বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক কিছুই এখনো নতুনের মতো পড়ে আছে।
ভাবিকে ফোন দিলাম—কি দেওয়া যায়? ভাবি জানালেন,
“তোমার ভাইয়ার নাকি অনেকদিন ধরে কাঁসার প্লেট আর পানির গ্লাসের শখ! সময় পাচ্ছে না কিনে নেওয়ার।”
আমি একটু “থো” হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, Are you sure? কাঁসার থালা?
কাঁসা যে চিনি না বা নাম শুনিনি—এমন না। তবে জানতাম এটা সনাতনী প্রতীক! অনেক হিন্দু সিরিয়ালে কাঁসার জিনিসপত্র দেখেছি। হুমায়ূন আহমেদের ছবি ঘেটুপুত্র কমলা কাঁসার তৈজসপত্র উপস্থিতি দেখছি। তাই মুসলমান ঘরে কাঁসার থালা–বাটি—কেমন জানি অচেনা মনে হলো। যাই হোক, ভাবি কথা শেষ করার পুর্বে বললেন,
“এগুলোর ভালোই দাম, সাথে ক্যাশ নিয়ে যাইয়ো।”
১) কাঁসার প্লেট–গ্লাস ব্যবহার নাকি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো।
– এতে নাকি হার্টের সমস্যা কমে।
– গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটিও নাকি হয় না।
– তাছাড়া কাঁসার তৈজসপত্র বেশ ভারী ও টেকসই।
২) এসব উপকারিতা অবশ্য আমার কাছে গুজব মনে হয়নি। অনেক ধাতু, পদার্থ বা পাথরেই ব্যবহারিক গুণ থাকে। তবে বিক্রেতারা অবশ্যই একটু অতিরঞ্জিত করে বলে—এটাও সত্য।
উপহার হিসেবে কিনবো আবার দামি জিনিস তাই ইউটিউব ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করলাম। প্রথমেই পেলাম জামালপুরে নির্মিত কাঁসার জিনিসপত্রের বিখ্যাত একটা পেইজ—দাম বেশ চড়া। এত দামি জিনিস অনলাইনে অর্ডার করা ঠিক হবে না। এরপর পেলাম নিউমার্কেটের কিছু দোকানদারের ভিডিও তে বলছে—গুজরাটি চকচকে পালিশ করা কাঁসার থালা–বাটি। কিন্তু নিউমার্কেট মানেই টাউট–বাটপারের স্বর্গ! যে দোকানদার কথা বলছিল, তার বাবড়ি চুল ও লুক দেখে মনে হলো—পুরাই ব্লগার চাঁদাগাজীর মতো টা**! তাই এখান থেকে ভুলে ও কেনা যাবে না। কিনতে হবে আদি কোন স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে।
ঘাঁটাঘাঁটি করে প্রাপ্ত জ্ঞান থেকে আসল কাঁসা চিনার উপায় জানলাম-
“কোনো লোহার দণ্ড দিয়ে কাঁসায় আঘাত করলে তরঙ্গ বেশ কিছুক্ষণ থাকে। লোহার বেলায় তা হয় না।”
এই জ্ঞান পকেটে নিয়ে বের হলাম শাঁখারি বাজারের উদ্দেশ্যে।
অর্ধেক ঢাকা পাড়ি দিয়ে সন্ধ্যায় পৌঁছালাম। শাঁখারি বাজারে এর আগে এসেছিলাম ২০১৩-১৪ সালে, হলি উৎসবে। ঢাকার সেরা হলি হয় এখানেই—বন্ধু–বান্ধব নিয়ে রং–হইচই, নাচানাচি! ফেরার পথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে দেখেছিলাম সাদা কবুতরের মতো জামা পরা দুই সুন্দরী মেয়ে—রং লাগানোর ভয়ে সেখান দিয়ে যেতে সংকোচ বোধ করছিল। তখন ছিলাম বেশ পোংটা-
সুন্দর করে বলেছিলাম—“Holy is for celebration! অসভ্যতামি করবো না, রং কিন্তু লাগাবোই।”
দেখতে শুনতে খারাপ আর ভালো অ্যাপ্রোচে দেখে তারা ও মুচকি হেসে নিষেধ করেনি।
দিলাম গালে রং লাগিয়ে.....
