লোপার হাতে পৈত্রিক জান খানি খোয়াইতে নিয়া যে ধাক্কা আমি খাইয়াছিলাম, উহা সামলাইয়া উঠিতে সময় লাগিয়াছিল অনেক। মূলতঃ ওই সময় হইতেই আমি কন্যা প্রজাতীকে ভয় পাইতে আরম্ভ করি। বুঝিতে পারি উহারা হাসি মুখে মানব হত্যা করিতে পারে
যাহা হোক, বগুড়া হইতে পলায়ন করিয়া আমি পিতামাতার সহিত নাচিতে নাচিতে ঢাকা শহরে পুনরাগমন করিয়া আপন বাড়ী হইতে ভাড়াটিয়া খেদাইয়া দিয়া কল্যানপুরে স্থায়ী হইলাম। কিন্তু কন্যা প্রজাতীর উপর প্রবল ভয় আমাকে উহাদের ত্রিসীমানায় গমন করা হইতে বিরত রাখিয়াছিলো। কিন্তু ওষ্ঠের উপরিভাগে সদ্য জন্ম লওয়া গুম্ফরাশীতে আয়নার সামনে দাড়াইয়া 'তা' দিতে দিতে মাঝে মাঝে বক্ষপিঞ্জরের অন্তস্থলে একাকিত্বের হু হু বাতাসের শব্দ শুনিতে পাইতাম আর মনে মনে একটি সুকোমল লাবন্যমাখা মুখের সুখচিন্তায় নিজেকে বিলীন করিতাম। কিন্তু এলাকার হার্টথ্রুব লিপি এবং শিল্পির বাসার ছাদে দাঁড়াইয়া ঘুড়ি উড়াইতে গিয়া কখনই মুখ ফুটিয়া বলিতে পারিনাই যে তোমাদের দুই ভগ্নীকেই আমার অতিশয় পছন্দ। যদিও তাহাদের দুইজনের পাঠানো নানাবিধ উপহার সামগ্রী এবং চোখের ভাষার অর্থ আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম, তথাপি সেই আমন্ত্রনের সমুচিত জবাব প্রদানে সমর্থ হইনাই কখনই
এমনিভাবে বৎসরাধিক কাল অতিক্রান্ত হইবার পরে পিতাজীর পোষ্টিং হইলো দিনাজপুরে। এই খবরে আমি অতিশয় আনন্দিত হইয়াছিলাম এই ভাবিয়া যে ঢাকা হইতে আগত ইসমার্ট ও কিউট চশমাধারী বালকটির জন্য দিনাজপুর নামক মফস্বল শহরের তাবত কন্যারা হুমরি খাইয়া পরিবে, কাজেই এইবার আমার প্রেম না হইয়াই যায়না :!> :!> কাজেই দ্রুত গাট্টি বোঁচকা বাঁধিয়া, লিপি শিল্পির কাল্পনিক বাহুবন্ধন হইতে নিজেকে মুক্ত করিয়া দ্রুত দিনাজপুরের পথে রওয়ানা হইয়া গেলাম।
৩ মাস অতিক্রান্ত হইবার পর দিনাজপুর শহরের কালীতলাস্থ বাসভবনের দোতলার ছাদে পানির ট্যাঙ্কের উপর বসিয়া গভীর রাত্রীতে একদা আমার বক্ষ বিদির্ণ করিয়া দীর্ঘশ্বাস নির্গত হইল এই ভাবিয়া যে - তিনটি মাস চলিয়া গেল, তবুও আমার প্রেম হইলোনা, এমনকি গার্লস স্কুলের সামনে নিয়মিত মহড়া দিয়াও প্রেম করার উপযুক্ত কোন কন্যার মোনযোগ আকর্ষন করিতে আমি ব্যার্থ হইলাম
ভগ্ন হৃদয়ে কিছুকাল প্রেমবিহীন সময় কাটানোর পরে একদা ভগ্নীর পুতুল বিবাহ উপলক্ষে বাসায় উহার বান্ধবীদের আগমনে পুনরায় চার্জিত হইয়া উঠিলাম। কিন্তু আড়াল হইতে উহার পিচ্কি সব বান্ধবীদের চেহারা সুরত অবলোকন করিয়া আমার হৃদয় আবারও ব্যাথিত হইয়া উঠিলো, প্রেম করিবার জন্য উহারা অতিশয় ক্ষুদ্র এবং চেহারা ছবিও আশানুরুপ সৌন্দর্যমন্ডিত নহে
