somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যক্তিগত কাসুন্দিঃ হোস্টেল-৩য় পর্ব

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্বঃ Click This Link
দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link

ফাহমিদা আপার ঝাড়ি খেয়ে সেবারই মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম, আর কাউকে ভয় দেখাব না। প্রতিজ্ঞামতো নিরিবিলি থাকি। কাউকে ঘাঁটাতে যাই না। কিন্তু ঐ যে, সুখে থাকলে ভূতে কিলায়। শিল্পী নামের একটা মেয়ে আসলো ভূতের কিল খেতে। মেয়েটা নিজেকে জাহির করতে খুব পছন্দ করে। আমাকে এসে বলল,
-দেখি, আমাকে একটু ভয় দেখা তো।
বলেই খিক খিক করে হাসতে লাগল। আমি কোন রকমে মেজাজ শান্ত রেখে বললাম,
-যা তো। আমি ভালো হয়ে গেছি। আর কাউকে ভূতের গল্পও বলব না, ভয়ও দেখাব না।
কিন্তু মেয়েটা নাছোড়বান্দা। তাকে ভয় দেখাতেই হবে। ভয় দেখানো ছাড়া সে আমার পিছু ছাড়বে না। আসলে তার ধারনা ছিল সে খুবই সাহসী, আর কেউ তাকে ভয় দেখাতে পারবে না।
-ভয় দেখাতে পারলে তখন কী হবে?
-তোকে একটা চকোবার খাওয়াব। শুধু চকোবার না, ভালো চকোলেটও খাওয়াব।
-ওকে।
ভালো চকোলেট আর চকোবারের লোভে আমি শিল্পীকে ভয় দেখাতে রাজী হয়ে গেলাম। চকোলেট, আইসক্রীম, রসমালাই এই জাতীয় খাবারগুলোর প্রতি আমার একটা বিশেষ দুর্বলতা ছিল। এগুলোর লোভ সামলানো তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। এখনো মনে পড়ে, বাবা কত দিন রসমালাই এনে আমার মান ভাঙিয়েছিলেন। একবার মা’র সাথে রাগ করে পাক্কা দুদিন ভাত খাইনি। বাবা জেনে গেলেন কথাটা। সেদিন রাতে পেটে প্রচণ্ড ক্ষিদে নিয়ে শুয়েছি। একটু পর মাথার কাছে এসে বাবা বসলেন। আস্তে করে আমাকে ডাকতেই জেগে গেলাম। আসলে ঘুমও আসছিল না। চোখ মেলে দেখি বাবার হাতে রসমালাইয়ের বাটি। দেখেই হামলে পড়লাম। চামচ ছাড়াই ছোট ছোট ছানার মিষ্টিগুলো গপাগপ খেতে শুরু করলাম। হঠাত মনে হল, আরে! আমি তো রাগ করেছি। কিন্তু ততোক্ষণে হাসির রোল পড়ে গেছে। যাই হোক, রাজী তো হলাম। কিন্তু ভয়টা দেখাব কীভাবে। আমি শিল্পীকে বললাম,
-আজ না। অন্য এক দিন।
-কবে?
-আমি তোকে জানাব।
-ওকে।

