somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলার ভ্যালেন্টাইন

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ৯:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বলা নেই কওয়া নেই পেছন থেকে এসে হাত দিয়ে দুচোখ বন্ধ করার মত মিষ্টি দুষ্টুমি শাওণ ছাড়া আর কারো কাজ নয় নীলা তা ভালো করেই জানে তবু ও চমকে উঠলো । কিছুটা ভয়,কিছুটা বিষ্ময় এক রোমান্চিত শিহরণ -একটু একটু করে পিছনের দিকে সরে যাচ্ছে সে । পিঠের সাথে লেগে গেছে শাওণের বুক বাতাসে শাওণের কোলনের গন্ধ ! নীলার চোখ এমনিতেই বন্ধ । কপট বিরক্তির সুরে বললো ‘- আহা চোখ ছাড়’ ।

শাওণ্ ও কম যায়না আদেশের সুরে বললো একেবারেই চোখ খুলবেনা ।
এবার হাত বাড়াও বলেই ধরিয়ে দিল একটি প্যাকেট । লাল রং এর সে প্যাকেট হাতে নীলা তাকিয়ে আছে নীল রং এর শার্ট্ পড়া এক যুবকের দিকে যার ভালোবাসা রুপকথার সোনার কাঠি রুপোর কাঠির মত নীলাকে দিয়েছে পুনর্জন্ম । অমরত্বের ঠিকানা ।

শাওণ : হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন নীল পরী । এবার খুলে দেখতো পছন্দ হ’য়েছে কি না ।
লাল পাড়ের শাড়ী ভিতরে গাঢ় নীল রং । নীলার প্রিয় রং । নীল কি বেদনার রং না কি প্রশান্তির রং ? কী জানি ! বুকের ভিতরে সুখের পানি ,হিমেল হাওয়া । গলার কাছে আটকে থাকা একটুখানি নোনা জল ।হেসে বলল, খুব সুণ্দর ,থ্যান্কস্ ।

শাওণ: শুধু শুকণো ধন্যবাদে কাজ হবে না , এখনি পড়ে এসে শাড়ীখানা আর অধমের জীবন ধন্য করে দিন মহারাণী ।

: জো হুকুম জাঁহাপনা । আপনাকে এক কাপ চা করে দিবার অনুমুতি দিলে বাধিত হইব ।

: একটু হেসে ,চা আমিই করছি তুমি ততক্ষণে তৈরী হ’য়ে নাও ।

শওণ নীচে যেতে না যেতেই আস্তে করে দরজাটি বন্ধ করে ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেন্টাইন ’ কা র্ডটি খুললো ।প্রথম চিরকুট হাতে পাওয়া এক কিশোরীর দুরু দুরু বুক ।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পুরো শাড়ীটিতে নিজেকে জড়িয়ে নিল ।’নাচ ময়ূরী নাচেরে’বুকের মাঝে রুমঝুম তাল । আযনায সে দেখতে পাচ্ছে এক ময়ূরকন্ঠী পেখম তুলে নাচছে ।নীলার যে কত শাড়ী ও নিজেই জানে না । নিজে একা একা গিয়ে কিনেছে , কখনো বা শাওণের সাথে গিয়ে ।তবুও এটি অনন্য ।এ ওর ময়ূরকন্ঠি ভালোবাসা । পার্টি ছাড়াতো শাড়ী পড়া ও হয়না ।শাওণের সাহায্য ছাড়া ও হয়না । শাড়ীর কুঁচি ঠিক করতে এসে সে এক দেখার মত দৃশ্যের অবতারণা হয় !পায়ের কাছে গুটি শুটি হ’য়ে বসে একের পর এক কুঁচি ঠিক করে যাচ্ছে শাওণ । ওর অপরিপক্কতায় বিরক্ত ও অধৈর্য্য নীলা - ‘সোজা করে ধর, এলাইনমেন্ট ঠিক কর । কি ফিজিক্স পড়েছ’। হৈ চৈ চেঁচামেচিতে কোন ফাঁকে খুলে গেল সব কুঁচি । আবার প্রথম থেকে শুরু করা ।যাহোক অবশেষে ঘর থেকে বের হয় শাড়ী পরিহিতা এক বাঙালী ললনা ।আজ নীলা নিজেই সব সামলে নিল।দুহাত ভরে কাঁচের চুড়ি পড়লো ।বিয়েতে সোনার চুড়ির সাথে সাথে হাত ভরে কাঁচের চুড়ি পড়ার কড়া নির্দেশ এসেছিল বর পক্ষের বন্ধু মহল থেকে--সেদিনের মত আজো সে চুড়ির ঝন ঝন ঝন শব্দ নিয়ে হাজির হ’লো শাওনের সামনে ।টের পাচ্ছে ও লজ্জা পাচ্ছে । ভাবছে ওর গিফ্ট কি এখনই দিয়ে দিবে! না থাক পরে । আরো পরে -শাওণ সারা জীবণ মনে রাখবে আজ রাতের কথা ।অস্বস্তি আর লজ্জা কাটানোর জন্য-- দেখি ডিনারের কি করা য়ায়- বলে রান্না ঘরের দিকে পালাচ্ছিল । দুষ্টু করে বাধা দিয়ে মিষ্টি করে বললো শাওণ :তোমার কি মাথা খারাপ ! এক্ষুণি বেরোতে হবে ‘সোনা ’! রেস্টুরান্টে রিজার্ভেশন দেয়া আছে ।কত নামে যে ওকে ডাকে শাওণ !


