। পিএনএর চেয়ারম্যান মাহমুদ আব্বাস। তিনি পিএলও কর্তৃপক্ষেরও প্রেসিডেন্ট। প্যালেস্টাইন কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় রামাল্লা’য়। হামাস ও ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীর ও গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষের হানাহানি ও ধ্বংসাত্মক তৎপরতা গোটা প্যালেস্টাইনের সাধারণ জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে দেয়। হামাস-ফাতাহ দ্বন্দ্ব ও প্রভাবশালী আরব দেশগুলোর স্বার্থপর ভূমিকা প্যালেস্টাইনিদের স্বাধিকার অর্জনের পথে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে আছে। স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই প্যালেস্টাইনের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একই সাথে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী আরব দেশগুলোকে পশ্চিমাদের স্বার্থের ক্রীড়নক না হয়ে প্যালেস্টাইনের পক্ষে নৈতিক ও কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করতে হবে। তবেই স্বাধীনতার পথে প্যালেস্টাইন দ্রুত এগিয়ে যাবে। প্যালেস্টাইন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির আশা করা দুরাশা মাত্র।

৬। বর্তমান ইহুদিরাষ্ট্র ইসরাইলের চরিত্র জানতে হলে ইহুদিদের মানসিকতা ও ধর্মীয় নির্দেশনা জানার বিকল্প নেই। এই অবৈধ রাষ্ট্রটির উৎপত্তি থেকে নিয়ে আজ অবধি মধ্যপ্রাচ্যে যা কিছু ঘটছে, এর সবকিছুর মূলে ইহুদিদের নিঁখুত পরিকল্পনা ও আপোষহীন বাস্তবায়ন কাজ করছে। কাজেই এ লড়াইয়ের শক্তি এবং পরিণতি জানতে হলে ইসরাইলের পূর্ণাঙ্গ চরিত্র সম্পর্কে সচেতনতা প্রয়োজন। কারণ, ইসরাইল প্রতিনিয়ত নির্বিচারে যেভাবে ফিলিস্তিনিদেরকে হত্যা করছে, এটা মোটেও কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পরস্পরায় প্রতিটি ঘটনা তাদের মূল পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরই অংশ। শুধু ফিলিস্তিন কেন, গোটা মধ্যপ্রাচ্য তথা আরববিশ্ব এবং বিশ্বমানচিত্র নিয়েও তাদের পরিকল্পনা এবং ঘৃণ্য চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষাস্তর থেকেই একটি ইহুদি শিশুকে শেখানো হয়, ইসরাইল এবং আশপাশের অঞ্চলগুলোতে যে আরবরা বসবাস করছে, তা ইহুদিদের একচ্ছত্র মালিকানা। আরব সম্পদ্রায় এখানে অবৈধভাবে বাস করছে এবং তাদের সবাইকে এক এক করে উচ্ছেদ করতে হবে।
ইহুদিদের ধর্মীয় নির্দেশনা এবং তাদের শরীয়ত ও আচার ব্যবহারের নীতিমালাগুলোকে তালমুদ বলা হয়। হাখামাতুল ইহুদিয়াহ নামেও এর নামকরণ করা হয়ে থাকে। এতে ইহুদিবাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিশদ বিবরণের পাশাপাশি তাদের ভবিষ্যত কর্মকাণ্ড সম্পর্কেও দিকনির্দেশনা দেয়া থাকে।
শুধু এটাই নয়, অন্য ধর্ম ও স¤প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্কের ব্যাপারে ইসরাইল ও ইহুদি সম্পদ্রায় যেসব নীতিমালা অনুসরণ করে থাকে, তা এর চেয়েও কড়া সা¤প্রদায়িক এবং বিদ্বেষপূর্ণ। এর সামান্য আঁচ পাওয়া যায় ১৯৫৬ সালে গুরিয়ুনের উক্তিতে। তিনি বলেছিলেন, যে করেই হোক তাওরাতে বর্ণিত সীমারেখা অনুযায়ী নবী দাউদ এবং নবী সুলায়মানের রাজ্যসীমানা নিয়ে নতুন করে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
অতীতনির্ভর সেই ইহুদি রাজ্যের সীমানা কতদূর? এ নিয়ে ইহুদি পণ্ডিতদের মধ্যে সামান্য দ্বিমত থাকলেও মোটামুটি সীমারেখার যে চিত্র পাওয়া যায় তাতে দেখা যাচ্ছে, সিনাই উপত্যকার পুরোটা এবং মিসরের কিছু অংশ- যা নিম্নভূমি পেরিয়ে কায়রোর দক্ষিণ উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত, ওদিকে পুরো জর্ডান এবং সৌদিআরবের কিছু অংশও, আরেকপাশে কুয়েত এবং তা পার হয়ে ইরাকের ফোরাত নদীর দক্ষিণ তীর পর্যন্ত, অন্যদিকে সিরিয়া, লেবানন এবং তুরস্কের বিরাট অংশও এ স্বপ্নসীমানার অন্তর্গত।

৭। অতএব যে করেই হোক সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে এক হতে হবে এ ইহুদীদের বিরুদ্ধে। সামান্য অজুহাতে তারা ফিলিস্তিনের হাজার হাজার মানুষ হত্যা করতেছ আর আরব বিশ্বে এত সম্পদ থাকার পরও তারা কোন টু শব্দ প্রয্যন্ত উচ্ছারন করার সাহস পাচ্ছে না। আজ ফিলিস্তিনের হাজার হাজার শিশু মারা যাচ্ছে, কোথায় সেভ দ্যা চিল্ড্রেন? কোথায় জাতিসংঙ্ঘ? মুসলিমদের একটি সতন্ত্র সংস্থা ওআইসি আজ কোথায়?
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×