বিচিত্র পেশার আজকের হিরো হচ্ছেন রুবেল মিয়া। লেখাপড়ায় মনোযোগ না থাকায় তার পিতা তাকে ঢাকা শহরে নিয়ে আসেন এবং কিছুদিন ঘুরে ফিরে কিছু একটা করবেন বলে ভাবতে থাকেন। কিন্তু কি করবেন। নবম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনার কি আর তেমন চাকুরী মিলে। এদিকে এই কঠিন শহরে পিতাও একটা পান দোকান করে সংসার চালান, কাজেই চিন্তার মাত্রা আরো বেড়ে যায়। সময়ের ফাঁকে ফাঁকে দিনে রাতে পিতাকে হেল্প করতে পারলেও হাতে অনেক সময় বেঁচে যাচ্ছিলো। মাথায় একদিন চিন্তা আসে, মোবাইল ফোনের টাকা লোড দেয়ার দোকান করলে কেমন হয়। পিতাকে বুঝিয়ে নিয়ে রুবেল মিয়া কয়েকটা সিম ও কয়েকটা মোবাইল সেট কিনে ফেললেন। দোকানে বসার সময় এক মোবাইল এজেন্ট এর সাথে পরিচয় হয় এবং তিনি এই কাজে হেল্প করেন।
কিন্তু কথা হচ্ছে কোথায় বসে এই কাজ করবেন, দোকান কোথায় পাবেন। ছোট খাট দোকান নিতে গেলেও যে টাকার প্রয়োজন তা কোথায় পাবেন। কিন্তু তাই বলে বসে থাকলে কি আর চলবে। একদিন নিজেই সস্তায় একটা চেয়ার এবং টেবিল কিনে নিলেন খিলগাঁও থেকে। পিতার পান সিগারেটের দোকানের কয়েক হাত দূরে মোটামুটি রাস্তায় টেবিল চেয়ার নিয়ে বসে পড়েন।
সন্ধ্যার পর মোটামুটি ভাল কাষ্টমার পেয়ে থাকেন। দৈনিক ৩০০/৪০০ টাকা লাভ হয় তবে মাঝে মাঝে ভুল নাম্বারে টাকা গেলে সেই টাকা আর ফেরত পাওয়া যায় না, কাষ্টমারকে আবার সেই টাকা দিতে হয়। সামান্য বেখেয়ালে এমনটা হয়ে যেতে পারে। তবে কিছু কাষ্টমার প্রতিদিন পাওয়া যায় যারা নিজের নাম্বার ভুল বলে যায় এবং পরে এসে ঝাগড়া শুরু করে দেয়। খাতায় লেখা প্রমান দেখালেও বুঝতে চায় না।
রুবেলের সাথে আমার যখন কথা হয় তখন রাস্তায় অনেক ধুলোবালি, আমি তাকে এই বিষয়ে বললে সে নিরুত্তর থাকে, আসলে কি করবে। ফুটপাত বা রাস্তায় বসে কিছু করতে চাইলে ধুলোবালি ছাড়া বাঁচার কোন উপায় নেই। ফুটপাতের চাঁদাবাজদের বা পুলিশের চাঁদাই তার কাছে সব চেয়ে বিরক্তি লাগে, এত কষ্ট করে টাকা রুজি করে সেই টাকা বিনা কারনে কাউকে দিয়ে দেয়া খুব কষ্টকর।
তবে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি জানতে চাইলে রুবেল জানালেন, তিনি একটা দোকান নিবেন এবং দোকানে যে কোন কিছুর ব্যবসা শুরু করবেন।
আশা করি আমাদের রুবেল মিয়া একদিন ব্যবসা করে অনেক বড় হবে। এখনো বয়স কম, সামনে অনেক সুযোগ পড়ে আছে।
মেহনতি হাত কখনো খালি হয় না, রুবেল আশা করি এই সমাজের উদাহরণ হয়ে দাঁড়াবে একদিন।
রুবেলের এই সাধারন কাজকে আমার কাছে বিচিত্র পেশা মনে হয়েছে শুধু মাত্র তার প্রায় রাস্তায় বসার কারনেই। আজকাল অনেকেই এমনি একটা টেবিল চেয়ার নিয়ে এই কাজ করতে দেখা যায়, আসলেই এটা বিচিত্র। বেঁচে থাকতে কত কিছুই না করতে হয়!
বিচিত্র পেশাঃ ১১
Click This Link