: এভাবে ? শাড়ী পড়ে! আমরা কি কোন ইন্ডিয়ান রেস্টুরান্টে যাচ্ছি?
:না । যাচ্ছি শহরের সেরা ইটালিয়ান রেস্টুরান্টে ,একমাস আগে রিজার্ভেশন দিতে হয়েছে । শাড়ী না পড়ে গেলে কি তোমাকে সবাই ইটালিয়ান বা রাশিয়ান ভাববে ? সুন্দরের দিকে মানুষ এমনিতেই তাকিয়ে থাকে !তা তুমি শাড়ী পড়ে যাও আর স্যুট পড়েই যাও ।কি বোঝাতে পারলাম ?নাকি বদলাবে ? যা করবে তাড়াতাড়ি কর ’হানি’ ।

নীলা শাড়ী পড়েই যেতে চায় । অন্যান্য অনেক বাঙালী বা ইমগ্রান্টদের মত শাওণের কোন হীণমণ্যতা নেই । নিজের প্রতি এই শ্রদ্ধাবোধ থেকেই আশে পাশের সবাইকে শ্রদ্ধার সাথে দেখে ।আর তার নীল পরী তা দেখে এক নীল সাগর হ’য়ে যায় ।ভালোবাসার উথাল পাথাল ঢেউ এ ভিজিয়ে দেয় ভাসিয়ে দেয় -ঝর ঝর করে ঝরে শাওণ ধারা ।
টেবিলের দুপাশ থেকে আসা দুজোড়া হাত কেমন নিম্চিন্তে আর নির্ভরতায় এক হ’য়ে আছে । শাওণের দুহাতের মাঝে নীলার কোমল দুটো হাত যেন অনন্তকাল ধরে। মহাবিশ্ব মহাকাল আছে থেমে এই মুহূর্তটিতে এসে ।
শাওণের সৃষ্টিশীল মন সবসময়েই নতুন কিছু সৃষ্টিতে নতুন কোন চমক খুঁজতে ব্যস্ত--আমরা যদি আমাদের প্রথম দেখার দিনটিতে ফিরে যাই কেমন হয় বলতো? নীলা হেসেই খুণ !-খুবই খারাপ হয় ,শধুই পাগলামী হয । সেটা কি করে সম্ভব এতদিন পরে ? খুবই সম্ভব ‘সুন্দরী’ বলেই পকেট থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স আর অফিসের আইডি বের করলো ।সব সত্যি বলেছি কি না দেখবে না ? হো হো করে হেসে দিয়ে নীলা ও ফিরে গেল সেই দিনটিতে । একটিবারের জন্য ও মনে হয়নি মাত্র কিছুদিন আগে ইন্টারনেটে আলাপ হওয়া এই মানুষটিকে আজ প্রথমবারের মত দেখছে ।মনে হ’য়েছে এই তো সে যে ছিল ওর ফড়িং এর পিছনে ছুটে বেড়াণোর দিনগুলোতে । যে ছিল ওর ক্লাসেই , ক্লাসনোট নেবার ছলে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের রিহার্সালের ফাঁকে ফাঁকে কত খুনসুঁটি চোখে চোখে কত না বলা কথা !চন্চ্ঞলা এক হরিণী কুলু কুলু এক ঝর্ণা নীলা আর সীমাহীন আকাশ,অথৈ সাগর শাওণ দুজনেই ফিরে গেল সেই প্রথমদিনটিতে এমনকি খাবার ও অর্ডার করলো ঠিক সেদিনের মত ।