উহার পরে মাঝে মাঝেই আমি আমার ভগ্নীকে খোঁচাইয়া কোন কারন ছাড়াই উহার বান্ধবীর সহিত সাক্ষাতে অনুপ্রানীত করিতে লাগিলাম এবং বাইক সহযোগে উহাদের বাসায় যাইয়া ভগ্নীকে নামাইয়া দিয়া উহাদের বাসার সামনে দিয়া ঘোরাঘুরির সুযোগ সৃষ্টির প্রয়াশ পাইলাম
কিছুকাল পরে একদা সকালে প্রাইভেট হইতে বাসায় ফিরিয়া বাসায় কাউকে দেখিতে না পাইয়া আপন ঘরে আসিয়া মাতৃদেবীর পত্র পাইলাম যাহাতে তিনি আমাকে অতি দ্রুত দিনাজপুর শহর হইতে কিছু দূরে অবস্থিত রাম সাগর নামক স্থানে চলিয়া আসিতে আদেশ করিয়াছেন। আমি অনিচ্ছা সত্বেও শুন্য গৃহে চরম সাউন্ডে সঙ্গীত শ্রবনের আকর্ষন পরিত্যাগ করিয়া রাম সাগরে বাইক লইয়া গমন করিলাম। আমি জানিতামনা যে সেইখানে আমার জন্য কি চমক অপেক্ষা করিতেছে। উক্ত স্থানে পৌছাইয়া দিঘীর একপ্রান্ত হইতে অন্য প্রান্তে সন্তরনরত রাজ হংসীর ন্যায় ধবধবে সাদা পরিচ্ছদে সুসজ্জিতা চম্পাকে আবিষ্কার করিয়া আনন্দে আত্মহারা হইলাম। কাছে গিয়া দেখিতে পাইলাম যে মাতৃদেবী আমার ভগ্নীর বান্ধবীকুলকে লইয়া পিকনিকে মাতিয়াছেন, সেই কারনেই এত আয়োজন। সেই সময়ে মাতৃদেবী রান্নাবান্নায় এবং ভগ্নী ও তাহার বান্ধবীকুল কোন একটি খেলায় ব্যাস্থ ছিলো বলিয়া চম্পা আমাকে সকালের নাস্তা পরিবেশন করিলো। হঠাৎ আমার মাথায় খেয়াল চাপিল যে আজিকে আমি চম্পাকে লইয়া বাইকে রাম সাগর ভ্রমনে বাহির হইব। এই কথা উহাকে বলা মাত্র চম্পা লজ্জায় আরক্ত হইলো, মুখে না বলিলোনা, কিন্তু বাইকে বসিতে সঙ্কোচ করিতে লাগিল। এমন অবস্থায় মাতৃদেবী আগমন করিয়া অবস্থা বুঝিয়া চম্পাকে বলিলেন - যাও না, ঘুরে আসো ওর সাথে
পিতার বেরশিক বড়কর্তার কল্যানে কয়েকমাস পরেই আমরা কুড়িগ্রাম চলিয়া যাইতে বাধ্য হইয়াছিলাম, এবং আমার চম্পা পর্বের অকাল পরিসমাপ্তি ঘটিয়াছিল। ভালবাসা কি তাহা চম্পা আমাকে তেমন ভাবে বুঝাইতে পারেনাই, যাহা আমি কুড়িগ্রামে সম্পার প্রেমে পড়িয়া হাড়ে হাড়ে টের পাইয়াছিলাম।
পরের পর্বঃ আমার প্রেমিকারা - সম্পা পর্ব
আগের পর্বঃ
আমার প্রেমিকারা - ইলোরা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - হুমায়রা পর্ব
আমার প্রেমিকারা - জেনী পর্ব
আমার প্রেমিকারা - কাঁকন পর্ব
আমার প্রেমিকারা - লোপা পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




