somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ক্রিস্টোফার কলম্বাস সম্পরকিত কিছু অজানা তথ্য

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্রিস্টোফার কলম্বাস, হয়ত
ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত অভিযাত্রী।
তাকে নিয়ে হাজারো গল্পগাঁথা এমনভাবে
ডালপালা মেলেছে যে তা থেকে সত্য মিথ্যা আলাদা
করা দুষ্কর। এত বিখ্যাত
একজন অভিযাত্রীর জীবন ও
অভিযান সম্পর্কে অনেক সত্য
হয়তো আপনিও জানেন না।
সেগুলোর কয়েকটি নিয়েই এই
লেখা।

১) ক্রিস্টোফার কলম্বাসের
আসল নাম ক্রিস্টোফার কলম্বাস নয়
ক্রিস্টোফার কলম্বাস শুধুমাত্র তার নামের
ইংরেজিকরণ। তার আসল
নাম ধারণা করা হয় ক্রিসতোফোরো কলম্বো।
প্রতিটি ভাষাই আলাদা আলাদাভাবে তার নামের
পরিবর্তন ও বিকৃতি ঘটিয়েছে, যেমন, স্প্যানিশে তার নাম ক্রিস্তোবাল
কোলোন। তার উৎপত্তির
কোনো নথি বা প্রমান না
থাকায় ক্রিসতোফোরো
কলম্বো নামটিও তার মূল
নাম কিনা এ বিষয়ে
গবেষকদের সন্দেহ রয়েছে।


২) তার ঐতিহাসিক
অভিযান প্রায় পণ্ডই হয়ে
গিয়েছিল
কলম্বাস বিশ্বাস করতেন
পশ্চিমে অভিযান করে
এশিয়া পৌঁছানো যাবে,
কিন্তু এজন্য দরকার বিপুল
পরিমাণ অর্থ সাহায্য। এই
সাহায্য তাকে একমাত্র
ইউরোপের কোনো শাসকই
দিতে পারে। অর্থ সাহায্য
পাওয়ার অভিপ্রায়ে এক
দেশ থেকে আরেক দেশের
শাসকের দ্বারে দ্বারে
ঘুরেছেন বহুবছর। পর্তুগাল সহ
আরো অনেক দেশের শাসক
তাকে খামখেয়ালি পাগল
ভেবেছিলেন, তার কোনো
আবেদন এককথায় গ্রাহ্যই
করেন নি। স্পেনের
ইসাবেলা আর
ফার্দিনান্দের দরবারেও
তিনি কয়েক বছর অর্থ
সাহায্যের আশায় ঘুরেছেন।
শেষে মনোবল হারিয়ে
ফ্রান্সের দিকে যখন যাত্রা
করছিলেন, তখনই সুসংবাদ
পান যে, তার অভিযানের
আবেদন গ্রহণ করেছেন
ইসাবেলা ও ফার্দিনান্দ।

৩) প্রতারণা করেছিলেন
কলম্বাস
১৪৯২ সালের সেই বিখ্যাত
অভিযানে কলম্বাস
বলেছিলেন, যে ব্যক্তি
সবার আগে মাটির দেখা
পাবে তাকে তিনি স্বর্ণ
উপহার দেবেন। রদ্রিগো ডি
ট্রিয়ানা নামের এক
নাবিক ১২ অক্টোবর ১৪৯২
সালে প্রথম মাটির দেখা
পান। স্থানটি ছিল বর্তমান
দিনের বাহামার একটি
ছোট গ্রাম। বলা বাহুল্য,
বেচারা রদ্রিগো নিজের
পুরষ্কার কখনো পাননি। এই
কৃতিত্বও কলম্বাস নিজের
নামের পাশে যোগ
করেছিলেন। কলম্বাস বলেন,
আগের রাতে তিনি ঐ স্থান
থেকে আলো দেখতে পান,
কিন্তু যেহেতু আলো অস্পষ্ট
ছিল, তাই কাউকে কিছু
জানাননি তিনি। কলম্বাস
রদ্রিগোর এই আবিষ্কারের
স্বীকৃতি না দিলেও তার এই
আবিষ্কারের একটি সুন্দর
ভাষ্কর্য আছে সেভিলের
পার্কে।