পুরো শাঁখারি বাজার হয়তো আধা কিলোমিটার। শাঁখারি বাজার—এক আলাদা জগত ঢাকার ভেতর এমন জায়গা আর নেই যেখানে সনাতনী আচার–আচরণ, রীতিনীতি আর বাঙালি সংস্কৃতির মিলন এত স্পষ্ট। বাদ্যযন্ত্র, তৈজসপত্র, মিষ্টান্ন–ভাজাপোড়া, কসমেটিক—কি নেই!
মোট চারটি মন্দির চোখে পড়লো—প্রথমেই জগন্নাথ পুরীর মন্দির, এরপর রামকৃষ্ণ মন্দির (সবচেয়ে কোলাহলপূর্ণ), একটি কালী মন্দির, আরেকটি নাম মনে পড়ছে না....
এবার আসল কাজ—কাঁসার থালা কেনা। দাম—কেজি ৩০০০ টাকা।
প্লেট–গ্লাস ওজন করে বিক্রি করা হয়।
যেই দোকান থেকে কিনবো, সেই প্রবীণ দোকানদার লোকটির আচরণে আমি কিছুটা মুগ্ধ। কথা শুনেই তিনি বুঝে ফেললেন—আমি আসল–নকল নিয়ে দ্বিধায় আছি। দু’ধরনের প্লেট দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“দেখেন কোনটা আসল কাঁসা? আমরা না বললে আপনে চিনতে পারবেন না!”
সত্যিই—শব্দ তরঙ্গ দুটোরই প্রায় একই লাগলো।
পুরোটা সময় জুড়েই মনে হলো তিনি আমার সাইকোলজি নিয়ে খেলছেন।
শেষে হাতে পেটানো একটি কাঁসার প্লেট নিলাম- ১২০০ গ্রামের মতো ওজন হবে
আর পানির গ্লাস—৭৫০ গ্রামের মতো। কোন দামাদামি নাই—ফিক্সড।
কইলো লাইফটাইম কালার গ্যারান্টি। স্লিপ দিয়া দিবো কিছু হইলে নিয়া আসতে____
আর ইনস্ট্রাকশন দিল
“ভিম বা লিকুইড দিয়ে ভুলেও না; তেঁতুল আর লেবুর রস দিয়ে বাসায় গিয়ে মাজবেন—সোনার মতো চকচকে হবে।”
যাক কথাবার্তা আর ব্যবহার দিয়ে খুব আপ্যায়ন করলো তারাও শুনে কিছুটা আশ্চর্য—ঢাকার আরেকপ্রান্ত থেকে এসেছি! তাই আমি ও তাঁদের একটি খুশি করে দিলাম-
“আপনাদের সম্প্রদায়ের আদি প্রতিষ্ঠানের লোকেরা তুলনামূলক সৎ। তাই এতদূর থেকে আসা।”
উফffff… খুশির ঠেলায় কি হাসি দিলো সবাই! :p
ফিরার পথে হাতে রাখা পেপারে মুড়ানো পলিথিনে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার কাঁসার থালা আর গ্লাসের দিকে তাকালাম।
ভাবলাম—এই জিনিস যদি এলিফ্যান্ট রোড, গুলশান–২, বা ধানমন্ডির কোনো সিরামিক দোকান থেকে কিনতাম—তাহলে কেমন প্যাকেজিং আর আপ্যায়ন পেতাম?
পক্ষান্তরে মনে হলো—
এটাই হয়তো একটি আদি প্রতিষ্ঠানের মাহাত্ম্য; খাঁটি জিনিসই আসল, দৃষ্টিনন্দন চকচকে মোড়ক নয়
আমার লিখার স্পেলিং, সেন্টেস ফ্রেমিং নিয়ে অনেক ব্লগার অভিযোগ করেছেন-
তাই এখন এআই দিয়ে শুদ্ধে নিয়েছি। আমি এখন এআই সাহিত্যক :p
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