সেদিন রাতে ডাইনিং হল-এ সব শেষের ব্যাচে শিল্পী বসল। আমি আর শিল্পী এক সাথেই ভাত খেলাম। ভাত খেতে খেতে একটা ভূতের গল্পও করলাম। গল্পটা এরকম-
“অনেক বছর আগে আমার এক চাচী এই কলেজের ছাত্রী ছিলেন। উনিও হল-এ থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। চাচী এক রাতে হঠাত ওয়াশরুমে গিয়ে দেখলেন, তাঁর এক বান্ধবী শূণ্যে ঝুলে আছে। মৃত। দেহটি রক্তাক্ত। মাথা থেতলে মগজ বের হয়ে এসেছে। বেসিনের ওপর টপ টপ করে রক্ত পড়ছিল। এই দেখে আমার চাচী অজ্ঞান হয়ে গেলেন। উনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। রাতে ঘুমুলেই সেই বান্ধবীকে স্বপ্নে দেখতেন। সেই বান্ধবী নাকি স্বপ্নে চাচীর সামনে কালী দেবীর বেশে আসত”।
গল্পটা তো বানিয়েই বলেছিলাম। হরর মুভি দেখতাম খুব। ওসব গল্প বানানোই তো সোজা আমার জন্য। খুব সাদামাটা গল্প, কিন্তু আমার বলার ভঙ্গীতে হয়তো কিছু একটা ছিল। শিল্পীকে কেমন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল। অজ পাড়া গাঁয়ের একটি স্বল্পশিক্ষিত হিন্দু পরিবার থেকে আসা শিল্পী মনে হয় আমার গল্পটা বিশ্বাস করে ফেলেছিল। তাছাড়া গল্পে কালী দেবীর উপস্থিতিটাও তাকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। দেবী নিয়ে মিথ্যে গল্প বলব এটা হয়তো সে ভাবে নি। এটা আমার এখন মনে হয়, কিন্তু তখন এতো কিছু চিন্তা করি নি। আমার শুধু এটুকুই মনে হচ্ছিল যে শিল্পী কিছুটা হলেও ভয় পেয়েছে। খাওয়া শেষে শিল্পী বেসিনের দিকে এগিয়ে গেল। আমি শিল্পীর পেছন পেছন। তখন হঠাত ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। আমিও তাকে ভয় দেখানোর মওকা পেয়ে গেলাম। আমি শিল্পীর ঠিক পেছনেই ছিলাম। ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেলে মোমবাতি দিয়ে যাওয়ার নিয়ম বুয়াদের। কিন্তু মোমবাতি আসতে দেরী হচ্ছিল দেখে আমরা হাতড়ে হাতড়ে বাইরে কলতলায় চলে এলাম। শিল্পী নিজে কল চেপে নিজেই প্লেট ধুয়ে নিল। ভীষণ রকমের চাঁদের আলোয় চারদিক আলোকিত। প্লেট ধোয়া শেষে আমার দিকে তাকিয়েই সে আঁউক করে এক চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি কিছুই করিনি। শুধু বড় করে জিহ্বাটা বের করে তার তাকানোর অপেক্ষায় স্থির দাঁড়িয়ে ছিলাম। শিল্পী প্লেট ফেলে ছুটে পালাল। সে যে ভালোই ভয় পেয়েছিল তার প্রমাণ হল সেদিন তার গায়ে জ্বর এসে গিয়েছিল। ভাগ্য ভালো হোস্টেল সুপারের কাছে কেউ নালিশ করে নি। করবে কেন, শিল্পী কেন ভয় পেয়েছিল সে কথা তো কাউকেই বলেনি। তার প্রেস্টিজেরও ব্যাপার ছিল তো।

শর্ত অনুযায়ী শিল্পীর কাছে আমার ভালো চকোলেট আর আইসক্রীম পাওনা ছিল। কিন্তু ভালো চকোলেটের দামওতো ভালো। এদিকে ওদের আর্থিক অবস্থা মনে হয় অত ভালো ছিল না। জেলা শহরের একটি কলেজের হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করাটাও তার জন্য কষ্টের ছিল। তাই আমি একটা মনচেরী মিল্ক ক্যান্ডি খেয়েই দাবী ছেড়ে দিলাম। ক্যান্ডিটা তখন খুব জনপ্রিয় ছিল।

এরপর অবশ্য আমি নিজেই একদিন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিভাবে ভয় পেয়েছিলাম সে কথা অন্য একদিন অন্য কোন গল্পে বলব। আজ আর লিখতে ইচ্ছে করছে না।

শেষ পর্ব দেখতে-
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৩৬
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×