somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহাদাত উদরাজী
সাহাদাত উদরাজী'র আমন্ত্রণ! নানান বিষয়ে লিখি, নানান ব্লগে! নিজকে একজন প্রকৃত ব্লগার মনে করি! তবে রান্না ভালবাসি এবং প্রবাসে থাকার কারনে জীবনের অনেক বেশী অভিজ্ঞতা হয়েছে, যা প্রকাশ করেই ফেলি - 'গল্প ও রান্না' সাইটে! https://udrajirannaghor.wordpress.com/

বিচিত্র পেশাঃ ১১

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকের বিচিত্র পেশার গল্পের নায়কের নাম শওকত বলে ধরে নিচ্ছি, কারন সে তার আসল নাম এবং চেহারা দেখাতে রাজী নয়! বয়স ১৮ থেকে ২০ হতে পারে। আমার সাথে দেখা হয়েছিল, এক রাস্তার ফুটপাতে। আমি যখন তার সাথে কথা বলতে আরম্ভ করি তখন সে কোন কথাই বলতে চাইছিল না, আমি কিছুটা এখন বুঝে গেছি কি করে কথা বলতে হয়! তার পর সে আমাকে অনেক কথাই বলে। আসলে অপরিচিত লোকের সাথে কথা বলতে চাইলে আগে তাকে শুনতে হয় বা এমন কিছু কথা বলতে হয় যাতে তার বিশ্বাস আসে, এর পরেই দিল খুলে কথা বলা যায়।

আমি সাধারণত এই বিচিত্র পেশার লোকদের কাছে যেয়ে দাঁড়াই এবং তাদের ভাল করে কিছুক্ষন দেখি এবং কি করে সে তার কাষ্টমারদের উত্তর দিচ্ছে তা বুঝে নেই এবং এর পর কথা শুরু করি। যারা শুদ্ধ কথা বলে তাদের সাথে শুদ্ধ দিয়ে শুরু করি, যদি দেখি কোন আঞ্চলিক কথা তবে আমিও আঞ্চলিক হবার চেষ্টা করি। তবে এটা আমি দেখেছি, ঢাকায় সবাই আঞ্চলিক কথা এখন বর্জন করতে চান! বাংলাদেশের ঢাকাই একমাত্র শহর যেখানে এখন সাধারন মানুষ মিলে মিশে থাকতে শুরু করেছে, এই শহরই আপনাকে আপন করে নিতে পারে! এছাড়া বাংলাদেশের এখনো কোন অন্য শহর এমন হয়ে উঠে নাই। আপনি চট্রগ্রাম বা রাজশাহী থাকতে যান, আপনার নিজকে বরাবরই বহিরাগত মনে হবে!

হা হা হা, এই জন্য এত শহর থাকতে আমাদের আজকের বিচিত্র পেশার নায়ক কুমিল্লা থেকে সরাসরি এই ঢাকা শহরেই চলে এসেছেন। ভেবেছেন, কিছু একটা করে জীবন চালাতে পারবেন এবং অন্তত কেহ কিছু জিজ্ঞেস করবে না এই শহরে!


কিছু দিন আগের কথা, বাস থেকে নেমে মোবাইলে এক চাচাত ভাইয়ের বাসায় চলে আসেন এবং জানিয়ে দেন আর কুমিল্লা ফিরে যাবেন না। কয়েকদিনের মধ্যে চাচাত ভাইয়ের পরামর্শে এই ফুটপাতে নানান ধরনের শিশুদের খেলনা বিক্রি শুরু করেন, পুরানো ঢাকার চকবাজার থেকে সকালে এই ধরনের নানান খেলনা বা ইলেক্ট্রনিক্স জিনিষ কাটুনে কিনে নিয়ে আসেন এবং দুপুরের খাবার খেয়ে শহরের নানান স্থানে ফুটপাতে সেই কাটুনেই দোকান সাজিয়ে বসেন। মাঝে মাঝে বিক্রি বাট্টা ভাল হয়। দৈনিক লাভ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা হয়। এতে মেসের ভাড়া এবং খাবারের বিল হয়ে যায় এবং কিছুটা টাকা হাতে থাকে।

চাচাত ভাইয়ের পুঁজি ফেরত দেয়া হয়েছে তবে এখনো বেশি লাভ হলে কিছু টাকা দিয়ে থাকেন। ফুটপাতে জিনিষ বিক্রি করেন বলে মানুষের সন্মান কিছুটা কম পান। আক্ষেপ করে জানালেন, কাষ্টমারকে যাই দাম বলি, তারা অর্ধেকের কম বলে মুলামুলি শুরু করে। অভিজ্ঞতায় জানালেন, মুলামুলি ছাড়া এখনো কোন জিনিষ বিক্রি করতে পারেন নাই! হেসে আরো জানালেন, বেশিরভাগ কাষ্টমারদের ধারনা এই সকল জিনিষ বিনা মুল্যে আমরা নিয়ে আসি, যাতে বিক্রি করি তার সবটাই লাভ! কাষ্টমার মাঝে মাঝে এমন দাম বলে যে, শুনে মাথা ঘুরে যায়। কেনা দামের চেয়েও অনেক কম বলে মাঝে মাঝে।

পরিবার বা শিশু নিয়ে যারা এই খেলনা গুলো কিনতে আসেন তাদের কাছে একটু কম কষ্টে বিক্রি করা যায়, কোনমতে শিশুর পছন্দ হলেই অভিভাবক কিনতে বাধ্য হয়ে পড়েন। তখন একটু সামান্য লাভ বেশি হয়!

কথা প্রসঙ্গে আমি শওকতকে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি তা জানতে চাইলাম। শওকত জানালো, বিদেশ চলে যেতে চায়। দেশে থেকে কিছু করে ভাল চলার কোন উপায় নেই বলেই মনে করে। প্রসাঙ্গিক ভাবে জানালো একবার বাহারাইন এয়ারপোর্ট গিয়ে ফিরে এসেছে। আমি উৎসাহ নিয়ে আলাপ বাড়ালাম, এটা কি করে হল। তখন জানা গেল দালালরা নকল ভিসা দিয়ে তাকে বাহারাইন পাঠিয়েছিল, প্রায় দুইলক্ষ টাকা লস হয়েছিল। ফিরে এসে আর সেই টাকার কিছুই উদ্ধার করতে পারে নাই। আমাকে জানালো এটা বছর তিনেক আগের কথা। এই টাকার জন্যই তার সাথে তার পরিবারের অন্যান্নদের সাথে প্রায় ঝগড়া হত। েবং এর পরেই কুমিল্লা ছেড়ে একদিন ঢাকায় চলে আসা।

যাই হোক, শওকত একদিন এগিয়ে যাবে, এখনো তার যা বয়স, তাতে অনেকেই জীবন শুরুই করে নাই, সেই তুলনায় শওকত এগিয়েই আছে, বাকী উপরওয়ালার ইচ্ছা!

বিচিত্র এই দেশ, বিচিত্র এই দেশের মানুষ, কত কি বিচিত্র পেশা! তবে সবই জীবিকার টানে!


বিচিত্র পেশাঃ ১০ (প্রেম করেন, কৌশলে!)
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৪
৯টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×