ঠিক একই ভাবে গাড়ীর ঠিক একই দিকটিতে এসে শাওণের দুহাতে বন্দি নীলার মুখ চোখে চোখ ঠোঁটে ঠোঁট , আজ স্বর্গ্ এ ধরণীতে ।গাড়ীতে উঠে সেই পুরোণো গান । রহস্যটা এবার বুঝলো নীলা । আসার সময় ব্যপারটি খেয়াল করলে ও বুঝতে পারেনি এভাবে ।নীরবতার কত ভাষা থাকে , মনে গেঁথে থাকে ।শাওণই প্রথম সরব হ’লো -কি প্রথম দিনটিতে আসা গেল ? নীলা তখনো নীরব শুধু মুখে সন্মতির হাসি ।মনে মনে ভাবছে সবই যদি প্রথম দিনের মত হয় তাহলে তো এত যত্নে সাজানো ওর উপহার আর দেয়াই হবে না ! এবার শব্দ করেই হাসলো । হঠাত ফোনের শব্দ । এই সেলফোন যে কে আবিস্কার করেছিল ! হারিয়ে যাবার কোন উপায় নেই ।কিরে নীলা তুই এখনো বাসায় অসিসনি? ৫ টা তো কখন বেজে গিয়েছে ! রেডি হয়ে চলে আয় । সবাই চলে আসবে এখনি । ডালিয়া আপু ,নীলার চাচাতো বোন । নীলাকে খুবই স্নেহ করেন । আজ বিশেষ দিনে বিশেষ দোয়া খায়েরের ব্যবস্হা করেছেন তার বাসায় । এক বছর আগে ঠিক এই দিনে ১৪ ই ফেব্রুয়ারী রাতে একটি এম্বুলেন্স এসে চেতণাহীন নীলাকে সড়ক র্দুঘটনায় রাস্তায় পড়ে থাকা একটি ভাঙা গাড়ী থেকে তুলে নিয়ে রেখে এসেছিল হাসপাতালে ।শাওণ ওকে আনতে যায়নি । ফিরে এসে ওকে আর খুঁজে পায়নি নীলা
। সেই থেকেই কাজ বাসা শূণ্যতা আর সীমাবদ্ধতায় নীলার ওঠা বসা ।
গাড়িতে উঠে পুরোণো সিডি গুলোর ভিতর থেকে খুঁজে একটি সিডি বের করলো । খুব সাবধাণে পার্কিং লট থেকে বের হ’লো, রাস্তায় উঠলো, আস্তে আস্তে ফ্রি ওয়েতে ।নীলা দেখতে পাচ্ছে গাড়িটি যেন মন পড়তে জানে ছুটে যাচ্ছে দেশী শপিং প্লাজায় শাড়ীর দোকানগুলোর দিকে ।
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামহীন দুটি গল্প

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৫

গল্প ১।
এখন আর দুপুরে দামী হোটেলে খাই না, দাম এবং খাদ্যমানের জন্য। মোটামুটি এক/দেড়শ টাকা প্লাস বয়দের কিছু টিপস (এটা আমার জন্য ফিক্সড হয়েছে ১০টাকা, ঈদ চাদে বেশি হয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×