৪) তার অভিযানের একটি বড়
অংশ জুড়ে ছিলে দুর্যোগ
কলম্বাসের বিখ্যাত ১৪৯২
সালের অভিযানের প্রধান
জাহাজ সান্তা মারিয়া
হঠাৎ একদিন অগভীর পানির
চরে আটকে যায়। চর থেকে
ছাড়িয়ে নেওয়ার আগেই
পানি ঢুকে ডুবে যায়
কলম্বাসের সাধের সান্তা
মারিয়া। কলম্বাস সহ ৩৯
জনকে জায়গা নিতে হয় লা
নেভিদাদে। কলম্বাস
ভেবেছিলেন, নতুন এই
মহাদেশ থেকে তিনি
জাহাজভর্তি মসলা, মূল্যবান
সামগ্রী আর বাণিজ্যের নতুন
বার্তা নিয়ে স্পেনে
ফিরবেন। কিন্তু তিনি
স্পেনে ফিরলেন অনেকটাই
খালি হাতে, তার
দায়িত্বে থাকা সবচে’
মূল্যবান তিনটি জাহাজ
হারিয়ে! চতুর্থ যাত্রায়
আবারো তার জাহাজটি নষ্ট
হয়ে যায়। এ সময় তিনি ও
তার সাথে আসা লোকজন এক
বছর জ্যামাইকাতে
পানিবন্দি হয়ে কাটান।
৩ এপ্রিল ২০১৮
চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুমিল্লা,
বগুড়া ও যশোর জেলার
নামের ইংরেজি বানানের
পরিবর্তন
২১ মার্চ ২০১৮
যখন ফোন না ব্যবহারের
জন্য পুরষ্কার দেয় মোবাইল
অ্যাপ

৫) কলম্বাস ছিলেন নির্মম
গভর্নর
নতুন বিশ্ব খুঁজে পাওয়ার
পুরষ্কার হিসেবে
ফার্দিনান্দ আর ইসাবেলা
কলম্বাসকে নতুন পত্তনি
সান্তো ডমিংগোর গভর্নর
করে দিলেন। কলম্বাস
দিগ্বিজয়ী অভিযাত্রী
হলেও গভর্নরের দায়িত্ব
পালনের সময় তার কুৎসিত রূপ
বেরিয়ে আসে। তিনি হয়ে
ওঠেন এক দুর্দান্ত শোষক।
তিনি আর তার ভাইয়েরা
মিলে নাগরিকদের উপর
জোর-জবরদস্তি করে তাদের
ব্যবসা বাণিজ্যের
বেশিরভাগ লাভ দিয়ে
নিজেদের কোষাগার ভর্তি
করেন। দিন দিন এই অঞ্চলের
মানুষেরা তার উপর বিরক্ত
হয়ে উঠছিল। অবস্থা এতটাই
বেগতিক হয়েছিল যে
স্পেনের শাসনকেন্দ্র থেকে
কলম্বাসের জায়গায় নতুন
গভর্নর পাঠানো হয়।
কলম্বাসকে গ্রেফতার করে
স্পেনে ফেরত নেওয়া হয়।

৬) ধার্মিক ছিলেন কলম্বাস
কলম্বাসের বিশ্বাস ছিল
ঈশ্বর শুধুমাত্র অভিযান
চালানোর উদ্দেশ্যেই
তাকে নির্ধারিত করেছেন,
নিয়োগ করেছেন। এ কারণে
কলম্বাসের দেওয়া দ্বীপ বা
স্থানের নামের অনেকগুলোই
ধর্ম সংক্রান্ত। শেষজীবনে
কোথাও গেলে কলম্বাস
ধর্মীয় পোশাকে যাওয়া-
আসা করতেন। যদিও তিনি
ধনী এডমিরাল ছিলেন, তবুও
তিনি সন্ন্যাসীর বেশ ধরে
থাকতেন। অনেকের মতেই
এসব ছিল কলম্বাসের
খামখেয়ালীপনার অংশ।
তৃতীয় অভিযানে তিনি
দেখলেন অরিনোকো নদী
আর আটলান্টিক সাগরের
মোহনা। এই দৃশ্য দেখে তিনি
বিশ্বাস করে বসেছিলেন
যে, তিনি স্বর্গ আবিষ্কার
করে ফেলেছেন!

