somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

ব্রিটেনের আফিম বানিজ্য আর ভারতের ফেন্সিডিল বানিজ্য

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্রিটিশ শাষনের আর্থিক ভিত্তি মুলত আফিম বানিজ্যর ওপ্র ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠীত। ঔপন্যাসিক অমিতাভ ঘোষ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট। বহু বছর খেটেখুটে তথ্য উপাত্ত নিয়ে লিখছে Sea of Poppies. বিবিসি কে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ব্রিটিশ শাষিত ভারত সরকারের রাজস্ব আয়ের শতকরা ১৭-২০ ভাগ আসত সরাসরি আফিম থেকে। ১৯২০ দশকেও এ বানিজ্য রমরমা অবস্থা ছিল। মূল আমদানিকারক ছিল চীন। ভারতীয় আফিম বানিজ্যর আন্তর্জাতিকীকরন কোম্পানী সরকারের হাতে। ১৭৮০ সালে ওয়ারেন হেষ্টিংস চীনের সঙ্গে আফিম বানিজ্যর সিদ্বান্ত নেন। রফতানীকারক হিসাবে তখন ও চীনের সুখ্যাতি ছিল কিন্তু আমদানী কারক হিসাবে মোটেও আগ্রহী ছিলনা।

আফিম বানিজ্য তরী
ফলে চীনের সাথে ব্রিটেনের বানিজ্য ভারসম্য বরাবরই চীনের অনুকূলে। চীনে আফিমের বাজার ছিল। ধুরন্ধর হেষ্টিংস ভালই বুজছিলেন যে অষুধের প্রস্তুতি হিসাবে হোক আর নেশাকারক হিসাবে হোক যদি আফিমের রপ্তানী চীনে বাড়ানো যায় তা হলে ভারত থেকে আফিম রপ্তানী করে আন্তর্জাতিক বানিজ্য চীনের সাথে বিরাজমান ভারসম্য রক্ষা করা যাবে। ওয়ারেন হেষ্টিংস আফিম ভর্তি ছোট জাহাজ নিয়ে চীনে পৌছে ১৭৮০ সালে। তারপর চাহিদা বেড়েই চলে।১৭৮০ থেকে ১৮১০ সাল পর্যন্ত চীনে রফতানির প্রায় পুরো আফিম বাংলায় উৎপন্ন হয়।

আফিম বানিজ্যর তথ্য উপাত্তঃ
1. ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আফিম বানিজ্যর প্রধান বাহক। ডাচ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৬৬০ সালে ভারত থেকে আমদানী করেছে ০.৬ মেট্রিক টন আফিম। ২৫ বছর পর আমদানির বার্ষিক পরিমান ৭২.৩ মেট্রিক টন।
2. ১৭২০ সালে ভারত থেকে চীনে রফতানী করা হয় ১৫ মে.ট ১৭৭৩ সালে এই পরিমান দাড়ায় ৭৫ মে.ট
3. ১৭৭৩ সালে পাটনা ভিত্তিক আফিম সিন্ডিকেট ভেঙ্গে কোমাপানি একক ভাবে এ অধিকার লাভ করে।
4. ১৮৩০ সালে বাংলার ৯০ হাজার একর জমি পপি আবাদ হত। ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কল্যানে ১৮৪০ সালে পপি আবাদ হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার একর। ১৯০০ সালে এ হিসাব ৫ লাখ একর।
5. এক পর্যায়ে ভারতে আফিম আবাদ বাবদ ৫৭ লাখ হেক্টর জমি অধিগ্রহন করা হয়। বল পূর্বক বিহার ও সংলগ্ন এলাকা কোম্পানী খাদ্যশষ্য আবাদ বন্ধ করে পপি চাষ প্রায় বাধ্যতামূলক করা হয়। এক পর্যায়ে হাউস অভ কমন্সে আবেদন পৌছে এই আফিম চাষে সরকারের বাধ্যতামূলক ও নিবর্তন মূলক আচরনের অবসান চাই। বর্তমান গবেষনায় ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের অন্যতম কারন হিসাবে আফিম চাষের সম্পৃক্ততা খুজে পাওয়া গেছে।
6. ১৮৩৯ সালে চীন আফিম বানিজ্য নিষেধাজ্ঞা ঘোষনা করে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার অবৈধ চোরাচালান উৎসাহিত করে। ব্রিটীশ সরকারের এই অবৈধ কর্মকান্ডের জন্য চীনের সাথে ঐতিহাসিক “ওপিয়াম ওয়ার” হয়। চীন পরাজিত হয়ে ব্রিটেনের সাথে অসম চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

7. ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সাফল্যকে সন্মান করেই বলছি যদি আফিম থেকে ব্রিটেনের অবৈধ আয় বন্ধ না হত তবে ঔপেনিবেশ শাষন গুটিয়ে যেতে আরো সময় লাগত।

আফিমের প্রসার ব্রিটেন সরকার ভালভাবেই বাংলায় করেছিলেন। সিরাজুল ইসলামের “বঙ্গসমাজে”র উদ্বৃতি দিয়ে “ আপনার উদ্দ্যেশ্য রাখা আফিম অনুগ্রহ করে গ্রহন করুন” ধরনের অনুরোধ শিক্ষিত সমাজে সাধারন ছিল।

সেই ব্রিটেন নেই সেই কোম্পানী ও নেই, নেই আফিম চাষের রমরমা অবস্থা কিন্ত এসেছে তার থেকেও ভয়াবহ মাদক ফেন্সিডিল, ইয়াবা। আজকের ভারত যেন সেই পূর্ববর্তী ব্রিটেন, ফেন্সিডিল যেন আফিম আর আমরা যেন আসহায় চীন জাতি। যাদের শুধু আফিমের নেশায় বুদ করে তাদের যুদ্বে পরাজিত করছিল। আমাদের সীমান্তে ফেন্সিডিলের কারখানা গূলোর বহাল তবিয়তে অবস্থান প্রমান করে ইন্ডিয়া এ দেশে মাদক অগ্রাসন চালাচ্ছে। শুনি আজ নাকি যুব সমাজের কোন অনুষ্ঠান ফেন্সিডিল ছাড়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়না।

আমি খুব অবাক হয়ে ভাবি সামুর ব্লগাররা ধর্ষন, নারী স্বাধীনতা নিয়ে এত সোচ্চার সেখানে আমাদের যুব সমাজ যে ড্রাগ ওয়ারে ইন্ডিয়ার কাছে পরাজয়ের সন্মুখীন তা কেউ কি ভাবছেন? আমাদের জজ, সেনাবাহিনীর অফিসাররা আজ ফেন্সিডিলসহ ধরা পড়ে, থানায় ফেন্সিডিল বিক্রি হয় । এ গুলো আমার কথা না পত্রিকার কথা। পুলিশের আয়ের আন্যতম উপাদান ফেন্সিডিল।

সূত্রঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Opium_Wars
“Sea of Poppies” by Amitav Ghosh.
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৫১
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×