somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদীসে রাসূল (সাঃ) নিয়ে কেন এই সংশয়? (প্রথম পর্বের বাকী অংশ)

১৭ ই মার্চ, ২০০৮ ভোর ৪:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পঞ্চম হিজরী ও এর পরবর্তীতে হাদীস:
বলা যায় চতুর্থ হিজরীতে হাদীসের মৌলিক গ্রন্থগুলোর সংকলন শেষ হয়ে যায়। মুহাদ্দিসদের বুকে যেসব হাদীস সংরক্ষিত ছিল সেগুলো কাগজের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। এরপর পূর্ববর্তীতে সংকলিত বড় বড় গ্রন্থগুলোকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করা, সনদ (বর্ণনা সূত্র) বিলুপ্ত করে আকার ছোট করার মাধ্যমে একাধিক গ্রন্থকে এক গ্রন্থে আবদ্ধ করা , বিষয় ভিত্তিক সংকলন বের করা এবং হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত জ্ঞানের অন্যান্য শাখাকে সমৃদ্ধ করার খেদমত চালু থাকে। যেমন- পঞ্চম হিজরীতে সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিমকে একত্রে এক গ্রন্থে আবদ্ধ করে একাধিক গ্রন্থ সংকলিত হয়। যেমন- আবু মাসউদ দিমাসকীর (মৃ ৪০১হিঃ) সংকলিত "আল জামউ বায়নাস সহীহায়ন", ইমাম বাগাবীর (মৃ ৫১৬হিঃ) "আল জামউ বায়নাস সহীহায়ন", ইমাম সাগানীর ""আল জামউ বায়নাস সহীহায়ন", ইত্যাদি।
সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম নিয়ে যেমন একক সংকলন তৈরী হয় ঠিক তেমনি ছয়টি বিশুদ্ধ গ্রন্থকে নিয়েও একক সংকলন তৈরী হয়। যেমন- ইমাম বাগাবীর (মৃ ৫১৬হিঃ) "শারহুস সুন্নাহ "।
এ সময়ে বিষয় ভিত্তিক যেসব গ্রন্থ সংকলিত হয় তার মধ্যে "মাউজু হাদীসের" সংকলন অন্যতম। মাউজু হাদীস মানে বানোয়াট কথা। অর্থ্যাৎ লোক মুখে অথবা কোন গ্রন্থে যেগুলোকে হাদীস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অথচ এগুলো রাসূলের বাণী নয়, এ ধরণের বাণীর সংকলন। উদাহরণ- নাক্কাশের (মৃ ৪১৪হিঃ) "আল মাউজুআত", ইবনে জাওযির (মৃ ৫৯৭হিঃ) "আল মাউজুআত", ইবনে তাইমিয়ার "আহাদিসুল কুছ্ছাস" সূয়ূতীর (মৃ ৯১১হিঃ) "আল লাআলি আল মাওজুআহ", মুল্লা আলী কারীর (মৃ ১০১৪হিঃ) "আল আসরার আল মারফুআ ফিল আহাদিসিল মাউজুআ", আল্লাম শাওকানীর (মৃ ১২৫৫হিঃ) "আল ফাওয়ায়েদ আল মাজমুআ ফিল আহাদিসীল মাওজুআ" এবং সর্বশেষ আলবানীর (মৃ ১৪২০হিঃ) "সিলসিলাতুল আহাদিসীদ যায়ীফা ও মাওজুআ" ইত্যাদি।
এ ছাড়াও বিধি-বিধান সংক্রান্ত হাদীসের সংকলন গ্রন্থ বের হয় এ সময়ে। যেমন- আব্দুল হক্ব ইশবিলীর (মৃ ৫৮১হিঃ) "আল আহকাম আল কুবরা", আব্দুল গনি মাকদিসীর (মৃ ৬০০হিঃ) উমদাতুল আহকাম, ইবনে হাজারের (মৃ ৮৫২হিঃ) "বুলুগুল মারাম" ইত্যাদি।
এ ছাড়াও এ সময়ে হাদীসের গ্রন্থসমূহের অনেকগুলো ব্যাখ্যা গ্রন্থ লেখা হয়; যদিও এর আগেও কিছু কিছু ব্যাখ্যাগ্রন্থ লেখা হয়েছিল। যেমন- বোখারীর ব্যাখ্যা লিখেন খাত্তাবী (মৃ ৩৮৮হিঃ) ইবনে বাত্তাল (মৃ ৪৪৯হিঃ), কিরমানী (মৃ ৭৮৬হিঃ), ইবনে রজব (মৃ ৭৯৫হিঃ) ইবনে হাজার (মৃ ৮৫২হিঃ), আইনী (মৃ ৮৫৫হিঃ) প্রমুখ।
মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থ লিখেন- ইবনে ইসমাইল ফারেসী (মৃ ৫২৯হিঃ), মাযিরী (মৃ ৫৩৬হিঃ), কাযী ইয়ায (মৃ ৫৪৪হিঃ), ইবেন সালাহ (মৃ ৬৪৩হিঃ) ইমাম নববী (মৃ ৬৭৬হিঃ) প্রমুখ।
সুনানু আবু দাউদের ব্যাখ্যা লিখেন- খাত্তাবী (মৃ ৩৮৮হিঃ), সুয়ূতী (মৃ ৯১১হিঃ), আযিম আবাদী (মৃ ১৩২৬হিঃ) ও সাহারানপুরী (মৃ ১৩৪৬হিঃ) প্রমুখ।
সুনানু তিরমিজীর ব্যাখ্যা লিখেন- ইবনে সাইয়্যেদিন নাস (মৃ ৮০৬হিঃ), মুবারকপুরী (মৃ ১৩৫৩হিঃ) প্রমুখ।
সুনানু নাসায়ীর ব্যাখ্যা লিখেন- সুয়ূতী (মৃ ৯১১হিঃ) ও সিনদী প্রমুখ।
ইবনে মাজার ব্যাখ্যা লিখেন- সুয়ূতী (মৃ ৯১১হিঃ), মুগলাতাই ও সিনদী প্রমুখ।

এত দীর্ঘ পরিশ্রম ত্যাগ ও কুরবানীর মাধ্যমে হাদীস রাসূল (সাঃ) আমাদের কাছে পৌঁছেছে। সুতরাং সে সকল গবেষণা কর্ম না সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান না রেখে হাদীসকে খাটো করে দেখা আদৌ সঙ্গত নয়। বরঞ্চ মুসলিমের দায়িত্ব ইসলামী জ্ঞানের শাখাগুলো নিয়ে প্রচুর পড়াশুনা করা। আর কোন বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান না নিয়ে, কোন সূত্র ছাড়া কথা বললে তার মূল্য থাকে না। তবে স্থূল জ্ঞানের মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়। পরবর্তী পর্বে হাদীস সংকলনে আলেমদের সতর্কতা নিয়ে লেখার আশা রাখি। আল্লাহ আমাকে সে তাওফিক দিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১২:৩৫
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×