৭) কলম্বাস ছিলেন দাস
ব্যবসায়ী
কলম্বাসের সফরের একটি
অন্যতম কারণ ছিল
অর্থনৈতিক। অনেক বড় কিছু
আশা করে বসেছিলেন
কলম্বাস। কিন্তু উপনিবেশে
পৌঁছে দেখলেন, সেখানে
এমন কোনো মূল্যবান সম্পদ
নেই যা নিয়ে ব্যবসা করা
যায়। ধূর্ত কলম্বাস ভাবলেন,
তাহলে মানুষদেরকেই কেন
তিনি সম্পদ বানিয়ে নেন
না! দরিদ্র, অশিক্ষিত
মানুষদের নানা কৌশলে
বশীভূত করে তাদের নিয়ে
দাস ব্যবসা শুরু করেন
কলম্বাস। কিন্তু একটা সময়ে
এসে রানী ইসাবেলা
সিদ্ধান্ত নেন, উপনিবেশের
মানুষেরাও তার প্রজা, আর
এভাবে তাদের নিয়ে কেউ
দাসব্যবসা করতে পারবে
না। বলতে গেলে এভাবেই
কলম্বাসের ব্যবসা বন্ধ হয়।

৮) কলম্বাস নিজের
আবিষ্কারকেই বিশ্বাস
করেননি কোনোদিন
কলম্বাস এশিয়া আসার সহজ
রাস্তা খুঁজছিলেন, তৈরি
করতে চেয়েছিলেন
বাণিজ্যের অভিনব কোনো
উপায়। কিন্তু এভাবে তিনি
যে অন্য কোথাও, অন্য
কোনোখানে গিয়ে
পৌঁছেছেন সেই কথা তাকে
কোনোদিন কেউ বিশ্বাস
করাতে পারেনি। তিনি যা
আবিষ্কার করেছেন, তা-ও
সমানভাবে মহৎ, মানুষের
কাছে একদমই অনাকাঙ্খিত
হলেও তিনি ভাবতেন তার
আবিষ্কৃত জায়গাগুলোর একটু
দূরেই ছিল জাপান, চীন
কিংবা চেঙ্গিস খানের
রাজত্ব! নিজের মনকে
প্রবোধ দিতে তিনি তৈরি
করেছিলেন উদ্ভট তত্ত্বও।
তার মতে, পৃথিবী হল
নাশপাতি আকৃতির। উদ্ভট
তত্ত্ব আর নিজের ভুল
স্বীকার না করার কারণে
কলম্বাস তার শেষ
দিনগুলোতে ইউরোপে
হাসির খোরাক ছিলেন।

৯) নতুন বিশ্বে কলম্বাসের
প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল
মায়ানদের সাথে
মধ্য আমেরিকার উপকূল ধরে
আসার সময় কলম্বাসের
সাক্ষাৎ হয়েছিল এক
বাণিজ্য জাহাজের সাথে।
তাদের সাথে ছিল তামার
হাতিয়ার আর বিয়ারের মত
পানীয়। কলম্বাসের দেওয়া
সেই জাহাজের
অধিবাসীদের বর্ণনা থেকে
গবেষকরা মনে করেন,
কলম্বাস দেখা পেয়েছিলেন
উত্তর-মধ্য আমেরিকার
মায়ানদের। কিন্তু কলম্বাস
তাদের সম্পর্কে আগ্রহ না
দেখিয়ে দক্ষিণ দিকে মোড়
নেন।

১০) কলম্বাসের দেহাবশেষ
সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু
জানা যায় না
কলম্বাস ১৫০৬ সালে মারা
যান। কয়েক বছর তার
দেহাবশেষ স্পেনে রাখা
হয়। তারপর ১৫৩৭ সালে
সেটিকে সান্তো
ডমিংগোতে পাঠানো হয়।
১৫৯৫ সাল পর্যন্ত সান্তো
ডমিংগোতে থাকার পর
সেটিকে হাভানায়
পাঠানো হয়। খুব সম্ভবত
১৮৯৮ সালে আবার সেটি
স্পেনে ফেরত নেওয়া
হয়েছিল। কিন্তু এরই মাঝে
১৮৭৭ সালে সান্তো
ডমিংগোতে কলম্বাসের
নাম লেখা একটি হাড়ভর্তি
বাক্স পাওয়া যায়। এরপর
থেকে সেভিল, স্পেন আর
সান্তো ডমিংগোত তার
দেহাবশেষ আছে বলে দাবী
করা হতে থাকে। প্রতিটি
শহরেই বড় সমাধি মন্দিরে
থাকা দেহাবশেষগুলোর
কোনটি আসল কলম্বাসের তা
এখনো তর্কের বিষয়!
তথ্যসূত্র:
রোয়ার মিডিয়া বাংলা
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×