আজকের বিচিত্র পেশার গল্পের নায়কের নাম শওকত বলে ধরে নিচ্ছি, কারন সে তার আসল নাম এবং চেহারা দেখাতে রাজী নয়! বয়স ১৮ থেকে ২০ হতে পারে। আমার সাথে দেখা হয়েছিল, এক রাস্তার ফুটপাতে। আমি যখন তার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করি তখন সে কোন কথাই বলতে চাইছিল না, আমি কিছুটা এখন বুঝে গেছি কি করে কথা বলতে হয়! তার পর সে আমাকে অনেক কথাই বলে। আসলে অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে চাইলে আগে তাকে শুনতে হয় বা এমন কিছু কথা বলতে হয় যাতে তার বিশ্বাস আসে, এর পরেই দিল খুলে কথা বলা যায়।
আমি সাধারণত এই বিচিত্র পেশার লোকদের কাছে যেয়ে দাঁড়াই এবং তাদের ভাল করে কিছুক্ষন দেখি এবং কি করে সে তার কাষ্টমারদের উত্তর দিচ্ছে তা বুঝে নেই এবং এর পর কথা শুরু করি। যারা শুদ্ধ কথা বলে তাদের সাথে শুদ্ধ দিয়ে শুরু করি, যদি দেখি কোন আঞ্চলিক কথা তবে আমিও আঞ্চলিক হবার চেষ্টা করি। তবে এটা আমি দেখেছি, ঢাকায় সবাই আঞ্চলিক কথা এখন বর্জন করতে চান! বাংলাদেশের ঢাকাই একমাত্র শহর যেখানে এখন সাধারন মানুষ মিলে মিশে থাকতে শুরু করেছে, এই শহরই আপনাকে আপন করে নিতে পারে! এছাড়া বাংলাদেশের এখনো কোন অন্য শহর এমন হয়ে উঠে নাই। আপনি চট্রগ্রাম বা রাজশাহী থাকতে যান, আপনার নিজকে বরাবরই বহিরাগত মনে হবে!
হা হা হা, এই জন্য এত শহর থাকতে আমাদের আজকের বিচিত্র পেশার নায়ক কুমিল্লা থেকে সরাসরি এই ঢাকা শহরেই চলে এসেছেন। ভেবেছেন, কিছু একটা করে জীবন চালাতে পারবেন এবং অন্তত কেহ কিছু জিজ্ঞেস করবে না এই শহরে!
কিছু দিন আগের কথা, বাস থেকে নেমে মোবাইলে এক চাচাত ভাইয়ের বাসায় চলে আসেন এবং জানিয়ে দেন আর কুমিল্লা ফিরে যাবেন না। কয়েকদিনের মধ্যে চাচাত ভাইয়ের পরামর্শে এই ফুটপাতে নানান ধরনের শিশুদের খেলনা বিক্রি শুরু করেন, পুরানো ঢাকার চকবাজার থেকে সকালে এই ধরনের নানান খেলনা বা ইলেক্ট্রনিক্স জিনিষ কাটুনে কিনে নিয়ে আসেন এবং দুপুরের খাবার খেয়ে শহরের নানান স্থানে ফুটপাতে সেই কাটুনেই দোকান সাজিয়ে বসেন। মাঝে মাঝে বিক্রি বাট্টা ভাল হয়। দৈনিক লাভ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হয়। এতে মেসের ভাড়া এবং খাবারের বিল হয়ে যায় এবং কিছুটা টাকা হাতে থাকে।
চাচাত ভাইয়ের পুঁজি ফেরত দেয়া হয়েছে তবে এখনো বেশি লাভ হলে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন। ফুটপাতে জিনিষ বিক্রি করেন বলে মানুষের সন্মান কিছুটা কম পান। আক্ষেপ করে জানালেন, কাষ্টমারকে যাই দাম বলি, তারা অর্ধেকের কম বলে মুলামুলি শুরু করে। অভিজ্ঞতায় জানালেন, মুলামুলি ছাড়া এখনো কোন জিনিষ বিক্রি করতে পারেন নাই! হেসে আরো জানালেন, বেশিরভাগ কাষ্টমারদের ধারনা এই সকল জিনিষ বিনা মুল্যে আমরা নিয়ে আসি, যাতে বিক্রি করি তার সবটাই লাভ! কাষ্টমার মাঝে মাঝে এমন দাম বলে যে, শুনে মাথা ঘুরে যায়। কেনা দামের চেয়েও অনেক কম বলে মাঝে মাঝে।
পরিবার বা শিশু নিয়ে যারা এই খেলনা গুলো কিনতে আসেন তাদের কাছে একটু কম কষ্টে বিক্রি করা যায়, কোনমতে শিশুর পছন্দ হলেই অভিভাবক কিনতে বাধ্য হয়ে পড়েন। তখন একটু সামান্য লাভ বেশি হয়!
কথা প্রসঙ্গে আমি শওকতকে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি তা জানতে চাইলাম। শওকত জানালো, বিদেশ চলে যেতে চায়। দেশে থেকে কিছু করে ভাল চলার কোন উপায় নেই বলেই মনে করে। প্রসাঙ্গিক ভাবে জানালো একবার বাহারাইন এয়ারপোর্ট গিয়ে ফিরে এসেছে। আমি উৎসাহ নিয়ে আলাপ বাড়ালাম, এটা কি করে হল। তখন জানা গেল দালালরা নকল ভিসা দিয়ে তাকে বাহারাইন পাঠিয়েছিল, প্রায় দুইলক্ষ টাকা লস হয়েছিল। ফিরে এসে আর সেই টাকার কিছুই উদ্ধার করতে পারে নাই। আমাকে জানালো এটা বছর তিনেক আগের কথা। এই টাকার জন্যই তার সাথে তার পরিবারের অন্যান্নদের সাথে প্রায় ঝগড়া হত। েবং এর পরেই কুমিল্লা ছেড়ে একদিন ঢাকায় চলে আসা।
যাই হোক, শওকত একদিন এগিয়ে যাবে, এখনো তার যা বয়স, তাতে অনেকেই জীবন শুরুই করে নাই, সেই তুলনায় শওকত এগিয়েই আছে, বাকী উপরওয়ালার ইচ্ছা!
বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!
বিচিত্র পেশাঃ ১০ (প্রেম করেন, কৌশলে!)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